রিকশাওয়ালাটা সত্যি সত্যি আমার টাকা ভর্তি মানিব্যাগটা ফেরত দিয়ে গেল!!!
হাজার দশেক টাকা ছিল সেটাতে। নিশ্চয়ই লোকটার কাছে এটা বেশ বড়সড়ই একটা অ্যামাউন্ট। রিকশাওয়ালার বয়স কত হবে? ৩০? ৩২? এটা দিয়ে সে তার নিজের বা পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় কত কিছুই তো কিনতে পারতো। অভাবী বউটার বা ঠিক মত খেতে না পাওয়া ছেলেটার চেহারাটা কি একবারের জন্যেও ভেসে ওঠে নাই তার চোখের সামনে?
নিশ্চয়ই চোরাচোখে মানিব্যাগটার দিকে বেশ কয়েকবার তাকিয়েছিল সে। ভিতরের ৫০০ আর ১,০০০ টাকার লোভনীয় নোটগুলিতে হয়ত হাতও বুলিয়েছিল!
তারপরও মানিব্যাগটা ফেরত দিয়ে গেল সে !!!
লোকটার ভালোমানুষিতে কেন যেন খুব মন খারাপ হয়ে গেল। কিছুদিন আগে শোনা একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।
----
ঝলমলে স্মার্ট একটা ছেলে। নামকরা একটা কর্পোরেটে কাজ করে। বস'দের প্রিয় পাত্র। ছেলে কাজে ভাল, তেলও ভাল দিতে পারে। লাখ টাকার উপরে বেতন পায়। ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনি আমি। সে আমার খুব পছন্দের কেউ না হলেও, তাকে অপছন্দ করতাম না কখনোই।
ছেলেটার বয়স ওই রিকশাওয়ালাটার মতই হবে। বাড়িতে বউও আছে একটা। বাচ্চাকাচ্চা হয়নি অবশ্য এখনও। "অভাবী" বা "টানাটানির সংসার" শব্দগুলি কোনভাবেই যায় না তার সাথে।
অবাক হয়েই সেদিন শুনলাম, - সে নাকি যেভাবে পারছে, যার থেকে পারছে - কমিশন খাচ্ছে। সহজ বাংলায় এটাকে বোধহয় ঘুষ'ই বলে। পাঁচ হাজার বা পাঁচ লাখ - কোন বাছ-বিচার নাই তার। শুধু টাকাই খাচ্ছে, নাকি অন্য কিছুও খাচ্ছে - সে ব্যাপারে অবশ্য কোন তথ্য নাই আমার কাছে। দুদিন পরপর নতুন গ্যাজেট, বিদেশ সফর, পার্টি - ওহ ইয়া, হি ইজ দা ম্যান নাও!!! ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যমণি, বউ'এর সোনা-যাদুমণি।
লাখ টাকার বেতনও তার সংসারের (নাকি বলব চরিত্রের??!!) দৈন্য ঘুচাতে পারেনি!
ছেলেটার এই "উন্নতি" দেখে মায়া লাগলো। ভীষণ মায়া লাগলো।
---
লেখনীর বিচারে আমার যেকোনো লেখার চেয়ে এই লেখাটা অনেক খারাপ হয়েছে। এটাও নতুন একটা শিক্ষা আমার জন্য। শিখলাম যে - মগজ-ভর্তি অরুচি নিয়ে সুন্দর করে কিছু লেখা যায় না।
October 22, 2014
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন