সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৩

অন্ধ বাবা-মা

আমার-আপনার আশেপাশেই কিছু বাবা-মা খুঁজে পাবেন যারা তাদের সন্তানের ব্যাপারে পুরাপুরি অন্ধ।

তাদের সন্তান যেনো খারাপ কিছু করতেই পারে না। পাশের বাড়ির ছেলেকে আগুনে পুড়িয়ে মারলেও এই বিশেষ প্রজাতির বাবা-মা'রা বলবে - "নো, নো, নেভার; ইম্পসিবল। এ হতেই পারে না। আমার মুন্না বিনা কারণে মশা পর্যন্ত মারে না। নিশ্চয়ই ওবাড়ির ছেলে নিজেই নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আমার মুন্নার নামে অপবাদ দিচ্ছে।"

আপনারা এটাও জানেন যে এই সন্তানগুলির বয়স ঠিকই বাড়ে; কিন্তু এরা কখনই "মানুষ" হয়ে ওঠে না।

ইদানিং আমাদের আশেপাশের বেশির ভাগ মানুষকেই দেখছি রাজনৈতিক ব্যাপারে এমন অন্ধ বাবা-মা'এর মত আচরণ করছে। আওয়ামিলীগ, বিএনপি বা জামাত যেন তাদের ফেরেশতাতুল্য সন্তান; যারা সকল ভুলের উর্ধে। বিশ্বজিতকে কুপিয়ে "তেমন কোনো বড় ভুল" হয় নাই, মনির'কে পুড়িয়ে মারাটাও নিতান্তই যেন একটা সাধারণ ঘটনা। 

যেখানে আমাদের উচিত নিজের এই কু-সন্তান কুলাঙ্গারগুলিকে টেনে-হিচড়ে সবার সামনে ফাঁসিতে ঝুলানোর দাবি তোলা, তা না, আমরা ব্যস্ত নির্লজ্জের মত "কুপিয়ে মারা" বড় অপরাধ নাকি "পুড়িয়ে মারা" বড় অন্যায় - এই চুলচেরা বিশ্লেষণে। ভালই তো। ভালো না? 

কি সুন্দর ভাবেই না আমরা আমাদের "সন্তান"দের বাহবা দিয়ে দিয়ে বড় করছি। দোষ ঢাকতে ঢাকতে প্রতিদিন নতুন নতুন জানোয়ার পয়দা করছি। ইনশাল্লাহ সেই দিন দূরে না, যেদিন পাড়ায়-পাড়ায়-মহল্লায়-মহল্লায় দেশের পতাকার বদলে দল'এর পতাকা উড়বে। এবং "এ" পাড়ার মুন্না "বি" পাড়ায় ঢুকলেই .... 

... কেউ পুড়ে মরবে, কেউ কোপ খেয়ে। 

ভাইরে, নিজের সন্তানের ভুলগুলি ধরিয়ে দিলেই তারা ঠিকভাবে বড় হবে। রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের ভুলগুলি ধরিয়ে দিয়ে ঠিক পথে আনার মূল দায়িত্ব কিন্তু সেই দলের সাপোর্টারদেরই। অন্যের সমালোচনা করার থেকে আত্ম-সমালোচনা করাটাই কিন্তু বেশি উপকারী। এটা আমার কথা না, মনিষীদের কথা। 

ছোটবেলার একটা গল্প বলি। আমি নানু-খালাদের কাছে বড় হওয়া ছেলে। ফাইভ/সিক্সে পড়ার সময় একবার পাশের বাসার ছেলে আমাকে "সামথিং'এর পুত" বলে একটা অশ্লীল গালি দেয়। জবাবে আমি পেয়ারা গাছের ডাল দিয়ে ব্যাটারে চরম মাইর দেই। 

রেসাল্ট: এক সপ্তাহ আমাকে বিকালে খেলতে যেতে দেয়া হয় নাই, থান্ডারক্যাটস দেখতে দেয়া হয় নাই, ম্যাকগাইভার দেখতে দেয়া হয় নাই। 

মানুষ হয়েছি কি হই নাই, আমার আশেপাশের সবাই  বলতে পারবে। তবে অমানুষ যে হই নাই, সেটার প্রমান আমি রেগুলার পাচ্ছি। 

বিশ্বজিতকে কুপিয়ে মারলেও আমার বুক ফেটে কান্না আসে। মুনিরকে পুড়িয়ে মারলেও।

[এই লেখাটা অর্ধেক লিখেছিলাম পরশু রাতে। লেখাটা শেষ করতে করতে পুড়ে মরলো নাহিদ আর রবিন। সত্যি সত্যি এখন মনে হয় চিন্তা শুরু করে দেয়া উচিত, অপশন হিসেবে কোনটা বেছে নিব - পুড়ে মরা? নাকি কোপ খেয়ে মরা?]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন