রবিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৪

ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ২

ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ২
--------------

পোস্ট অপারেটিভ থেকে আম্মাকে কেবিনে দেয়া হয়েছে। আম্মার সাথে তখন শুধু আমি একা।

আম্মার জেনারেল এনেসথেসিয়ার ঘোর তখন পুরাপুরি কাটেনি, টাল-টাল ভাব।  কথা বলার চেষ্টা করতে গিয়েই খেয়াল করলেন যে গলা দিয়ে তো শব্দ বের হবেনা। শিট।  

বাট, আমরা তো "আনডু" অপশন নাই বলে আফসোস করি না।  ইমিডিয়েটলি মা-পোলা শুরু করলাম "রিফ্রেশ" বাটন টেপা :) 

শুরু হলো আমাদের "গিভ আস আ ক্লু" খেলা। আম্মা ঠোঁটের সামনে হাত এনে তালু বাঁকিয়ে ইশারা করে, আমি বুঝি যে আম্মা পানি খাবে। চোখ বুজে ঘাড় এলিয়ে দেয়, আমি বুঝি যে আম্মা ঘুমাবে। নতুন এই খেলা আমরা দু'জনই এনজয় করতে শুরু করলাম। 

কিন্তু হঠাতই আম্মার শ্বাস নিতে কষ্ট হতে থাকলো। গলার পাইপ দিয়ে ঘরঘর শব্দ, আমি টেনশনে পরে যাই।  আম্মা মুখের সামনে হাত আনে, আমি বলি "পানি খাবা?" আম্মা নাবোধক মাথা নাড়ে।  আবার হাত দিয়ে ইশারা করে।  "টিস্যু লাগবে?" আবারও নাবোধক সিগনাল।

এদিকে আম্মার চেহারায় কষ্টের ছাপ আরো বাড়ছে, আমি অসহায় বোধ করতে থাকি।

আম্মা চেষ্টা চালিয়ে যায়, নাকের সামনে হাতের তালু গোল করে ক্লু দিতে থাকে। আমি হঠাত বুঝে যাই - আম্মার অক্সিজেন লাগবে। এক লাফে সকেট থেকে অক্সিজেনের মাস্ক তুলে নেই, নব ঘুরিয়ে অক্সিজেন চালু করি, এক মুহূর্ত দেরী না করে আম্মার নাকে অক্সিজেন মাস্ক চেপে ধরতে যাই।  

ইয়ে মানে ... চোখের চাহনি দিয়ে কাউকে কখনো চট্কানা মারতে দেখেছেন? আমি ওদিন দেখেছি। 

আম্মার চোখের চাহনির ট্রান্সলেশন করলে যা দাঁড়ায়, তা হলো - "ছাগলের বাচ্চা ছাগল, অক্সিজেন মাস্ক নাকে ধরসোস ক্যান? আমি কি এখন নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নেই নাকি রে বলদ! গলায় ধর, গলার পাইপের সামনে ধর।" 

[পাইপ নিয়ে আরো গল্প... আসছে ...]

পূনশ্চ: এরপর থেকে আমরা গলার পাইপের মাধ্যমে আম্মাকে অক্সিজেন দেই এবং আম্মা ছাগলের বাচ্চা ছাগলটার দিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসি দিয়ে বুকভরে শ্বাস নেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন