শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৪

শত্রুতা

একটা ঘটনা শুনে চোখের সামনে স্কুল জীবনটা ভেসে উঠলো। ঘটনাটা পরে বলি, আগে একটু স্কুল থেকে ঘুরে আসি।  

----------------------------------

আমরা মনে হয়, স্কুল জীবনের প্রতিদিনই নিজেদের মধ্যে মারামারি-ঝগড়াঝাটি করেছি। 

আবাহনী বনাম মোহামেডান। পুরা ক্লাস দুই ভাগ। সে কি মারামারি! কিসের বেস্ট ফ্রেন্ড? পলাশ-সালেহ-করিম আবাহনী; আমি-ঠাকুর-ফয়সাল-মাসুদ মোহামেডান - তার মানে ওরা আমাদের জাত-শত্রু। লাগ মাইরপিট। কোপাআআআআ শামসু। 

পরদিন ইন্ডিয়া ভার্সেস পাকিস্তান। আমি-পলাশ ইন্ডিয়া; ফয়সাল-মাসুদ পাকিস্তান। কিসের ফ্রেন্ডশিপ! মাসুদ-ফয়সাল মোহামেডান হইসে, তাতে কি? পাকিস্তান মানেই জাত-শত্রু। ক্লাস আবার দুই ভাগ। মাইর হবে শুধু, যত্রতত্র। সামনে পাইলে এক্কেরে জিন্দাপুইত্তালাইবুউউউ।  

আমাদের হাউজ ছিল ৪টা।  বেরুনি-মামুন-ওমর-সালাউদ্দিন। হাউজ ম্যাচের সময় হলে পুরা ক্লাস ৪ ভাগ।  মনে আছে, ক্লাস টেনের হাউজ ম্যাচ ফাইনাল'এর আগের দিন, ঢাকা কলেজের হোস্টেলের সামনে মামুন হাউজের গোপন মিটিঙে ঠাকুরকে দায়িত্ব দেয়া হয় সালাউদ্দিন হাউজের বেস্ট প্লেয়ার আশিকের পা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য। ঠাকুর লাল কার্ড পেলেও ব্যাপার না।  আশিক হ্যাজ টু গো আউট অফ দা ফিল্ড। ঠাকুরকে দায়িত্ব দানকারী মামুন হাউজের ক্যাপ্টেন'এর নাম সালেহ - যে কিনা সালাহউদ্দিন হাউজের ক্যাপ্টেন আশিকের বেস্ট ফ্রেন্ড। যদি সত্যি সত্যিই ঠাকুর প্ল্যানমাফিক আশিকের ঠ্যাং ভাঙতে পারত, আমরা সবাই জানতাম যে সালেহই তার কাঁধে ভর দিয়ে আশিককে হাসপাতালে নিয়ে যেত।  

আরেকবার ধুন্ধুমার মাইরপিট করলাম কি নিয়ে জানেন? ভাবলেও হাসি আসে।  আজম খান রিয়াল গুরু? নাকি জেমস? ভুতের গলি আর সেন্ট্রাল রোডের রাস্তায় আমরা লাঠি নিয়ে একদল আরেকদল'কে দৌড়াচ্ছি। একদলের মুখে "রেললাইনের বস্তিতে", আরেকদলের মুখে "রিক্সাওয়ালা"!

"এ" সেকশন ভার্সেস "বি" সেকশনের যুদ্ধ তো রীতিমত বদরের যুদ্ধের মত বিখ্যাত। তখন কিন্তু পুরা "বি" সেকশন একজোট। নো আবাহনী-মোহামেডান বিরোধ, নো হাউজ-হাউজ ঝগড়া। মিশন একটাই - "এ" সেকশনকে ফুটবল ম্যাচে হারাতেই হবে।  নো মার্সি। 

ঠিক ২ দিন পরই কিন্তু এই "এ"-"বি" আবার ভাই-ভাই।  কারণ - নির্মান স্কুল ক্রিকেট। এইবার পুরা স্কুল এক হয়ে সেন্ট জোসেফ বা ধানমন্ডি বয়েজ'কে হারাতে হবে।  সে কি দোস্তি তখন সবার মধ্যে, সে কি ইউনিটি! 

ঠিক পরদিন আবারও... ব্যাক টু ওন ব্যাকইয়ার্ড। হয় ইন্ডিয়া-পাকিস্তান নয়তো "এ"-"বি" মহাযুদ্ধ; খাইসি তোরে, পালাবি কোথায়? ধাম-ধুম, ঠাস-ঠুস।  

........................................


এত কিছু নিয়ে মারামারি করেছি, অথচ সত্যিই মনে পরে না, কখনো আমরা নৌকা ভার্সেস ধানের শীষ'এর কোনো ফুটবল ম্যাচ খেলেছি। বিশ্বাস করেন, কস্মিনকালেও আমাদের আগ্রহের বা আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে স্থান পায়নি -  কার দাদা নৌকা, কে ধানের শীষ আর কার বাপ লাঙ্গল। সাবজেক্ট হিসেবে এতটাই তুচ্ছ ছিল এসব আমাদের কাছে। 

ভাগ্যিস, শত্রুতা করার মত এত্তোগুলা সাবজেক্ট ছিল আমাদের। নাহলে হয়ত বন্ধুত্বগুলিকে স্কুলেই দাফন করে আসতে হত।  

...................................

এবার ঘটনাটা বলি।  

সেদিন এক আড্ডায় ঢাকার মোটামুটি শীর্ষস্থানীয় এক স্কুলের শিক্ষক বড়ভাই জানালেন, তাদের স্কুলের ক্লাস সেভেনের দুই দলের মধ্যে একটা ইস্যু নিয়ে শুরু হয় ঝগড়া-বিবাদ।  এক পর্যায়ে এই বিবাদে যোগ দেয় অন্য ক্লাসের ছেলেরাও, হাতাহাতি থেকে ঘটনা রক্তারক্তি পর্যায়ে পৌছে যায়। শেষ পর্যন্ত টিচার এবং গার্জিয়ানদের হস্তক্ষেপে অবস্থা যদিও সামাল দেয়া হয়, কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, এই ঘটনার পর প্রতিটা ক্লাস পার্মানেন্ট ভাবে দুইটা ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। দুই দল এখন ক্লাসের দুইদিকে বসে, এক দল আরেক দলের সাথে কথা বলেনা; এবং দুই দলই তক্কে-তক্কে আছে - সুযোগ পেলেই অন্য দলকে চিপায় নিয়ে ডলা দেয়ার। 

ইস্যুটা কি ছিল জানেন? এই ইলেকশনে ভোট চুরি হয়েছে, নাকি ইলেকশন ফেয়ার হয়েছে !!! 

ক্লাস সেভেনের ছেলেগুলিকে এতটা "মাচিউরড" আর "রাজনীতি-সচেতন" করে তোলার জন্যে কাকে ধন্যবাদ দিব, ঠিক বুঝতে পারছিনা। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন