রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪

ধুম্রপান

একজন স্মোকারের গল্প বলি।
শুরুতেই বলে নেই, গল্পটা বেশ বোরিং। যারা কোন মুখরোচক গল্প খুঁজছেন, তাদের কাছে এখনি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
যাই হোক, গল্প শুরু করি।
-----
লোকটা মোটামুটি ভালই ধুম্রপান করতেন। একদম চেইন স্মোকার বলা না গেলেও দিনে এক প্যাকেট বা তিন দিনে দুই প্যাকেট তার রেগুলার কনজাম্পশন ছিল।
খুব স্বাভাবিক কারণেই লোকটার বউ তাকে যথেষ্ট প্যারা দিত সিগারেট ছেড়ে দেয়ার জন্য। এবং ভদ্রলোক "অমুক ঝামেলাটা মিটে গেলেই ছেড়ে দিব", "তমুক কাজটা হয়ে গেলেই ছেড়ে দিব" ইত্যাদি অজুহাতে বউ'কে ভুংভাং বুঝিয়ে রাখতেন। একসময় ভদ্রলোকের বউ প্রেগন্যান্ট হল এবং সে লোকটাকে প্রতিজ্ঞা করাল যে, সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার আগে তাকে অবশ্যই সিগারেট খাওয়া ত্যাগ করতে হবে।
ভদ্রলোক প্রমিস করলেন।
তাদের ঘর আলো করে ফুটফুটে এক মেয়ে আসল। এবং ...
তিনি সিগারেট খাওয়া চালিয়েই যেতে থাকলেন। খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করালেন - "মেয়ে যখন থেকে বুঝতে শিখবে, তার আগেই ধূমপান ছেড়ে দিব। প্রমিস।"
ছোট্ট মেয়ে অবাক চোখে দেখলো তার খুব ভাল বাবা'টার মুখ দিয়ে মাঝেমাঝেই পচা গন্ধওয়ালা ধোঁয়া বের হয়।
ভদ্রলোক তার মেয়ের অবাক চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে তাকানো ছেড়ে দিলেন।
তবু সিগারেট খাওয়া ছাড়লেন না।
একদিন লোকটার ভীষণ বুক ব্যাথা হল। সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। এমারজেন্সি'তে। ডাক্তাররা ইমেডিয়েটলি তাকে আইসিইউ'তে ট্রান্সফার করলো। লোকটার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, তিন বছরের মেয়ে - সবাই খুব ভয় পেয়ে গেল। এনজিওগ্রাম করা হল। তারপর, নানারকম যন্ত্রপাতি আর ওষুধপত্র দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে ফেরানো গেল। ডাক্তাররা সবার সামনে তাকে প্রমিস করালেন, যেন জীবনে কোনদিন আর সে সিগারেট না খায়।
ভদ্রলোক তার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে প্রতিজ্ঞা করলেন - জীবনে আর কোনদিন সিগারেট খাবেন না।
তিনি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলেন। তারপর ...
তিন মাস সতেরো দিনের মাথায় তিনি আবার সিগারেট খাওয়া শুরু করলেন।
ভদ্রলোকের বউ হাল ছেড়ে দিল। জানেই যখন বলে কোন লাভ হবে না, তাহলে খামাখা সময় নষ্ট করা কেন!
তারপর একদিন সত্যি সত্যি তিনি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলেন।
-----
নিশ্চয়ই ভাবছেন, এমন একজন ধূমপায়ী লোকের সিগারেট ছাড়ার পিছনে নিশ্চয়ই চরম নাটকীয় কোন গল্প আছে। আসলে, তেমন কোন চটকদার গল্প নাই বলেই প্রথমে এটাকে একটা বোরিং গল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নিয়েছি।
ভদ্রলোকের একদিন হঠাৎ করেই মনে হল যে - আচ্ছা, সিগারেট না খেলে কি হয়? দেখি তো ট্রাই করে।
এই করে করে ৭ দিন গেল, এক মাস গেল, দুই মাস গেল। দেখতে দেখে আড়াই বছর পার হয়ে গেল। লোকটা একটা সিগারেটও খেলেন না।
এর মধ্যে তাদের দ্বিতীয় সন্তান ঘরে এলো - এবার ছেলে সন্তান। ছেলে জন্মের পর থেকেই পেল একজন ধোঁয়াবিহীন বাবা। লোকটার মা মারা যাওয়ার আগে দেখে গেলেন তার ছেলে আর সিগারেট খায়না। মেয়ে তার শিশুকালে দেখা ধোঁয়া-মুখো বাবার কথা ভুলে গেল। বাচ্চাদের মা'ও তার সেই রাগ, অভিমান ভুলে গেল।
তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।
-----
লোকটার বউ অনুরোধ করলো, সে যে তার সিগারেট ছেড়ে দেয়ার গল্পটা সবাইকে জানায়। লোকটা বলল - এই বোরিং গল্প মানুষ কেন শুনবে! অ্যাটলিস্ট একটা পরকীয়া, একটা আদার ওম্যান বা একটা বড়সড় রকমের ধরা থাকলেও না গল্পের শেষটা জমত। কোন চার্ম নাই, উত্তেজনা নাই - একটা রাফ-অ্যান্ড-টাফ স্মোকারের সিগারেট ছেড়ে দেয়ার গল্পটা এমন ম্যাড়ম্যাড়ে হলে কি মানায়?
বউ বলল, সিগারেট ছেড়ে দেয়ার গল্পটা হয়তো রংহীন; কিন্তু সিগারেট ছেড়ে দেয়ার পরের জীবনটা যে কতরকম রঙে ভরপুর - এটা জানলে নাকি অনেকেরই ভাল লাগবে।
লোকটা বউয়ের কথামতো গল্পটা লিখে ফেলল। আমি তার হয়ে গল্পটা আপনাদের জানিয়ে দিলাম।

August 25, 2014

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন