রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৫

তোমরা আজকে ম্যাচিং ম্যাচিং

জীয়নের কিছু কমন, ফরম্যাটেড প্রশ্ন আছে। যেগুলা সে মোটামুটি সবাইকে করে। 
"তুমি কয় তালায় থাকো?" 
ধরেন, আপনি হাসিমুখে জবাব দিলেন - "চার তালায়" 
ওর নেক্সট প্রশ্নটা হবে - "তুমি তিন তালায় কেন থাকো না?" 
কি জবাব দিবেন আপনি এই প্রশ্নের? হুমম? 
যদি আপনি বলতেন যে আপনি তিন তালায় থাকেন, তাহলে সে প্রশ্ন করতো, "তুমি চার তালায় কেন থাকো না?" 
মাঝেমাঝে সে তার মা'এর ফোন দিয়ে আমাকে অফিসে ফোন করে। 
"বাবা, তুমি কি করো?" 
"কাজ করি বাবা।" 
"ও আচ্ছা। তুমি মিটিং করো না কেন?" 
যদি বলি যে আমি মিটিং করি, ওর অবধারিত প্রশ্ন হতো - "ও আচ্ছা। তুমি কাজ করো না কেন?" 
আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি ওর এইসব ধারাবাহিক প্রশ্নের জবাব দিতে, ওর কৌতূহল প্রশমিত করতে; কিন্তু মাঝে মাঝে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। তখন মনে চায়, তুইলা আছাড় মারি বান্দরটাকে। 
এই ধৈর্যের ব্যাপারে আমার বউ'এর ধারণা হল, তার ধৈর্য বেশী, আমার কম। আমি মিনমিন করে মাঝেমাঝে যুক্তি দাঁড় করাতে চাই যে, ব্যাপারটা আসলে সিচুএশনাল। একেক সময় একেকজনের ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা একেকরকম থাকে। 
যদিও, বউ সেটা মানতে নারাজ। 
গতকালের ঘটনা বলি। 
আমরা বাইরে যাব। রেডি হচ্ছি। 
"মা মা, তুমি কোন কালারের জামা পরবা?" 
"লাল" 
আমি শুয়ে শুয়ে মোবাইল গুতাচ্ছি তখন। বুঝলাম, অবধারিতভাবেই পরবর্তী প্রশ্ন আসবে - "নীল জামা কেন পরবা না মা?" 
কিন্তু বউ আমার অনেক স্মার্ট। সে যেহেতু প্রমাণ করার মুডে আছে যে তার ধৈর্য বেশী, তাই সে অনেক কিউট করে জীয়নকে পাল্টা প্রশ্ন করলো। 
"বল তো বাবা, কেন আজকে আমি নীল জামা পরছি না?" 
ছেলের তুরন্ত জবাব - 
"আমি জাআআআনি। কারণ, আজকে সাইফুল চাচাও লাল গেঞ্জি পরেছে। তোমরা আজকে ম্যাচিং ম্যাচিং।" 
-
-
-
-
-
-
-
আমি শুয়ে শুয়ে ফেইসবুক গুতাই, আর বউ'এর ধৈর্য দেখি
ওহ! বলাই তো হয় নাই, সাইফুল আমার ড্রাইভারের নাম smile emoticon

ত্যানাটা প্যাঁচামু কই?


কন্সার্ট ফর বাংলাদেশ

প্রথম বন্ধু ঃ বাংলাদেশ নিয়ে কিছু একটা করা যায় না? মনটা খারাপ লাগছে। 

দ্বিতীয় বন্ধু  ঃ হঠাৎ বাংলাদেশ নিয়ে পরলি ক্যান? এমনিতেই কি ভ্যাজালের শেষ আছে নাকি? 

প্রথম বন্ধু ঃ আরে আজব! একটা দেশের মানুষের উপর এমন অত্যাচার হচ্ছে, চুপ করে বসে থাকব? 

দ্বিতীয় বন্ধু ঃ হুমম, তো প্ল্যানটা কি? কি করতে চাস? 

প্রথম বন্ধু ঃ চল, একটা কন্সার্ট করি। 

দ্বিতীয় বন্ধু ঃ হোয়াট? কন্সার্ট? কন্সার্ট করে কি লাভ? তুই না কইলি ওইখানে অত্যাচার হচ্ছে। ওরা এখন গান শোনার মুডে আছে নাকি? 

প্রথম বন্ধু ঃ ধুর বলদ। ওদের গান শুনানোর জন্য কন্সার্ট করবো, সেইটা বলসি নাকি? প্ল্যান ইজ, আমরা যদি ওদের জন্য একটা কন্সার্ট করি, অনেক মানুষ জানবে যে আমরা ওদের পক্ষে আছি। তাতে যদি ওদের সাহায্য করার জন্য কেউ আগায়ে আসে, তাইলে তো হইলোই। আর যদি নাও আসে, অ্যাট লিস্ট ওই দেশের মানুষগুলা তো একসময় জানতে পারবে যে আমরা এতো দূরে বসেও ওদের জন্য কিছু করতে চাইসিলাম। 

দ্বিতীয় বন্ধু ঃ আইডিয়া খারাপ না। চল তাইলে, বাকিদেরও একটু আওয়াজ দেই। যত বেশী আর্টিস্ট পাবো, তত বেশী আওয়াজ হবে। 

প্রথম বন্ধুর নাম জর্জ হ্যারিসন। দ্বিতীয় বন্ধুর নাম রিংগোস্টার। কন্সার্টটার নাম "কন্সার্ট ফর বাংলাদেশ" 

এরপর একে একে নাম যোগ হতে থাকলো। বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, লিওন রাসেল, রবি শঙ্কর, বিলি প্রেস্টন ... আরও অনেকে। 

ভাগ্যিস এই বন্ধুগুলির মধ্যে কেউ আইতকা বলে ওঠে নাই, "ক্যান রে ভাই হ্যারিসন। বাংলাদেশ নিয়েই কেন? নাইজেরিয়াতে হাজার হাজার মানুষ মরলো, ইন্দোনেশিয়া সয়লাব হয়ে গেলো খুনাখুনি'তে, তখন কেন কিছু করলি না? হুদাই হুজুগে লাফায়ে কনন্ট্রোভারসি ক্রিয়েট করার কি দরকার!"  

ভাগ্যিস, ওরা এমন কিছু বলে নাই। 

তাহলে হয়ত "কন্সার্ট ফর বাংলাদেশ"টা হতো না। আর কোন ভিন-মুল্লুকের জর্জ হ্যারিসন, রিংগোস্টার'রা  আমাদের হৃদয়ের মাঝখানে একটা জায়গা করেও নিত না। 

--- 

গল্পটা বানানো। ইতিহাসের সাথে হয়তো অনেককিছুই মিলবে না। 

এটা আমার পয়েন্ট অফ ভিউ, অনেকের সাথে নাও মিলতে পারে। সবার মত যদি একই হয়ে যায়, পৃথিবী কিন্তু এক জায়গায় থেমে থাকবে। 

"পয়েন্ট অফ ভিউ" দীর্ঘজীবী হোক। মানবতা বেঁচে থাক। গাজার জন্যও, প্যারিসের জন্যও।

বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫

"বাবা, গাড়ির নাম্বারগুলা এমন হয় কেন?"

জয়ীকে নিয়ে ট্রাফিক সিগনালে বসে আছি।
"বাবা, গাড়ির নাম্বারগুলা এমন হয় কেন?"
"কেমন?"
"এই যে, ঢাকা গ ২৩-১৭৫৯ বা ঢাকা গ ১৯-৮৪৭৫"
"এটাই নিয়ম মা। তোদের যেমন স্কুলে রোল নাম্বার থাকে, এগুলাও তেমন গাড়ির রোল নাম্বার। প্রতিটা যানবাহন একটা নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা থাকে।"
"কিন্তু, আমাদের রোল নাম্বারে তো কোন বর্ণ থাকে না। যেমন আমার রোল ৯। গ-৯ তো না।"
"বর্ণগুলা কোড মামনি। গাড়ি যেহেতু গ দিয়ে শুরু, তাই দেখবি সব গাড়ির শুরুতে গ।"
------
আমার এই নিষ্পাপ ব্যাখ্যার রিঅ্যাকশন যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা কি আমি ঘুণাক্ষরেও টের পেয়েছিলাম?
-------
তারপর থেকে ... আমার মেয়ে ঠোঁটের কোণে ফিচেল হাসি নিয়ে যখন তখন আমাকে হাজারও প্রশ্নবাণে চুবিয়ে মারছে।
"বাবা, জানো, আমার একটা ফ্রেন্ড চাইক্রোবাসে করে স্কুলে আসে।"
"বাবা, আমি খেয়াল করে দেখলাম বড় গাড়িগুলির নাম্বার গ দিয়ে শুরু হয় না। ঘ দিয়ে হয়। কারণটা কি জানো? আমি জানি। কারণ হল ... এগুলা যেহেতু বড় গাড়ি, তাই এগুলাকে ঘাড়ি বলে। গ'এর থেকে ঘ বড় না? ছোট কুকুর গেউ গেউ করে ডাকে, বড় কুকুর ঘেউ ঘেউ করে। বাবা, আমরা একটা ঘাড়ি কিনতে পারি না?"
"বাবা, আমরা কিন্তু একটা জিনিসকে ভুলভাবে উচ্চারণ করি। জিনিসটা কিন্তু আসলে থিএনজি, নট সিএনজি। আমি খেয়াল করলাম সব থিএনজির নাম্বার থ দিয়ে শুরু।"
"বুঝলা বাবা, অনেক রিসার্চ করে দেখলাম, মটর সাইকেল কয়েক রকমের আছে। যেগুলা ছোট ওগুলাকে বলে হটরসাইকেল, ওগুলা হ দিয়ে শুরু। বড়গুলা লটরসাইকেল, কারণ, ওগুলা ল দিয়ে শুরু।"
-----
তার রিসার্চ এখনও চলছে। যেদিন বাংলাদেশের সব রকম যানবাহনের কোড'এর শানেনযুল উদ্ধার করা শেষ হবে, ইনশাল্লাহ সেদিন তার এই খেলা বন্ধ হবে।
ততদিনে আমার মাথার শেষ চুলটা অবশিষ্ট থাকলে হয়।


October 17, 2014

মালা বড়ুয়া

১।
আমি নাকি একদিন স্কুল থেকে ফিরে নানু'কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "নানু, মুসলমান ছেলেদের কি হিন্দু মেয়েদের বিয়ে করা নিষেধ?" নানু খুব অবাক হয়ে জানতে চাইল ঘটনা কি। আমি নাকি তখন বলেছিলাম, "একটা মেয়েকে আমার খুব ভাল লাগে। মেয়েটা আমার ক্লাসে পড়ে। তার নাম রুপা সাহা। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।"
এটা নিয়ে বাসায় নাকি অনেক জল্পনা-কল্পনা, আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। এই বয়সে আমার মাথায় বিয়ের চিন্তা কেমনে ঢুকল, হিন্দু-মুসলমান ব্যাপার-স্যাপার'ই বা কেমনে ঢুকল - এসব নিয়ে অনেক ঠাট্টা-মশকরাও হয়েছিল।
বাই দা ওয়ে, আমি তখন নার্সারি'তে পড়তাম। বয়স চার।
২।
জীয়ন সেদিন বলল, "বাবা, জানো, আমার একটা বউ আছে।" আমি আর আমার বউ মহা আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলাম, "তাই নাকি বাবা? কি নাম তোমার বউ'এর?" সে লাজুক চেহারা করে বলল, "মালা বড়ুয়া"।
আমরা অনেক খুঁজলাম। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, টিভি'র ক্যারেক্টার - সব খুঁজেও আমরা "মালা বড়ুয়া" নামে কাউকে খুঁজে পেলাম না।
এই বয়সে কল্পনায় বউ পেয়ে যাওয়া ব্যাপারটা কতটা স্বাভাবিক, সেটা নিয়ে আমরা এখন ক্যাল্কুলেশনে ব্যাস্ত।
বাই দা ওয়ে, জীয়নের বয়স এখন আড়াই।
---
গুড গোয়িং বেটা। বাপের চার বছরের রেকর্ড আড়াই বছরেই ব্রেক করে দিসিশ, ইনশাআল্লাহ তোরে দিয়েই হবে।
---
দুইটা ঘটনাই ১০০% সত্যি। প্রথমটা শোনা ঘটনা। সাক্ষী দেয়ার জন্য মিনিমাম ৫/৬ জন মানুষ পাওয়া যাবে। আর দ্বিতীয়টা চোখের সামনে ঘটে যাওয়া; ইন ফ্যাক্ট একদমই গরম গরম ঘটনা। কাহিনী এখনও চলছে।

October 19, 2014

রিকশাওয়ালাটা সত্যি সত্যি আমার টাকা ভর্তি মানিব্যাগটা ফেরত দিয়ে গেল!

রিকশাওয়ালাটা সত্যি সত্যি আমার টাকা ভর্তি মানিব্যাগটা ফেরত দিয়ে গেল!!!
হাজার দশেক টাকা ছিল সেটাতে। নিশ্চয়ই লোকটার কাছে এটা বেশ বড়সড়ই একটা অ্যামাউন্ট। রিকশাওয়ালার বয়স কত হবে? ৩০? ৩২? এটা দিয়ে সে তার নিজের বা পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় কত কিছুই তো কিনতে পারতো। অভাবী বউটার বা ঠিক মত খেতে না পাওয়া ছেলেটার চেহারাটা কি একবারের জন্যেও ভেসে ওঠে নাই তার চোখের সামনে?
নিশ্চয়ই চোরাচোখে মানিব্যাগটার দিকে বেশ কয়েকবার তাকিয়েছিল সে। ভিতরের ৫০০ আর ১,০০০ টাকার লোভনীয় নোটগুলিতে হয়ত হাতও বুলিয়েছিল!
তারপরও মানিব্যাগটা ফেরত দিয়ে গেল সে !!!
লোকটার ভালোমানুষিতে কেন যেন খুব মন খারাপ হয়ে গেল। কিছুদিন আগে শোনা একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।
----
ঝলমলে স্মার্ট একটা ছেলে। নামকরা একটা কর্পোরেটে কাজ করে। বস'দের প্রিয় পাত্র। ছেলে কাজে ভাল, তেলও ভাল দিতে পারে। লাখ টাকার উপরে বেতন পায়। ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনি আমি। সে আমার খুব পছন্দের কেউ না হলেও, তাকে অপছন্দ করতাম না কখনোই।
ছেলেটার বয়স ওই রিকশাওয়ালাটার মতই হবে। বাড়িতে বউও আছে একটা। বাচ্চাকাচ্চা হয়নি অবশ্য এখনও। "অভাবী" বা "টানাটানির সংসার" শব্দগুলি কোনভাবেই যায় না তার সাথে।
অবাক হয়েই সেদিন শুনলাম, - সে নাকি যেভাবে পারছে, যার থেকে পারছে - কমিশন খাচ্ছে। সহজ বাংলায় এটাকে বোধহয় ঘুষ'ই বলে। পাঁচ হাজার বা পাঁচ লাখ - কোন বাছ-বিচার নাই তার। শুধু টাকাই খাচ্ছে, নাকি অন্য কিছুও খাচ্ছে - সে ব্যাপারে অবশ্য কোন তথ্য নাই আমার কাছে। দুদিন পরপর নতুন গ্যাজেট, বিদেশ সফর, পার্টি - ওহ ইয়া, হি ইজ দা ম্যান নাও!!! ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যমণি, বউ'এর সোনা-যাদুমণি।
লাখ টাকার বেতনও তার সংসারের (নাকি বলব চরিত্রের??!!) দৈন্য ঘুচাতে পারেনি!
ছেলেটার এই "উন্নতি" দেখে মায়া লাগলো। ভীষণ মায়া লাগলো।
---
লেখনীর বিচারে আমার যেকোনো লেখার চেয়ে এই লেখাটা অনেক খারাপ হয়েছে। এটাও নতুন একটা শিক্ষা আমার জন্য। শিখলাম যে - মগজ-ভর্তি অরুচি নিয়ে সুন্দর করে কিছু লেখা যায় না।

October 22, 2014

হিন্দি ছাড়া আমাদের ইয়ুথের ক্ষুধা মিটবে না

বাংলা চ্যানেলগুলি নাকি এখন থেকে পপুলার হিন্দি সিরিয়ালগুলি দেখানো শুরু করবে? সিনেমা হল'গুলিতেও নাকি এখন থেকে হিন্দি মুভি চালানো হবে? ঘটনা সত্যি নাকি?
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
নাহ। ঘটনা সত্যি না।
কিন্তু ... উপরের ঘটনাদুটি যদি সত্যি হত তাহলে কি হত? হুলুস্থুল লেগে যেত না? সোশাল মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া তোলপাড় করে ফেলতাম আমরা সবাই মিলে। মুখে ফেনা তুলে ফেলতাম "দেশ গেল", "সংস্কৃতি গেল", "সব গেল" বলে। কি? ফেলতাম না? বলেন?
তাহলে একটা সিম্পল কথার উত্তর দেন আমাকে কেউ। রেডিও কি একটা মিডিয়াম না? টিভি, মুভি, পত্রিকা এসবে যদি হিন্দির আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য আমরা কোমর বেঁধে নামতে পারি, রেডিও'কে আমরা এভাবে বেওয়ারিশ গরুর মত যত্রতত্র চরে খেতে দিচ্ছি কেন? কেউ বলতে পারেন?
জানি, রেডিও'র নিতিনির্ধারকগণ মিনমিন করে এটাই বলবেন যে "পাবলিক হিন্দি গানই খায়, তাই আমরা চালাই।"
আরে ভাই, পাবলিক হিন্দি গানের থেকে তো সানি লিওন'কে বেশি খায়। রঙের মানুষ'এর থেকে হয়তো "এক হাসিনা থি" বা "রাশি" বেশি খায়। "মিরাক্কেল", "দাদাগিরি" বা "স্প্লিটভিলা" ইন্ডিয়া'তেও এত জনপ্রিয় কিনা, আমার সন্দেহ আছে, যতটা না বাংলাদেশে। শাকিব খান, অপু বিশ্বাস বনাম রনবির-দিপিকা'র পপুলারিটির তুলনা নাহয় নাই দিলাম।
এখন ... আমাদের টিভি চ্যানেল আর সিনেমা হলগুলা যদি বলা শুরু করে যে পাবলিক দীপিকা খায়, তাই দীপিকা চালাবো। হিন্দি নাটক, সিনেমা বেশি খায়, তাই ওগুলা চালাবো - তখন কি হবে?
এমন তো না, যে আমাদের উপর রেডিওর কোন ইনফ্লুএন্স নাই! ডে বাই ডে রেডিও পপুলার হচ্ছে; এবং আমরা চাইও যে রেডিও পপুলার হোক - কিন্তু এদের তো অ্যাট লিস্ট কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিৎ। নাকি?
আমার আজকের রাগটা খুব স্পেসিফিক। কারণ, রাগটা আমার সবচেয়ে প্রিয় রেডিও চ্যানেল রেডিও ফুর্তির উপর। গত কয়েকদিনে যতবার ফুর্তি টিউন করেছি, মনে হয় ততবারই হিন্দি গান শুনেছি। হয় ছেড়েই হিন্দি গান চলতে শুনেছি, নয় একটা বাংলা গান শেষ হতেই একটা হিন্দি শুরু হতে শুনেছি।
এতো হ্যাংলামি কেন রে ভাই?
রেডিও ফুর্তির সবকিছুই কিন্তু আমার ভাল লাগে। ওপু এখন আর আরজে'গিরি করে না। ওকে অনেক মিস করি, কিন্তু বাকিরাও ভাল। আরজে সাদিয়া সুপার, ওয়ান অফ দা বেস্ট ইন দা কান্ট্রি। অনিক খান অনেক জোশ। নাওয়াফ-সারজিনা'কেও ভাল লাগে।
আমি ব্র্যান্ড-মার্কেটিং-বিজ্ঞাপনের মানুষ। খুব ভালভাবেই জানি রেডিও ফুর্তির টার্গেট মার্কেট বাংলাদেশের ইয়ুথ। এবং ইয়ুথের পছন্দ অনেক diversified। তাদের স্যাটিসফাই করা অনেক দুরূহ ব্যাপার।
তো? হিন্দি ছাড়া আমাদের ইয়ুথের ক্ষুধা মিটবে না? আর ইউ সিরিয়াস?
কতগুলা গান লাগবে তোমাদের বলতো, বাংলাদেশের ইয়ুথ'কে তোমাদের চ্যানেলে আঠার মত আটকে রাখতে?
চিরকুট বাজাও, শূন্য বাজাও, নেমেসিস বাজাও। অর্থহীন, আর্টসেল, ওয়ারফেজ, ফুয়াদ, নগরবাউল, মাইলস, বাপ্পা, সোলস, এলআরবি, অর্ণব, হাবিব, লালন --- আরও বলতে থাকব? ইংলিশ বাজাও। মাঝেমধ্যে নাহয় দুই-একটা হিন্দিও বাজাইও। কিন্তু এতো ক্যান রে ভাই হিন্দা-হিন্দি খেলা?
রেডিও ফুর্তির বন্ধুরা, মন দিয়ে শোন। জোর দিয়েই কথাটা বলছি। নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকে, বাংলাদেশের মানুষ'কে খুব ভালভাবে চিনতে পারার কনফিডেন্স থেকে বলছি -
লিখে রাখতে পারো - যদি টানা এক মাস'ও তোমরা হিন্দি গান না বাজাও, বাজানোর জন্য গানের কমতি পরবে না। লিসেনারও কমবে না। ইউ গাইজ আর তুখোড়। নিজেদের উপর আর বাংলা গানের উপর ভরসা রাখো। শুধু যদি তোমরা তোমাদের পছন্দের বাংলা-ইংলিশ গানগুলিই চালাও, আর আর সাথে যদি থাকে তোমাদের কথার জাদু - তোমাদের চ্যানেল চেঞ্জ করে অন্য চ্যানেলে একটা মানুষও যাবে না।
যদি বল, "রাজীব ভাই, এটা নিয়ে একটা ক্যাম্পেইন করে দেন না। হিন্দিও চালাবো না, লিসেনারও যেতে দিব না - এমন একটা ব্যবস্থা করে দেন।" সবাইকে সাক্ষী রেখে কথা দিচ্ছি, এক টাকাও ক্রিয়েটিভ ফি নিব না। মাগনা করে দিব সব কনসেপ্ট, ডিজাইন, স্ক্রিপ্ট।
সাপও মরবে। লাঠিও ভাঙবে না।
ট্রাস্ট মি।

October 28, 2014

জামাতের হরতাল

"আচ্ছা ভাইয়া, জামাত কালকে হরতাল দিল ক্যান?"
"এটাও বুঝলি না? ধর, বিশ্বকাপ ফাইনালে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে গো-হারা হারাল, সেই খুশিতে পরদিন বাংলাদেশের সবকিছু ছুটি থাকবে না?
পাকিস্তান আজকে বাংলাদেশকে ন্যাংটা করে হারাল। সেই খুশিতে পাকিস্তানের সোনার ছেলেরা কালকে পূর্ব পাকিস্তানে ছুটি ঘোষণা করেছে। এই তো স্বাভাবিক, তাই না? আর ... এ তো হরতাল নয় রে বোকা, এ তো বিজয়ের উৎসব। টোস্ট অফ সেলেব্রেশন।"
-----
চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছে
উথলে পরে আলো ...

September 17, 2014

বিএনপি আর ওয়ারী ক্লাব

৯০'র দশক। ক্লাব ফুটবলের তখন ধুন্ধুমার সময়। পুরা দেশ মোহামেডান আর আবাহনী'তে দুই ভাগ। মাঝে-মধ্যে ব্রাদার্স ইউনিয়ন কিছুটা উঁকি-ঝুঁকি মারলেও তৃতীয় শক্তির থেকে বেশি কিছু হতে পারে না।
আব্বা তখন ওয়ারী ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট। পুরা সিজনের ভিআইপি পাস পায়। আমি আবাহনী আর মোহামেডানের সব খেলায় মাঠে যাই; মোহামেডানকে জিতাতে আর আবাহনীকে হারাতে smile emoticon
আব্বা দুঃখ করে বলেন, "মাঝে মাঝে ওয়ারী ক্লাবের খেলা দেখতে গেলেও তো পারোস।" এত বোকার মত প্রশ্নের জবাব দেয়ারও আমি প্রয়োজন বোধ করি না।
তার ক্লাবের প্রতি আমার সাপোর্ট কিনতে আব্বা ওয়ারী ক্লাবের অরিজিনাল লাল-সাদা জার্সি নিয়ে আসে। স্কুলের টিফিন টাইমে আমি অত দামী অরিজিনাল জার্সি না পরে আমি ৩৫ টাকা দামের ফিনফিনে আর্জেন্টিনার জার্সি পরে মাঠে। ওয়ারী ক্লাবের জার্সি পরলে ইজ্জত থাকপে?
খেলায় ওয়ারী ক্লাব গোহারা হারলে আব্বা মুখ চুন করে বাসায় ফিরতেন। আমি চান্স পেয়ে ফাঁপর দিতাম, "এই ঘোড়ার ডিমের ক্লাব করো ক্যান? ইজ্জত বলেও তো একটা কথা আছে। পাশেই তো মোহামেডান ক্লাব, তোমার কত বন্ধু ওইখানে। ওই ক্লাবে চলে যাও না ক্যান?"
আব্বা ইমোশনাল হয়ে বলতেন, "তোরা কি বুঝবি ওয়ারী ক্লাবের মাজেজা। একটা সময় তো ক্লাব বলতে আমরাই ছিলাম। তখন তোদের বোঝার বয়সও হয় নাই। আমরা, মোহামেডান, ওয়াণ্ডারার্স, বিজেএমসি - এরাই তো চ্যাম্পিয়ন ফাইট দিত। এইসব আবাহনী-টাবাহনি তো দুইদিনের ক্লাব।"
আব্বা ওয়ারী ক্লাবের সোনালি অতীতে হারিয়ে যেতেন। আমি অচেনা-অদেখা-দুর্বল-পরাজিত ওয়ারী ক্লাব নিয়ে কোন আগ্রহ খুঁজে না পেয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যেতাম।
------
আজকের বিএনপি'র ডাকা "হরতালে", মহাখালী রেইলগেটের সিগনালে "জ্যামে" বসে পাশে থেমে থাকা চকচকে একটা "বিএমডব্লিউ" দেখে হঠাৎ ওয়ারী ক্লাবের কথা মনে পড়ল।
যেভাবে চলছে, হয়ত আমার মেয়ে কিছুদিন পর প্রশ্ন করবে, "আচ্ছা বাবা, বিএনপি কি? ওরা কেন হরতাল ডাকে? ওদের কথা কি কেউ পাত্তা দেয়?"
------
বোকাও বোঝে যে, দেশে একটা কার্যকরী বিরোধী দল না থাকাটা কতটা ভয়ঙ্কর। তারপরও বিএনপি'র ডাকা হরতাল আজ একটা কৌতুক ছাড়া আর কিছু না।
অথচ, এই অবস্থার জন্য বিএনপি মনে হয় না নিজেদের বাদে অন্য কাউকে দায়ী করতে পারে।
বিএনপি'কে আজকে একটা ওয়ারী ক্লাবে পরিণত করার পেছনে আওয়ামীলিগের "অসাধারণ" রাজনীতি যতটা না কাজ করেছে, তার থেকে অনেক বেশি কাজ করেছে বিএনপি'র অপ-রাজনীতি আর কু-কাজনীতি।
এটা আমার একান্তই নিজের ভাবনা। কারো সাথে না মিললে আমার কিছু করার নাই।

September 22, 2014

মেয়ে যতটাই লক্ষ্মী, ছেলে যে ঠিক ততটাই উড়ালপক্ষী।

আমার মেয়ের বয়স সাড়ে ৯, ছেলের আড়াই। মেয়ে যে স্কুলে পড়ে, ছেলেকে সেই স্কুলে ভর্তি করানোর ইচ্ছায় ফর্ম তোলা হল। খবর নিয়ে জানতে পারলাম, স্কুল সিব্লিং'দের প্রায়োরিটি দেয়। মানে যাদের ভাই-বোন এই স্কুলে পড়ে, তাদের কিছুটা অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
কিন্তু ... একটা বড় কিন্তু আছে।
সেটা হল, বড় ভাই বা বোনের অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটি, অ্যাটেনড্যান্স, স্বভাব-চরিত্রের যে কোন একটায় যদি ভেজাল থাকে, তাহলে ছোটটার ক্ষেত্রে ভর্তির ফলাফল নেগেটিভ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে আমার ক্ষেত্রে খারাপটা হবে না। মেয়ে আমার অনেক লক্ষ্মী, রেজাল্ট ভাল, স্কুল থেকে কখনো কোন কমপ্লেইন আসে নাই।
কালকে মেয়েকে কাছে বসিয়ে আদর করে বললাম, "মা রে। তোর জন্যই মনে হয় তোর ভাইয়ের ভর্তিটা হয়ে যাবে। যদি হয়ে যায় তাহলে তোকে একটা ভাল গিফট দিতে চাই। তুই খুঁজতে থাক কি লাগবে তোর। খুঁজে পেলে জানাইস।"
মেয়ে বিশাল এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "হুমমম, আল্লাহ্‌ই জানে কি আছে কপালে। বোনের জন্য ভাইয়ের অ্যাডমিশন তো নাহয় হল। ভাইয়ের জন্য বোনকে কোনদিন টিসি না খেতে হলেই হয়।"
-----
আমিও মাথা নেড়ে বড় করেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। সম্ভাবনাটা ঠিক উড়িয়ে দিতে পারছি না।
মেয়ে আমার যতটাই লক্ষ্মী, ছেলে যে ঠিক ততটাই উড়ালপক্ষী।

First posted - September 24, 2014

সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫

হিমেল আর শিমেল

বেশ ক'বছর আগে আমাদের দারওয়ানের মেয়ের বিয়ে হয়। ইংরেজি জানা, বিদেশ ফেরত ছেলের সাথে। 

সে মেয়ে এসেছে বাসায়, সবার সাথে দেখা করতে। দেখে বোঝা গেলো বেশ ভালোই আছে সে। 

তার সাথে আমার বউ'এর কথোপকথনের কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি - 

"কই থাকো এখন" 

"বাড্ডায় থাকি ভাবি। আফনাদের জামাইয়ের অফিস ওইখান থেকে কাছে হয়।" 

"বাহ। জামাই কি করে এখন?" 

"গার্মেন্টস-এই আছে। ফ্লোর ম্যানেজার।" 

"মাশাল্লাহ। তা... তোমার ছেলেমেয়ে কয়টা?" 

"দুইটা, আপনাদের দোআয়।" 

"নাম কি রাখসো?" 

"হিমেল আর শিমেল" 

(তব্দাজনিত কারণে ক্ষণিকের নীরবতা...) কনফার্ম হওয়ার জন্য আবার প্রশ্ন... 

"কি নাম বললা?"

"হিমেল আর শিমেল। আফনাদের জামাইয়ের নাম তো রুমেল। তাই মিলায়ে রাখসে।" 

"সে নাহয় বুঝলাম। কিন্তু নামের মানে কি?" 

"হে হে, আফনেদের জামাই তো ইংরাজির পণ্ডিত। ইংরাজিতে ছেলে মানে হি, তাই ছেলের নাম রাখসে হিমেল। আর মেয়ে মানে শি, তাই মেয়ের নাম রাখসে শিমেল। দুইজনেই মাশাল্লাহ বাবার মতই বুদ্ধিমান হইসে। ওদের জইন্ন দোআ কইরেন ভাবি।" 

---- 

আফনেরা সবাই প্লিজ হিমেল আর শিমেলের জন্য দোআ কইরেন। 

রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৫

এখন আর পাবলিক পোস্ট দেই না।

এখন আর পাবলিক পোস্ট দেই না। কেন জানেন? 

আমার জীবনের, আমার আশেপাশের মানুষের জীবনের ছোট-ছোট ঘটনা নিয়ে আমি লিখতাম। কেউ যদি কখনো জিজ্ঞেস করতো যে আমি কেন ফেইসুবকে বড়বড় স্ট্যাটাস দেই; আমি বললাম - আমার লেখা পড়ে যদি কারোর কয়েকটা মিনিটও ভালো কাটে, আমার তাতেই সুখ। 

এখন লিখিনা; কারণ - এখন আমি বা আমার আমার আশেপাশের মানুষগুলি যখন ভালো থাকে - দেশটা তখন ভালো থাকে না। 

আমার মেয়ে জয়ী যেদিন পিয়ানোতে ওয়ারফেজের পুরা একটা গান বাজাতে শিখল, সেদিনই এজিবি কলোনিতে দুই বছরের রায়কা'র মা'কে মটর সাইকেল গ্যাং কোন কারণ ছাড়াই মেরে ফেলল। 

বন্ধু-বান্ধব-পরিবার-পরিজন নিয়ে যখন আমরা সুন্দরবনে মহানন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছি, তখনি গুলশানে মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়ে এক কিশোর মেরে ফেলল এক গরীব মানুষকে। 

যখনই লিখতে গেছি সুন্দর কিছু কথা, দুই-তিন লাইন লেখার পরই আগ্রহ মরে গেছে দেশের কোন মর্মান্তিক খবরে। 

লেখা আর হয়ে ওঠেনি আমার।   

জীয়নের স্কুলে গতকাল প্রথম প্যারেন্টস ডে ছিল। ভেবেছিলাম ফিরে এসে সেটা নিয়ে লিখব। এতদিনের মৌনব্রত ভাঙব। 

গতকালই আরও একবার কুপিয়ে মেরে ফেলা হল মনুষ্যত্ব। চোখে আঙ্গুল দিয়ে আবার দেখিয়ে দেয়া হল - কতোটা ভালো আছি আমরা। 

সুন্দর সুন্দর গল্প লিখতে, নিজেদের হাসিমুখের ছবি দিতে ইচ্ছা করে না আর। বড় বেশী স্বার্থপর মনে হয় নিজেকে। 

পাশের বাড়িতে আগুন লেগেছে জেনেও ফুল ভলিউমে গান শুনে আনন্দ প্রকাশ করাটা মনে হয় মানুষের কাজ না। 

এই লেখাটাও তাই কোনদিন পাবলিক পোস্ট হিসেবে দেয়া হবে না।