আব্বার সাথে আমাদের একটা নতুন জীবন শুরু হয়েছে।
প্রতিদিন আমরা আব্বা সম্পর্কে নতুন নতুন জিনিস জানছি। জগন্নাথ কলেজের ডাকসাইটে জিওগ্রাফির হেড অফ ডিপার্টমেন্ট যে অনেকদিন ধরেই একটা শিশুর জীবন যাপন করছিলেন, সেটা কিছুটা জানতাম। এখন পুরাপুরি জানতে পারছি। আব্বা এখন পুরোপুরি একজন ৭৯ বছরের শিশু।
আম্মার উপর যে আব্বা ১০০% ডিপেন্ডেন্ট ছিলেন সেটা বললে কম করে বলা হবে। আব্বা আসলেই জানেন না তার শার্ট কোথায় থাকে, ওষুধ কোথায় থাকে। এমনকি আব্বার পেনশনের বই কোথায় থাকে, তিনি সেটাও জানেন না। আম্মা চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন আমরা নতুন করে এসব খুঁজছি। কিছু খুঁজে পাচ্ছি, কিছু পাচ্ছি না।
সবচেয়ে বেশি অসুবিধা যেটা হচ্ছে, সেটা হলো, প্রতি পদে পদে প্রমান পাচ্ছি যে আব্বা আমাদের দুই পয়সাও বিশ্বাস করেন না। একটা ছোট উদাহরণ দিই।
আব্বার ৩ বেলার ওষুধ আমরা আলাদা আলাদা করে গুছিয়ে রাখি, যেন যখন যে সাথে থাকে সে যেন খাইয়ে দিতে পারে। ধরেন, বুয়া রাতে খাওয়ার পর আব্বাকে তার ওষুধগুলো দিল। আব্বা না খেয়ে বসে থাকবেন। আমি আসলে আমাকে দেখাবেন, "দ্যাখ তো, জোহরা ঠিক ওষুধগুলো দিল কিনা।" আমি দেখে বললাম, "ঠিকই আছে আব্বা, খেয়ে নাও।" একটু পর হাসিব আসল, খেয়াল করলাম হাসিব'কেও তিনি একই প্রশ্ন করছেন "দ্যাখ তো, এগুলাই রাতের ওষুধ কি না।" ৩/৪ জনের ভেরিফিকেশন ছাড়া উনি কিছুতেই ঠিক ভরসা পান না।
অথচ আম্মা অসুধ্গুলোর দিকে না তাকিয়ে বলে দিলেও আব্বা অন্ধের মত বিশ্বাস করে সেগুলো খেয়ে নিতেন।
ওনাকে আমি এজন্য কোনো দোষ দেইনা। এই "অবিশ্বাসের" আমি দুইটা মূল কারণ বের করেছি।
১. আব্বার চোখে আমরা দু'ভাই এখনো ছোটই আছি। অথবা,
২. বছরের পর বছর আব্বা আমাদের শুধুই নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখেছেন। আম্মাও তার সেবা করার খুব একটা সুযোগ আমাদের দেন নাই। তাই হঠাত করেই তার দুই ছেলে "বাপের" প্রতি এত দায়িত্ববান হয়ে গেল, এটা তার কাছে কিছুটা অবিশ্বাস্য মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।
..............................
আত্মীয়স্বজন, মুরুব্বি, বন্ধুমহল - সবার কাছ থেকে জীবনে অনেক উপদেশ পেয়েছি। "সিগারেট ছেড়ে দাও", "নামাজ-কালাম, আল্লাহ-বিল্লাহ শুরু করো", "বাচ্চাদের আরো বেশি সময় দাও" ইত্যাদি ইত্যাদি। কেন যেন কেউ সেভাবে কখনো বলেনি - "বাবা-মা'কে আরো বেশি সময় দেয়া উচিত।"
আরেকটু সময় দিলে আব্বা হয়ত আমাদের আরেকটু বিশ্বাস করতেন। আমাদের বলা কথাগুলো ভেরিফাই না করেই মেনে নিতেন।
আমার আব্বার সাথে হয়ত আপনার আব্বার চেহারা মিলবে না। আপনার আম্মা হয়ত আমার আম্মার মত ওপারে চলে যাননি। কিন্তু এই বয়সে এসে সব বাবা-মা'র চাওয়া বোধহয় একটাই। সন্তানের কাছ থেকে আরেকটু বেশি সময়।
খুব কাছে থেকে দেখে এখন বুঝতে পারছি, এর থেকে বেশি ওনারা আসলেই আর কিছু চান না।
আমাকে একথাগুলো কেউ বলে নাই। অবশ্য, বললেও তখন শুনতাম কিনা জানি না।
আমি বলে আমার দায়িত্বটা পালন করলাম মাত্র।
প্রতিদিন আমরা আব্বা সম্পর্কে নতুন নতুন জিনিস জানছি। জগন্নাথ কলেজের ডাকসাইটে জিওগ্রাফির হেড অফ ডিপার্টমেন্ট যে অনেকদিন ধরেই একটা শিশুর জীবন যাপন করছিলেন, সেটা কিছুটা জানতাম। এখন পুরাপুরি জানতে পারছি। আব্বা এখন পুরোপুরি একজন ৭৯ বছরের শিশু।
আম্মার উপর যে আব্বা ১০০% ডিপেন্ডেন্ট ছিলেন সেটা বললে কম করে বলা হবে। আব্বা আসলেই জানেন না তার শার্ট কোথায় থাকে, ওষুধ কোথায় থাকে। এমনকি আব্বার পেনশনের বই কোথায় থাকে, তিনি সেটাও জানেন না। আম্মা চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন আমরা নতুন করে এসব খুঁজছি। কিছু খুঁজে পাচ্ছি, কিছু পাচ্ছি না।
সবচেয়ে বেশি অসুবিধা যেটা হচ্ছে, সেটা হলো, প্রতি পদে পদে প্রমান পাচ্ছি যে আব্বা আমাদের দুই পয়সাও বিশ্বাস করেন না। একটা ছোট উদাহরণ দিই।
আব্বার ৩ বেলার ওষুধ আমরা আলাদা আলাদা করে গুছিয়ে রাখি, যেন যখন যে সাথে থাকে সে যেন খাইয়ে দিতে পারে। ধরেন, বুয়া রাতে খাওয়ার পর আব্বাকে তার ওষুধগুলো দিল। আব্বা না খেয়ে বসে থাকবেন। আমি আসলে আমাকে দেখাবেন, "দ্যাখ তো, জোহরা ঠিক ওষুধগুলো দিল কিনা।" আমি দেখে বললাম, "ঠিকই আছে আব্বা, খেয়ে নাও।" একটু পর হাসিব আসল, খেয়াল করলাম হাসিব'কেও তিনি একই প্রশ্ন করছেন "দ্যাখ তো, এগুলাই রাতের ওষুধ কি না।" ৩/৪ জনের ভেরিফিকেশন ছাড়া উনি কিছুতেই ঠিক ভরসা পান না।
অথচ আম্মা অসুধ্গুলোর দিকে না তাকিয়ে বলে দিলেও আব্বা অন্ধের মত বিশ্বাস করে সেগুলো খেয়ে নিতেন।
ওনাকে আমি এজন্য কোনো দোষ দেইনা। এই "অবিশ্বাসের" আমি দুইটা মূল কারণ বের করেছি।
১. আব্বার চোখে আমরা দু'ভাই এখনো ছোটই আছি। অথবা,
২. বছরের পর বছর আব্বা আমাদের শুধুই নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখেছেন। আম্মাও তার সেবা করার খুব একটা সুযোগ আমাদের দেন নাই। তাই হঠাত করেই তার দুই ছেলে "বাপের" প্রতি এত দায়িত্ববান হয়ে গেল, এটা তার কাছে কিছুটা অবিশ্বাস্য মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।
..............................
আত্মীয়স্বজন, মুরুব্বি, বন্ধুমহল - সবার কাছ থেকে জীবনে অনেক উপদেশ পেয়েছি। "সিগারেট ছেড়ে দাও", "নামাজ-কালাম, আল্লাহ-বিল্লাহ শুরু করো", "বাচ্চাদের আরো বেশি সময় দাও" ইত্যাদি ইত্যাদি। কেন যেন কেউ সেভাবে কখনো বলেনি - "বাবা-মা'কে আরো বেশি সময় দেয়া উচিত।"
আরেকটু সময় দিলে আব্বা হয়ত আমাদের আরেকটু বিশ্বাস করতেন। আমাদের বলা কথাগুলো ভেরিফাই না করেই মেনে নিতেন।
আমার আব্বার সাথে হয়ত আপনার আব্বার চেহারা মিলবে না। আপনার আম্মা হয়ত আমার আম্মার মত ওপারে চলে যাননি। কিন্তু এই বয়সে এসে সব বাবা-মা'র চাওয়া বোধহয় একটাই। সন্তানের কাছ থেকে আরেকটু বেশি সময়।
খুব কাছে থেকে দেখে এখন বুঝতে পারছি, এর থেকে বেশি ওনারা আসলেই আর কিছু চান না।
আমাকে একথাগুলো কেউ বলে নাই। অবশ্য, বললেও তখন শুনতাম কিনা জানি না।
আমি বলে আমার দায়িত্বটা পালন করলাম মাত্র।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন