এইচএসসি'র রেসাল্ট আর বন্ধু-দিবস:
যাই হোক, আমরা ল্যাবরেটরি স্কুলের সবাই দল বেঁধে ঢাকা কলেজে ভর্তি হলাম; এবং কলেজের ২ বছর'ও আমরা সগৌরবে "এ-বি" বিরোধ চালিয়ে গেলাম। কলেজে পড়াশোনা ছাড়া যা যা করা যায়, ২ বছর জুড়ে আমরা মন দিয়ে সবই করলাম। আচমকাই এইচএসসি পরীক্ষা চলে আসল। সীট পড়ল সরকারী বিজ্ঞান কলেজে। হাজার দোআ-মানতের পর'ও লাভ হলো না, আমার সীট পড়ল শত্রু সেকশনের জিয়ার পাশে। মোটামুটি কনফার্ম হলাম, এই শালার কাছ থেকে কোনো হেল্প আশা করাটা পুরাপুরি বোকামি। জিয়া অল-থ্রু ভালো স্টুডেন্ট, এসএসসি'তে স্ট্যান্ড করা ভালো ছেলে; শত্রু সেকশনের ছেলে বলে স্কুলের ৮ বছর প্লাস কলেজের ২ বছরেও আমাদের তেমন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে নি।
পরীক্ষা শুরু হলো। বিস্ময়ের পর বিস্ময় উপহার দিতে থাকলো জিয়া। প্রশ্নের উত্তর বলে দিয়ে, খাতা দেখিয়ে, পারলে আমার খাতায় লিখে দিয়ে হেল্প করতে থাকলো আমাকে। বিজ্ঞান কলেজের অডিটরিয়ামের একটা মোটা পিলারের পিছনে সীট পড়ায় আমি বেহেশতী সুখে পরীক্ষা দিতে লাগলাম। যেখানে ফার্স্ট ডিভিশন নিয়ে সন্দেহ ছিল, পরীক্ষা শেষে ষ্টার মার্কস পাওয়ার স্বপ্ন'ও দেখতে শুরু করলাম - সব'ই জিয়ার কল্যানে। রেসাল্ট দিল, ভয়ে ভয়ে কলেজে গেলাম। সব বন্ধুরা ভরাডুবির শিকার; আর আমি পাপী জঘন্য রকম ভালো রেসাল্ট করে ফেলেছি। ৯০৭ মার্কস, একটুর জন্য স্ট্যান্ড মিস। লজ্জার মাথা খেয়ে দেখি .... জিয়ার নাম্বার আমার থেকে কম। (আমি চোর হতে পারি, কিন্তু আমার হাতের লেখা সুন্দর। তাই মনে হয় যেই স্যার খাতা দেখেছে, সে মনে করেছে, আমি অরিজিনাল, আর জিয়া কপি। হি হি।)
বেহায়ারও লজ্জা থাকে। জিয়া'কে খুঁজতে লাগলাম সরি আর থাঙ্কস দুইটাই বলার জন্যে। শালা আবারও আমাকে অবাক করলো; আমার রেসাল্ট নিয়ে ও এতই বেশি উচ্ছাস দেখাতে লাগলো (ট্রাস্ট মি, উচ্ছাসটা ১০০% জেনুইন ছিল), যে আমার মত নির্লজ্জ'ও বিব্রত ফীল করতে শুরু করলো। সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, জিয়া আসলে মানুষ না, সাক্ষাত ফেরেশতা।
উপসংহার:
১। "এ" সেকশন থেকেও ভালো বন্ধু হওয়া পসিবল
২। আমার "বি" সেকশনের বন্ধুরা, আল্লাহর কসম লাগে, তোরা বিশ্বাস কর, জিয়া না থাকলে আমিও তোদের মত ধরা খাইতাম। আমি চোর হতে পারি কিন্তু বেইমান না। তোরা যখন আড্ডা শেষে বাসায় গিয়া ঘুমাইসোস, আমিও ঘুমাইসি। লুকায়া লুকায়া পড়ি নাই; বিশ্বাস কর।
৩। সবাইকে উপদেশ, পড়াশোনায় ফাঁকি দিও না; সবার কপালে ফেরেশতা জোটে না।
৪। জিয়ার নম্বর আমার মোবাইলে "জিয়া ফেরেশতা" নামেই সেভ করা।
জিয়া দোস্ত, ভালো থাকিস। আমার বউ-বাচ্চার সাথে তোর এখনো দেখা না হলেও, এই গল্প ওরা কয়েকশো বার শুনে মুখস্থ করে ফেলেছে। একদিন তোর বউ-বাচ্চাকেও এই গল্পগুলা শুনাবো। ইনশা-আল্লাহ।
সবাই'কে বন্ধু-দিবসের শুভেচ্ছা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন