বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

বিশ্বাস


আমি বিরক্ত। তাই এটা হবে একটা বিরক্তিকর স্টেটাস। 

ডাক্তার দেখাতে সেদিন গেসিলাম মেডিনোভাতে। ওয়েটিং রুমে বসে বসে মানুষের কথা শুনছি; "এরা তো ভাই ডাক্তার না; কসাই। কসাইয়েরও নীতি থাকে, এদের ঐটাও নাই। চেম্বারে ঢুকবেন, কিসু দেখার আগেই বলবে ৫টা টেস্ট করায়ে আসেন। না বইলাও তো উপায় নাই, মেডিনোভা আসলে কি? টেস্ট করানোই তো ওদের আসল ব্যবসা, তাই না?" --- আচ্ছা বলুন তো,আমরা কতজন আছি যারা ডাক্তারদের বিশ্বাস করি? 

চুল কাটাতে গেলে যখন নাপিত বলে; "স্যার, মাথার স্কিনের অবস্থা তো ভালো না, বিলেড লাগাইলেই বেলাড বাইর হয়ে আসপে। একটা নতুন ট্রিটমেন্ট দিয়া দেই? মাত্র ৫৫০ টাকা" --- কয়জন বিশ্বাস করি যে নাপিত আসলেই আপনার ভালো চেয়ে  সত্যি কথা বলছে? আর কয়জন ভাবি যে নাপিত আসলে আপনাকে মুরগি বানানোর তালে আছে?

ছেলে-মেয়ের স্কুলকে বিশ্বাস করি আমরা? বাংলা মিডিয়ামে তো পড়াশোনাই হয় না। টিচাররা ক্লাসে পড়ায় না, কারণ তাহলে তো তাদের টিউশনির ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে। আর ইংলিশ মিডিয়াম আর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তো পুরাই বানিজ্য, এইটার জন্য আজকে টাকা দাও, ঐটার জন্য কালকে। ------- তার মানে, যারা মানুষ গড়ার কারিগর, আমরা তাদেরও বিশ্বাস করি না। 

ড্রাইভারকে বিশ্বাস করেন কে কে? হাত তুলুন। ২০০০ টাকার তেল আনতে দিলে ঠিক ঠিক ২০০০ টাকার তেল'ই আনবে, এমন অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে কতজন তার ড্রাইভার কে ভরসা করেন? 

নির্জন রাস্তায়, অচেনা কেউ যদি একবারের বেশি দুইবার আপনার দিকে ফিরে তাকায়, কতজন আছি আমরা, যারা ভয় পেয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেই না? নিজের ভাই-বন্ধুকেই যেখানে দিন-রাত সন্দেহের চোখে দেখি, আর সেখানে অচেনা মানুষকে বিশ্বাস করে সব খোয়াই তো! 

উকিল কে বিশ্বাস! লোল। ক্যামনে কি? 
মিডিয়া? সাংবাদিক? এর মত খারাপ জাত আর আছে নাকি? অনুভূতির টুউউউত। 
এজেন্সি? মদখোর, গাঞ্জাখোর আর ধান্দাবাজদের আড্ডাখানা। নষ্ট হয়ে যাওয়া মেয়েছেলেদের আখড়া।  
ক্লায়েন্ট? ফাঁকিবাজ, ঘুষখোর, কিলিকবাজ, আলুবাজ - কে বিশ্বাস করতে যাবে এদের? 
সরকারী চাকুরিজীবি? পুলিশ? হা হা হা হা। থামেন ভাই, একটু হেসে নেই। 
মসজিদের ইমাম? কিছু আর কইলাম না। 
শিল্পী? সেলিব্রিটি? সিম্প্যাথেটিক হিপোক্রেটস। একটা কথাও বিশ্বাস করি না এদের। 
গার্মেন্টস মালিক? মানুষ নাকি ওরা!
শ্রমিক? শ্রমটা কোথায়? সারাদিন তো আছে আন্দোলন আর ইউনিয়নবাজি নিয়ে। 

রাজনীতিবিদ? ফুল-ইশ-টপ। 

প্রগতিশীল মানে হলো নাস্তিক। ধার্মিক মানে মৌলবাদী, জঙ্গি। শুদ্ধ বাংলা বললে আঁতেল, ইংলিশ বললে ইয়াবাখোড়, বাংলিশ বললে "দেশী কুত্তার বিলাতি ঘাউ"। কথা বললে "শালা, এটেনশন-সিকার", চুপ থাকলে সুবিধাবাদী, এসকেপিস্ট। লেটেস্ট এডিশন- বাপ-মা মানে ব্যাকডেটেড, বোরিং; আর ড্রাগ এডিক্ট সন্তান মানে বাপ-মা'র খুনি। ঈশ্বর, তুমি এখনো চুপ কেন?

কি অদ্ভূত সব পারসেপশন আর যুক্তি নিয়ে আমরা বীরদর্পে এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে? (নাকি পিছনের দিকে?)  বিশ্বাস জিনিষটা যেন কি? শেষ কবে, কোথায় যেন একে দেখা গেছিলো? একবিংশ শতাব্দিতে এসে একটি মাত্র বিশ্বাসের গর্বিত বিশ্বাসী এখন আমরা; এবং সেটা হলো:  সামনের-পিছনের-ডানের-বায়ের-উপরের-নিচের প্রতিটা মানুষ কোনো না কোনো উপায়ে আমাকে ধোঁকা দিতে রেডি হচ্ছে। 

ভালো তো। ভালো না? 

শুধু "আমি" আর "আমার" পথই সাচ্চা। বাকি সব শালা কুত্তার বাচ্চা। 


...............
(সরি ভাই, আমি এতটা নৈরাশ্ববাদী মানুষ না। কিন্তু আজকে আসলেই খুব অস্থির লাগছে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন