রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪

সব কবিতার রং যদি হয় কালো,

সব কবিতার রং যদি হয় কালো,
কবি'র তবে নীরব থাকাই ভালো ...

August 4, 2014

ভিতু, দুর্বল, কাপুরুষ যা বলবেন, আমি সেটাই।

নিউজফীডে কিছুক্ষণ পরপরই একটা লঞ্চডুবির ভিডিও শেয়ার হতে দেখছি। ওটাতে ক্লিক করার সাহস হয়নি আমার।

আমি দুর্বলচিত্বের মানুষ; চোখের সামনে মানুষের মৃত্যু সহ্য করতে পারি না। বিশ্বজিতের কুপিয়ে মারার ভিডিও দেখতে পারিনি, রানা প্লাজার তলা থেকে যখন মৃত-অর্ধমৃত শরীরগুলোকে টেনে বের করা হচ্ছিল, তখনও চোখ বুজে ছিলাম।
শপার্স ওয়ার্ল্ড'এর সামনে এক নেতাকে গুলি করে মেরে ফেলল - না বুঝে ওই ভিডিওটা দেখে ফেলেছিলাম। তারপর কয়েক রাত ঘুমাতে পারিনি।

একটা মানুষ এক মুহূর্ত আগে বেঁচে ছিল, এক মুহূর্ত পরেই সে নাই - একটা ভিডিওর মধ্যেই জীবন-মরণের মাখামাখি - আমি নিতে পারি না। ভিতু, দুর্বল, কাপুরুষ যা বলবেন, আমি সেটাই।

হঠাৎ ফেইসবুকের উপর প্রচণ্ড রাগ হল। স্মার্টফোনের উপরও। আগে যখন এসব ছিল না, তখন তো এমন সব ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখতে হত না। পেপারে পড়তাম "চাঁদপুরে লঞ্চডুবি, নিহত শতাধিক" বা "বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রনেতা নিহত" - যেহেতু পরিচিত কেউ মরে নাই, তাই খুব একটা গায়ে লাগতো না। সত্যি বললাম।

হঠাৎই আবার রাগটা চলে গেল। রাগটা অন্যদিকে ট্রান্সফার হয়ে গেল।

এই লঞ্চডুবির ভিডিওটা কি মাননীয় নৌপরিবহন মন্ত্রী দেখেছেন? বিআইডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যান মহোদয় দেখেছেন? যাদের অনুমতিতে বা অবহেলায় ১৫০ জন ক্যাপাসিটির লঞ্চে ৩৫০ জন ওঠানো হয়েছিল - ভিডিওটি কি তারা দেখেছেন?

দেখার পর তারা কি করেছেন? তাদের কি কষ্ট হয়েছিল? নিজেদের প্রতি কি তাদের ঘৃণা জন্মেছিল। হাতের তালুতে কি তারা ওই মরে যাওয়া মানুষগুলির রক্ত দেখতে পেয়েছিল?

নাকি গায়েই লাগেনি কিছু! নাকি উনারা 'আল্লাহ্‌র মাল আল্লাহ্‌ নিয়ে গেছে' - এই যুক্তিতে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ে, মৃতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেই দায়িত্ব শেষ করে দিয়েছেন?

আমি চাই ভিডিওটা আপনারা বারবার দেখুন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখুন। অনেক বেশি বেশি কষ্ট পান। অপরাধবোধে নিদ্রাহীন রাত কাটান। তারপর আপনাদের দায়িত্বটা ঠিকমত উপলব্ধি করুন। আপনাদের ঠিক আর ভুলে, আপনাদের দায়িত্ব পালনে আর দায়িত্বহীনতায় মানুষের জীবন আর মৃত্যুর সিদ্ধান্ত হয়।

আমি আপনাদের পদত্যাগ চাই না। আমি জানি, এদেশে এসব হয় না।

আমি চাই, আপনারা দয়া করে সচেতন হন, দায়িত্ববান হন, বিবেকবাক হন।

আমি চাই, আপনারা মানুষ হন।

August 4, 2014

পূর্ণযৌবনা মাল্টা

যখন ছোট ছিলাম, ড্রইং রুমে সাজিয়ে রাখার জন্য মেলা থেকে মাটির ফল কিনে নিয়ে আসা হল। কমলা, ডালিম, আম, কলা, আপেল।

মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যায় - মাটির ফলগুলির কোন চেঞ্জ হয় না। পচেও না, নষ্ট'ও হয় না, পোকায়ও ধরে না।

ওদিকে গাছ থেকে পেয়ারা পেড়ে নিয়ে আসলে একদিন পরই কচকচে সবুজ পেয়ারা প্যাতপ্যাতে হলুদ হয়ে যায়।

দেশের বাড়ি থেকে লিচু পাঠানোর ২/৩ দিনের মধ্যেই সব খেয়ে শেষ করে ফেলতে হয়; নাহলে লিচু পচে বিস্বাদ হয়ে যায়। বাজার থেকে আনা কাঁঠাল একদিন রেখে দিলেই বিচি থেকে গাছ গজানো শুরু করে। - কি অন্যায়! কি অন্যায়!

তখন শঙ্কু পড়ি, সেবা প্রকাশনীর সায়েন্স ফিকশন পড়ি। কত মজার মজার বিজ্ঞানের আবিষ্কারের গল্প পড়ি। আর মনে মনে লিস্ট করি, বড় হয়ে কি কি জিনিস আবিষ্কার করবো।

সেই লিস্টের প্রথম দিকেই ছিল, একদিন এমন সিস্টেম আবিষ্কার করবো, যাতে করে দিনের পর দিন ফল রেখে দেয়া যাবে। পচবে না, নষ্ট হবে না, পোকায় ধরবে না।

বড় তো হলাম। কিন্তু আমার কিছুই করা লাগল না।

আল্লাহ্‌র অশেষ "রহমতে" এবং "মানুষের" নিরন্তর অধ্যাবসায়ে কিছু বাঙ্গালী আজ আবিষ্কার করে ফেলেছে ফরমালিনের অবিশ্বাস্য ব্যবহার। ঈদের পরদিন আব্বার জন্য কিনে আনা মাল্টা (নাকি বলা উচিত "মাল"টা?) আজও তরতাজা, ফ্রেশ, টসটসে - পূর্ণযৌবনা!

পচেনি! নষ্ট হয়নি!! পোকায়ও ধরেনি!!!

ফরমালিন দীর্ঘজীবী হোক।

ফল-ফ্রুট দীর্ঘজীবী হোক।

ফরমালিন-যুক্ত ফল-ফ্রুট-মুক্ত থেকে আমরাও দীর্ঘজীবী হই। নাকি?

August 18, 2014
হয়ত ব্যাপারটা এমন হবে অনেক অনেক দিন পর ... 

দাদী একহাতে একটা আপেল নিয়ে ফোকলা হাসি হাসতে হাসতে নাতি-পুতি'দের গল্প শোনাবেন - "বুঝলি রে, এই আপেলের বয়স কিন্তু আমার থেকেও বেশি। আমার শ্বশুর যেদিন প্রথমবার আমারে দেখতে আসছিল, সেই দিন তিনি
এই আপেল সাথে নিয়া আসছিল। তারপর ... কতজন কত চেষ্টা করল। কিন্তু এই আপেলরে পচাইতে পারেনাই, পোকা ধরাইতেও পারেনাই তোর বাবা ... তার বাবা ... তার বাবা ... " 

----------
যতবার ডাইনিং টেবিলের উপর অমর মাল্টা'টা দেখি, ততবার মগজের মধ্যে ফরমালিন নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে। হে খোদা, তুমি আমাদের রক্ষা কর।

August 18, 2014

রেডিও ফুর্তির প্রশংসা

বেশ কয়েকমাস আগে একটা লেখায় এফএম স্টেশনের একটা প্রোগ্রাম নিয়ে কিছু কথা লিখেছিলাম। রেডিও ফুর্তির একটা প্রোগ্রামটা, যাতে পরপর ৩টা দারুণ গান শোনানো হয়।

বেশ কিছুদিন প্রোগ্রামটা ফলো করে বুঝতে পেরেছিলাম - গান ৩টার একটা বাংলা, একটা ইংলিশ আর একটা হিন্দি। বাংলা আর ইংলিশের সাথে হিন্দির সমবণ্টন দেখে আমার বেশ গাত্রদাহ হয়েছিল। শুধুমাত্র সে কারণেই লেখাটা লিখেছিলাম। কারো প্রতি ব্যক্তিগত কোন আক্রোশ থেকে নয়. 

তারপরও, লেখাটি পোস্ট করার কারণে বেশ কিছু কাছের মানুষ আমাকে ভুল বোঝে। এই কাছের মানুষগুলির সবাইই কোন না কোনভাবে ওই চ্যানেল অথবা প্রোগ্রামটির স্পন্সর অথবা স্পন্সর কোম্পানির অ্যাড এজেন্সির মানুষ। কিছুটা কষ্ট পেলেও আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলাম আমার নিজের অবস্থানটা পরিষ্কার করতে। পুরোপুরি কাজ হয়েছিল কিনা জানি না; কিন্তু যেহেতু মানুষগুলি পছন্দের চরিত্র, তাই মন থেকেই চেষ্টা করেছিলাম।

অবাক ব্যাপার হল, অনেকের কাছ থেকেই এরপর আমি "অ্যান্টি-এফএম" ট্যাগ খেয়ে যাই।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সকালে অফিসে আসার সময় আমি এই প্রোগ্রামটা আবার শুনছি। এবং মনোযোগ দিয়ে ফলো করছি। এখনো সেখানে পরপর ৩টা দারুণ গান শোনানো হয়। প্রোগ্রামটার পলিসি চেঞ্জ হয়েছে কিনা জানি না, কিন্তু যতবারই শুনেছি, প্রতিবারই তিনটার মধ্যে দুইটা বাংলা আরেকটা ইংলিশ গান পেয়েছি।

প্লিজ, আবারও ভুল বুঝবেন না। কোনভাবেই এই পরিবর্তনের জন্য আমি নিজেকে ক্রেডিট দিচ্ছি না। অবশ্যই আপনারা সব কিছু বিবেচনা করে এই নতুন ফরম্যাট বেছে নিয়েছেন; যা শ্রোতা হিসেবে আমার ভাল লেগেছে।

আমার পছন্দের সাথে বাকি সবার পছন্দ মিলতে হবে এমন কোন কথা নাই। কিন্তু যেহেতু এই দুইটা বাংলা আর একটা ইংলিশ/হিন্দি/আরবি/ফ্রেঞ্চ/পারসি/মঙ্গোলিয়ান/ব্লা-ব্লা ফরম্যাট আমার পছন্দ হয়েছে, তাই সবাইকে ধন্যবাদ দিতেই এই লেখাটি পোস্ট করা।

সমালোচনা করতে আমরা বড়ই পটু। প্রশংসা করতেই কেন যেন আমাদের যাবতীয় কিপ্তামি। আজকে নাহয় কিপ্তামিটা না'ই করলাম।

August 19, 2014

বউ এবং মেসেজ চেক

কালো বউ, সাদা বউ, শ্যামলা বউ ...
গারিওয়ালা বউ, সিএনজি ওয়ালা বউ, রিকশাওয়ালা বউ ...
বউ উইথ স্মার্টফোন, বউ উইথ আনস্মার্ট ফোন, বউ উইথ নো-ফোন ...
বউ উইথ ল্যাপটপ, বউ উইথ ডেস্কটপ, বউ উইথ অর উইদাউট এনি সর্ট অফ টপ ...
লাভ ম্যারেজ বউ, আরেঞ্জ ম্যারেজ বউ ...
১৫ বছরের পুরানো বউ, গতকাল বিয়ে হওয়া নতুন বউ ...
বন্ধু-বন্ধু বউ, শত্রু-শত্রু বউ ...
পুতুপুতু বউ, খাণ্ডারনি বউ ...
মিউমিউ বউ, ঘাউঘাউ বউ ...
জিন্স-টপস বউ, শাড়ি-কামিজ বউ, হিজাব বউ ...
সমঝদার বউ, অবুঝ বউ ...
ঘরকুনো লক্ষ্মী বউ, উড়ুউড়ু পক্ষী বউ ...
----
----
----
আমার বউ ...
তোমার বউ ...
আপনার বউ ...
----
----
----
বউ যেমনই হোক না কেন; এ'যুগের বউ'দের একটা অভ্যাস কমন। জামাইয়ের গোচরে বা অগোচরে, তাদের মোবাইল ফোন, ফেইসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ'এর মেসেজ চেক করতে তারা বড়ই এক্সপার্ট।

* এইটা কিন্তু আমার কথা না। আমার এক দুষ্টু বন্ধুর কথা। নিরাপত্তাজনিত কারণে "তার" নামটা এখানে দেয়া গেল না। এই পোস্টের যাবতীয় বউ-ক্যারেক্টার নাকি তার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিত-পরিজনদের মাঝ থেকে বেছে নেয়া। ...
মা গো! মানুষের বউ এমন ভয়ংকর হয় নাকি!!! শোনেন সবাই, এদের কারো সাথে কিন্তু আমার বউ'এর কোন মিলই নাই। ঠিক না পূনম?

ধুম্রপান

একজন স্মোকারের গল্প বলি।
শুরুতেই বলে নেই, গল্পটা বেশ বোরিং। যারা কোন মুখরোচক গল্প খুঁজছেন, তাদের কাছে এখনি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
যাই হোক, গল্প শুরু করি।
-----
লোকটা মোটামুটি ভালই ধুম্রপান করতেন। একদম চেইন স্মোকার বলা না গেলেও দিনে এক প্যাকেট বা তিন দিনে দুই প্যাকেট তার রেগুলার কনজাম্পশন ছিল।
খুব স্বাভাবিক কারণেই লোকটার বউ তাকে যথেষ্ট প্যারা দিত সিগারেট ছেড়ে দেয়ার জন্য। এবং ভদ্রলোক "অমুক ঝামেলাটা মিটে গেলেই ছেড়ে দিব", "তমুক কাজটা হয়ে গেলেই ছেড়ে দিব" ইত্যাদি অজুহাতে বউ'কে ভুংভাং বুঝিয়ে রাখতেন। একসময় ভদ্রলোকের বউ প্রেগন্যান্ট হল এবং সে লোকটাকে প্রতিজ্ঞা করাল যে, সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার আগে তাকে অবশ্যই সিগারেট খাওয়া ত্যাগ করতে হবে।
ভদ্রলোক প্রমিস করলেন।
তাদের ঘর আলো করে ফুটফুটে এক মেয়ে আসল। এবং ...
তিনি সিগারেট খাওয়া চালিয়েই যেতে থাকলেন। খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করালেন - "মেয়ে যখন থেকে বুঝতে শিখবে, তার আগেই ধূমপান ছেড়ে দিব। প্রমিস।"
ছোট্ট মেয়ে অবাক চোখে দেখলো তার খুব ভাল বাবা'টার মুখ দিয়ে মাঝেমাঝেই পচা গন্ধওয়ালা ধোঁয়া বের হয়।
ভদ্রলোক তার মেয়ের অবাক চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে তাকানো ছেড়ে দিলেন।
তবু সিগারেট খাওয়া ছাড়লেন না।
একদিন লোকটার ভীষণ বুক ব্যাথা হল। সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। এমারজেন্সি'তে। ডাক্তাররা ইমেডিয়েটলি তাকে আইসিইউ'তে ট্রান্সফার করলো। লোকটার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, তিন বছরের মেয়ে - সবাই খুব ভয় পেয়ে গেল। এনজিওগ্রাম করা হল। তারপর, নানারকম যন্ত্রপাতি আর ওষুধপত্র দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে ফেরানো গেল। ডাক্তাররা সবার সামনে তাকে প্রমিস করালেন, যেন জীবনে কোনদিন আর সে সিগারেট না খায়।
ভদ্রলোক তার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে প্রতিজ্ঞা করলেন - জীবনে আর কোনদিন সিগারেট খাবেন না।
তিনি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলেন। তারপর ...
তিন মাস সতেরো দিনের মাথায় তিনি আবার সিগারেট খাওয়া শুরু করলেন।
ভদ্রলোকের বউ হাল ছেড়ে দিল। জানেই যখন বলে কোন লাভ হবে না, তাহলে খামাখা সময় নষ্ট করা কেন!
তারপর একদিন সত্যি সত্যি তিনি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলেন।
-----
নিশ্চয়ই ভাবছেন, এমন একজন ধূমপায়ী লোকের সিগারেট ছাড়ার পিছনে নিশ্চয়ই চরম নাটকীয় কোন গল্প আছে। আসলে, তেমন কোন চটকদার গল্প নাই বলেই প্রথমে এটাকে একটা বোরিং গল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নিয়েছি।
ভদ্রলোকের একদিন হঠাৎ করেই মনে হল যে - আচ্ছা, সিগারেট না খেলে কি হয়? দেখি তো ট্রাই করে।
এই করে করে ৭ দিন গেল, এক মাস গেল, দুই মাস গেল। দেখতে দেখে আড়াই বছর পার হয়ে গেল। লোকটা একটা সিগারেটও খেলেন না।
এর মধ্যে তাদের দ্বিতীয় সন্তান ঘরে এলো - এবার ছেলে সন্তান। ছেলে জন্মের পর থেকেই পেল একজন ধোঁয়াবিহীন বাবা। লোকটার মা মারা যাওয়ার আগে দেখে গেলেন তার ছেলে আর সিগারেট খায়না। মেয়ে তার শিশুকালে দেখা ধোঁয়া-মুখো বাবার কথা ভুলে গেল। বাচ্চাদের মা'ও তার সেই রাগ, অভিমান ভুলে গেল।
তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।
-----
লোকটার বউ অনুরোধ করলো, সে যে তার সিগারেট ছেড়ে দেয়ার গল্পটা সবাইকে জানায়। লোকটা বলল - এই বোরিং গল্প মানুষ কেন শুনবে! অ্যাটলিস্ট একটা পরকীয়া, একটা আদার ওম্যান বা একটা বড়সড় রকমের ধরা থাকলেও না গল্পের শেষটা জমত। কোন চার্ম নাই, উত্তেজনা নাই - একটা রাফ-অ্যান্ড-টাফ স্মোকারের সিগারেট ছেড়ে দেয়ার গল্পটা এমন ম্যাড়ম্যাড়ে হলে কি মানায়?
বউ বলল, সিগারেট ছেড়ে দেয়ার গল্পটা হয়তো রংহীন; কিন্তু সিগারেট ছেড়ে দেয়ার পরের জীবনটা যে কতরকম রঙে ভরপুর - এটা জানলে নাকি অনেকেরই ভাল লাগবে।
লোকটা বউয়ের কথামতো গল্পটা লিখে ফেলল। আমি তার হয়ে গল্পটা আপনাদের জানিয়ে দিলাম।

August 25, 2014

আঁখি আলমগীর আর রবি চৌধুরী

একটা টিভি প্রোগ্রামে দেখলাম আঁখি আলমগীর আর রবি চৌধুরীর সাক্ষাতকার দেখাচ্ছে।
উপস্থাপিকা প্রশ্ন করলেন, "তো রবি'দা, আপনার নেক্সট প্রজেক্ট সম্পর্কে কিছু বলুন।"
রবি'দা বললেন, "আমি একটা গযল'এর অ্যালবাম নিয়ে কাজ করছি। আমরা তো দেশে-বিদেশে অনেক জায়গায় শো করি, নানা রকম অনুরোধ আসে। তাই ভাবলাম নিজের কিছু গযল থাকলে খারাপ হয়না।"
আঁখি আলমগীর তার সাথে যোগ করলেন, "একদম ঠিক বলেছেন। যেখানেই যাই, হিন্দি গান গাওয়ার রিকোয়েস্ট আসে। আরে, অন্যের গাওয়া হিন্দি গান গাওয়ার চেয়ে নিজের হিন্দি গান গাওয়াই তো ভাল, তাই না? হা হা হা, হি হি হি।"
প্রথমে ভাবলাম, তিনি বোধহয় শ্রোতাদেরকে তাদের হিন্দিপ্রিতির জন্য সূক্ষ্ম খোঁচা দিলেন। কিন্তু না। পরক্ষনেই ভুল ভাঙল । ভদ্রমহিলা আসলেই ব্যাপারটাকে বেশ সিরিয়াসলি নিয়েছেন! তার একটা হিট গানের কথায় নাকি "জোর কা ঝাটকা", "বাবুজি রে" ইত্যাদি হিন্দি শব্দের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আল্লাহ্‌র অশেষ রহমত, এই ভয়ঙ্কর বুদ্ধিটাকে এখনো পর্যন্ত আমাদের অন্যান্য শিল্পীরা তাদের মাথায় ঢুকতে দেন নাই।
এই বুদ্ধিতে সবার আঁখি যদি খুলে যায় ... সবার গানে যদি বাবুজি এসে ঝাটকা লাগানো শুরু করে ... হামলোগ তো বরবাদ হো জাইঙ্গা রে। বিলকুল বরবাদ হো জাইঙ্গা!!!

August 27, 2014

সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০১৪

জি বাংলা - স্টার জলসা বন্ধ

পাশের পাড়ার ছালমান ভাই প্রতিদিন বিকালে দলবল নিয়ে মাঞ্জা মেরে আমাদের পাড়ায় আসতো। আর তাদের দেখতে আমাদের মেয়েদের সে কী বেহায়াপনা!

যে মেয়েগুলিকে সেই ছোটবেলা থেকে গার্ড দিয়ে দিয়ে বড় করলাম, আজ তাদের এ কী অধঃপতন! ছি ছি! পাশের পাড়ার হিজু হিজু ছেলেগুলিকে দেখে তাদের এ কি আদেখলামি! ছাদে উঠে, জানালার শিকের ফাঁক দিয়ে - কেন এমন ইঙ্গিতপূর্ণ মুচকি হাসি??? সিরিয়াসলি, ইজন'ট ইট টু মাচ টু টলারেট?

ওদের বুঝাতে বসলাম। "শুনো আপু'রা। তোমরা ভুল করছ। আমরাই কিন্তু তোমাদের আপন। ছালমান ভাই হল উড়ে আসা ভ্রমর, ফুলে ফুলে মধু খাবে, তারপর ফুড়ুৎ করে হাওয়া হয়ে যাবে। তোমাদের প্রতি তার কোন ফিলিংস নাই। সো, ওদের নিয়ে লাফালাফি বন্ধ কর। তোমাদের প্লিজ লাগে।"

পাষাণ আপু'রা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল - "এহ, তোমরা তো দেখতে ভাল না। কেমন যেন গরীব-গরীব। আহ, ওরা কি হ্যান্ডসাম। এততোগুলা কিউট। অঅঅঅঅ!"

আমাদের বেলুন ফুটা হয়ে গেল।

বুঝলাম, ছালমান অর তার দলকে শিক্ষা দিতে হবে। পাড়ায় ঢুকলেই একদম ঠ্যাং খোঁড়া করে দেব। তক্কে তক্কে থাকলাম - একবার পাড়ায় ঢুকে নিক, তারপর মজা বুঝাব।

ওরা পাড়ায় ঢুকল। তারপর ...

ইয়ে মানে ... থাক না ... বাকিটা নাহয় না'ই শুনলেন। মিষ্টি করে কানমলা দিয়ে, আর হাতে দুইটা ললিপপ ধরিয়ে দিয়ে ছালমান ভাই আমাদের চোখের সামনেই আমাদের মেয়েদের সাথে টুকুরটুকুর করতে থাকল।

আমরা কিউট কিউট মুখ করে আঙ্গুল চুষতে থাকলাম।

কিছুদিন গেল। তারপর ভাবলাম, প্রতিশোধ নিব। ওদের পাড়ায় গিয়ে ওদের পাড়াতো সুন্দরি "পাখি"র সাথে টাঙ্কি মেরে আসব।

হায়! সে চেষ্টাও করেছিলাম। লাভ হয়নি। ওদের গলিতে ঢোকার মুখে বড় বড় অ্যালসেশিয়ান কুকুর - ঘেউ ঘেউ করে তাড়িয়ে দিল। আমার মিউমিউ করে দূর থেকে পাখি'কে দেখে নিজ পাড়ায় ফিরে এলুম।

এদিকে আমাদের পাড়ার মেয়েদের আদেখলামি চলতেই থাকল। আমরাও দূর থেকে ওদের পাখি'কে ভালবাসতে থাকলাম। আমাদের চেহারাও ধীরে ধীরে গরীব থেকে গরিবতর হতে থাকল।

বুঝলাম, পুরুষত্বের বেইল নাই। "নাই বলস" এর চেয়ে "মামার বলস" ভাল।

লজ্জার মাথা খেয়ে মুরুব্বী'দের পা ধরলাম। "মামা, আমাদের বাঁচান। কিছু একটা করেন যেন ওরা আর আমাদের পাড়ায় ঢুকতে না পারে। আমাদের মেয়েদের বাঁচান। আমরাও নাহয় পাখিকে ভুলে যাব।"

মামা'রা খেপে গিয়ে বলল - "নালায়েক। লজ্জা করে না তোদের? ইন্দুরের মত চু-চু করতেসোস? নিজেরা কিছু করতে পারোস না?"

আমরা চুপ। জায়গা-বেজায়গায় অনেক ফাঁপরবাজি ঠিকই করতে পারি। তাই বলে ছালমান ভাই'এর সাথে পাঙ্গা? পাগল নাকি? আসলে তো আমরা একটা কিউট জাতি। তাই না? "মামাআআআ, কিছু একটা করেন। আপনাদের পিলিজ লাগে।"

যাই হোক, ফাইনালি মামারা তাদের ভাগিনাদের বীরত্বের দৌড় বুঝতে পেরে এবং ভাগ্নিদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে নিয়ম জারি করলেন, ছালমান ভাইরা আর এ'পাড়ায় ঢুকতে পারবে না।

ধীরে ধীরে পাড়ায় শান্তি ফিরে এলো।

আমরা অনেক খুশি হলাম। পটকা ফুটালাম, হালুয়া খেলাম, ফেইসবুকে হ্যাপি-হ্যাপি স্ট্যাটাস দিলাম।

দি এন্ড।

-------

জি বাংলা, স্টার জলসা ইত্যাদি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণাতে (অফিশিয়াল কোন নিউজ অবশ্য আমার কাছে নাই) কেন যেন ঠিক খুশি হতে পারছি না। এই সিধান্ত'কে সাধুবাদ জানিয়ে অনেকের "ওহ ইয়াহ, উই ডিড ইট" টাইপ স্ট্যাটাস দেখেও কেন যেন গা জ্বলছে।

এখনো বিশ্বাস করি, আমরা ভাল প্রোগ্রাম দিতে পারলে আমাদের দর্শকরা ও-পাড়ার অনুষ্ঠান গোগ্রাসে গিলত না।

বেশি ভাল লাগত যদি নিয়ম করে এসব চ্যানেল বন্ধ করতে না হত। অনেক বেশি শান্তি লাগত, যদি, বিজ্ঞাপনের পরিমাণ কমিয়ে, চ্যানেলগুলির পলিসি নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে আর বেটার প্রোগ্রাম দিয়ে আমাদের দর্শকদের আমাদের চ্যানেলে আটকে রাখতে পারতাম।

পাড়া-মহল্লা কালচারে বড় হওয়া ছেলে তো, মামা-চাচার লুঙ্গির পিছে লুকিয়ে বীরত্ব দেখাতে লজ্জা লাগে।

সরি।

I #SupportGaza

"I am অমুক, I am from তমুক, and I support Israel"

"I am অমুক, I am from তমুক and I support ManU/Chelsea/Liverpool"

"I am অমুক, I am from তমুক and I lough at all the morons, hash-tagging "SupportGaza"

সিরিয়াসলি গাইজ, এটা আপনাদের কাছে কুল হওয়া? মুসলিম-ইহুদি ইস্যু না। যেখানে নিরীহ মানুষ পাখির মত মরছে, আমারা দুরে বসে সত্যি সত্যিই আর কিছু করতে না পেরে হ্যাশট্যাগ করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করছি - কিছু মানুষের এটা নিয়েও ফাইজালি করতে হল?!!!

যেখানে লাখ লাখ মানুষ #SupportGaza, #FreePalestine হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফিলিস্তিনের উপর এই বরবরচিত হামলার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছে, সেখানে কিছু মানুষের এটা নিয়ে তির্যক মন্তব্য দেখে মায়া লেগেছে।

কাকের ঝাঁকে মেকআপ মেখে ফেইক ময়ূর সেজে লোক না হাসালে কি চলতই না?

আপনারা বুদ্ধিমান? আর আমরা সবাই বলদ? সিরিয়াসলি?

নাকি বাকিরাই সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ? আর আপনারা মহামানব টাইপ কিছু?

যারা তাচ্ছিল্য করে প্রশ্ন করছেন যে এই হ্যাশট্যাগ করে কোন লাভ হচ্ছে কি না, তাদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার ইচ্ছাও আমার নাই। তবে হ্যাঁ, শুনে রাখুন। লাভ একটা হচ্ছে বটে। ফ্রেন্ডলিস্টে একটা নতুন গ্রুপ খুলতে পারছি - Poor Attention Seeker Assholes নামে। (বিশ্বাস করেন, নামটা দেয়ার সময়ও নামের শর্টফর্মটা মাথায় আসে নাই)

শেষ কিছু কথাঃ

১। ভাই, আপনাকে কেউ পায়ে ধরে নাই হ্যাশট্যাগ করে স্ট্যাটাস দেয়ার জন্য। আপনি না দিলেও কেউ আপনাকে "ক্যান দিলেন না" বলে প্রশ্ন করবে না। চুপ থাকেন না রে ভাই, তাহলেও তো হয়।

২। কেউ কেউ 'সাপোর্ট গাজা' বা 'ফ্রি প্যালেস্টাইন' হ্যাশট্যাগ-ওয়ালা স্ট্যাটাস দিয়েছে বলে আপনারা যদি তাদের নিয়ে পাবলিক পোস্টে হাসাহাসি করতে পারেন, তাহলে আপনাদের নিয়েও আমি আমার পাবলিক পোস্টে যা খুশি বলার পূর্ণ অধিকার রাখি।

৩। আপনাদের পোস্টে গিয়ে আমি কমেন্ট দিয়ে আসি নাই। ইন ফ্যাক্ট আমার রুচিতেও কুলায় নাই। তাই দয়া করে আমার পোস্টে আপনাদের লেইম লজিক দিতে আসবেন না। আপনার লজিক আপনার, আমার লজিক আমার। উলটা-পালটা কমেন্ট দেখলে নগদে ব্লক করব।

৪। এই নেন। আবার দিলাম কাকের ঝাঁকের হুজুগে হ্যাশট্যাগ -

I am Razeeb Hasan Chowdhury, I am from @Bangladesh and I #SupportGaza . #FreePalestine .#Save #Humanity.

কেবিসি'র নতুন অ্যাড

কেবিসি'র নতুন অ্যাড'টা অসাধারণ হয়েছে।

কিছু কিছু অ্যাড আছে, যেগুলি দেখলে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করে "ইশশ, এই আইডিয়াটা ক্যান আমার মাথায় আসল না!" - এইটা তেমনি একটা অ্যাড।

পাশাপাশি দুইটা বাসা; একটা হিন্দুদের, একটা মুসলমানের। কেবিসি প্রোগ্রামটাকে উপলক্ষ করে কিভাবে দুই বাসার মানুষগুলি এক হয়ে যায় - এটাই বিজ্ঞাপনের কনসেপ্ট।

এইবার মজা দেখেন। অ্যাড'টা দেখার পর নানান মানুষের নানান কমেন্ট পড়ছিলাম। কিছু অসাধারণ কমেন্ট তুলে দেয়ার লোভটা সামলাতে পারলাম না।

আমরা যে কত তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া করতে পারি, তার একটা নমুনা দেখতে পাবেন।

---------

প্রথমজনঃ কবে এই জিনিষটা আমরা বুঝবো ?

দ্বিতীয়জনঃ বাট বিশ্বাস আলাদা। গরুর রক্তের রং ও লাল, এখন গরুও যদি নিজেরে মানুষ দাবী করে তাইলে তো হবে না। (এই কমেন্টে ৩ টা লাইকও আছে)

তৃতীয়জনঃ গরুতো গরুই। এখানে মানুষের কথা বলা হচ্ছে। মানুষের মতো গরুতে তো এত ভেদাভেদ নেই। ঠিক না?

চতুর্থজনঃ ****'er kotha sunay monay hoy say nijaye gori. Tar moto kichu goru achay bolay aj dun ire ai obostha.

দ্বিতীয়জনঃ গরুতেও ভেদাভেদ আছে। ফ্রিজিয়ান গরু, সিন্ধি গরু, অস্ট্রেলিয়ান গরু এরকম আরো অনেক। শুধু নামেই না, গঠন, আকার,ও প্রকৃতিতেও তফাৎ আছে। দেশি গরুর চেয়ে ফ্রিজিয়ান ও সিন্ধি গরু দুধ দেয় অনেক বেশি, আবার ইন্ডিয়ান গরুর সাইজ দেশি গরুর চেয়ে অনেক বড়। অথচ মজার ব্যাপার হল, গরুগুলোর রক্তের রং এক। কাজেই রক্তের রং এক হলেই প্রভেদ থাকবে না এটা কোন যুক্তি হতে পারে না। বৈচিত্র্যময় এ পৃথিবীতে ভেদাভেদ আছে বলেই জীবন গতিশীল।

আবারও দ্বিতীয়জনঃ জনাব ***** (চতুর্থজন), আগে মানুষের মত শুদ্ধভাবে লিখতে শিখুন, তারপর না হয় বের করা যাবে কে গরু আর কে মানুষ। লিখছেন তো বাংলিশে, তাও যদি goru কে gori লিখেন তো কিভাবে হবে?

------

যেকোনো জিনিস'কে পিওর কমেডি লেভেলে নিয়ে যেতে পারার যে অসাধারণ ক্ষমতা, তা মনে হয় শুধু আমাদেরই আছে।

ঠিক না?

হিগওয়ে

সেদিন দেখি পাড়ার ডিশের চ্যানেলে একটা মুভি দেখাচ্ছে। স্ক্রিনের কোনায় বাংলা হরফে নাম লেখা - "হিগওয়ে"।

আমার ব্ল্যাংক লুক দেখে বউ বুঝিয়ে বলল, মুভির নাম আসলে "হাইওয়ে"।

এরপর থেকে আমি মহা আগ্রহে ওই চ্যানেলে মুভির নামগুলি খেয়াল করতে লাগলাম। এবং, আল্লাহ্‌র কসম লাগে, ওরা আমাকে একবারের জন্যেও হতাশ করে নাই।

একদিন চালালো "রাবনা বানা"। মুভিটা কিছুক্ষণ দেখে বুঝলাম, ওইটার "রাব নে বানা দি জোড়ি"।

আরেকদিন ছিল "টুশটেট"।

"বরপি", "কাবি খুশি কাবি গুম", "দিল ছাতা হে" ... লিস্ট অনেক লম্বা রে ভাই।

কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব!

যারা গাড়িতে ঘুরাঘুরি করেন, দয়া করে দরজাগুলি লক করে রেখেন।

লোকটা কি পাগল নাকি ক্রিমিনাল, শিওর না; যেটাই হোক, ঘটনাটা জানা থাকলে হয়তো আপনারাও সাবধান থাকতে পারবেন।

গতকাল ইফতারের আগে আগে আমি গাড়ি নিয়ে মহাখালী থেকে নিকুঞ্জ যাচ্ছি। ড্রাইভার নাই, আমি গাড়িতে একা।

মহাখালী মোড়ে (মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যে রাস্তাটা গুলশান ১'এর দিকে যায়), সিগনালে আমার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। সামনের বামপাশের দরজার পাশে একটা ২০/২২ বছরের ছেলে এসে দাঁড়াল। ভিক্ষুক না, কাল গোলগলা টিশার্ট আর কাল ময়লা প্যান্ট পরা হ্যাংলা-পাতলা একটা ছেলে।

আমি হাতের ইশারায় জানতে চাইলাম, কি চায় সে। একটা অপ্রকিতস্থ চাহনি দিয়ে ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। কেমন যেন ড্রাগ অ্যাডিকটেড টাইপ দৃষ্টি। আমি হাতের ইশারায় ওকে চলে জেতে বললাম। কিন্তু সে গাড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকল।

সিগনাল ছুটতে যখন গাড়ি চলতে শুরু করল, ছেলেটা হঠাৎ গাড়ির দরজার হ্যান্ডল ধরে টানতে শুরু করল। দরজা লক করা ছিল, তাই সে দরজা খুলতে পারল না। আমি গাড়ি হাল্কা টানা শুরু করলে সেও দরজা ধরে গাড়ির সাথে সাথে দৌড়াতে লাগল।

কাঁচ নামিয়ে ঝারি দিয়েও কোন লাভ হল না। কোন কিছু না বলে ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। ইফতারের ঠিক আগের সময়, ভিড়ের মধ্যে তখন কারোর দিকে কারো তাকানোর টাইম নাই। গাড়ি থেকে নেমে যে ছেলেটাকে ফাঁপর দিব, সেই সাহস হল না।

গাড়ি থামালাম। সামনের গাড়িগুলি'কে কিছুটা এগিয়ে যেতে দিলাম। যখন দেখলাম সামনের রাস্তা খালি হয়েছে, তখন গাড়ি জোরে টান দিলাম। ছেলেটার দরজা ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।

ছেলেটা পাগলও হতে পারে, আবার তার খারাপ মতলবও থাকতে পারে। দরজা যদি লক করা না থাকত, আর ওই ভিড়ের মধ্যে দরজা খুলে, গাড়িতে উঠে যদি ব্যাটা একটা ছুরি বা পিস্তল বের করত, আমার কিন্তু কিছুই করার থাকত না।

যারা গাড়িতে ঘুরাঘুরি করেন, দয়া করে দরজাগুলি লক করে রেখেন।

সময়টা আসলেই ভালো না।

পেইন

আমার মোবাইল ফোনের কন্টাক্ট লিস্ট দেখি "পেইনে" মাখামাখি!

এর সূত্রপাত বেশ আগে। এক পাবলিক আগে রেগুলার ফোন দিত। আয়েশাকে খুঁজতে। এই আয়েশা কোন আয়েশা, তা জানি না, কিন্তু আব্বা-আম্মা যে আকিকা দিয়ে আমার নাম আয়েশা রাখে নাই, এটা আমি শিওর জানি। ব্যাটাকে হাজারবার বুঝিয়েও কাজ হত তা। ফোনটা ধরলেই মধু-মধু কণ্ঠে বলতো - "হেলুউঁউঁ, আয়েশাআআ?"

তখনও নাম্বার ব্লক করার কায়দা শিখি নাই। তাই বাধ্য হয়ে তার নাম সেইভ করেছিলাম "পেইন" হিসেবে।

এ থেকেই শুরু কন্টাক্ট লিস্টে পেইনের অন্তর্ভুক্তি।

নিজের অজান্তেই তারপর থেকে একের পর এক মানুষ তাদের নিজনিজ চরিত্রগুনে আমার লিস্টকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন।

এক স্কুলগোয়িং ছেলে কিভাবে যেন আমার ফোন নাম্বার পেয়েছে। সে যখন তখন ফোন দেয়া শুরু করল। "ভাইয়া, প্লিজ অ্যাড মি ইন ফেইসবুক। আই অ্যাম এ ভেরি গুড লাইকার।" তাকে খুব ভদ্রভাবে ফোন করতে বারণ করা সত্ত্বেও সে মাঝেমাঝেই ফোন করে বিরক্ত করতে লাগল। - আমি মানুষটা খুব একটা সুবিধার না। তাই, তার নাম সেইভ করা হল "ফেইসবুকিও পেইন" নামে।

আমার সাথে আমার স্কুলের ছোটভাই'দের সাথে সখ্যতা বেশ। ওদের সবাইই খুব ভালো, কিন্তু একটা আছে, বেশ বেয়াদব। ফোনটা ধরেই এমন ভাবে কথা শুরু করে যেন আমি তার ন্যাংটা কালের ইয়ার-দোস্ত। অথচ ছেলে আমার থেকে মিনিমাম ১০ বছরের জুনিয়র। তার নাম সেইভ করলাম "স্কুলের পেইন" নামে।

আরও আছে। একটা অতিশয় ন্যাকা সুন্দরি ক্লায়েন্ট ছিল আমার। কারণে-অকারণে ফোন দিয়ে বাংলিশে বাতচিত করত। তিনি হলেন "নকশা পেইন"।

কোন এক কুক্ষণে এক "ভদ্রলোক" আমার ক্লায়েন্ট হয়েছিল। বড়ই স্মার্ট, গুডলুকিং জেন্টলম্যান। কিছুদিন যেতেই তার চরিত্র প্রকটভাবে প্রস্ফুটিত হল। ব্যাটা যেকোন জায়গা থেকে পয়সা খায়, অথচ বেতন পায় সিক্স ডিজিটে। কথিত আছে, উনি নাকি অফিসে বিরিয়ানি খেলেও ভুয়া বিল করে ডাবল টাকা উথাতেন। নির্দ্বিধায়, নিঃসংকোচে, খুশিমনে তার নাম দিলাম "চোর পেইন"।

কষ্টের সাথেই জানাচ্ছি। পরিচিত আরও বেশ কিছু মানুষ নিয়ে ইদানীং সিমিলার কাহিনী শুনতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে সামনে "চোর পেইন ১", "চোর পেইন ২" এমন করে সিরিজ শুরু করতে হবে।

সবশেষে আছে "দা পেইন"। এই পেইনের জন্য কোন বিশেষণই যথেষ্ট না। "দা পেইন" এমন একজন মানুষ, যাকে আপনি না পারবেন গিলতে, না পারবেন ফেলতে। না পারবেন ডিপ্লোম্যাটিক্যালি হ্যান্ডল করতে, না পারবেন চটকান মেরে বিদায় করতে। পাগলের সুখ মনে মনে, আমার সুখ "দা পেইন" নামকরণে।

কেন জানি মনে হচ্ছে, এমন "দা পেইন", অনেকের জীবনেই বর্তমান।

আমার কন্টাক্ট লিস্টের একটা স্ক্রিনশট কমেন্টে দিয়ে দিলাম।

মা-খালাদের সাথে ফুটবল দেখা

মা-খালাদের সাথে ফুটবল দেখার কিছু ইউনিক মজা আছে।

যেমন, ওনারা খালি একজনের সাথে আরেকজনের মিল খুঁজে পান। ফাইনালের দিন, জার্মানির কোচ'কে নিয়ে শুরু হল খালাদের অ্যানালাইসিস। একজন বলল জোয়াকিম লো সাহেব দেখতে শাহরুখ খানের মত। আরেকজন বলল - না, মোটেও না। ভদ্রলোকের সাথে অর্জুন রামপালের মিল আছে।

খেলার উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন সেজ খালা হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠল - "পাইসি রে, পাইসি, ব্যাটার চেহারা আসলে চাঙ্কি পাণ্ডের মত। ঠিক না? ঠিক না? বল, বল, ঠিক না?"

আমরা সবাই সায় দিলাম। একদম ঠিক, ব্যাটার চেহারা চাঙ্কি পাণ্ডের মত। (আশা করি, আমার এই লেখা কোনদিন লো সাহেব পড়বেন না, এবং পড়লেও ওনার সাথে কখন চাঙ্কি পাণ্ডের দেখা হবে না।)

সেকেন্ড ট্রেন্ড হল, ওনারা সম্পর্ক বড়ই পছন্দ করেন। আগুয়েরো যেহেতু ম্যারাডোনার জামাই, তাই তার প্রতি সবার অসম্ভব মায়া।

"আহা রে, এই ছেলেটারই বিশ্বকাপ জেতা উচিত। ম্যারাডোনার মেয়েটার কততো ভালো লাগবে। বর-বাবা দু'জনেই ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন। আল্লাহ্‌ তুমি জামাইবাবা'কে চ্যাম্পিয়ন বানায়া দাও। আমিন।"

এই মায়া আবার চেহারার সাথে রিলেটেড। মেসির চেহারা যেহেতু মায়ামায়া, তাই ওর কান্না দেখলে সবার বুক ফেটে যায়। নেইমার যেহেতু শিশু-শিশু, তাই ও যখন ব্যাথা পায় তখন আমার খালারাও ব্যাথা পান।

কিন্তু ...

শোয়াইনস্টেগারের যখন গাল বেয়ে রক্ত পড়ে, খালাদের সে কি নিষ্ঠুর জাজমেন্ট - "আরে ধুর, জার্মানির সব ফেইক। এইটা রক্ত নাকি টমেটো সস সেইটা আগে চেক করা উচিত। মনে নাই, সেই ৯০ সালে কাইন্ঠামি করে পেনাল্টি আদায় করে আর্জেন্টিনা'কে হারাল। আহারে, বেচারা ম্যারাডোনা। ওর ওই কান্নাকান্না চেহারাটা এখনও চোখে ভাসে রে।"

কি অসাধারণ কিউট আমাদের মা-খালাদের ফুটবল প্রেম! শুধু ওনাদের সাথে খেলা দেখার জন্যই তো প্রতিবছর ওয়ার্ল্ড কাপ হওয়া উচিত। ঠিক না?

বাংলাদেশি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বর্জন

আজ ... এই মুহূর্ত থেকে ... আমি যাবতীয় বাংলাদেশি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে (লেজিটিমেট নিউজপেপারের অনলাইন ভার্সন আর বিডিনিউজ২৪ ছাড়া) বর্জন করলাম।

কিছু অশিক্ষিত, ফালতু পাবলিক ভিত্তিহীন, বানোয়াট, সস্তা খবর লিখে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, আর মানুষজন সেসব পড়ে ... দেশ, ধর্ম, পৃথিবী গুলিয়ে খেয়ে জ্ঞানী থেকে মহাজ্ঞানী হয়ে যাচ্ছে ...... এইসব পোর্টাল ব্যাবসায়ি জ্ঞানপাপীদের ভরা মজলিশে থাবড়ানো উচিত।

এবং, আমার ফ্রেন্ডলিস্টে যাদের দেখব এইসব আজাইরা পোর্টালের বাজাইরা নিউজ শেয়ার করছে, তাদের বিনা নোটিশে নগদে আনফলো করব। আল্লাহ্‌র কসম।

খবর দেখার মত সাহস হচ্ছে না

খবর দেখার মত সাহস হচ্ছে না। ছোটছোট বাচ্চাগুলির রক্তাক্ত শরীর দেখার মত মানসিক শক্তি আমার নাই। ফেইসবুকে কিছু ছবি, আর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরার কিছু কাভারেজ দেখে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক কারণ যাই থাকুক না কেন, নিরপরাধ নারী-শিশুদের উপর এমন হামলা কিভাবে মেনে নিচ্ছে বিশ্বশান্তির ধারক ও বাহকরা? কিছু করা হচ্ছে না কেন? এটা কেমন বিচার?

দোআ করা ছাড়া আর কিছু করার নাই আমাদের। তাই দু'হাত তুলে আল্লাহ্‌'র কাছে প্যালেস্টাইন'এর ভয়ংকর অসহায় মানুষগুলির জীবনের জন্যর প্রার্থনা করছি। আল্লাহ্‌, তুমি তাদের দিকে একটু তাকাও। আর যুদ্ধবাজ অসুস্থ মানুষগুলির মগজে শুভবুদ্ধির উদয় ঘটাও; তাদের ঠিক পথ দেখাও।

মানুষ যখন আর মানুষ থাকে না, তখন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ তাদের পথ দেখাতে পারে না।

"ফ্রেন্ডস ফর দা পুওর পিপল"

কিছুদিন আগে আমার অফিসের "ওয়ার্ল্ড কাপ ফিভার" নিয়ে একটা ভিডিও আপলোড করেছিলাম, মনে আছে?

আজকে ওই ভিডিওটা করার পিছনের একটা সুন্দর গল্প বলি।

আমরা হঠাৎ করেই ঠিক করি অফিসের ফুটবল নিয়ে পাগলামি নিয়ে একটা ভিডিও করে ফেলার। ভিডিওটা কেমন হবে, কি কি থাকবে এসব নিয়ে যখন প্ল্যান করতে বসেছি, আমার কলিগ রাজীব একটা জোশ আইডিয়া দিল।

"ভাই, পাগলামিটা শুধু অফিসের মধ্যে আটকে রাখতে ইচ্ছা করছে না। আমরা কি এই উসিলায় কিছু মানুষের মধ্যে খুশি ছড়িয়ে দিতে পারি না?"

---------

যেই ভাবা, সেই কাজ।

ভিডিওটা করার সময় শুরু হল অফিসের ভিতর চাঁদাবাজি। কোন নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট নাই, যে যা পারে তাই দিবে। আমাদের এক্সপেকটেশন খুব বেশি কিছু না। রাজীবের প্ল্যান হল, যা টাকা উঠবে তা দিয়ে কিছু বল আর জার্সি কিনে এমন কিছু বাচ্চাদের দিব, যারা এটুকু পেয়েই অনেক খুশি হবে।

--------

ঢাকা শহরে ফাসেরটেক বলে একটা জায়গা আছে, জানেন? আমিও আগে জানতাম না।

এই ফাসেরটেকে ডিনো হালদার নামে এক ভদ্রলোক সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাদের জন্যে একটা স্কুল চালান। ডিনো পেশায় একজন দর্জি। খুব ছোট করে শুরু হলেও স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বর্তমানে ১৮০ জন। ছাত্রছাত্রীরা এখানে বিনা পয়সাতে পড়ে। ডিনো তার পরিচিত মানুষজনের কাছ থেকে টুকটাক সাহায্য নিয়ে আর নিজের কঠোর পরিশ্রম দিয়ে স্কুলটাকে চালিয়ে যাচ্ছে।

--------

আমরা সিদ্ধান্ত নেই এই স্কুলের বাচ্চাদের একটু হলেও খুশি করবো। ওদের সাথে যোগাযোগ হল, ওরা রাজি হল। পুরা আরেঞ্জমেনটের দায়িত্ব দেয়া হল আমার আরেক কলিগ রাব্বি'কে।

রাব্বি আর তার দল কিভাবে কিভাবে যেন ম্যাজিক দেখিয়ে দিল। আমাকে ওদের প্ল্যান শেয়ার করল।

"ভাইয়া, প্ল্যান ইজ, আমরা ওদের স্কুলে যাব। বাচ্চাদের মধ্যে একটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ হবে। আমরা বল, জার্সি, খাবারদাবার নিয়ে যাব। স্কুলের পাশে একটা মাঠ আছে। ওইটা সাজাব। খেলা শেষে বল, জার্সি সব ওদের দিয়ে আসব।"

তারপর একটা হাসি দিয়ে বলল -

"আরও একটা সারপ্রাইজ আছে। ওদের জন্য একটা টিভি আর একটা ডিভিডি প্লেয়ার কিনে ফেলছি। ওগুলাও ওদের স্কুলে গিফট করে আসবো। ওরাও তাহলে ওয়ার্ল্ড কাপ দেখতে পারবে।"

আমি তো পুরাই হব্দ।

"এতো টাকা পাইলা কই?"

"ভাই, চিন্তা কইরেন না। চুরি-ডাকাতি করি নাই। অফিসের পোলাপান'রে হালকা ছিল দিসি। ওতেই টাকা উঠে গেসে। আর এতে কেউ রাগও করে নাই।"

----------

গত ২৮ জুন, শনিবার, অফিস ছুটির দিনে, আমাদের ১৫/২০ জনের একটা গ্রুপ মাল-সামান নিয়ে হাজির হয় "ফ্রেন্ডস ফর দা পুওর পিপল" স্কুলের পাশের মাঠে। সকালের বৃষ্টিতে ভিজে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জার্সি পরা কালো-কালো ছেলেগুলি ফাসেরটেকের মাঠ কাঁপিয়ে ফেলে মুহুর্মুহু চিৎকারে।

কখনো জার্সি পাওয়ার আনন্দে, কখনো গোল করার উত্তেজনায়, কখনো বা টিভি-ডিভিডি প্লেয়ারের র‍্যাপিং পেপার খোলার খুশিতে।

---------

উপসংহারঃ

১। দুইজনের ক্যামেরায় ওইদিনের প্রায় ১২ গিগাবাইট ভিডিও ফুটেজ আছে। যেগুলা নিয়ে একটা ছোট ভিডিও রেডি করার কথা। দায়িত্ব যাকে দেয়া হয়েছে, সে মহা ফাঁকিবাজ, এখনো কিছুই করে নাই। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম রাজীব হাসান চৌধুরী। উনি কথা দিয়েছেন অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভিডিওটা কমপ্লিট হবে। এবং সেটা Ogilvy Bangladeshএর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে আপলোড করা হবে।

২। কিছু ছবি অফিসের ফেইসবুক পেইজ থেকে দু'এক দিনের মধ্যেই আপলোড করা হবে। ওখান থেকে বাচ্চাদের খুশির ছবি দেখে নিতে পারেন।

৩। আমার অফিসটা আর অফিসের মানুষগুলা আসলেই অনেক জোশ। এত তাড়াতাড়ি জায়গাটাকে ভাল লাগতে শুরু করবো, এক্সপেক্ট করি নাই।

শনিবার, ৫ জুলাই, ২০১৪

শুভ জন্মদিন জীয়ন

বাপ আমার,

আমি জানি, খুব শীঘ্রই তুই আমাকে একই সাথে ৭ হাটে বেচে আসতে পারবি । আল্লাহর অশেষ কৃপায় তুই দিনদিন যে মাপের ত্যান্দরে পরিণত হচ্ছিস, ম্যাট্রিক পাশ করতে করতে তুই যে কি হবি, সেটাই এখন দেখার বিষয়। (বিশাল বড় দীর্ঘশ্বাস) ...

যাই হোক বাপ, তোর কাছে তোর এই বোকাসোকা বাপের একটাই অনুরোধ - যেখানেই বেচিস, ভাল দামে বেচিস। মগজ হোক বা শরীর, দুই ক্ষেত্রেই আমি কিন্তু বেশ ওজনদার মানুষ।

শুভ জন্মদিন জীয়ন। তোর তো অনেক বুদ্ধি, তাই নিশ্চয়ই এই দুই বছরে বুঝে গেছিস যে তোকে আমি অনেক ভালবাসি।

ললিপঅঅঅঅপ

ছেলের বয়স মাত্র দুই, কিন্তু মেজাজ পঞ্চান্ন বছরের বুড়ার মত।

কোন কিছু মনমত না হলেই চোখ গরম করে "পঅঅঅঅপ" করে ঝারি দেয়। যখন-তখন, যার-তার সামনে। বাবা-মা হিসেবে এ নিয়ে আমরা ভালোই বিব্রত।

কি লজ্জার কথা বলেন তো, হাঁটুর বয়সী পোলা, যদি মেহমানের সামনে "পঅঅঅঅপ" মেরে দেয়, বেইজ্জতি হয়ে যাবে না?

শান্তির কথা হল মেয়ে আমার বিশাল বুদ্ধিমতি। বরাবরের মত এবারও সমস্যার সমাধান করে ফেললো।

কয়েকটা সেশন নিয়ে সে জীয়নকে শিখাতে সক্ষম হল, যে "পঅঅঅঅপ" হল ছোট বকা, এটা দিলে খুব একটা লাভ হয় না। বড় বকা হল "ললিপঅঅঅঅপ" - যেটা দিলে বাবা-মা ভয়ে হিসু করে দিবে।

ব্যাস, পুত্র আমার মহা খুশি। "পঅঅঅঅপ" পুরাপুরি ভুলে গেল, এখন রেগে গেলেই সে চোখ পাকিয়ে বলে "বাবাআআআ, মাআআআ, ললিপঅঅঅঅপ" ।

আমরা হেসে দিলে সে আরও গরম হয়ে বলে, "ললিপঅঅঅঅপ বলসি কিন্তুউউউ"।

আমরা তখন অনেক ভয় পাই। আমাদের ভয় দেখে ছেলের রাগও কমে যায়।

আহ, আই অ্যাম সো প্রাউড অফ মাই গার্ল 

"8 person. 600 KG"

"8 person. 600 KG"

এটা আমার মত "ভাল স্বাস্থ্যের" অধিকারী মানুষদের জন্য বড়ই বিব্রতকর একটা সাইন, যা বেশির ভাগ লিফটের ভিতরেই থাকে।

পাবলিক লিফটে উঠেই আমি "ইয়া নফসি, ইয়া নফসি" করতে থাকি। আমি সহ ৫ জন উঠলেই আমি দোআ করতে থাকি যেন লিফটে আর কোন লোক না ওঠে।

কখনো কখনো বেঁচে যাই। কিন্তু, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাঁচি না।

সাধারণত ৬ নম্বর লোকটা ওঠার সাথে সাথেই লিফট প্যাঁ প্যাঁ করে অ্যালার্ম দিতে থাকে, "ওভারলোড,ওভারলোড"।

তারপরের কনভারসেশনগুলা সাধারণত কপি-পেস্ট, সেইম টু সেইম।

ভিতরের একজন ৬ নম্বর লোকটাকে লিফট থেকে নেমে জেতে বলবে। লোকটা পাত্তা না দিয়ে লিফটে উঠে পরবেন। এদিক-সেদিক নাড়াচাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে অ্যালার্ম বন্ধ করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু কোন কিছুতেই কোন কাজ হবে না।

তারপর তিনি বিরক্ত হয়ে গজগজ করতে করতে নেমে যাবেন।

একজন বলবেন, "লিফটের অবস্থা তো পুরাই কেরোসিন। লেখা ৮ জন, ৫ জন উঠতে না উঠতেই ওভারলোড। কোন মানে আছে?"

আরেকজন বলবে, "এই ৫ জনে ৬০০ কেজি হয় ক্যামনে? আজাইরা লিফট একটা।"

ঠিক তখনি...

ঠিক তখনি...

তাদের একজনের নজর পরবে আমার উপর। মোবাইল ফোনে এসএমএস পড়ার ভান করতে করতে আমি তখন শিওর হব - মনে মনে জপতে থাকা "ইয়া নফসি" আবারও ফেল করেছে।

ফিচেল একটা গা জ্বালানি হাসি দিয়ে ভদ্রলোক বলবেন, "ওহ, না না, লিফট ঠিকই আছে। ভাই মোটামুটি ৩ জনের প্রক্সি দিয়ে দিসেন। হে হে।"

বাকিরাও তখন "নতুন চোখে" আমাকে মাপতে থাকে।

কি আশ্চর্য!!! একেকজনের চেহারা একেকরকম। কিন্তু সবার ফিচেল হাসিটা হুবহু এক। পুরাই কপি-পেস্ট!

...
...
...
...
...

"8 person. 600 KG"

ফাইজলামির একটা সীমা থাকা উচিত।

যুক্তবর্ণ

মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষার খাতা দিয়েছে। মাশাল্লাহ, ভাল রেজাল্ট করেছে।

বাপসুলভ পাকনামি করতে হয়ে বলে খাতাগুলি নেড়েচেড়ে দেখছি। বাংলা খাতা দেখে আক্কেল গুড়ুম।

প্রশ্ন হল "যুক্তবর্ণ ভেঙ্গে দেখাও ও দুটো করে শব্দ লিখ"

"ণ্ঠ" - মেয়ে লিখেছে "ণ + ঠ", "কণ্ঠ" আর "গণ্ঠ"। (টিচার প্রথমটায় নম্বর দিয়েছে, দ্বিতীয়টায় গোল্লা।)

"গ্ধ" - মেয়ে লিখেছে "গ + ধ", "মুগ্ধ" আর "বগ্ধ"। (যথারীতি টিচার প্রথমটায় নম্বর দিয়েছে, দ্বিতীয়টায় গোল্লা।)

আমি মেয়েকে ডাকলাম। "কাহিনী কি মা? গব্দ, গণ্ঠ ... এইসব কই পাইসস?"

জবাব পেলাম, "প্রশ্নটা ঠিকমত পড়ে তারপর ঝাড়িটা মারলে খুশি হতাম। প্রশ্নে বলা ছিল দুটি শব্দ লিখতে হবে। মিনিংফুল শব্দ লিখতে হবে সেটা তো কোথাও বলে নাই। গব্দ, গোব্দা, গণ্ঠ, মণ্ঠ ... যাই লিখতাম, টিচারের উচিত ছিল সবকিছুতেই নম্বর দেয়া। বাদ দাও বাবা, রেজাল্ট যেহেতু ভাল হয়েছে, তাই টিচারকে কিছু বলার দরকার নাই।"

ইয়ে মানে, আমি কিন্তু পুরাই হব্ধ হয়ে গেলাম।

*সাক্ষ্যপ্রমাণ কমেন্টে দেয়া হল

শালার বউ

আমার শালার বউ গত ২ সপ্তাহ ধরে তার মা'এর বাসায়।

বউ'কে জিজ্ঞেস করলাম -

"কাহিনী কি? তোমার ভাইয়ের বউ মা'এর বাড়িতে এতদিন কি করে?
"ওর মা'এর বাসা খালি। বাবা-মা'র দেখাশোনা করার কেউ নাই। তাই গেছে।"
"ক্যান? বাসা খালি ক্যান?"
"কারণ, ওর ভাইয়ের বউ তার মা'এর বাড়ি গেছে।"
"ওর ভাইয়ের বউ তার মা'এর বাড়ি কেন গেছে?"
"কারণ, ওনার বাসাও খালি। বাবা-মা'র দেখাশোনা করার কেউ নাই।"
"কেন? ওনার বাসার আবার কি হইসে?"
"উফফ, ওনার বাসাও খালি। কারণ ওনার ভাই'এর বউও তার মা'এর বাড়িতে ..."

...

জানি, পুরাই ইররেলেভেন্ট; তারপরও একটা লাইন মাথায় আসছে;

"আড়তদারদের ওই জাল ছিড়া বাইর হইতে পারে নাই আমার বাবা, তার বাবা, তার বাবা ..."

অশুদ্ধ ভাষা

ছোটবেলায় অশুদ্ধ ভাষায় কথা বললে চরম ঝাড়ি খেতাম খালাদের কাছে।

একবার স্কুলে ফুটবল খেলতে গিয়ে পা'এর নখ উঠে গেল। রক্তমাখা পা নিয়ে বাসায় ঢুকতেই পড়লাম ছোট খালার সামনে।

"পা কাটল কিভাবে তোমার?"

"রাস্তায় উশটা খাইসি।"

"উশটা???!!! উশটা কি জিনিশ? ঠিক মত কথা বল।"

নখ ওঠার ব্যাথা, খালার ঝাড়ি - সব মিলিয়ে তখন এলোমেলো অবস্থা আমার। হাজার খুঁজেও উশটা'র শুদ্ধ ভার্শন খুঁজে পেলাম না।

"ইয়ে মানে, রাস্তায় উশটো খেয়েছি।"

আমার শুদ্ধ ভাষা ব্যাবহারের এই নাদান প্রয়াসে "উশটা" বলার অপরাধ মাফ হয়ে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এই "উশটো" নিয়ে পরবর্তী কয়েকদিন অনেক হাসাহাসি সহ্য করতে হয়েছিল আমাকে।

------

বর্তমান সময়ের একটা কনভারসেশনকে যদি "শুদ্ধ" ভাষায় ট্রান্সলেট করি, তাহলে কি এমন দাঁড়াবে?

"পাশের ফ্ল্যাটের ছেলেটা তো দেখি পুরাই বাদামে। শুদাই সারাদিন টো-টো করে ঘোরে, কাজ-কর্ম তো কিছু করতে দেখি না।"

"তাতে তোমার প্রবলেম কি? আজারে যারতার পারসোনাল লাইফে বামহাত হাঁদিয়ে দেয়ার খাসলতটা তোমার গেলই না।

"বলো কি মমিন? তোমার কথা শুনে তো পুরাই তব্দ খেয়ে গেলাম। ত্যানা-প্যাঁচানো তো আমি তোমার কাছ থেকেই শিখলাম।

"অইত্তেরি। সব দোষ এখন আমার! বাহ, ভাল তো। ভাল না?"

------

ওরে, তোরা কেউ আমাকে মেরে ফেলছিস না কেন রে!!!

------

অ্যাপেনডিক্সঃ

বাদামে - বাদাইম্মা
শুদাই - হুদাই - অ্যাপ্লাইং দা সেইম লজিক, যেভাবে শালার ছেলে বিকেইম হালার-পো)
আজারে - আজাইরা
হাঁদিয়ে - হান্দাইয়া
খাসলত - খাইস্লত
তব্দ - তব্দা (এইটা কি আসলে "স্তব্ধ" থেকে এসেছে?)
বলো কি মমিন - কস কি মমিন?
ত্যানা প্যাঁচানো - প্লিজ সামবডি হেল্প মি, ত্যানা-প্যাঁচানো'র শুদ্ধ কি হবে???
অইত্তেরি - Arif R Hossain, আপনার সাহায্য প্রয়োজন

সোমবার, ২৬ মে, ২০১৪

আমার মেয়ের সুউচ্চ বিচার

আমার মেয়ে আর তার মা'এর কথোপকথন:

মেয়ে: মা। বাবাকে প্রতিদন অফিস যেতে হয় কেন? 

মা: মামনি, বেচে থাকার জন্য টাকা দরকার।  আর, বাবা অফিস না গেলে টাকা আসবে কিভাবে? 

মেয়ে: টাকা আনতে অফিসে যাওয়া লাগবে কেন? টাকা তো ব্যাংক থেকেই পাওয়া যায়।  

মা: তা যায়। কিন্তু তার আগে ব্যাংকে টাকা রেখে আসতে হয় রে মা। বাবা অফিস না গেলে সেই টাকাটা আসবে কোত্থেকে? 

মেয়ে: কেন? নানা ব্যাংকে টাকা রেখে আসবে। যখন দরকার, বাবা ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলে নিয়ে আসবে।  



......


আহা, আহা, কি সুউচ্চ বিচার আমার ৯ বছরের মেয়ের! এমন মেয়ে থাকলে আর কি লাগে বলেন? 

দুঃখ হলো, এই সুন্দর হিসাবটা আমার এতটুকু মেয়ের মাথায় ঢুকলেও, তার মা আর নানার মাথায় কেন যেন ঢোকে না :( 



.....

*** ইয়ে ... মানে ... মেয়ের বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই এসব ক্রিয়েটিভ বুদ্ধি তার মাথা থেকে বিদায় নিলেই বাঁচি। 

রবিবার, ২৫ মে, ২০১৪

জন্মদিনে

হ্যালো পার্টনার 

যদি, আপনার জন্মলগ্ন থেকে আমাদের পরিচয় হওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণের মধ্যবর্তী সময়টা যদি X বছর হয়; 

আর, সেই পরিচয়ের মুহূর্ত থেকে আজকের দিন পর্যন্ত সময়টা যদি Y বছর হয়, 

তবে, 

আজ, X এবং Y সমান হয়ে গেছে।  

মানে হলো, আপনার জীবনের অর্ধেকটা সময় ধরে আপনি আমাকে চেনেন। 

এবং, কালকে থেকে কনফিডেন্টলি বলতে পারব "আপনার জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় ধরে আপনি আমার কলিজাটা মনের আনন্দে চাবায়ে চাবায়ে খাচ্ছেন।"

যাই হউক,

হে প্রাণপ্রিয় বউ, আজ, আপনার জন্মদিনে আমার অন্তরভরা ভালবাসা গ্রহণ করুন।  

এভাবেই ধীরে ধীরে X থেকে Y বড় থেকে বড়তর হতে থাকুক। আপনার সাথে এক ছাদের নিচে থেকে আমি বুড়া থেকে বুড়াতর হতে থাকি, আপনিও বুড়ি থেকে বুড়িতর হতে থাকুন।  

আমিন।  

শনিবার, ২৪ মে, ২০১৪

এএফফফ

আমার আর আমার মেয়ের নতুন প্রজেক্ট - জীয়নকে এবিসিডি শেখানো। 

কাল রাতে "এ" থেকে "এফ" পর্যন্ত শিখাতে পেরেছি।  

আজ সকালে শুনি বাথরুমের ভিতর মা-ছেলের যুদ্ধ চলছে। মা ছেলের ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।  

যতবারই সে বলছে - "জীয়ন, ইইই ...." ...

ততবারই জীয়ন মহানন্দে চিত্কার করে উঠছে - "এএফফফ" 

মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০১৪

এরা কোত্থেকে আমাদের ফোন নাম্বার পায়?

সারাদিনের কাজের পর এমনিতেই টায়ার্ড ছিলাম। রাতে ছিল চ্যাম্পিয়নস লীগের খেলা। দেখে ঘুমাতে ঘুমাতে ৪টা বাজলো। 

সকালে বন্ধু-বান্ধব-বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে সিলেট যাব। বেড়াতে। 

ঘড়িতে অ্যালার্ম দেয়া ছিল ভোর সাড়ে ৫টায়। অ্যালার্ম'এর আওয়াজ যদি না শুনি ... ঘুম যদি টাইমমত না ভাঙ্গে  ... এই টেনশনে ঘুম হয় নাই এক ফোটাও। 

ঠিক ৬টায় বাসা থেকে রওনা হলাম। বারিধারায় ইফতেখারের বাসায় গাড়ি রেখে ওর মাইক্রোবাস নিয়ে রওনা দিলাম দুই ফ্যামিলির ৪+৪=৮ জন। 

দুই বন্ধু পালাক্রমে গাড়ি চালিয়ে সিলেট পৌছলাম ১টার দিকে।  

......

এতকিছু কেন বললাম জানেন? এত বর্ণনা দেয়ার উদ্দেশ্য একটাই, আমি কতটা টায়ার্ড ছিলাম সেটা বোঝানো।  

......

১. পোলাও 
২. চিকেন ফ্রাই 
৩. গরুর কালা ভুনা 
৪. চিংড়ির মালাইকারি  
৫. চিতল মাছের কোফতা 
৬. রুই মাছ ভাজা 
৭. মুরগির রোস্ট 
৮. বেগুন ভাজা 
৯. সালাদ 

সাথে প্রায় বরফ হয়ে যাওয়া চিল্ড কোক।  আর খাওয়া শেষে ঠান্ডা দই, রসমালাই আর রসে ডুবানো রসগোল্লা। 

সিলেটে আমার ছোটবেলার বন্ধু সালেহ'র বাসায় যখন পৌছলাম, তখন ডাইনিং টেবিলে এগুলোই সাজানো ছিল। 

..............

এই বর্ণনাটা কেন দিলাম জানেন? কারণ, এই বর্ণনাটা না দিলে আপনারা বুঝতে পারবেন না, অমন টায়ার্ড শরীরে এই আইটেমগুলো পেটস্থ করার পর যে ভুড়ি-কাঁপানো ঘুমটা আমি আর আমার বন্ধু ইফতেখার দিয়েছিলাম, সেটা কতটা অমুল্য।  

..............

এইবার গল্পের ক্লাইমেক্সে আসি। 

আমরা দুই বন্ধু ভুড়ি কাঁপিয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছি। 

আমার ফোন বাজা শুরু করলো। আমি ঘুমের মধ্যে হাত দিয়ে ফোন সাইলেন্ট করলাম। 

আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম। 

কিছুক্ষণ পর ফোন আবার ঘোঁত-ঘোঁত শব্দে কাঁপতে থাকলো। আমি লাইন কেটে দিলাম। 

কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার শুরু হলো ঘোঁতঘোঁতানি।  

ভাবলাম, হয়ত জরুরি কাজে কেউ ফোন করেছে।  ফোনটা ধরলাম। 

..........

"আপনি কি রাজীব হাসান চৌধুরী স্যার বলছেন?"

"হু"

"স্যার, আপনি ভালো আছেন?"

"হু।  কে ভাই?: 

"স্যার, আমি পূর্বাচল ****সিটি থেকে বলছি। আপনার সাথে আমাদের নতুন প্রজেক্ট নিয়ে একটু কথা বলতে চাই  .... " 

---------

আমি যদি এই লোককে বা ওই কোম্পানির মালিককে গুম বা খুন করে ফেলি, সেটা কি কোনো অন্যায় হবে? 

বলেন? বলেন? বলেন? 

*** এরা কোত্থেকে আমাদের ফোন নাম্বার পায়? এইসব কল কোনভাবে ব্লক করা যায় না? এদের নামে কেইস করা যায় না? এদেরকে মেরে জিন্দাপুইত্তালানো যায় না? 

রবিবার, ১১ মে, ২০১৪

আজকে মাদার্স দে

১.

গাড়ির পিছনের সীটে পলিথিনের পুটলীতে রাখা মাটিতে পোঁতা একটা বেলি গাছ।

রিয়ার ভিউ মিররে চিকন একটা ডালের শেষ মাথায় কিছু পাতা আর দুইটা আধফোটা বেলি ফুল।

এসি'র বাতাসে তিরতির করে কাঁপছে ডালটা; আরাম বাতাসে কাঁপছে ফুল দু'টিও।  

২. 

২১ বছর আগে। কলেজ ফার্স্ট ইয়ার। টিউশনির প্রথম বেতন পেয়েছি। প্রথম রোজগার।  

আড়ং থেকে আম্মার জন্য একটা রূপার দুল কিনলাম।  

আম্মার জন্য নিজের টাকায় কেনা এটাই আমার প্রথম উপহার।  

আম্মা রেগে গেছিল। "এতগুলা" টাকা এভাবে "অপচয়" করার জন্য।  

তখন কোনো মাদার্স ডে ছিল না। 

৩. 

গাড়ির ভিতর বেলি ফুলের গন্ধ।  

এই গন্ধটা আম্মার খুব প্রিয়। বেলি আমার সবচেয়ে প্রিয় ফুল। 

গাড়িতে করে বেলি ফুলের গাছটা আম্মার কবরে লাগাবো বলে নিয়ে যাচ্ছি।

আম্মার জন্য আমাদের সবার পক্ষ থেকে উপহার।   

আজকে মাদার্স দে। 

আম্মা, তোমাকে অনেক ভালবাসি। 

বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০১৪

সুখ দিয়ে কখনো কষ্টকে চাপা দেয়া যায় না

সুখ দিয়ে কখনো কষ্টকে চাপা দেয়া যায় না। 

কষ্ট ঠিকই চুইয়ে চুইয়ে বের হয়ে আসে।  

-----------

আমার বয়স যখন মাত্র ৪০ দিন, আমার নানা আমাকে কোলবালিশের মত প্যাকেট করে আম্মার বাসা থেকে নিয়ে এসেছিলেন।

ওই যে নিয়ে আসলেন, আর কখনো আমাকে যেতে দিলেন না। আমি নানা-নানু-খালাদের আদরে বড় হতে লাগলাম। 

আমার দুই বছর বয়সে নানাভাই মারা যান। নানুই হয়ে ওঠে আমার সব। 

৯৬ সালে আমাদের ক্রিসেন্ট রোডের টিনশেড বাসাটা ভেঙ্গে যখন ৬ তলা বিল্ডিং বানানো হচ্ছিল, সে সময় ২ বছরের জন্যে আমি একটা ভাড়া বাসায় আম্মা-আব্বার সাথে ছিলাম। জীবনে ওই দুই বছরই আমার নানুর কাছ থেকে দূরে থাকা। এবং আব্বা-আম্মা'র সাথে প্রথম একসাথে থাকা। 

কিছুটা অস্বাভাবিক হলেও, সত্যি কথাটা হলো, আমার ভালবাসার নিক্তিতে আম্মা কখনই নানুকে পিছনে ফেলতে পারেন নাই। 

----------

২০১২'র ২৫শে ডিসেম্বর নানু মারা যান।  

আমি প্রচন্ড ধাক্কা খাই, যদিও আমরা প্রস্তুত ছিলাম নানুর মৃত্যুর জন্য। সবাই বলছিল ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কিছুই ঠিক হচ্ছিল না। 

আমার ছেলে জীয়নের বয়স তখন ৬ মাস। প্রতিটা দিন সে নতুন নতুন জিনিস শিখছে। প্রতিটা নতুন জিনিস সাথে করে নিয়ে আসছে নতুন স্বাদের সুখ। সবাই বললো, সেই সুখের নিচে নানুর চলে যাওয়ার কষ্টটা চাপা দিয়ে দিতে। 

আমি অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। জীয়নের হাসিমুখ আমাকে কিছুক্ষণের জন্য সুখ দিলেও সেটা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছিল না।

আমি জীয়নের কাছ থেকে পালিয়ে নানুর কবরের পাশে গিয়ে বসে থাকতাম।    

.... সুখ দিয়ে কষ্টকে চাপা দেয়া যায় না।  

----------

২০১৪'র জানুয়ারি'তে আম্মা চলে গেলেন। 

এই মৃত্যুর জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। আম্মা ছাড়া পৃথিবীটা পুরাপুরি অর্থহীন হয়ে গেল।  একা এবং অসহায় আব্বাকে নিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে গেলাম।  

এক সময় যে কষ্টকে মনে হচ্ছিল চিরস্থায়ী একটা ক্ষত, সেই নানুকে হারানোর কষ্টটা নিজের অজান্তেই কর্পুরের মত উবে গেল।

নানুর চেহারা মনে করতে গেলে এখন শুধুই আম্মার চেহারা ভেসে ওঠে। নানুর কবরে বসে এখন আমি নানুর সাথে আম্মাকে নিয়েই কথা বলি। অথচ আম্মার কবরে গিয়ে কখনই নানুর কথা হয় না।  

----------

আমি আম্মাকে হারানোর কষ্টটা ভুলতে চাই না। 

আমি অন্য কোনো সুখ খুঁজে তার নিচে এই কষ্টকে চাপা দিতে চাই না।  

কারণ, আমি জেনে গেছি ...

সুখ দিয়ে কখনো কষ্টকে চাপা দেয়া যায় না। 

শুধুমাত্র কষ্টের নিচেই কষ্ট চাপা পরে।  

সোমবার, ৫ মে, ২০১৪

"বেড়াতে যাওয়ার ছড়া"

যাব বেড়াতে, 
মন ফেরাতে।

মালয়েশিয়া,  
ট্রু'লি এশিয়া!

কথা বলবো, 
ব্যথা ভুলবো, 
বসে থাকবো  
রাতে সাগরে, 

ছেঁকে নীলজল, 
থেকে নীলাকাশ, 
নিয়ে হাসিমুখ 
ফিরবো ঘরে। 

(এইবার আসল পয়েন্টে আসি...)

ভেবে পাওনা-
দার আমাকে 
যারা এদিক সেদিক
পালাতেন, 

গলা শুকিয়ে,
খোমা লুকিয়ে, 
যারা হিং-টিং-ছট
চালাতেন ... 

সেই ভায়েরা,
সেই বোনেরা,
যদি একটু
কথা শুনতেন। 

বলি, বেশি না 
খুবই সামান্য 
কিছু টাকা যদি 
প্লিজ গুনতেন।  

ইহা রিকোয়েস্ট, 
কাতর আকুতি; 
নয় ঘুরানো-প্যাঁচানো 
ইঙ্গিত; 

টাকাটা পেলে 
কাল সকালে 
কিনে ফেলতাম 
কিছু রিঙ্গিত।  



রবিবার, ৪ মে, ২০১৪

আমাদের বাচ্চাদের ছোটবেলা এবং টেলিভিশন

আমাদের বাচ্চাদের ছোটবেলা এবং টেলিভিশন 
-------------------------------------------

যাদের ছোটবেলায় বিটিভিই ছিল একমাত্র টিভি, তারা নিশ্চয়ই মনে করতে পারবেন, স্কুল থেকে ফেরার পর টিভিতে কি দেখতাম আমরা? থান্ডার ক্যাটস, মোস্তফা মনওয়ারের পাপেট শো, এসো গান শিখি, স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা, হ্যাকল এন্ড জ্যাকল, থ্রি স্টুজেস - ঠিক না? 

সবাই মিলে ডোরেমন, নিনজা হাতোরি, হিন্দি আগ্রাসন'কে তো কম গালি দিলাম না; এবার চলেন একটু দেখে আসি, আমাদের বাচ্চাদের যখন স্কুল শেষে টিভির সামনে বসার কথা, তখন আমাদের এত্তগুলি চ্যানেল তাদের জন্য কি কি অনুষ্ঠান চালাচ্ছে ... 

১. বিটিভি : হাতিয়া উপজেলার বন্যা পরবর্তী অবস্থার উপর প্রতিবেদন 
২.ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি: বিজ্ঞাপন, তারপর "পূর্ব-পশ্চিম" নামে একটা খবরের অনুষ্ঠান (দক্ষিন কোরিয়ায় ৪৭৫ জন যাত্রী নিয়ে ফেরি ডুবি)
৩. সময় টিভি: বিজ্ঞাপন, তারপর খবর (রেজওয়ানা হাসানের স্বামী'র অপহরণের খবর) 
৪. এশিয়ান টিভি: বলিউড টপ চার্ট (লাক্স ষ্টার অফ দা ওয়ার্ল্ড) - বেশ ছোটো-ছোটো কাপড়-চোপর পরা মেয়েদের দেখা যাচ্ছে 
৫. মাছরাঙ্গা টিভি: টক শো - দলের চেয়ে দেশ বড় 
৬. এটিএন বাংলা: খবর - বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কি যেন একটা বলেছেন, সেটা নিয়ে খবর 
৭. চ্যানেল আই - হৃদয়ে মাটি ও মানুষ 
৮. এনটিভি - বিজ্ঞাপন, তারপর বিজ্ঞাপন, তারপর ৫ মিনিট বিজ্ঞাপনের পর একটা নাটক শুরু হলো, ৭১ তম পর্ব, নামটা দেখতে পারি নি  (যেটার টাইটেল সংপ্রায় ৩/৪ মিনিট) - "আপনি মা হতে চলেছেন।" - এই ডায়লগটা শোনার পর চ্যানেল চেঞ্জ করলাম 
৯. বাংলা ভিশন - গত রাতের লাইভ ষ্টুডিও কনসার্টের পুনঃপ্রচার; মেহরীন চিত্কার করছে 
১০. দেশ টিভি - নাটক (ভাই আর ভাবীর দাম্পত্য কলহ টাইপ কিছু একটা চলছে) 
১১. মাই টিভি - বিজ্ঞাপন, তারপর বাংলা সিনেমা 
১২. বৈশাখী টিভি - বিজ্ঞাপন (চু চু ডাইপার), তারপর খবর - দেশের বাইরের শেয়ার বাজারের খবর 
১৩. একুশে টিভি - খবর (নগরকান্দা থানার নৃসংশ ঘটনার মামলা সংক্রান্ত কিছু) 
১৪. আর টিভি - বাংলা সিনেমা 
১৫. চ্যানেল ২৪ - বিজ্ঞাপন, তারপর খবর 
১৬. এটিএন নিউজ - খবর - খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হত্যা এবং ব্লা ব্লা কতগুলি অভিযোগ ...
১৭. এসএটিভি - বিজ্ঞাপন, তারপর খবর - বিজেএমইএ'র উপর কিছু একটা খবর 
১৮. ৭১ টিভি - খবর - সেন্ট মার্টিনসে উদ্ধার কার্যক্রম 
১৯. গাজী টিভি - ইউনিভার্সিটি ক্রিকেট লাইভ 
২০. চ্যানেল ৯ - খবর - ভারতীয় নির্বাচন 

কোনো চ্যানেলের সমালোচনা না করেই প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছি - কোনটা দেখতে বলবো আমি আমার মেয়েকে? বা এর মধ্যে কোন প্রোগ্রামটাই বা আমার ৯ বছরের মেয়ে আগ্রহ নিয়ে দেখবে? একটু বলবেন? 

(এই স্ট্যাটাসটিতে একটা পয়েন্টও আমার বানানো না। উল্লিখিত তথ্যগুলো আজ বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে পোনে ৪টা পর্যন্ত আমার আর আমার মেয়ে রিসার্চের ফসল। কেউ কেউ হয়ত বলবেন যে বাচ্চাদের টিভি দেখারই বা কি দরকার? তাদের জন্য উত্তর - আমাদের ছোটবেলায় টিভি দেখে এমন অনেক ভালো কিছু শিখেছি আমরা যা অন্য কোনো জায়গা থেকে শিখি নাই। টিভিকে ঠিক ভাবে ইউজ করা গেলে এটা যে কত উপকারে আসে, সেটা যে কোনো শিক্ষিত মানুষই বোঝে। 

ও হ্যা, এই টাইম-ফ্রেমের মধ্যে কিন্তু নিকোলোডীয়নে হিন্দিতে ডাব করে নিনজা হাতোরি দেখাচ্ছিল।)



জীয়নের শব্দসম্ভার

আমার ছেলে জীয়নের শব্দসম্ভার: 

আতাবুম - গাড়ি 
আততা আতাবুম - আরেকটা গাড়ি 
আউআউ - কুকুর 
ল্যাপপোত্ - ল্যাপটপ 
উমাম  - গরম পানি 
দবন - লবন 
আততালাইতাম - আসসালামুয়ালাইকুম 
তুতীতাতী - সূচী চাচী 
দনদোন - লন্ডন 
বালাবালা - ছাগল 
দেব্বা - জেব্রা 
তানাতুন - চানাচুর 
এলেলো - Yellow 

রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৪

সেদিন একজনের সাথে পরিচিত হলাম। বনানীতে খুব সুন্দর একটা রেস্টুরেন্ট খুলেছেন। কথায় কথায় জানলাম উনি নর্থ-সাউথের এক্স-স্টুডেন্ট। 

আমি: "ওহ রিয়েলি!!! আমি কিন্তু নর্থ-সাউথের অনেককেই চিনি। কারণ হলো, আমার অফিসে নর্থ-সাউথের অনেকগুলি ব্যাচের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছে।"
সে: "জ্বি ভাইয়া, আমি জানি আমি জানি। আমার পরিচিত অনেকেই আপনার কোজিটোতে ছিল।"
আমি: "তাই নাকি? আপনি কোন ব্যাচ? জিকো'কে নিশ্চয়ই চেনেন। আপনি কি ওর সিনিয়র? নাকি জুনিয়র?"
সে: "জিকো'রা আমাদের বেশ জুনিয়র"
আমি: "তাহলে তো রাসেল-তমাল'রাও জুনিয়র আপনার?"
সে: "জ্বি ভাইয়া, ওরাও জুনিয়র।"
আমি: "হমম, তাহলে ইয়াফি'রা ..."
সে (আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে): "আরে না না ভাইয়া, এইটা কি বললেন? ইয়াফি ভাইয়া'রা তো ডাইনোসর'দের ব্যাচ। আমাকে কি এত বুড়া মনে হয় নাকি?"

....

আমি: "ইয়ে, মানে .... আমি আর ইয়াফি ইনফ্যাক্ট সেইম ব্যাচ" ...

......

বুড়া যে প্রায় হয়েই গেলাম, কতভাবেই না খোদা ইশারা দিয়ে বোঝায় রে !!!

বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৪

ত্যান্দর পুত্র

ছেলে আমার বড়ই ত্যান্দর। যা করতে বলি তার উল্টাটা করে।  

কিন্তু ব্যাটা এখনো পুরাপুরি বোঝে নাই, ত্যান্দরের বাপও কম ত্যান্দর না।  

দুইটা ঘটনা বলি।  

১. 

মেয়ে তার স্কুলের হ্যান্ডবল টিমের প্রাইমারি স্কোয়াডে ডাক পেয়েছে। স্কুল থেকে বলেছে একটা এক নম্বর সাইজ বল কিনে বাসায় প্র্যাকটিস করতে। বল কিনতে গিয়েই মাথায় আসলো, পুত্র যখনি জানবে যে এটা তার বোনের জন্য, তখনই ঝড়-তুফান শুরু করে দিবে। 

সমাধান - আরেকটা রঙিন ছোট বল কিনলাম। বাসায় ফিরে দুইটাকে ডাক দিলাম, "জীয়ন, বড় সাদা বলটা তোমার, আর ছোট কালারফুল বলটা আপুনির। তুমি কিন্ত আপুনিরটা ধরবা না।  ওকে?" 

পুত্র কোনো কথা না বলে এক থাবায় রঙিন বলটা নিয়ে দৌড়ে তার রুমে চলে গেল। সাদা বলের দিকে একবার তাকালোও না। 

কন্যা তার পিতৃপ্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে খুশিমনে হ্যান্ডবল প্র্যাকটিস শুরু করলো। 

২.

পুত্রকে ঘুম পাড়ানো রীতিমত যুদ্ধ করার মত কঠিন। পুত্রের মা বলে, "ঘুমাও।", পুত্র বলে - "ধুমাবো নাআআ।" পুত্রের মা বলে "ঘুমা ব্যাটা বান্দর"; পুত্র বলে "ধুমাবো নাআআ।  হি হি।" তারপর কান মোচড়ানো, আঙ্গুলে টোকা ট্রিটমেন্ট, পাছায় থাপ্পড় - অতঃপর কান্নাকাটি; এবং কানতে কানতে ঘুম। 

আমি ভাবলাম, ত্যান্দরের সাথে আবারও ত্যান্দ্রামি করে দেখি। লাইট বন্ধ করে আমি ওকে ঘুমাতে নিয়ে গেলাম। বিছানায় শোওয়ানোর সাথে সাথে স্যারের চিত্কার শুরু, "বাবা, ধুমাবো নাআআ , ধুমাবো নাআআ।"

আমি বেশ ফ্রেন্ডলি টোনে কথা শুরু করি, "না না বাবা, কেউ ঘুমাবে না এখন। ঘুম তো পচা জিনিস। ঘুমালেই কালো ভূত এসে তোমাকে কামড় দিবে।" 

পুত্র এইটা একদমই আশা করে নাই।  চোখ বড়বড় করে সে ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো। 

"তাকিয়ে থাকলেই কিন্তু বাবা ঘুম চলে আসবে। তাই তাকিয়ে থাকা যাবে না। তাকিয়ে থাকলে কি চলে আসবে?"

পুত্র চোখ পিটপিট করতে করতে বলে "ধুম তোলে আতবেএএএ।"

"ঠিক বলেছ বাবা। এখন চোখ বন্ধ করে রাখো। আর খেয়াল রাখো যেন ঘুম চলে আসতে না পারে। ওকে বাবা?"

চোখ বন্ধ করে জীয়ন জবাব দেয়, "ওকে বাবাআআ।" 

দুই মিনিটের মধ্যে পুত্র আমার "ধুম" :)


পাদটিকা: খুব ভালমতই জানি, আমার এই সলিউশন খুবই টেম্পোরারি। ত্যান্দরটা অল্পদিনের মধ্যেই আমার এই চালাকি ধরে ফেলবে, এবং তখন আমাকে নতুন কোনো বুদ্ধি খুঁজে বের করতে হবে। 

সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৪

মিউট হিন্দি সিরিয়াল

পুত্রকে ঘুম পাড়ানোর সময় আমার বউ মিউট করে হিন্দি সিরিয়াল দেখে। 

একদিন একটু বিরক্তি নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম - "কি মজা পাও রে ভাই এইসব আজাইরা জিনিস দেখে?"

বউ সোজাসাপ্টা জবাব দিল - "আর কোন জিনিষটা আছে যেটা সাউন্ড ছাড়া দেখলেও ঘটনা বুঝতে প্রবলেম হয় না!!!" 

হ্যাট্স অফ টু দা সিরিয়াল কিলার্স (থুক্কু সিরিয়াল মেকারস), আপনারা আসলেই সুপার জিনিয়াস।  

এই টক শো সর্বস্ব সবাক মিডিয়াতে নির্বাক অপশনযুক্ত সিরিয়াল তৈরী করে আমার মত "ক্রিয়েটিভ" মানুষকে নিখাদ অবাক করতে পেরেছেন - আপনাদের "ক্রিয়েটিভিটির" গুনগান না করলে ব্যাপারটা বড়ই অন্যায় হয়ে যাবে। 

*** যে নাটকের ঘটনা সাউন্ড না শুনেই আগে থেকে বলে দেয়া যায়, সেখানে "ক্রিয়েটিভিটির" কিছু আছে কিনা, সে নিয়ে অবশ্য আলাদা ডিবেট চলতেই পারে :)  
ছুটি কাটিয়ে বাড়ি ফেরার মধ্যে একটা অদ্ভূত ভালোলাগা ছিল। 

সেই ভালোলাগাটা আজকে হারিয়ে ফেলে জানতে পারলাম, ভালোলাগার কারণটা আসলে কি ছিল। 

একটা মানুষ বিছানায় বা মোড়ায় বসে থাকত, পানের বাটা পাশে নিয়ে। আমরা ঘরে ঢোকার সাথে সাথে তার চোখে-মুখে হাজার ওয়াটের বাতি জ্বলে উঠত। জয়ী আর জীয়ন এক দৌড়ে সেই মানুষটার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ত। তারপর তার সাথে আমার ছেলে-মেয়ের গল্পের গাছ বড় হতে হতে আকাশ ছুঁয়ে যেত। 

আমি বাড়ি ফেরার একটা অর্থ খুঁজে পেতাম।

আজকে ঘরটা খালি। বিছানায় বা মোড়াতে আম্মা বসে নাই। জয়ী আর জীয়ন বাড়ি ফিরে তাদের দাদী'কে জড়িয়ে ধরতে না পেয়ে চুপচাপ টিভি ছেড়ে বসলো।

আজকে সিলেট থেকে ফেরার সময় সারা রাস্তা শুধু একটা কথাই ভেবেছি -

আমি বাসায় ফিরছি কেন?