রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

স্বার্থপর সন্তান

১.

"বাবা, আজকে অফিসে না গেলে হয় না?" 

জয়ীর বয়স যখন দুই, তখন থেকে এই প্রশ্নটা আমি  প্রতিদিন শুনে আসছি। ওর এখন সাড়ে ৮, এখনো শুনছি। 

জীয়ন'এর দেড়।  অফিস যাওয়ার সময় অলরেডি শুরু হয়ে গেছে "বাবা, অপিত দাবু, অপিত দাবুউউউ..." বলে ঘ্যানরঘ্যানর। 

কখনোই ওদের আব্দারকে প্রাধান্য দিয়ে অফিস মিস দেয়ার কথা কল্পনাতেও আনি নাই।

এবং এটাই তো স্বাভাবিক, তাই না? 

২. 

বাবা-মা'র "সু-সন্তান" যাকে বলে, আমি মনে হয় কখনই সেটা ছিলাম না।  

ক্লাস সিক্স/সেভেন থেকেই বাসার কারো জন্যে খুব বেশি সময় আমার ছিলনা। পালাক্রমে বাবা-মা'র জন্যে বরাদ্দকৃত সময়টাতে ভাগ বসিয়েছে বন্ধু, ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যান্ড, আড্ডাবাজি, প্রেম, চাকরি, ক্যারিয়ার। 

আব্বা-আম্মা কোনদিন মুখ ফুটে বলেন নাই-

"বাবা, আজকে অফিসে না গেলে হয় না?" 

এবং, এটাই তো স্বাভাবিক তাই না? 

৩. 

আম্মা চলে যাওয়ার ১০ দিন পার হলো।  

এই ক'দিন আব্বার সাথে কেউ না কেউ সবসময়ই ছিল। রাজশাহী থেকে ছোটচাচা এসে সর্বক্ষণ ছিলেন আব্বার পাশেপাশে। কাল চাচাও রাজশাহী চলে গেলেন। আম্মাহীন বাসাটাতে এখন শুধুই আমরা। 

রাতে আব্বার ঠিকমত ঘুম হয়না। সকালে তাই খুব ঘুম পায় তার।  

আজ সকালে কাছে গিয়ে দাঁড়াতে হাত ধরে খুব দুর্বল গলায় বলল - 

"তোদের দুইভাই'এর যে কোনো একজনের কি আজকে অফিসে না গেলে খুব প্রবলেম হয়ে যাবে? আজকের দিনটাতে শুধু কেউ একজন থাক; কাল থেকে নাহয় দু'জনই অফিসে গেলি।"

কথাটা শুনে কেন জানি কলিজাটা ছিড়ে গেল।  

আমার মত স্বার্থপর সন্তানের এমন কষ্ট লাগাটা তো অস্বাভাবিক, তাই না? 

৪. 

অনেকক্ষণ ধরে ভেবেও এমন আরেকটা মুহূর্ত খুঁজে পেলাম না যখন আব্বা বা আম্মা আমাদের দুই  ভাই'এর কাছে এভাবে কোনকিছু চেয়েছেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন