সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০১৪

জি বাংলা - স্টার জলসা বন্ধ

পাশের পাড়ার ছালমান ভাই প্রতিদিন বিকালে দলবল নিয়ে মাঞ্জা মেরে আমাদের পাড়ায় আসতো। আর তাদের দেখতে আমাদের মেয়েদের সে কী বেহায়াপনা!

যে মেয়েগুলিকে সেই ছোটবেলা থেকে গার্ড দিয়ে দিয়ে বড় করলাম, আজ তাদের এ কী অধঃপতন! ছি ছি! পাশের পাড়ার হিজু হিজু ছেলেগুলিকে দেখে তাদের এ কি আদেখলামি! ছাদে উঠে, জানালার শিকের ফাঁক দিয়ে - কেন এমন ইঙ্গিতপূর্ণ মুচকি হাসি??? সিরিয়াসলি, ইজন'ট ইট টু মাচ টু টলারেট?

ওদের বুঝাতে বসলাম। "শুনো আপু'রা। তোমরা ভুল করছ। আমরাই কিন্তু তোমাদের আপন। ছালমান ভাই হল উড়ে আসা ভ্রমর, ফুলে ফুলে মধু খাবে, তারপর ফুড়ুৎ করে হাওয়া হয়ে যাবে। তোমাদের প্রতি তার কোন ফিলিংস নাই। সো, ওদের নিয়ে লাফালাফি বন্ধ কর। তোমাদের প্লিজ লাগে।"

পাষাণ আপু'রা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল - "এহ, তোমরা তো দেখতে ভাল না। কেমন যেন গরীব-গরীব। আহ, ওরা কি হ্যান্ডসাম। এততোগুলা কিউট। অঅঅঅঅ!"

আমাদের বেলুন ফুটা হয়ে গেল।

বুঝলাম, ছালমান অর তার দলকে শিক্ষা দিতে হবে। পাড়ায় ঢুকলেই একদম ঠ্যাং খোঁড়া করে দেব। তক্কে তক্কে থাকলাম - একবার পাড়ায় ঢুকে নিক, তারপর মজা বুঝাব।

ওরা পাড়ায় ঢুকল। তারপর ...

ইয়ে মানে ... থাক না ... বাকিটা নাহয় না'ই শুনলেন। মিষ্টি করে কানমলা দিয়ে, আর হাতে দুইটা ললিপপ ধরিয়ে দিয়ে ছালমান ভাই আমাদের চোখের সামনেই আমাদের মেয়েদের সাথে টুকুরটুকুর করতে থাকল।

আমরা কিউট কিউট মুখ করে আঙ্গুল চুষতে থাকলাম।

কিছুদিন গেল। তারপর ভাবলাম, প্রতিশোধ নিব। ওদের পাড়ায় গিয়ে ওদের পাড়াতো সুন্দরি "পাখি"র সাথে টাঙ্কি মেরে আসব।

হায়! সে চেষ্টাও করেছিলাম। লাভ হয়নি। ওদের গলিতে ঢোকার মুখে বড় বড় অ্যালসেশিয়ান কুকুর - ঘেউ ঘেউ করে তাড়িয়ে দিল। আমার মিউমিউ করে দূর থেকে পাখি'কে দেখে নিজ পাড়ায় ফিরে এলুম।

এদিকে আমাদের পাড়ার মেয়েদের আদেখলামি চলতেই থাকল। আমরাও দূর থেকে ওদের পাখি'কে ভালবাসতে থাকলাম। আমাদের চেহারাও ধীরে ধীরে গরীব থেকে গরিবতর হতে থাকল।

বুঝলাম, পুরুষত্বের বেইল নাই। "নাই বলস" এর চেয়ে "মামার বলস" ভাল।

লজ্জার মাথা খেয়ে মুরুব্বী'দের পা ধরলাম। "মামা, আমাদের বাঁচান। কিছু একটা করেন যেন ওরা আর আমাদের পাড়ায় ঢুকতে না পারে। আমাদের মেয়েদের বাঁচান। আমরাও নাহয় পাখিকে ভুলে যাব।"

মামা'রা খেপে গিয়ে বলল - "নালায়েক। লজ্জা করে না তোদের? ইন্দুরের মত চু-চু করতেসোস? নিজেরা কিছু করতে পারোস না?"

আমরা চুপ। জায়গা-বেজায়গায় অনেক ফাঁপরবাজি ঠিকই করতে পারি। তাই বলে ছালমান ভাই'এর সাথে পাঙ্গা? পাগল নাকি? আসলে তো আমরা একটা কিউট জাতি। তাই না? "মামাআআআ, কিছু একটা করেন। আপনাদের পিলিজ লাগে।"

যাই হোক, ফাইনালি মামারা তাদের ভাগিনাদের বীরত্বের দৌড় বুঝতে পেরে এবং ভাগ্নিদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে নিয়ম জারি করলেন, ছালমান ভাইরা আর এ'পাড়ায় ঢুকতে পারবে না।

ধীরে ধীরে পাড়ায় শান্তি ফিরে এলো।

আমরা অনেক খুশি হলাম। পটকা ফুটালাম, হালুয়া খেলাম, ফেইসবুকে হ্যাপি-হ্যাপি স্ট্যাটাস দিলাম।

দি এন্ড।

-------

জি বাংলা, স্টার জলসা ইত্যাদি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণাতে (অফিশিয়াল কোন নিউজ অবশ্য আমার কাছে নাই) কেন যেন ঠিক খুশি হতে পারছি না। এই সিধান্ত'কে সাধুবাদ জানিয়ে অনেকের "ওহ ইয়াহ, উই ডিড ইট" টাইপ স্ট্যাটাস দেখেও কেন যেন গা জ্বলছে।

এখনো বিশ্বাস করি, আমরা ভাল প্রোগ্রাম দিতে পারলে আমাদের দর্শকরা ও-পাড়ার অনুষ্ঠান গোগ্রাসে গিলত না।

বেশি ভাল লাগত যদি নিয়ম করে এসব চ্যানেল বন্ধ করতে না হত। অনেক বেশি শান্তি লাগত, যদি, বিজ্ঞাপনের পরিমাণ কমিয়ে, চ্যানেলগুলির পলিসি নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে আর বেটার প্রোগ্রাম দিয়ে আমাদের দর্শকদের আমাদের চ্যানেলে আটকে রাখতে পারতাম।

পাড়া-মহল্লা কালচারে বড় হওয়া ছেলে তো, মামা-চাচার লুঙ্গির পিছে লুকিয়ে বীরত্ব দেখাতে লজ্জা লাগে।

সরি।

I #SupportGaza

"I am অমুক, I am from তমুক, and I support Israel"

"I am অমুক, I am from তমুক and I support ManU/Chelsea/Liverpool"

"I am অমুক, I am from তমুক and I lough at all the morons, hash-tagging "SupportGaza"

সিরিয়াসলি গাইজ, এটা আপনাদের কাছে কুল হওয়া? মুসলিম-ইহুদি ইস্যু না। যেখানে নিরীহ মানুষ পাখির মত মরছে, আমারা দুরে বসে সত্যি সত্যিই আর কিছু করতে না পেরে হ্যাশট্যাগ করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করছি - কিছু মানুষের এটা নিয়েও ফাইজালি করতে হল?!!!

যেখানে লাখ লাখ মানুষ #SupportGaza, #FreePalestine হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফিলিস্তিনের উপর এই বরবরচিত হামলার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছে, সেখানে কিছু মানুষের এটা নিয়ে তির্যক মন্তব্য দেখে মায়া লেগেছে।

কাকের ঝাঁকে মেকআপ মেখে ফেইক ময়ূর সেজে লোক না হাসালে কি চলতই না?

আপনারা বুদ্ধিমান? আর আমরা সবাই বলদ? সিরিয়াসলি?

নাকি বাকিরাই সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ? আর আপনারা মহামানব টাইপ কিছু?

যারা তাচ্ছিল্য করে প্রশ্ন করছেন যে এই হ্যাশট্যাগ করে কোন লাভ হচ্ছে কি না, তাদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার ইচ্ছাও আমার নাই। তবে হ্যাঁ, শুনে রাখুন। লাভ একটা হচ্ছে বটে। ফ্রেন্ডলিস্টে একটা নতুন গ্রুপ খুলতে পারছি - Poor Attention Seeker Assholes নামে। (বিশ্বাস করেন, নামটা দেয়ার সময়ও নামের শর্টফর্মটা মাথায় আসে নাই)

শেষ কিছু কথাঃ

১। ভাই, আপনাকে কেউ পায়ে ধরে নাই হ্যাশট্যাগ করে স্ট্যাটাস দেয়ার জন্য। আপনি না দিলেও কেউ আপনাকে "ক্যান দিলেন না" বলে প্রশ্ন করবে না। চুপ থাকেন না রে ভাই, তাহলেও তো হয়।

২। কেউ কেউ 'সাপোর্ট গাজা' বা 'ফ্রি প্যালেস্টাইন' হ্যাশট্যাগ-ওয়ালা স্ট্যাটাস দিয়েছে বলে আপনারা যদি তাদের নিয়ে পাবলিক পোস্টে হাসাহাসি করতে পারেন, তাহলে আপনাদের নিয়েও আমি আমার পাবলিক পোস্টে যা খুশি বলার পূর্ণ অধিকার রাখি।

৩। আপনাদের পোস্টে গিয়ে আমি কমেন্ট দিয়ে আসি নাই। ইন ফ্যাক্ট আমার রুচিতেও কুলায় নাই। তাই দয়া করে আমার পোস্টে আপনাদের লেইম লজিক দিতে আসবেন না। আপনার লজিক আপনার, আমার লজিক আমার। উলটা-পালটা কমেন্ট দেখলে নগদে ব্লক করব।

৪। এই নেন। আবার দিলাম কাকের ঝাঁকের হুজুগে হ্যাশট্যাগ -

I am Razeeb Hasan Chowdhury, I am from @Bangladesh and I #SupportGaza . #FreePalestine .#Save #Humanity.

কেবিসি'র নতুন অ্যাড

কেবিসি'র নতুন অ্যাড'টা অসাধারণ হয়েছে।

কিছু কিছু অ্যাড আছে, যেগুলি দেখলে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করে "ইশশ, এই আইডিয়াটা ক্যান আমার মাথায় আসল না!" - এইটা তেমনি একটা অ্যাড।

পাশাপাশি দুইটা বাসা; একটা হিন্দুদের, একটা মুসলমানের। কেবিসি প্রোগ্রামটাকে উপলক্ষ করে কিভাবে দুই বাসার মানুষগুলি এক হয়ে যায় - এটাই বিজ্ঞাপনের কনসেপ্ট।

এইবার মজা দেখেন। অ্যাড'টা দেখার পর নানান মানুষের নানান কমেন্ট পড়ছিলাম। কিছু অসাধারণ কমেন্ট তুলে দেয়ার লোভটা সামলাতে পারলাম না।

আমরা যে কত তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া করতে পারি, তার একটা নমুনা দেখতে পাবেন।

---------

প্রথমজনঃ কবে এই জিনিষটা আমরা বুঝবো ?

দ্বিতীয়জনঃ বাট বিশ্বাস আলাদা। গরুর রক্তের রং ও লাল, এখন গরুও যদি নিজেরে মানুষ দাবী করে তাইলে তো হবে না। (এই কমেন্টে ৩ টা লাইকও আছে)

তৃতীয়জনঃ গরুতো গরুই। এখানে মানুষের কথা বলা হচ্ছে। মানুষের মতো গরুতে তো এত ভেদাভেদ নেই। ঠিক না?

চতুর্থজনঃ ****'er kotha sunay monay hoy say nijaye gori. Tar moto kichu goru achay bolay aj dun ire ai obostha.

দ্বিতীয়জনঃ গরুতেও ভেদাভেদ আছে। ফ্রিজিয়ান গরু, সিন্ধি গরু, অস্ট্রেলিয়ান গরু এরকম আরো অনেক। শুধু নামেই না, গঠন, আকার,ও প্রকৃতিতেও তফাৎ আছে। দেশি গরুর চেয়ে ফ্রিজিয়ান ও সিন্ধি গরু দুধ দেয় অনেক বেশি, আবার ইন্ডিয়ান গরুর সাইজ দেশি গরুর চেয়ে অনেক বড়। অথচ মজার ব্যাপার হল, গরুগুলোর রক্তের রং এক। কাজেই রক্তের রং এক হলেই প্রভেদ থাকবে না এটা কোন যুক্তি হতে পারে না। বৈচিত্র্যময় এ পৃথিবীতে ভেদাভেদ আছে বলেই জীবন গতিশীল।

আবারও দ্বিতীয়জনঃ জনাব ***** (চতুর্থজন), আগে মানুষের মত শুদ্ধভাবে লিখতে শিখুন, তারপর না হয় বের করা যাবে কে গরু আর কে মানুষ। লিখছেন তো বাংলিশে, তাও যদি goru কে gori লিখেন তো কিভাবে হবে?

------

যেকোনো জিনিস'কে পিওর কমেডি লেভেলে নিয়ে যেতে পারার যে অসাধারণ ক্ষমতা, তা মনে হয় শুধু আমাদেরই আছে।

ঠিক না?

হিগওয়ে

সেদিন দেখি পাড়ার ডিশের চ্যানেলে একটা মুভি দেখাচ্ছে। স্ক্রিনের কোনায় বাংলা হরফে নাম লেখা - "হিগওয়ে"।

আমার ব্ল্যাংক লুক দেখে বউ বুঝিয়ে বলল, মুভির নাম আসলে "হাইওয়ে"।

এরপর থেকে আমি মহা আগ্রহে ওই চ্যানেলে মুভির নামগুলি খেয়াল করতে লাগলাম। এবং, আল্লাহ্‌র কসম লাগে, ওরা আমাকে একবারের জন্যেও হতাশ করে নাই।

একদিন চালালো "রাবনা বানা"। মুভিটা কিছুক্ষণ দেখে বুঝলাম, ওইটার "রাব নে বানা দি জোড়ি"।

আরেকদিন ছিল "টুশটেট"।

"বরপি", "কাবি খুশি কাবি গুম", "দিল ছাতা হে" ... লিস্ট অনেক লম্বা রে ভাই।

কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব!

যারা গাড়িতে ঘুরাঘুরি করেন, দয়া করে দরজাগুলি লক করে রেখেন।

লোকটা কি পাগল নাকি ক্রিমিনাল, শিওর না; যেটাই হোক, ঘটনাটা জানা থাকলে হয়তো আপনারাও সাবধান থাকতে পারবেন।

গতকাল ইফতারের আগে আগে আমি গাড়ি নিয়ে মহাখালী থেকে নিকুঞ্জ যাচ্ছি। ড্রাইভার নাই, আমি গাড়িতে একা।

মহাখালী মোড়ে (মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যে রাস্তাটা গুলশান ১'এর দিকে যায়), সিগনালে আমার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। সামনের বামপাশের দরজার পাশে একটা ২০/২২ বছরের ছেলে এসে দাঁড়াল। ভিক্ষুক না, কাল গোলগলা টিশার্ট আর কাল ময়লা প্যান্ট পরা হ্যাংলা-পাতলা একটা ছেলে।

আমি হাতের ইশারায় জানতে চাইলাম, কি চায় সে। একটা অপ্রকিতস্থ চাহনি দিয়ে ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। কেমন যেন ড্রাগ অ্যাডিকটেড টাইপ দৃষ্টি। আমি হাতের ইশারায় ওকে চলে জেতে বললাম। কিন্তু সে গাড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকল।

সিগনাল ছুটতে যখন গাড়ি চলতে শুরু করল, ছেলেটা হঠাৎ গাড়ির দরজার হ্যান্ডল ধরে টানতে শুরু করল। দরজা লক করা ছিল, তাই সে দরজা খুলতে পারল না। আমি গাড়ি হাল্কা টানা শুরু করলে সেও দরজা ধরে গাড়ির সাথে সাথে দৌড়াতে লাগল।

কাঁচ নামিয়ে ঝারি দিয়েও কোন লাভ হল না। কোন কিছু না বলে ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। ইফতারের ঠিক আগের সময়, ভিড়ের মধ্যে তখন কারোর দিকে কারো তাকানোর টাইম নাই। গাড়ি থেকে নেমে যে ছেলেটাকে ফাঁপর দিব, সেই সাহস হল না।

গাড়ি থামালাম। সামনের গাড়িগুলি'কে কিছুটা এগিয়ে যেতে দিলাম। যখন দেখলাম সামনের রাস্তা খালি হয়েছে, তখন গাড়ি জোরে টান দিলাম। ছেলেটার দরজা ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।

ছেলেটা পাগলও হতে পারে, আবার তার খারাপ মতলবও থাকতে পারে। দরজা যদি লক করা না থাকত, আর ওই ভিড়ের মধ্যে দরজা খুলে, গাড়িতে উঠে যদি ব্যাটা একটা ছুরি বা পিস্তল বের করত, আমার কিন্তু কিছুই করার থাকত না।

যারা গাড়িতে ঘুরাঘুরি করেন, দয়া করে দরজাগুলি লক করে রেখেন।

সময়টা আসলেই ভালো না।

পেইন

আমার মোবাইল ফোনের কন্টাক্ট লিস্ট দেখি "পেইনে" মাখামাখি!

এর সূত্রপাত বেশ আগে। এক পাবলিক আগে রেগুলার ফোন দিত। আয়েশাকে খুঁজতে। এই আয়েশা কোন আয়েশা, তা জানি না, কিন্তু আব্বা-আম্মা যে আকিকা দিয়ে আমার নাম আয়েশা রাখে নাই, এটা আমি শিওর জানি। ব্যাটাকে হাজারবার বুঝিয়েও কাজ হত তা। ফোনটা ধরলেই মধু-মধু কণ্ঠে বলতো - "হেলুউঁউঁ, আয়েশাআআ?"

তখনও নাম্বার ব্লক করার কায়দা শিখি নাই। তাই বাধ্য হয়ে তার নাম সেইভ করেছিলাম "পেইন" হিসেবে।

এ থেকেই শুরু কন্টাক্ট লিস্টে পেইনের অন্তর্ভুক্তি।

নিজের অজান্তেই তারপর থেকে একের পর এক মানুষ তাদের নিজনিজ চরিত্রগুনে আমার লিস্টকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন।

এক স্কুলগোয়িং ছেলে কিভাবে যেন আমার ফোন নাম্বার পেয়েছে। সে যখন তখন ফোন দেয়া শুরু করল। "ভাইয়া, প্লিজ অ্যাড মি ইন ফেইসবুক। আই অ্যাম এ ভেরি গুড লাইকার।" তাকে খুব ভদ্রভাবে ফোন করতে বারণ করা সত্ত্বেও সে মাঝেমাঝেই ফোন করে বিরক্ত করতে লাগল। - আমি মানুষটা খুব একটা সুবিধার না। তাই, তার নাম সেইভ করা হল "ফেইসবুকিও পেইন" নামে।

আমার সাথে আমার স্কুলের ছোটভাই'দের সাথে সখ্যতা বেশ। ওদের সবাইই খুব ভালো, কিন্তু একটা আছে, বেশ বেয়াদব। ফোনটা ধরেই এমন ভাবে কথা শুরু করে যেন আমি তার ন্যাংটা কালের ইয়ার-দোস্ত। অথচ ছেলে আমার থেকে মিনিমাম ১০ বছরের জুনিয়র। তার নাম সেইভ করলাম "স্কুলের পেইন" নামে।

আরও আছে। একটা অতিশয় ন্যাকা সুন্দরি ক্লায়েন্ট ছিল আমার। কারণে-অকারণে ফোন দিয়ে বাংলিশে বাতচিত করত। তিনি হলেন "নকশা পেইন"।

কোন এক কুক্ষণে এক "ভদ্রলোক" আমার ক্লায়েন্ট হয়েছিল। বড়ই স্মার্ট, গুডলুকিং জেন্টলম্যান। কিছুদিন যেতেই তার চরিত্র প্রকটভাবে প্রস্ফুটিত হল। ব্যাটা যেকোন জায়গা থেকে পয়সা খায়, অথচ বেতন পায় সিক্স ডিজিটে। কথিত আছে, উনি নাকি অফিসে বিরিয়ানি খেলেও ভুয়া বিল করে ডাবল টাকা উথাতেন। নির্দ্বিধায়, নিঃসংকোচে, খুশিমনে তার নাম দিলাম "চোর পেইন"।

কষ্টের সাথেই জানাচ্ছি। পরিচিত আরও বেশ কিছু মানুষ নিয়ে ইদানীং সিমিলার কাহিনী শুনতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে সামনে "চোর পেইন ১", "চোর পেইন ২" এমন করে সিরিজ শুরু করতে হবে।

সবশেষে আছে "দা পেইন"। এই পেইনের জন্য কোন বিশেষণই যথেষ্ট না। "দা পেইন" এমন একজন মানুষ, যাকে আপনি না পারবেন গিলতে, না পারবেন ফেলতে। না পারবেন ডিপ্লোম্যাটিক্যালি হ্যান্ডল করতে, না পারবেন চটকান মেরে বিদায় করতে। পাগলের সুখ মনে মনে, আমার সুখ "দা পেইন" নামকরণে।

কেন জানি মনে হচ্ছে, এমন "দা পেইন", অনেকের জীবনেই বর্তমান।

আমার কন্টাক্ট লিস্টের একটা স্ক্রিনশট কমেন্টে দিয়ে দিলাম।

মা-খালাদের সাথে ফুটবল দেখা

মা-খালাদের সাথে ফুটবল দেখার কিছু ইউনিক মজা আছে।

যেমন, ওনারা খালি একজনের সাথে আরেকজনের মিল খুঁজে পান। ফাইনালের দিন, জার্মানির কোচ'কে নিয়ে শুরু হল খালাদের অ্যানালাইসিস। একজন বলল জোয়াকিম লো সাহেব দেখতে শাহরুখ খানের মত। আরেকজন বলল - না, মোটেও না। ভদ্রলোকের সাথে অর্জুন রামপালের মিল আছে।

খেলার উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন সেজ খালা হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠল - "পাইসি রে, পাইসি, ব্যাটার চেহারা আসলে চাঙ্কি পাণ্ডের মত। ঠিক না? ঠিক না? বল, বল, ঠিক না?"

আমরা সবাই সায় দিলাম। একদম ঠিক, ব্যাটার চেহারা চাঙ্কি পাণ্ডের মত। (আশা করি, আমার এই লেখা কোনদিন লো সাহেব পড়বেন না, এবং পড়লেও ওনার সাথে কখন চাঙ্কি পাণ্ডের দেখা হবে না।)

সেকেন্ড ট্রেন্ড হল, ওনারা সম্পর্ক বড়ই পছন্দ করেন। আগুয়েরো যেহেতু ম্যারাডোনার জামাই, তাই তার প্রতি সবার অসম্ভব মায়া।

"আহা রে, এই ছেলেটারই বিশ্বকাপ জেতা উচিত। ম্যারাডোনার মেয়েটার কততো ভালো লাগবে। বর-বাবা দু'জনেই ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন। আল্লাহ্‌ তুমি জামাইবাবা'কে চ্যাম্পিয়ন বানায়া দাও। আমিন।"

এই মায়া আবার চেহারার সাথে রিলেটেড। মেসির চেহারা যেহেতু মায়ামায়া, তাই ওর কান্না দেখলে সবার বুক ফেটে যায়। নেইমার যেহেতু শিশু-শিশু, তাই ও যখন ব্যাথা পায় তখন আমার খালারাও ব্যাথা পান।

কিন্তু ...

শোয়াইনস্টেগারের যখন গাল বেয়ে রক্ত পড়ে, খালাদের সে কি নিষ্ঠুর জাজমেন্ট - "আরে ধুর, জার্মানির সব ফেইক। এইটা রক্ত নাকি টমেটো সস সেইটা আগে চেক করা উচিত। মনে নাই, সেই ৯০ সালে কাইন্ঠামি করে পেনাল্টি আদায় করে আর্জেন্টিনা'কে হারাল। আহারে, বেচারা ম্যারাডোনা। ওর ওই কান্নাকান্না চেহারাটা এখনও চোখে ভাসে রে।"

কি অসাধারণ কিউট আমাদের মা-খালাদের ফুটবল প্রেম! শুধু ওনাদের সাথে খেলা দেখার জন্যই তো প্রতিবছর ওয়ার্ল্ড কাপ হওয়া উচিত। ঠিক না?

বাংলাদেশি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বর্জন

আজ ... এই মুহূর্ত থেকে ... আমি যাবতীয় বাংলাদেশি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে (লেজিটিমেট নিউজপেপারের অনলাইন ভার্সন আর বিডিনিউজ২৪ ছাড়া) বর্জন করলাম।

কিছু অশিক্ষিত, ফালতু পাবলিক ভিত্তিহীন, বানোয়াট, সস্তা খবর লিখে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, আর মানুষজন সেসব পড়ে ... দেশ, ধর্ম, পৃথিবী গুলিয়ে খেয়ে জ্ঞানী থেকে মহাজ্ঞানী হয়ে যাচ্ছে ...... এইসব পোর্টাল ব্যাবসায়ি জ্ঞানপাপীদের ভরা মজলিশে থাবড়ানো উচিত।

এবং, আমার ফ্রেন্ডলিস্টে যাদের দেখব এইসব আজাইরা পোর্টালের বাজাইরা নিউজ শেয়ার করছে, তাদের বিনা নোটিশে নগদে আনফলো করব। আল্লাহ্‌র কসম।

খবর দেখার মত সাহস হচ্ছে না

খবর দেখার মত সাহস হচ্ছে না। ছোটছোট বাচ্চাগুলির রক্তাক্ত শরীর দেখার মত মানসিক শক্তি আমার নাই। ফেইসবুকে কিছু ছবি, আর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরার কিছু কাভারেজ দেখে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক কারণ যাই থাকুক না কেন, নিরপরাধ নারী-শিশুদের উপর এমন হামলা কিভাবে মেনে নিচ্ছে বিশ্বশান্তির ধারক ও বাহকরা? কিছু করা হচ্ছে না কেন? এটা কেমন বিচার?

দোআ করা ছাড়া আর কিছু করার নাই আমাদের। তাই দু'হাত তুলে আল্লাহ্‌'র কাছে প্যালেস্টাইন'এর ভয়ংকর অসহায় মানুষগুলির জীবনের জন্যর প্রার্থনা করছি। আল্লাহ্‌, তুমি তাদের দিকে একটু তাকাও। আর যুদ্ধবাজ অসুস্থ মানুষগুলির মগজে শুভবুদ্ধির উদয় ঘটাও; তাদের ঠিক পথ দেখাও।

মানুষ যখন আর মানুষ থাকে না, তখন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ তাদের পথ দেখাতে পারে না।

"ফ্রেন্ডস ফর দা পুওর পিপল"

কিছুদিন আগে আমার অফিসের "ওয়ার্ল্ড কাপ ফিভার" নিয়ে একটা ভিডিও আপলোড করেছিলাম, মনে আছে?

আজকে ওই ভিডিওটা করার পিছনের একটা সুন্দর গল্প বলি।

আমরা হঠাৎ করেই ঠিক করি অফিসের ফুটবল নিয়ে পাগলামি নিয়ে একটা ভিডিও করে ফেলার। ভিডিওটা কেমন হবে, কি কি থাকবে এসব নিয়ে যখন প্ল্যান করতে বসেছি, আমার কলিগ রাজীব একটা জোশ আইডিয়া দিল।

"ভাই, পাগলামিটা শুধু অফিসের মধ্যে আটকে রাখতে ইচ্ছা করছে না। আমরা কি এই উসিলায় কিছু মানুষের মধ্যে খুশি ছড়িয়ে দিতে পারি না?"

---------

যেই ভাবা, সেই কাজ।

ভিডিওটা করার সময় শুরু হল অফিসের ভিতর চাঁদাবাজি। কোন নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট নাই, যে যা পারে তাই দিবে। আমাদের এক্সপেকটেশন খুব বেশি কিছু না। রাজীবের প্ল্যান হল, যা টাকা উঠবে তা দিয়ে কিছু বল আর জার্সি কিনে এমন কিছু বাচ্চাদের দিব, যারা এটুকু পেয়েই অনেক খুশি হবে।

--------

ঢাকা শহরে ফাসেরটেক বলে একটা জায়গা আছে, জানেন? আমিও আগে জানতাম না।

এই ফাসেরটেকে ডিনো হালদার নামে এক ভদ্রলোক সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাদের জন্যে একটা স্কুল চালান। ডিনো পেশায় একজন দর্জি। খুব ছোট করে শুরু হলেও স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বর্তমানে ১৮০ জন। ছাত্রছাত্রীরা এখানে বিনা পয়সাতে পড়ে। ডিনো তার পরিচিত মানুষজনের কাছ থেকে টুকটাক সাহায্য নিয়ে আর নিজের কঠোর পরিশ্রম দিয়ে স্কুলটাকে চালিয়ে যাচ্ছে।

--------

আমরা সিদ্ধান্ত নেই এই স্কুলের বাচ্চাদের একটু হলেও খুশি করবো। ওদের সাথে যোগাযোগ হল, ওরা রাজি হল। পুরা আরেঞ্জমেনটের দায়িত্ব দেয়া হল আমার আরেক কলিগ রাব্বি'কে।

রাব্বি আর তার দল কিভাবে কিভাবে যেন ম্যাজিক দেখিয়ে দিল। আমাকে ওদের প্ল্যান শেয়ার করল।

"ভাইয়া, প্ল্যান ইজ, আমরা ওদের স্কুলে যাব। বাচ্চাদের মধ্যে একটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ হবে। আমরা বল, জার্সি, খাবারদাবার নিয়ে যাব। স্কুলের পাশে একটা মাঠ আছে। ওইটা সাজাব। খেলা শেষে বল, জার্সি সব ওদের দিয়ে আসব।"

তারপর একটা হাসি দিয়ে বলল -

"আরও একটা সারপ্রাইজ আছে। ওদের জন্য একটা টিভি আর একটা ডিভিডি প্লেয়ার কিনে ফেলছি। ওগুলাও ওদের স্কুলে গিফট করে আসবো। ওরাও তাহলে ওয়ার্ল্ড কাপ দেখতে পারবে।"

আমি তো পুরাই হব্দ।

"এতো টাকা পাইলা কই?"

"ভাই, চিন্তা কইরেন না। চুরি-ডাকাতি করি নাই। অফিসের পোলাপান'রে হালকা ছিল দিসি। ওতেই টাকা উঠে গেসে। আর এতে কেউ রাগও করে নাই।"

----------

গত ২৮ জুন, শনিবার, অফিস ছুটির দিনে, আমাদের ১৫/২০ জনের একটা গ্রুপ মাল-সামান নিয়ে হাজির হয় "ফ্রেন্ডস ফর দা পুওর পিপল" স্কুলের পাশের মাঠে। সকালের বৃষ্টিতে ভিজে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জার্সি পরা কালো-কালো ছেলেগুলি ফাসেরটেকের মাঠ কাঁপিয়ে ফেলে মুহুর্মুহু চিৎকারে।

কখনো জার্সি পাওয়ার আনন্দে, কখনো গোল করার উত্তেজনায়, কখনো বা টিভি-ডিভিডি প্লেয়ারের র‍্যাপিং পেপার খোলার খুশিতে।

---------

উপসংহারঃ

১। দুইজনের ক্যামেরায় ওইদিনের প্রায় ১২ গিগাবাইট ভিডিও ফুটেজ আছে। যেগুলা নিয়ে একটা ছোট ভিডিও রেডি করার কথা। দায়িত্ব যাকে দেয়া হয়েছে, সে মহা ফাঁকিবাজ, এখনো কিছুই করে নাই। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম রাজীব হাসান চৌধুরী। উনি কথা দিয়েছেন অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভিডিওটা কমপ্লিট হবে। এবং সেটা Ogilvy Bangladeshএর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে আপলোড করা হবে।

২। কিছু ছবি অফিসের ফেইসবুক পেইজ থেকে দু'এক দিনের মধ্যেই আপলোড করা হবে। ওখান থেকে বাচ্চাদের খুশির ছবি দেখে নিতে পারেন।

৩। আমার অফিসটা আর অফিসের মানুষগুলা আসলেই অনেক জোশ। এত তাড়াতাড়ি জায়গাটাকে ভাল লাগতে শুরু করবো, এক্সপেক্ট করি নাই।

শনিবার, ৫ জুলাই, ২০১৪

শুভ জন্মদিন জীয়ন

বাপ আমার,

আমি জানি, খুব শীঘ্রই তুই আমাকে একই সাথে ৭ হাটে বেচে আসতে পারবি । আল্লাহর অশেষ কৃপায় তুই দিনদিন যে মাপের ত্যান্দরে পরিণত হচ্ছিস, ম্যাট্রিক পাশ করতে করতে তুই যে কি হবি, সেটাই এখন দেখার বিষয়। (বিশাল বড় দীর্ঘশ্বাস) ...

যাই হোক বাপ, তোর কাছে তোর এই বোকাসোকা বাপের একটাই অনুরোধ - যেখানেই বেচিস, ভাল দামে বেচিস। মগজ হোক বা শরীর, দুই ক্ষেত্রেই আমি কিন্তু বেশ ওজনদার মানুষ।

শুভ জন্মদিন জীয়ন। তোর তো অনেক বুদ্ধি, তাই নিশ্চয়ই এই দুই বছরে বুঝে গেছিস যে তোকে আমি অনেক ভালবাসি।

ললিপঅঅঅঅপ

ছেলের বয়স মাত্র দুই, কিন্তু মেজাজ পঞ্চান্ন বছরের বুড়ার মত।

কোন কিছু মনমত না হলেই চোখ গরম করে "পঅঅঅঅপ" করে ঝারি দেয়। যখন-তখন, যার-তার সামনে। বাবা-মা হিসেবে এ নিয়ে আমরা ভালোই বিব্রত।

কি লজ্জার কথা বলেন তো, হাঁটুর বয়সী পোলা, যদি মেহমানের সামনে "পঅঅঅঅপ" মেরে দেয়, বেইজ্জতি হয়ে যাবে না?

শান্তির কথা হল মেয়ে আমার বিশাল বুদ্ধিমতি। বরাবরের মত এবারও সমস্যার সমাধান করে ফেললো।

কয়েকটা সেশন নিয়ে সে জীয়নকে শিখাতে সক্ষম হল, যে "পঅঅঅঅপ" হল ছোট বকা, এটা দিলে খুব একটা লাভ হয় না। বড় বকা হল "ললিপঅঅঅঅপ" - যেটা দিলে বাবা-মা ভয়ে হিসু করে দিবে।

ব্যাস, পুত্র আমার মহা খুশি। "পঅঅঅঅপ" পুরাপুরি ভুলে গেল, এখন রেগে গেলেই সে চোখ পাকিয়ে বলে "বাবাআআআ, মাআআআ, ললিপঅঅঅঅপ" ।

আমরা হেসে দিলে সে আরও গরম হয়ে বলে, "ললিপঅঅঅঅপ বলসি কিন্তুউউউ"।

আমরা তখন অনেক ভয় পাই। আমাদের ভয় দেখে ছেলের রাগও কমে যায়।

আহ, আই অ্যাম সো প্রাউড অফ মাই গার্ল 

"8 person. 600 KG"

"8 person. 600 KG"

এটা আমার মত "ভাল স্বাস্থ্যের" অধিকারী মানুষদের জন্য বড়ই বিব্রতকর একটা সাইন, যা বেশির ভাগ লিফটের ভিতরেই থাকে।

পাবলিক লিফটে উঠেই আমি "ইয়া নফসি, ইয়া নফসি" করতে থাকি। আমি সহ ৫ জন উঠলেই আমি দোআ করতে থাকি যেন লিফটে আর কোন লোক না ওঠে।

কখনো কখনো বেঁচে যাই। কিন্তু, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাঁচি না।

সাধারণত ৬ নম্বর লোকটা ওঠার সাথে সাথেই লিফট প্যাঁ প্যাঁ করে অ্যালার্ম দিতে থাকে, "ওভারলোড,ওভারলোড"।

তারপরের কনভারসেশনগুলা সাধারণত কপি-পেস্ট, সেইম টু সেইম।

ভিতরের একজন ৬ নম্বর লোকটাকে লিফট থেকে নেমে জেতে বলবে। লোকটা পাত্তা না দিয়ে লিফটে উঠে পরবেন। এদিক-সেদিক নাড়াচাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে অ্যালার্ম বন্ধ করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু কোন কিছুতেই কোন কাজ হবে না।

তারপর তিনি বিরক্ত হয়ে গজগজ করতে করতে নেমে যাবেন।

একজন বলবেন, "লিফটের অবস্থা তো পুরাই কেরোসিন। লেখা ৮ জন, ৫ জন উঠতে না উঠতেই ওভারলোড। কোন মানে আছে?"

আরেকজন বলবে, "এই ৫ জনে ৬০০ কেজি হয় ক্যামনে? আজাইরা লিফট একটা।"

ঠিক তখনি...

ঠিক তখনি...

তাদের একজনের নজর পরবে আমার উপর। মোবাইল ফোনে এসএমএস পড়ার ভান করতে করতে আমি তখন শিওর হব - মনে মনে জপতে থাকা "ইয়া নফসি" আবারও ফেল করেছে।

ফিচেল একটা গা জ্বালানি হাসি দিয়ে ভদ্রলোক বলবেন, "ওহ, না না, লিফট ঠিকই আছে। ভাই মোটামুটি ৩ জনের প্রক্সি দিয়ে দিসেন। হে হে।"

বাকিরাও তখন "নতুন চোখে" আমাকে মাপতে থাকে।

কি আশ্চর্য!!! একেকজনের চেহারা একেকরকম। কিন্তু সবার ফিচেল হাসিটা হুবহু এক। পুরাই কপি-পেস্ট!

...
...
...
...
...

"8 person. 600 KG"

ফাইজলামির একটা সীমা থাকা উচিত।

যুক্তবর্ণ

মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষার খাতা দিয়েছে। মাশাল্লাহ, ভাল রেজাল্ট করেছে।

বাপসুলভ পাকনামি করতে হয়ে বলে খাতাগুলি নেড়েচেড়ে দেখছি। বাংলা খাতা দেখে আক্কেল গুড়ুম।

প্রশ্ন হল "যুক্তবর্ণ ভেঙ্গে দেখাও ও দুটো করে শব্দ লিখ"

"ণ্ঠ" - মেয়ে লিখেছে "ণ + ঠ", "কণ্ঠ" আর "গণ্ঠ"। (টিচার প্রথমটায় নম্বর দিয়েছে, দ্বিতীয়টায় গোল্লা।)

"গ্ধ" - মেয়ে লিখেছে "গ + ধ", "মুগ্ধ" আর "বগ্ধ"। (যথারীতি টিচার প্রথমটায় নম্বর দিয়েছে, দ্বিতীয়টায় গোল্লা।)

আমি মেয়েকে ডাকলাম। "কাহিনী কি মা? গব্দ, গণ্ঠ ... এইসব কই পাইসস?"

জবাব পেলাম, "প্রশ্নটা ঠিকমত পড়ে তারপর ঝাড়িটা মারলে খুশি হতাম। প্রশ্নে বলা ছিল দুটি শব্দ লিখতে হবে। মিনিংফুল শব্দ লিখতে হবে সেটা তো কোথাও বলে নাই। গব্দ, গোব্দা, গণ্ঠ, মণ্ঠ ... যাই লিখতাম, টিচারের উচিত ছিল সবকিছুতেই নম্বর দেয়া। বাদ দাও বাবা, রেজাল্ট যেহেতু ভাল হয়েছে, তাই টিচারকে কিছু বলার দরকার নাই।"

ইয়ে মানে, আমি কিন্তু পুরাই হব্ধ হয়ে গেলাম।

*সাক্ষ্যপ্রমাণ কমেন্টে দেয়া হল

শালার বউ

আমার শালার বউ গত ২ সপ্তাহ ধরে তার মা'এর বাসায়।

বউ'কে জিজ্ঞেস করলাম -

"কাহিনী কি? তোমার ভাইয়ের বউ মা'এর বাড়িতে এতদিন কি করে?
"ওর মা'এর বাসা খালি। বাবা-মা'র দেখাশোনা করার কেউ নাই। তাই গেছে।"
"ক্যান? বাসা খালি ক্যান?"
"কারণ, ওর ভাইয়ের বউ তার মা'এর বাড়ি গেছে।"
"ওর ভাইয়ের বউ তার মা'এর বাড়ি কেন গেছে?"
"কারণ, ওনার বাসাও খালি। বাবা-মা'র দেখাশোনা করার কেউ নাই।"
"কেন? ওনার বাসার আবার কি হইসে?"
"উফফ, ওনার বাসাও খালি। কারণ ওনার ভাই'এর বউও তার মা'এর বাড়িতে ..."

...

জানি, পুরাই ইররেলেভেন্ট; তারপরও একটা লাইন মাথায় আসছে;

"আড়তদারদের ওই জাল ছিড়া বাইর হইতে পারে নাই আমার বাবা, তার বাবা, তার বাবা ..."

অশুদ্ধ ভাষা

ছোটবেলায় অশুদ্ধ ভাষায় কথা বললে চরম ঝাড়ি খেতাম খালাদের কাছে।

একবার স্কুলে ফুটবল খেলতে গিয়ে পা'এর নখ উঠে গেল। রক্তমাখা পা নিয়ে বাসায় ঢুকতেই পড়লাম ছোট খালার সামনে।

"পা কাটল কিভাবে তোমার?"

"রাস্তায় উশটা খাইসি।"

"উশটা???!!! উশটা কি জিনিশ? ঠিক মত কথা বল।"

নখ ওঠার ব্যাথা, খালার ঝাড়ি - সব মিলিয়ে তখন এলোমেলো অবস্থা আমার। হাজার খুঁজেও উশটা'র শুদ্ধ ভার্শন খুঁজে পেলাম না।

"ইয়ে মানে, রাস্তায় উশটো খেয়েছি।"

আমার শুদ্ধ ভাষা ব্যাবহারের এই নাদান প্রয়াসে "উশটা" বলার অপরাধ মাফ হয়ে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এই "উশটো" নিয়ে পরবর্তী কয়েকদিন অনেক হাসাহাসি সহ্য করতে হয়েছিল আমাকে।

------

বর্তমান সময়ের একটা কনভারসেশনকে যদি "শুদ্ধ" ভাষায় ট্রান্সলেট করি, তাহলে কি এমন দাঁড়াবে?

"পাশের ফ্ল্যাটের ছেলেটা তো দেখি পুরাই বাদামে। শুদাই সারাদিন টো-টো করে ঘোরে, কাজ-কর্ম তো কিছু করতে দেখি না।"

"তাতে তোমার প্রবলেম কি? আজারে যারতার পারসোনাল লাইফে বামহাত হাঁদিয়ে দেয়ার খাসলতটা তোমার গেলই না।

"বলো কি মমিন? তোমার কথা শুনে তো পুরাই তব্দ খেয়ে গেলাম। ত্যানা-প্যাঁচানো তো আমি তোমার কাছ থেকেই শিখলাম।

"অইত্তেরি। সব দোষ এখন আমার! বাহ, ভাল তো। ভাল না?"

------

ওরে, তোরা কেউ আমাকে মেরে ফেলছিস না কেন রে!!!

------

অ্যাপেনডিক্সঃ

বাদামে - বাদাইম্মা
শুদাই - হুদাই - অ্যাপ্লাইং দা সেইম লজিক, যেভাবে শালার ছেলে বিকেইম হালার-পো)
আজারে - আজাইরা
হাঁদিয়ে - হান্দাইয়া
খাসলত - খাইস্লত
তব্দ - তব্দা (এইটা কি আসলে "স্তব্ধ" থেকে এসেছে?)
বলো কি মমিন - কস কি মমিন?
ত্যানা প্যাঁচানো - প্লিজ সামবডি হেল্প মি, ত্যানা-প্যাঁচানো'র শুদ্ধ কি হবে???
অইত্তেরি - Arif R Hossain, আপনার সাহায্য প্রয়োজন