বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

বাবুউউউউউউ

যুদ্ধজয়ের ইতিকথা 
--------------------

আমার দেড় বছরের পুত্র জীয়ন মোটামুটি প্রায় সবকিছুই বলতে পারে। সে "চিটাগাং" বলতে পারে, "চানাচুর" বলতে পারে। "আমরাই বাংলাদেশ", "সূচী চাচী", "লন্ডন"-এর মত ভেজাইল্লা শব্দও বলতে পারে। বাপের নাম "রাজীব", মা'এর নাম "পূনম", বোনের নাম "জয়িতা" - এগুলা তার কাছে ডালভাত। 

শুধু এক জায়গাতেই স্যারের বিটলামি। যদি তাকে জিজ্ঞেস করা হয় - "বলতো তোমার নাম কি?" 

সে নকশা করে জবাব দিবে - "বাবু" 

তাকে সুর করে বলা হয় - "না বাবা, বাবু না; বলো জীয়অঅঅঅন"

সে সুর করেই জবাব দেয় - "বাবুউউউউউ" 

এভাবেই দিনের পর দিন পিতৃপ্রদত্ত নামকে কাচকলা দেখিয়ে জীয়ন চৌধুরী নিজেকে "বাবুউউউ" বলে পরিচয় দিতে থাকলো। 

---------------------

আজকে রাতে বাইরে থেকে ফেরার সময় গাড়িতে হঠাত জেদ চাপলো। ব্যাটাকে আজকে বাপের দেয়া নাম বলিয়েই ছাড়ব। 

মাই ডিয়ার পুত্র, তুমি চলো ডালে ডালে, তোমার বাপ চলে পাতায় পাতায়। 

শুরু হলো পিতা-পুত্রের গেরিলা যুদ্ধ। 

--------------------

(আমাদের কথোপকথনটা প্লিজ সুরে সুরে পড়বেন)

আমি (ক্যাজুয়াল ভঙ্গিতে) - "বাবা, বলো তো তোমার নাম কি?" 

পুত্র (মহা মুডে) - "বাবুউউউ"

আমি (মোহনীয় হাসি দিয়ে) - "নাহ, বলো জীয়অঅঅন" 

পুত্র (গাড়ির রেডিওর বাটন টিপতে টিপতে) - "বাবুউউউ"

আমি (প্রশ্রয়ের হাসি হেসে, সুরে সুরে) - "দুষ্টু ছেলেএএএ ... পাজী ছেলেএএএ"

পুত্র (মোহনীয় হাসি দিয়ে) - "হি হি হি"

আমি (দুষ্টু দুষ্টু গলা করে) - "বলো তো বাবা, পাআআআজিইই"

পুত্র (রেডিওর বাটন নাড়তে নাড়তে) - "পাআআআজিইই"

আমি (ধীরে ধীরে লক্ষ্যের দিকে এগুচ্ছি) - "এবার বলো বাবাজিইইই"

পুত্র (সকল মনোযোগ রেডিওর দিকে)  - "বাবাজিইইই"

আমি (পুত্র ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে, সেই খুশিতে গদগদ) - "বাহ বাহ, এবার বলো জিজিইইই"

পুত্র (সুরে সুরে) - "জিজিইইই ... জিজিইইই"

আমি (বিজয়ের সুবাতাস পাচ্ছি) - "সাব্বাস। এবার বলো তো জিজীয়অঅঅন" 

পুত্র (মহানন্দে রেডিওর বাটন নাড়ছে আর সুরে সুরে বলছে) - "জিজীয়অঅঅন ... জিজীয়অঅঅন" 

আমি (পাশে বসা বউ আর পিছনে বসা মেয়ের উত্তেজনা টের পাচ্ছি। সব উত্তেজনা চেপে রেখে, স্বাভাবিক কন্ঠে সুরে সুরে বললাম) - "এবার বলো তো বাবা জীয়অঅঅঅন" 
.
.
.
.
.
.

পিনড্রপ সাইলেন্স। নিঃশ্বাসের শব্দকেও কক্সবাজারের ঢেউএর গর্জন মনে হচ্ছে। মা আর মেয়ে প্রথমবারের মত জীয়নের মুখ থেকে তার নাম শোনার মহেন্দ্রক্ষণটা সেলেব্রেট করতে উন্মুখ; আমি ... যুদ্ধজয়ের অগ্রিম অভিনন্দনে নিজেকে প্রায় ভিজিয়ে ফেলেছি। 

.
.
.
.

পুত্র রেডিওর বাটন থেকে হাতটা সরালো।

আমার দিকে তাকিয়ে একটা ভুবন-ভোলানো হাসি দিয়ে বললো - "বাবুউউউউউউ"   

---------------------

এই ছিল আমার পুত্রের যুদ্ধজয়ের ইতিকথা। 

বাই দা ওয়ে, তার ভুবন ভোলানো হাসির অন্তর্নিহিত অর্থ হলো -  

"মাই ডিয়ার ড্যাড, তুমি চলো পাতায় পাতায়, আর আমি চলি শিরায়-উপশিরায়।"  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন