সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

এক চামচ টুম্পা ঘোষ

এক চামচ টুম্পা ঘোষ
----------------------

"নাটকের কোনো দৃশ্যের প্রয়োজনে নয়, ক্যামেরার কারসাজি নয়, নয় স্রেফ অভিনয়। সত্যি সত্যিই টুম্পা ঘোষের পায়ের ওপর দিয়ে একটি অটোরিকশার চাকা চলে গেছে! দুর্ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার। টালিগঞ্জে। ডাবিং'জন্যে বেরিয়েছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় বিপজ্জনক গতিতে এগিয়ে আসা একটি অটোরিকশা তার পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়।  টুম্পাকে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখেও চালক অটোরিকশাটি থামাননি। চিকিত্সকরা কয়েকদিন বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন তাকে।" 

কি ভাবছেন? আনন্দবাজার পত্রিকা পড়ছেন? দাঁড়ান, আরো দু'একটা হেডলাইন পড়ে শোনাই। 

"জীবনের ডাকে সাড়া দিলেন প্রসেনজিত"

"অরিজিতের বিয়ে"

"ফারহান আখতার ও বিদ্যা বালান। সৌরভ গাঙ্গুলির 'দাদাগিরি আনলিমিটেড' প্রতিযোগিতার চতুর্থ আয়োজনে কাল বুধবার রাতে অংশ নেবেন তারা। অনুষ্ঠানটি ভারতের জি বাংলায় প্রচারিত হবে কাল রাত ১০টায়।" 

......................

বিলিভ ইট অর নট -  আনন্দবাজার না, এগুলো সবই আজকের প্রথম আলোর বিনোদন পৃষ্ঠার কন্টেন্ট! 

জানি, আপনারা যুক্তি দেখাবেন "ত্যানা প্যাঁচায়েন না তো রাজীব ভাই, পাবলিক এখন এইসবই খায়।"

টুম্পা ঘোষ!!! অরিজিত!!! আর ইউ কিডিং??? সিরিয়াসলি আমাদের এই অবস্থা হয়ে গেছে যে আমরা এখন টুম্পা ঘোষের পা নিয়ে চিন্তিত!!! আল্লাহর কসম লাগে, আমি আজকের আগে জানতামও না টুম্পা ঘোষ নামে কোনো অভিনেত্রী আছে।  

এর থেকে "সেইন্ট মার্টিন্স আইল্যান্ডে গিয়ে বেইজবাবা সুমনের দুইবার বমি হয়েছে" ইজ এ বেটার নিউজ ফর মি।  

অনেস্টলি। 

.....................

প্রিয় প্রথম আলো 

আপনাদের আমার ভালই লাগে। আজকের পত্রিকাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনাদের সোজাসাপ্টা রিপোর্টিং বেশ ভালো হয়েছে। মুশফিকুর রহিম উইকেট কীপিং ছেড়ে দিলে তার পারফরমেন্স আরো ভালো হবে কিনা এই রিপোর্ট'টাও নতুন চিন্তার খোরাক দিয়েছে। ২০০০ সাল থেকে আমাদের বাসায় প্রথম আলো রাখা হয়, আপনারা ভালো বলেই এখনও আপনাদের বদলে ফেলার প্রয়োজন হয়নি। 

যেগুলা পঁচা, তারা আরো বেশি পঁচে গেলে কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু আপনারা তো ভালো, তাই আপনারা এমন করলে আসলেই কষ্ট লাগে।  

বাংলাদেশে কি টিভি চ্যানেল নাই? সেখানে কি ভালো কোনো অনুষ্ঠান হয় না? আপনারা সেগুলা নিয়ে না লিখলে মানুষ দেখবে ক্যামনে সেগুলা? ৮টা খবরের মধ্যে ৪টাই ইন্ডিয়ান। তার মধ্যে ২টা জি বাংলা! এইটা কিসু হইলো?

ওয়ার্ল্ড মিডিয়া, গ্লোবালাইজেশন, কালচারাল ডাইভারসিটি'র কথা কথা বলবেন? হায়, হায়! তাইলে হলিউড গেল কই? 

জানেন? প্রতিদিন আমিও পিত্জা-বার্গার-বিরিয়ানি-আইসক্রিম খেতে চাইতাম; আম্মা দিত না। বলত - স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাবে। সুন্দর-সুন্দর ইয়াংমেয়েগুলার সাথে আড্ডা দিতেও বড্ড মন চায়; কিন্তু বউ দেয় না।  বলে - চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে।  

"মানুষ এগুলাই চায় বা খায়" বলে তাই খোড়া যুক্তি দিয়েন না। যা খেলে শরীরের (পড়ুন দেশের/সংস্কৃতির/রুচির) ক্ষতি হয়, চাইলেও সেগুলা খেতে দেয়া উচিত না। সত্যি কথা কি জানেন, মানুষ'কে আসলে যা খাওয়াবেন, মানুষ তা'ই খাবে। 

প্রমান চান? দাদা'দের দেখুন। নিজেরা তো খাচ্ছেই, তার সাথে কত সুন্দর করেই না আমাদেরও খাওয়াচ্ছে।

কষ্টটা আরো বেশি লাগে যখন দেখি যে, ওরা বানাচ্ছে, আর আপনারা চামচে তুলে আমাদের টুম্পা ঘোষ খাওয়াচ্ছেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন