শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৪

শ্রীনিবাসন আর ঘাস

দাওয়াতে হঠাত দেখা হয়ে যাওয়ায় দূরসম্পর্কীয় ভারতীয় বন্ধুকে খোঁচাটা মারতে ছাড়লাম না।  

"বুঝলেন দাদা, আমরা নিউজিল্যান্ড'কে বাংলাওয়াশ দেই, নিউজিল্যান্ড আপনাদের হোয়াইট ওয়াশ দেয়। এতদিনে বুঝলাম, এই "বাংলা-হোয়াইট ওয়াশ"এর ভয়েই আপনারা আমাদের সাথে খেলতে চান না।"

বন্ধুর মুখে মুরগির রান। কোনমতে এক চিবান দিয়ে ভক্ভক করে জবাব দিল - 

"এটা কিরম কথা হলো গো দাদা? ধরো, আমরা ছাগল খাই, ছাগল ঘাস খায় - তার মানে কি আমরা ঘাস খাই নাকি? বোলো বোলো?" 

ঠোঁটের আগায় ঝুলতে থাকা জবাবটা ফুরুত করে বের হয়ে গেল - 

"আপনি খান কিনা, শিওর করে বলতে পারব না গো দাদা। কিন্তু আপনাদের ওই যে শ্রীদেবী না শ্রীনিবাসন - কি যেন একটা আছে না ... ওইটা যে ঘাস খায় এইটা হানড্রেড পার্সেন্ট কনফার্ম।"

রানের হাড্ডিটা মনে হয় দাদা'র গলায় আটকে গেল। কেমন যেন "কোত্" করে একটা শব্দ শুনলাম। আর দাদা'র অনবরত হেঁচকি উঠতে লাগলো।  

ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে


"কবরস্থানে মোবাইল ফোন সাবধানে রাখবা; এখানে মোবাইল চোরের বিশাল একটা চক্র কাজ করে।  কবর দিতে যখন মানুষরা আসে, স্বাভাবিকভাবেই তারা তখন মেন্টালি লো থাকে, পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল চুরি করার এইটা হলো মোক্ষম সুযোগ। সো, একদম সাবধান।"

বনানী কবরস্থানে আজকে দুপুরে গিয়ে দেখি এক মোবাইল চোর'কে হাতেনাতে ধরা হয়েছে, কবর দিতে আসা এক ফ্যামিলির ৩ জনের পকেট থেকে ৩টা দামী মোবাইল ফোন ততক্ষণে সে নিজের পকেটস্থ করে ফেলেছে; কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেনি। যাই হোক, চোর ছেলেটা বেশ সেয়ানা। চোখের জল, নাকের জল এক করে, মৃত ব্যক্তির মাথার কিরা কেটে সিম্প্যাথি আদায় করে ফেলে সে।  হালকার উপর মাইর দিয়ে এবং "আর চুরি করব না" প্রমিস করিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।  

সো, দা চোর'স আর স্টিল আউট দেয়ার। বি কেয়ারফুল। 

আম্মা ৩৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন তো।  কবরে যাওয়ার পরও জ্ঞান দেয়া ছাড়তে পারেন নাই।  উপরের লেসনটা আজকে আম্মার কাছ থেকেই জেনে এসেছি। 

একেই বলে, ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। 

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৪

হ্যাপি বার্থডে টু ইউ আম্মা

আম্মার তুষার-সাদা শাড়ি আলোর আভা ছড়াচ্ছে। আম্মাকে লাগছে পরীর মত।  

বাসার উঠানটা সাজানো হয়েছে নানারঙের রঙিন কাগজ দিয়ে। বড় আমগাছটা ঝিকমিক করছে রুপালি আলোর টুনিবাতিতে। নানুর বিখ্যাত দোলনাটা ঝুলছে আমগাছের মোটা ডালটা থেকে। সেই দোলনায় আম্মা পা ঝুলিয়ে বসে আছে।  

সব আত্মীয়স্বজনরা দলে দলে আসছে। সবার হাতে আম্মার জন্য উপহার; হারমোনিয়াম, পানদান, রূপার ছর্তা, সিল্কের শাড়ি, রবীন্দ্রসংগীতের সিডি - আম্মার সব পছন্দের জিনিসপত্র। একেকজনকে দেখছে, আর আম্মা শিশুর মত খুশি হয়ে উঠছে। কতদিন পর একেকজনের সাথে দেখা, খুশি তো লাগবেই। 

নানু চাইনিজ রেঁধেছে। স্পেশাল আকর্ষণ আম্মার সবচেয়ে পছন্দ "সুইট এন্ড সাওয়ার প্রণ"; আম্মা রান্নাঘরে ঢোকার জন্যে প্রচুর ঘ্যানঘ্যান করেছিল। কিন্তু নানু রাম-ঝাড়ি মেরে আম্মাকে রান্নাঘরের ত্রি-সীমানাতেও ঢুকতে দেইনি। সব রান্না আজ নানু নিজের হাতে করেছে। 

নানাভাই মহাব্যস্ত। সাদা পাঞ্জাবি-পাজামায় নানাভাইকে লাগছে পুরা উত্তম কুমারের মত। নতুন কেনা আতরের শিশির প্রায় অর্ধেকটা শেষ করে ফেলেছে একদিনেই। নানু কিন্তু ঠিকই হালকা খোঁচা মেরে দিল "কাহিনী কি গো দারোগা সাহেব? সুচিত্রা সেন'ও আসতেসে নাকি ডিনার খেতে? ভাবগতিক তো সুবিধার লাগতেসে না!" 

নানাভাই মুচকি হেসে অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পরে।  

একটু পর আম্মা কেক কাটবে। সবাই হাততালি দিবে, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ গান গাইবে। 

নানাভাই-নানু'র সাথে আম্মার আজ দ্বিতীয়বারের মত প্রথম জন্মদিন। 

-------------------------------

শুভ জন্মদিন আম্মা। আমরাও এপার থেকে তোমার জন্মদিনে হাততালি দিচ্ছি, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ গান গাইছি। আর তোমার জন্যে অনেক অনেক দোআ করছি। 

তুমি ভালো থেকো আম্মা। আর... আমাদের নিয়ে কোনো চিন্তা কোরো না। 

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৪

"আমরা গরিব হতে পারি, কিন্তু আমাদের আত্মসম্মান আছে।"

ক্লাস সেভেন, টেনিস বল ত্যাগ করে কাঠের বলে ক্রিকেট খেলার শুরুর দিনগুলির কথা।

সর্বসাকুল্যে তখন আমাদের একজোড়া প্যাড; দুই ব্যাটসম্যান এক পায়ে প্যাড পরে ব্যাটিঙে নামি। একজোড়া কিপিং গ্লোভস - ডান হাতেরটার বুড়া আঙ্গুল বের হয়ে থাকে, বাম হাতের কেনি আঙ্গুল। কাঠের বলে খেলার মত ব্যাট তখন একটা, ৪০০ টাকা দিয়ে কেনা একটা গদার মত ওজনদার সিএ ব্যাট, যেটাকে আসলে ব্যাট না বলে তক্তা বললেই বেশি যুক্তিসঙ্গত হয়।  ওটাতে যখন বল লাগে তখন ঠকঠক শব্দ হয় আর হাত ঝিনঝিন করে ওঠে। রানারের হাতে টেনিস বলে খেলা যায় - তেমন পলকা ব্যাট; এক রান হলে ক্রিজের মাঝখানে এসে ব্যাট বদলা-বদলি করতে হয়।  বলের সূতা-মুতা ছিড়ে ভিতরের রাবারের ছোট বলটা বের না হওয়া পর্যন্ত সেটা দিয়েই পেইস-স্পিন এটাক চলতে থাকে। 

টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ঘাস ছাড়া ধূলা-মাটির পিচে এই নিয়েই আমরা মহানন্দে ক্রিকেট খেলি আর নির্মান স্কুলে খেলার প্রিপারেশন নেই।  

অন্য সেকশনে পড়ত বিশাল প্রতিপত্তিশালী (অনেকটা ইন্ডিয়ার মত ক্ষমতাবান) এক শিল্পপতির সুযোগ্য সন্তান - নাম বললে সবাই চিনবেন; ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কথা ভেবে নামটা বলছি না। যাই হোক, ছেলেটা খারাপ খেলত না; বলে ভালো পেইস ছিল, হালকা সুইং-টুইং'ও করাতে পারত। সবচাইতে ইম্পর্রট্যান্ট বিষয়টা হলো, ওর একটা ৪,০০০ টাকা দামের ইসান ব্যাট ছিল, যেটাতে হালকা টোকা লাগলে বল গুল্লির মত বাউন্ডারির ঐপারে চলে যেত। আর ছিল একটা প্রফেশনাল কফিন-ভর্তি দামী দামী ক্রিকেট গিয়ার।  

আমরা হাভাইত্তার মত ওই ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকতাম; মাঝে মধ্যে ব্যাটটা হাতিয়ে দেখতে দিত; মুড ভালো থাকলে কখনো-সখনো ওটা দিয়ে খেলতেও দিত।   

কিন্তু বাগড়া'টা বাঁধলো কিছুদিন পর। নবাবপুত্র একদিন একটা আল্লাদী প্রপোজাল দিয়ে বসলো - "আমি এখন থেকে ব্যাটিং ওপেন করব, বোলিংও ওপেন করবো। যদি কারো কোনো প্রবলেম থাকে; কালকে থেকে আমার ব্যাট, গিয়ার কোনকিছুই তোমাদের দিবনা।" (পুরাই বিসিসিআই'এর মত না?) 

যতদুর মনে পরে, এই প্রপোজাল নিয়ে পরবর্তিতে উচ্চবাচ্চ করার অপরাধে আমাদের হাভাইত্তাবাহিনী নাবাব্পুত্রের আপন-পশ্চাদ্দেশেই তার ৪০০০ টাকা দামের ইসান ব্যাটটাকে পিটিয়ে ভেঙ্গেছিল। 

বেচারা নবাব্পুত্র, আমাদের একটু বেশিই আন্ডারএস্টিমেট করে ফেলেছিল। বেচারা বুঝতে পারেনি "আমরা গরিব হতে পারি, কিন্তু আমাদের আত্মসম্মানবোধ বড়ই প্রকট।"

বর্তমান ক্রিকেট পটভূমিতে বিগ-থ্রি-স্টুজেসের কার্যকলাপ কেন যেন গল্পটা আবার মনে করিয়ে দিল।  

[বন্ধুরা, যারাই ঘটনাটা মনে করতে পারছিস, দয়া করে ওভারস্মার্ট সেজে নবাবপুত্রর নামটা লিখে দিস না বাপ; ট্যাগ তো ভুলেও করবি না। নবাবপুত্রের কানে এই কথা পৌঁছলে আমার লাশ খুজতে গোটা বাংলাদেশ চষে বেড়াতে হবে।]  

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৪

রুনু'র ট্রেন

১.

মোবাইল ফোনের ভাইব্রেশনে ঘুম ভাঙ্গলো নানুর। 

ফজরের নামাজ পড়ে শুয়েছেন, ঘুমটা তাই এখনো কাচা। মোবাইলের স্ক্রিনে দেখলেন সকাল ৭টা বাজে। এত সকালে কে আবার এসএমএস করলো!

"প্রিয় রাহিলা খাতুন, আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার বড় মেয়ে রওশন আরা বেগম রুনু'র ট্রেন স্টেশনে পৌঁছবে। স্টেশনে উপস্থিত হয়ে আপনার মেয়েকে রিসিভ করার জন্য অনুরোধ করছি।" 

কলিজার মধ্যে ধ্বক করে উঠলো নানুর। কি বলে এসব? এত তাড়াতাড়ি রুনু'র ট্রেন ক্যানো আসবে? নিশ্চয়ই কোনো ভুল হয়েছে কোথাও। 

পাশে ঘুমিয়ে থাকা নানাভাই'এর মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে দেখেন সেখানেও একই এসএমএস।  

"প্রিয় ফজলুল হক, আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার বড় মেয়ে রওশন আরা বেগম রুনু'র ট্রেন স্টেশনে পৌঁছবে। স্টেশনে উপস্থিত হয়ে আপনার মেয়েকে রিসিভ করার জন্য অনুরোধ করছি।" 

ধাক্কা দিয়ে নানাভাইয়ের ঘুম ভাঙান নানু - "এই রুনুর বাবা, ওঠো তাড়াতাড়ি। রুনু আসতেসে। স্টেশনে যেতে হবে, জলদি করো।"

নানাভাই চোখ কচলে বলে "কি বলতেসো এসব? রুনু? আমাগো রুনু? ও এত তাড়াতাড়ি আসবে ক্যানো? বয়স হইসে কত ওর? সেদিন না মাত্র বিয়া দিলাম!!!"

নানু ততক্ষণে রেডি হওয়া শুরু করে দিয়েছেন - "কথা কম বলে ওঠো তো।  মেয়ে'র ট্রেন পৌছানোর আগেই স্টেশনে পৌঁছতে হবে। নাহলে মেয়ে আমার খুব ভয় পেয়ে যাবে।" 

২. 

আম্মা কিছুই বুঝতে পারছেন না।  একদমই অন্যরকম একটা ট্রেনে বসে আছেন তিনি। সবকিছুর রং সাদা, কেমন যেন আভা-আভা সাদা, যেন আলো বের হচ্ছে। ট্রেনের পু-ঝিক-ঝিক শব্দটাও জানি কেমন সুরেলা, খুব মিহি। হালকা ভলিউমে রবীন্দ্র-সংগীত বাজছে। আশেপাশে আরো কিছু মানুষ বসে আছে, কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।  

একটু আগেও আম্মার মন খুব খারাপ ছিল।  আসার আগে কাউকেই কিছু বলে আসতে পারেননি। আব্বাকে নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছিল - কিছুই তো জানে না এই ভোলাভালা-উদাসীন মানুষটা। নিজের শার্ট কই থাকে, টুথব্রাশ কই থাকে, ওষুধ কোনটা খেতে হবে - কিচ্ছু জানে না লোকটা। ছেলে-দুইটাকেও তো ঠিকঠাক মত কোনকিছু বলা হলো না।  জয়ী-জীয়ন থাকবে কিভাবে? স্কুল থেকে ফিরেই তো জয়ীর দাদীর কাছে আসতে হত! এখন কি করবে মেয়েটা? বুকের মধ্যে চাপ-চাপ ব্যথা হচ্ছিল আম্মার। 

কিন্তু হঠাত করেই কেন জানি মন খারাপটা চলে গেল।  হঠাত খেয়াল হলো শরীরে কোনো কষ্ট হচ্ছেনা আর।  গলায় হাত দিয়ে দেখলেন যন্ত্রনাদায়ক টিউবটা আর নাই।  কাশিটাও হচ্ছেনা।  অদ্ভূত একটা ভালো লাগা ঘিরে ধরছে তাকে। মনে হচ্ছে, ট্রেনটা যেখানে থামবে, খুব ভালো কিছু অপেক্ষা করছে তার জন্য। 

৩. 

প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ালো সাদা ট্রেনটা। 

আম্মার সাথে কোনো লাগেজ নাই।  দরজা পর্যন্ত হাঁটতে গিয়ে দেখল - বাহ্, হাঁটতেও কোনো কষ্ট হচ্ছেনা, মনে হচ্ছে ওজন কমে অর্ধেক হয়ে গেছে; অনেক ফুরফুরে লাগছে। দরজায় দাঁড়িয়ে বাইরে উঁকি দিলেন আম্মা। 

অনেক ভীরের মধ্যে দেখেন নানাভাই আর নানু ট্রেনের প্রতিটা জানালায় উঁকি দিয়ে কাকে যেন খুঁজছেন। নানাভাই আর নানু দুজনই অনেক ফিট - নানু সুন্দর একটা জামদানি শাড়ি পরা, নানাভাই তুষার-সাদা একটা পাঞ্জাবি - ঝলমল করছেন দুজনই। আম্মা শিশুর মত আনন্দে চিত্কার করে ওঠেন - 

"আব্বাআআআ, আম্মাআআআ ... এই যে আমি, এই যে আমি।"

নানাভাই-নানু দৌড়ে আসেন, আম্মা'কে জড়িয়ে ধরেন। তিনজনের চোখেই খুশির অশ্রু। আম্মা নানাভাইকে দেখলেন ৩৬ বছর আর নানুকে ১৩ মাস পর। সে কি বাঁধভাঙ্গা আনন্দ তিনজনের। 

নানাভাই আম্মাকে জড়িয়ে ধরে বললেন "মা রে, তুই এত্তো বড় হইলি কবে? বড় হইসস ঠিকই, কিন্তু একদমই আগের মত সুন্দর আসোস। আর সবাই কেমন আসে রে? সব ভালো তো?"

নানু আম্মাকে একপ্রকার কেড়ে নিয়েই বললেন "সব কথা পরে হবেনে। আগে বাসায় চল। নাস্তা কর, রেস্ট নে। এখানে কোনো কষ্ট নাই, অসুস্থতা নাই।  দেখ্তাসোস না, আমি কেমন ইয়াং হয়ে গেসি! তোর মামা-খালা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, বাবলু, কেশব বাবু - সবাইরে ফোন দিসিলাম। সবাই বাসায় আসতেসে তোরে দেখতে। কইসে - তোর হাতের পোলাউ খাইবো। বুঝ অবস্থা, মাইয়াটা আইতে পারলো না, তার আগেই রান্নার ফরমায়েশ শুরু হয়ে গেসে ..."

৪. 

হাসতে হাসতে আর বকর-বকর করতে করতে আম্মা নানাভাই-নানুর সাথে স্টেশন থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। 


বুধবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৪

আম্মা চলে গেলেন

আম্মা আমাদের ফেলে চলে গেলেন।  ২১ জানুয়ারী সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আম্মা হঠাতই চলে গেলেন। 

আমরা সবাই পুরোপুরি শিওর ছিলাম যে আম্মা সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্তও আম্মা তার অসুখটাকে ভয় পান নাই। 

আম্মা কিন্তু ক্যান্সারের কারণে মানা যাননি। আম্মার ক্যান্সারটা ভেরি মাচ কিয়রেবল ছিল। আম্মা ৫ মিনিটের শ্বাসকষ্টে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। 

প্রতিদিন আমি আর হাসিব পালাক্রমে আম্মার পাশে থাকতাম। আম্মা যখন ঘুমাতেন, তখন করার কিছু থাকত না। তাই আম্মার সাথে যা যা ঘটতো, তা লিখে রাখার চেষ্টা করতাম। 

সেই রাতেও কিছু লিখেছলাম, পরবর্তিতে শেয়ার দিতাম। তার একটা আপনাদের পড়তে দিলাম। আম্মা কেন চলে গেলেন, এটা পড়লেই বুঝতে পারবেন।




"ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ৪
-------------------------

২১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ৩টা তিপ্পান্ন মিনিটে মা'জননী একখান মাস্টারপিস প্রসব করলেন। 

টানা এক ঘন্টার ক্রমাগত কাশিতে শরীরের সকল শক্তি শেষ করে ফ্যাঁশফ্যাঁশ করে আমার কানে তিনি যা বলার চেষ্টা করলেন তার ভাবার্থ হলো - "তার জন্যে আমাদের নাকি অনেক কষ্ট হচ্ছে!" 

পুরাই এইচএইচপিকেজি। 

পেটের ভিতরে থেকে ১০ মাস আর বাইরে থেকে ৩৭ বছর বিরতিহীন জ্বালানোর পরও যদি আম্মার মুখ থেকে এই কথা শুনতে হয় যে "আমরা" তার জন্যে "কষ্ট" করছি - আবেগে কাইন্দালাইতে ইচ্ছা করেনা?  

মা জননী গো, জি বাংলার সিরিয়াল দেখলে এর থেকে ভালো স্ক্রিপ্ট বের হবেনা গো।

সো, এইসব পুতুপুতু ডায়লগ ছাড়ো। আর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো।"

--------------------------------------------------------------------

আমাদের দুই ভাইয়ের যেন আর কষ্ট না হয়, আম্মা তাই চলে গেলেন। 

প্রচন্ড জেদী একজন মানুষ ছিলেন আমাদের আম্মা। জীবনে কোনদিন অন্যের প্ল্যান অনুযায়ী কিছু করেননি তিনি। যখন যা ইচ্ছা হয়েছে, তাই করেছেন তিনি। 

রাতজেগে পাশে বসে তার সেবা করার যে প্ল্যান আমরা দুই ভাই মিলে করেছিলাম, সেই প্ল্যানটা হয়ত তার পছন্দ হয়নি। 

তাই তিনি চুপ করে চলে গেলেন। 

সবাই তার জন্যে দোআ করবেন। 

সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৪

ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ৫

ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ৫
-------------------------

আমি সাধারণত আমার স্টেটাসে কেউ আজাইরা কমেন্ট করলে রিয়াক্ট করিনা।

অনেক রাত পর্যন্ত আম্মার সাথে জেগে থাকলে মাথার মধ্যে উদ্ভট উদ্ভট সব চিন্তা ঘোরে। এই মুহুর্তে মাথা কিছুটা আউলানো আছে বলেই একটা কমেন্ট নিয়ে কিছু লিখব। 

আম্মার ক্যান্সার নিয়ে প্রথম যে লেখাটা লিখি, তা দেখে অনেকে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন। কেউ সাহস দিয়েছেন, কেউ ধৈর্য ধরে বিপদ মোকাবেলা করার কথা বলেছেন, কেউ আবার আমাদের সাহস দেখে বাহবা দিয়েছেন। আমি বেশির ভাগ কথাই আম্মাকে পড়ে শুনিয়েছি এবং আম্মাও খুব খুশি হয়েছেন; বুকে আরো বেশি শক্তি পেয়েছেন। 

সবাইকে আরো একবার ধন্যবাদ। 

এত ভালো ভালো কথার ভীর থেকে একটা কমেন্ট নিয়ে কথা বলতাম না;  কিন্তু খুব খোঁচাচছিল কথাটা, তাই নিজেকে আটকালাম না।  

একজন লিখেছেন - "নিজের হলে বুঝতেন......এনিওয়ে দোয়া করি আপনার আম্মু সুস্থ হয়ে উঠুন।"

ভীষণ অবাক হয়েছি কমেন্টটা পড়ে। কি বোঝাতে চাইলেন ভাই আপনি?

আমার মা আমার চোখের সামনে কষ্ট পাচ্ছেন, এবং সেই কষ্ট দেখাটাও যে কতখানি কষ্টের - সেটা আমরা বুঝছি। নিজের হলে এর থেকে কম কষ্টই হত।

আম্মার এই কষ্টটা যদি আমার নিজের শরীরে নিয়ে নেয়ার কোনো উপায় থাকত - এক মুহূর্তও দেরী করতাম না। আমি বিশ্বাস করি, এটা শুধুই আমার মা'র জন্য আমার চাওয়া না - যেকোনো "মানুষ" সন্তানই তার বাবা-মা'র কষ্ট লাঘবের জন্য এমন  কিছু করতে প্রস্তুত। 

ভাই, কমেন্ট করতেই হবে, তেমন তো কোনো নিয়ম নাই।  ক্যান করেন এমন সব কমেন্ট যেটার জন্য নিজেকেই পরে বিব্রত হতে হয়? (যদিও আমি শিওর না, আপনাদের মত মানুষরা লজ্জা পায় কিনা বা বিব্রত হয় কিনা) আপনার নামটা আপনার ভালোর জন্যই উল্লেখ করলাম করলাম না।  যান ভাই, আর কেউ দেখে ফেলার আগেই কমেন্টটা ডিলিট করে আসেন। 

ধুর .... মনটাই খারাপ হয়ে গেল লেখাটা লিখে। ঠিক করেছিলাম, আম্মার এ সময়টাতে কোনো নেগেটিভ লেখা লেখা লিখব না, কোনো নেগেটিভ চিন্তাকে মনে আশ্রয় দিব না। ধুর ... লেখা শেষ করি। 

  

ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ৪

ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ৪
-------------------------

২১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ৩টা তিপ্পান্ন মিনিটে মা'জননী একখান মাস্টারপিস প্রসব করলেন। 

টানা এক ঘন্টার ক্রমাগত কাশিতে শরীরের সকল শক্তি শেষ করে ফ্যাঁশফ্যাঁশ করে আমার কানে তিনি যা বলার চেষ্টা করলেন তার ভাবার্থ হলো - "তার জন্যে আমাদের নাকি অনেক কষ্ট হচ্ছে!" 

পুরাই এইচএইচপিকেজি।  আমি পুরাই মাননীয় স্পিকার! 

পেটের ভিতরে থেকে ১০ মাস আর বাইরে থেকে ৩৭ বছর বিরতিহীন জ্বালানোর পরও যদি আম্মার মুখ থেকে এই কথা শুনতে হয় যে "আমরা" তার জন্যে "কষ্ট" করছি - আবেগে কাইন্দালাইতে ইচ্ছা করেনা?  

মা জননী গো, জি বাংলার সিরিয়াল দেখলে এর থেকে ভালো স্ক্রিপ্ট বের হবেনা গো।

সো, এইসব পুতুপুতু ডায়লগ ছাড়ো। আর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো। 

রবিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৪

ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ৩

ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ৩
-------------------------

আজকে আপনাদের শোনাব আমরা কতখানি "ক্রিয়েটিভ ফ্যামিলি", তার সামান্য একটা নমুনা। 

আম্মার গলার পাইপের ব্যাপারটা তো এখন মোটামুটি আপনাদের জানা যে, আম্মা এখন নাক-মুখের বদলে গলার পাইপ দিয়ে শ্বাস নেন। এই যে "রোল-চেইঞ্জ" - তা নিয়ে আম্মার নেতৃত্বে শুরু হলো ব্রেইনস্টর্মিং। 

"এই যে নাক-মুখের কাজটা গলা'কে হ্যান্ডওভার করা হলো, এমন করে যদি খাওয়ার কাজটা মুখের বদলে কানকে দেয়া হয়, তাহলে কি হবে? আমাদের কি তখন দিনে দুইবার কান-ব্রাশ করতে হবে? একটা মানুষ কানের মধ্যে স্ট্র লাগিয়ে মিরিন্ডা খাচ্ছে - সিনটা কেমন হবে? ..."

"স্বাদ নেয়ার জন্যে কি তাহলে জিব্বাটা কানের মধ্যে সেট করতে হবে? এহহ, ক্যামন লাগবে কান থেকে লকলক করে একটা জিব্বা বের হয়ে আসছে এইটা দেখতে? ..." 

"চোখের বদলে আমাদের যদি দাঁত দিয়ে দেখতে হয়, তাহলে কিরাম হবে? দাঁতের চশমাকে কি চশমা বলা হবে, নাকি "দাঁতমা"? চোখের পাতি ফেলার বদলে তখন কি আমরা ঘনঘন গাপ্পি মাছের মত ঠোঁট খুলবো আর বন্ধ করব? তখন কি চৌধুরী জাফরুল্লা শরাফত বলবেন - দাঁতের পলকে বল চলে গেল সীমানার ওয়াইরেএএএএ ..."

এন্ড  ... হিয়ার কামস দা কিলার ...

"হোয়াট এবাউট হাগু? এই মহান কাজটা কাকে দেয়া যায়? নাক? মুখ? ইয়াক থুঃ! নাকি স্পাইডারম্যান'এর মত কব্জি থেকে, পুচুত-পুচুত করে? (লিকুইডে তো প্রবলেম নাই, কিন্তু কষা হলে?) নাকি হাঁটু থেকে? বাম পায়ের বুড়া আঙ্গুল? ইয়াক থুঃ! ইয়াক থুঃ ! ইয়াক থুঃ ! ..."

চলতেই থাকলো ক্রিয়েটিভ ঝড়, একের পর এক আইডিয়া .. তুক্ষর  তুক্ষর! যার ৯০%ই এখানে বলা সম্ভব না।

আম্মা খালি মুচকি মুচকি হাসে। 

কিপ থিঙ্কিং। বেশি পচা বুদ্ধি আসলে সেটা নিজের মধ্যেই রাখেন। আম্মাকে কিন্তু সব কমেন্ট পড়ে শোনানো হয়। তাই, সবকিসু সবখানে শেয়ার না করাই ভালো ;)  

ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ২

ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ২
--------------

পোস্ট অপারেটিভ থেকে আম্মাকে কেবিনে দেয়া হয়েছে। আম্মার সাথে তখন শুধু আমি একা।

আম্মার জেনারেল এনেসথেসিয়ার ঘোর তখন পুরাপুরি কাটেনি, টাল-টাল ভাব।  কথা বলার চেষ্টা করতে গিয়েই খেয়াল করলেন যে গলা দিয়ে তো শব্দ বের হবেনা। শিট।  

বাট, আমরা তো "আনডু" অপশন নাই বলে আফসোস করি না।  ইমিডিয়েটলি মা-পোলা শুরু করলাম "রিফ্রেশ" বাটন টেপা :) 

শুরু হলো আমাদের "গিভ আস আ ক্লু" খেলা। আম্মা ঠোঁটের সামনে হাত এনে তালু বাঁকিয়ে ইশারা করে, আমি বুঝি যে আম্মা পানি খাবে। চোখ বুজে ঘাড় এলিয়ে দেয়, আমি বুঝি যে আম্মা ঘুমাবে। নতুন এই খেলা আমরা দু'জনই এনজয় করতে শুরু করলাম। 

কিন্তু হঠাতই আম্মার শ্বাস নিতে কষ্ট হতে থাকলো। গলার পাইপ দিয়ে ঘরঘর শব্দ, আমি টেনশনে পরে যাই।  আম্মা মুখের সামনে হাত আনে, আমি বলি "পানি খাবা?" আম্মা নাবোধক মাথা নাড়ে।  আবার হাত দিয়ে ইশারা করে।  "টিস্যু লাগবে?" আবারও নাবোধক সিগনাল।

এদিকে আম্মার চেহারায় কষ্টের ছাপ আরো বাড়ছে, আমি অসহায় বোধ করতে থাকি।

আম্মা চেষ্টা চালিয়ে যায়, নাকের সামনে হাতের তালু গোল করে ক্লু দিতে থাকে। আমি হঠাত বুঝে যাই - আম্মার অক্সিজেন লাগবে। এক লাফে সকেট থেকে অক্সিজেনের মাস্ক তুলে নেই, নব ঘুরিয়ে অক্সিজেন চালু করি, এক মুহূর্ত দেরী না করে আম্মার নাকে অক্সিজেন মাস্ক চেপে ধরতে যাই।  

ইয়ে মানে ... চোখের চাহনি দিয়ে কাউকে কখনো চট্কানা মারতে দেখেছেন? আমি ওদিন দেখেছি। 

আম্মার চোখের চাহনির ট্রান্সলেশন করলে যা দাঁড়ায়, তা হলো - "ছাগলের বাচ্চা ছাগল, অক্সিজেন মাস্ক নাকে ধরসোস ক্যান? আমি কি এখন নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নেই নাকি রে বলদ! গলায় ধর, গলার পাইপের সামনে ধর।" 

[পাইপ নিয়ে আরো গল্প... আসছে ...]

পূনশ্চ: এরপর থেকে আমরা গলার পাইপের মাধ্যমে আম্মাকে অক্সিজেন দেই এবং আম্মা ছাগলের বাচ্চা ছাগলটার দিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসি দিয়ে বুকভরে শ্বাস নেন। 

ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ১

ক্যান্সার ডায়েরি - পৃষ্ঠা ১
--------------

লাস্ট ৭ দিনে অনেক কিছু হলো।  

আম্মা'র ক্যান্সার ধরা পড়ল।  গলায়।  ল্যারেঞ্জিয়াল ক্যান্সার।  মডারেটলি ডিফারেনশিয়েটেড। 

১৫ তারিখ রাতে বায়োপসির জন্যে আম্মাকে একটা সার্জারির ভিতর দিয়ে যেতে হলো। ক্যান্সার'টার জন্যে আম্মার শ্বাসনালী প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। তাই ট্রাকেসট্রমী নামক একটা প্রসেসের মাধ্যমে আম্মার শ্বাসনালী থেকে একটা নল বাইরে বের করে দেয়া হলো। 

৬৫ বছর নাক আর মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেয়ার পর আম্মা এখন গলার নল দিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। 

এই নলটার জন্যে তার পক্ষে কথা বলাটা বেশ কঠিন পরিশ্রম এবং কষ্টের ব্যাপার হয়ে গেছে। ওনাকে তাই হাতের ইশারা এবং কাগজে লিখে আমাদের সাথে কথোপকথন চালাতে হচ্ছে।  

আজ তার এমআরআই করানো হবে।  তারপর ডাক্তাররা ডিসাইড করবেন পরবর্তী চিকিত্সা কেমন হবে।  

.................................

বাই দা ওয়ে, আমরা কিন্তু বেশ মজাতেই আছি।  সারাদিন সারারাত আমরা সবাই আম্মার সাথে থাকি, ইশারায় বা লিখে লিখে আড্ডা মারি। অফিস যাই না, মিটিং করিনা - আম্মার পাশেপাশে থাকি। শুধু এই ট্রাকেসট্রমী টিউব নিয়েই প্রতিদিন ডজন-ডজন মজার কাহিনী হচ্ছে। ধীরে ধীরে সেসবও লিখব। 

কেন লিখব? কারণ আছে।  এখন পর্যন্ত যতজনই আম্মার খবরটা শুনেছেন, তাদের রিয়াকশন ছিল ভয়াবহ। "ক্যান্সার" শব্দটাকে আমরা বোধহয় আজাইরাই একটু বেশি পাত্তা দেই।  আমার বাসায় ক্যান্সারের আসা-যাওয়া আজকে থেকে না।  আমার নানু ক্যান্সার নিয়ে বেঁচে ছিলেন দশ বছরের বেশি, আমার খালা ক্যান্সারকে দুই পয়সা দামও দেন নাই।  খালা দিব্বি ফেইসবুকিং চালিয়ে যাচ্ছেন, তার ক্যান্সার কঅঅবে মরে ভূত!   

সময়মত ঠিক চিকিত্সা হলে ক্যান্সার ঠিক হয়ে যায়।  আম্মারটাও হবে।  সো, হুদাই মন খারাপ করে থাকার মত মানুষ আম্মাও না, আমরাও না।  আমার পরের স্টেটাসগুলির জন্যে রেডি থাকেন। কথা দিলাম, অনেক মজা পাবেন।

আর এই মজার বিনিময়ে আম্মার জন্যে একটু দোআ করবেন, তাহলে আম্মা আরেকটু দ্রুত সুস্থ হবেন :) 

আমার হিসাবটা খুব ক্লিয়ার রে ভাই। লাইফে "আনডু" কমান্ড কাজ না করলেও "রিফ্রেশ" কমান্ডটা খুব ভালো কাজ করে। আমরা তাই "আনডু"র জন্যে হা-পিত্যেশ না করে, সমানে "রিফ্রেশ" টিপে যাচ্ছি :) 

সো? লেট্স জিন্দাপুইত্তালাইমুউউউ দা ক্যান্সার  ... ব্রিং ইট অন!

শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৪

শত্রুতা

একটা ঘটনা শুনে চোখের সামনে স্কুল জীবনটা ভেসে উঠলো। ঘটনাটা পরে বলি, আগে একটু স্কুল থেকে ঘুরে আসি।  

----------------------------------

আমরা মনে হয়, স্কুল জীবনের প্রতিদিনই নিজেদের মধ্যে মারামারি-ঝগড়াঝাটি করেছি। 

আবাহনী বনাম মোহামেডান। পুরা ক্লাস দুই ভাগ। সে কি মারামারি! কিসের বেস্ট ফ্রেন্ড? পলাশ-সালেহ-করিম আবাহনী; আমি-ঠাকুর-ফয়সাল-মাসুদ মোহামেডান - তার মানে ওরা আমাদের জাত-শত্রু। লাগ মাইরপিট। কোপাআআআআ শামসু। 

পরদিন ইন্ডিয়া ভার্সেস পাকিস্তান। আমি-পলাশ ইন্ডিয়া; ফয়সাল-মাসুদ পাকিস্তান। কিসের ফ্রেন্ডশিপ! মাসুদ-ফয়সাল মোহামেডান হইসে, তাতে কি? পাকিস্তান মানেই জাত-শত্রু। ক্লাস আবার দুই ভাগ। মাইর হবে শুধু, যত্রতত্র। সামনে পাইলে এক্কেরে জিন্দাপুইত্তালাইবুউউউ।  

আমাদের হাউজ ছিল ৪টা।  বেরুনি-মামুন-ওমর-সালাউদ্দিন। হাউজ ম্যাচের সময় হলে পুরা ক্লাস ৪ ভাগ।  মনে আছে, ক্লাস টেনের হাউজ ম্যাচ ফাইনাল'এর আগের দিন, ঢাকা কলেজের হোস্টেলের সামনে মামুন হাউজের গোপন মিটিঙে ঠাকুরকে দায়িত্ব দেয়া হয় সালাউদ্দিন হাউজের বেস্ট প্লেয়ার আশিকের পা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য। ঠাকুর লাল কার্ড পেলেও ব্যাপার না।  আশিক হ্যাজ টু গো আউট অফ দা ফিল্ড। ঠাকুরকে দায়িত্ব দানকারী মামুন হাউজের ক্যাপ্টেন'এর নাম সালেহ - যে কিনা সালাহউদ্দিন হাউজের ক্যাপ্টেন আশিকের বেস্ট ফ্রেন্ড। যদি সত্যি সত্যিই ঠাকুর প্ল্যানমাফিক আশিকের ঠ্যাং ভাঙতে পারত, আমরা সবাই জানতাম যে সালেহই তার কাঁধে ভর দিয়ে আশিককে হাসপাতালে নিয়ে যেত।  

আরেকবার ধুন্ধুমার মাইরপিট করলাম কি নিয়ে জানেন? ভাবলেও হাসি আসে।  আজম খান রিয়াল গুরু? নাকি জেমস? ভুতের গলি আর সেন্ট্রাল রোডের রাস্তায় আমরা লাঠি নিয়ে একদল আরেকদল'কে দৌড়াচ্ছি। একদলের মুখে "রেললাইনের বস্তিতে", আরেকদলের মুখে "রিক্সাওয়ালা"!

"এ" সেকশন ভার্সেস "বি" সেকশনের যুদ্ধ তো রীতিমত বদরের যুদ্ধের মত বিখ্যাত। তখন কিন্তু পুরা "বি" সেকশন একজোট। নো আবাহনী-মোহামেডান বিরোধ, নো হাউজ-হাউজ ঝগড়া। মিশন একটাই - "এ" সেকশনকে ফুটবল ম্যাচে হারাতেই হবে।  নো মার্সি। 

ঠিক ২ দিন পরই কিন্তু এই "এ"-"বি" আবার ভাই-ভাই।  কারণ - নির্মান স্কুল ক্রিকেট। এইবার পুরা স্কুল এক হয়ে সেন্ট জোসেফ বা ধানমন্ডি বয়েজ'কে হারাতে হবে।  সে কি দোস্তি তখন সবার মধ্যে, সে কি ইউনিটি! 

ঠিক পরদিন আবারও... ব্যাক টু ওন ব্যাকইয়ার্ড। হয় ইন্ডিয়া-পাকিস্তান নয়তো "এ"-"বি" মহাযুদ্ধ; খাইসি তোরে, পালাবি কোথায়? ধাম-ধুম, ঠাস-ঠুস।  

........................................


এত কিছু নিয়ে মারামারি করেছি, অথচ সত্যিই মনে পরে না, কখনো আমরা নৌকা ভার্সেস ধানের শীষ'এর কোনো ফুটবল ম্যাচ খেলেছি। বিশ্বাস করেন, কস্মিনকালেও আমাদের আগ্রহের বা আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে স্থান পায়নি -  কার দাদা নৌকা, কে ধানের শীষ আর কার বাপ লাঙ্গল। সাবজেক্ট হিসেবে এতটাই তুচ্ছ ছিল এসব আমাদের কাছে। 

ভাগ্যিস, শত্রুতা করার মত এত্তোগুলা সাবজেক্ট ছিল আমাদের। নাহলে হয়ত বন্ধুত্বগুলিকে স্কুলেই দাফন করে আসতে হত।  

...................................

এবার ঘটনাটা বলি।  

সেদিন এক আড্ডায় ঢাকার মোটামুটি শীর্ষস্থানীয় এক স্কুলের শিক্ষক বড়ভাই জানালেন, তাদের স্কুলের ক্লাস সেভেনের দুই দলের মধ্যে একটা ইস্যু নিয়ে শুরু হয় ঝগড়া-বিবাদ।  এক পর্যায়ে এই বিবাদে যোগ দেয় অন্য ক্লাসের ছেলেরাও, হাতাহাতি থেকে ঘটনা রক্তারক্তি পর্যায়ে পৌছে যায়। শেষ পর্যন্ত টিচার এবং গার্জিয়ানদের হস্তক্ষেপে অবস্থা যদিও সামাল দেয়া হয়, কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, এই ঘটনার পর প্রতিটা ক্লাস পার্মানেন্ট ভাবে দুইটা ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। দুই দল এখন ক্লাসের দুইদিকে বসে, এক দল আরেক দলের সাথে কথা বলেনা; এবং দুই দলই তক্কে-তক্কে আছে - সুযোগ পেলেই অন্য দলকে চিপায় নিয়ে ডলা দেয়ার। 

ইস্যুটা কি ছিল জানেন? এই ইলেকশনে ভোট চুরি হয়েছে, নাকি ইলেকশন ফেয়ার হয়েছে !!! 

ক্লাস সেভেনের ছেলেগুলিকে এতটা "মাচিউরড" আর "রাজনীতি-সচেতন" করে তোলার জন্যে কাকে ধন্যবাদ দিব, ঠিক বুঝতে পারছিনা। 

মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৪

অসাম্প্রদায়িক, সেকুলার জাতি

সিচুয়েশনটা একটু ঠান্ডা মাথায় হজম করার চেষ্টা করুন। 

আপনার রং তো বাদামী, তাই না? না সাদা, না কালো। হঠাত একদিন ঘুম থেকে উঠে শুনলেন, আপনি যে পাড়ায় থাকেন সেটা বাদ দিয়ে গোটা শহরটা দখল করে নিয়েছে সাদা আর কালোরা। শহরের উত্তরদিক নিয়ে নিয়েছে সাদারা,  দক্ষিনদিক কালোরা।

আপনি বললেন - "তাতে সমস্যা কি? আমরা তো একটা অসাম্প্রদায়িক, সেকুলার জাতি, কে সাদা, কে কালো, কে বাদামী - তাতে আমাদের কি এসে যায়?"

আপনি যা শুনলেন তা হলো - "ঘটনাটা তেমন হলে তো ভালই হত। কিন্তু বাস্তবচিত্র তো ভিন্ন। সাদার সাথে কালোর গ্যাঞ্জামে যদি একটা বাদামীকে পোড়ানো যায়, তাহলে কখনো এর লাভ, কখনো ওর। এ নিয়ে বেশি উচ্চবাচ্চও করতে পারবেন না, একদম গলা টিপে ধরবে। এ নিয়ে কোথাও নালিশও করতে পারবেন না, কে শুনবে আমাদের কথা? হয় পালান, নাহয় চুপচাপ গা'এর রং পাল্টে হয় সাদা হয়ে যান, নাহয় কালো।" 

..........

কি করবেন এখন? বাঁচতে পারবেন এভাবে? ভয়ে ভয়ে? 

..........

অথচ, আমার বন্ধু অমিতাভ বড়ুয়ার রং যা, বাবার বন্ধু কেশব কাকুর রং'ও তাই।  তাদের রং যা, আমার-আপনারও সেই একই রং। আমাদের সবার রং'ই বাদামী। আমাদের সবার হাত কাটলে এক রঙের রক্তই বের হয়। ওরা "সংখ্যালঘু" নাম নিয়ে ভয়ে ভয়ে বাঁচবে, আর আমরা "মেজরিটি" ট্যাগ লাগিয়ে বুক ফুলিয়ে! বাহ, ভালো তো, ভালো না? 

এসব লেখায় কোনো কাজ হবে না, জানি। যারা "মানুষ" তাদের জাগাতে লেখা, গান বা কোনো ইভেন্টের প্রয়োজন পরে না।  আর যারা "অমানুষ", যারা নিজেদের স্বার্থের জন্যে ভাই'এর ঘরে আগুন দেয়, তাদের জাগানো আদৌ সম্ভব কিনা আমি জানিনা। 

এটুকু জানি, এদেশের মাটিতে একজন অমুসলিম ভাই বা বন্ধুর ঘর জ্বললে সেই অন্যায়ের দায় আমি এড়াতে পারি না।  মুসলিম হিসেবেও না, বাংলাদেশী হিসেবেও না।  

সোমবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৪

কালচারাল রেভলিউশন

গোলাপী-গোপালী Rap, বালুর ট্রাক মেগাসিরিয়াল, ভোটকেন্দ্র কমেডি সিরিজ ইত্যাদির পর লেটেস্ট এন্ট্রি - তথ্যমন্ত্রীর জাসদ-বধ কাব্য। 

একখানা নির্বাচন আমাদের যতগুলো হাই কোয়ালিটি এবং রসে টুইটুম্বুর ভিডিও ক্লিপ, অডিও ক্লিপ, কার্টুন আর ফেইসবুক স্টেটাস উপহার দিল - এটাকে একটা কালচারাল রেভলিউশন বা রেনেসা বললেও কম বলা হবে।

একটা সিডিসহ সংকলন বই মেলায় ছেড়ে দিলে বেস্ট সেলার হওয়া কনফার্ম। প্রকাশকগণ, ভেবে দেখতে পারেন। 

Vokta কে Votka

আজকে সকালে গভ্ট ইনফো থেকে আসা মেসেজ:

"Vokta hisabe khatigrasto hole ovijog korun. Promanito hole zarimanar 25% paben. TCB Bahban. Karwan Bazar."

আমার মত আর কে কে Vokta কে Votka পড়েছেন? 

রবিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৪

পেট-ভরা লাউ

ওকে।  এবার একটু সিরিয়াস কথা বলি। একদমই আমার ব্যক্তিগত মতামত। যে কেউ ভদ্র ভাষায় মন্তব্য করতে পারেন। 

আওয়ামিলিগ গত বেশ কিছুদিন ধরে নির্বাচনের নামে যা করলো, তাকে "গলা টিপে গণতন্ত্র-হত্যা" বা সহজ কথায় "স্বৈরশাসন" বললে ভুল হবে না।  

জানি, এইপর্যন্ত পড়ে বিএনপি সমর্থক বন্ধুরা মাথা দুলিয়ে আমার সাথে সহমত জানাচ্ছেন। 

এবার নেক্সট প্রসঙ্গে আসি।  একটু ভেবে বলুন তো, এত দুর্নীতির পরও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামছে না কেন? প্লিজ, দয়া করে "পুলিশের লাঠির ভয়", "ছাত্রলীগের পান্ডাদের ডান্ডার ভয়" ইত্যাদি লেইম লজিক দিবেন না।  এর থেকে বড় ভয় ৯০'এ ছিল, তারপরও রাজপথে নামতে মানুষ দ্বিধা করেনি। 

এতকিছুর পরও আমজনতা রাস্তায় নামছেনা, বিক্ষোভে ফেটে পড়ছেনা - তার কারণ হলো অল্টারনেটিভ হিসেবে বিএনপি-জামাত-জোট'কে মেনে নেয়ার মত ক্রেডিবিলিটি তারা কোনভাবেই অর্জন করতে পারেনি। জনতা ভাবছে লাউ আর কদু যেহেতু একই, ইটস বেটার টু হ্যাভ "পেট-ভরা লাউ" দ্যান "ক্ষুধার্ত-কদু"। ক্ষমতায় এসেই খাই-খাই তো আর শুরু করবেনা।  

কিন্তু ...

একটা শক্তিশালী বিরোধীদল ছাড়া "পেট-ভরা লাউ" যে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, সেটা বুঝতে কিন্তু খুব একটা বুদ্ধি খরচ করতে হয়না।  "পেট-ভরা লাউ" এখন এতটাই পাওয়ারফুল, যে আমাদের কথা তাদের কানে ঢুকবে না; ইনফ্যাক্ট, যারা ক্ষমতায় থাকে, তাদের কানে কখনই আমজনতার কথা ঢোকেনা। তাই জনগনের শেষ ভরসা - বিরোধীদলের কাছে আমার আকুল মিনতি - দয়া করে মানুষের দাবিটা বুঝুন, নিজেদের কাজকর্মের মাধ্যমে মানুষের চাওয়ার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করুন, ময়লা-আবর্জনা শরীর থেকে ধুয়ে-মুছে পবিত্র হোন; দেখবেন এই জনগণই মিছিল করে বালুর ট্রাক সরাতে গেছে, এই জনগনই রাজপথে নেমে আবার স্বৈরাচার-বিরোধী স্লোগান দিচ্ছে এবং সেজন্য আপনাদের পকেট থেকে এক পয়সাও খরচ হচ্ছেনা! 

যেটা আগেও একবার বললাম, ক্ষমতায় যারা থাকে, তাদের কান পর্যন্ত সাধারণত জনতার আওয়াজ পৌঁছে না, তারপরও একটু বলি। ইতিহাস কিন্তু বলে আসছে ৫ বছরের টার্ম পার করার সম্ভাবনা আওয়ামীলীগের নেই বললেই চলে। যদি সত্যিই ইতিহাসকে ভুল প্রমান করতে চান, একটু আত্মপলব্ধির জায়গাটা নিয়ে কাজ করুন। ঠিক মানুষগুলিকে ঠিক জায়গায় রাখুন, কথাবার্তায় সংযত হোন, সত্যি-সত্যি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভালকিছু করুন - আর একটু নমনীয় হোন; বিরোধীদলের নেত্রীর পিছনে সারাক্ষণ লেগে থাকাটা প্রধানমন্ত্রীর শোভা পায়না। দেশ নিয়ে বেশি ভাবুন, দল আর ক্ষমতা নিয়ে না।  দেখবেন, ৫ বছর কেনো, ২৫ বছরেও কেউ আপনাদের গদি থেকে নামাতে পারবেনা। 

৯০'এ আমরা সামনে কি আছে জানতাম না।  আপনাদের সবাইকেই দেখা হয়ে গেছে আমাদের; তার মানে, আপনারা যদি না শুধরান তাহলে সামনে কি আছে এবার জানি আমরা। 

সামনে খুব খারাপ দিন আসছে। তাই, সময় থাকতেই বোধদয় হোক সবার। আমীন। 

খবরের হেডলাইন

"সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনের জন্যে জনগনকে ধন্যবাদ দিয়েছে আওয়ামিলিগ।"
"প্রহসনের এই নির্বাচনকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখান করার জন্যে জনগনকে ধন্যবাদ দিয়েছে বিএনপি।"

আজকের সন্ধার খবরের এই দুইটা হেডলাইন যারা গতকাল রাতে জানতেন না, তারা "ডিসলাইক" চাপুন, যারা জানতেন তারা "লাইক" বা "শেয়ার" চাপুন। 

[বাই দা ওয়ে, এই নির্বাচনে যদি "ডিসলাইক" পরাজিত হয়, "লাইক-শেয়ার" জোট বলবে নির্বাচন সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ হয়েছে এবং "ডিসলাইক"-প্রার্থী বলবে নির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপি হয়েছে। খিক খিক] 

বাঙালী একটি বীরের জাতি

সরকারী দলের সাপোর্টাররা আজকে বীরের মত ভোট সফল করছেন।
বিরোধী দলের সাপোর্টাররা আজকে বীরের মত ভোট ভন্ডুল করছেন। 
আমজনতা আজকে বীরের মত ফেইসবুক কোপাচ্ছে আর গলিতে ক্রিকেট খেলছে। 

"বাঙালী একটি বীরের জাতি" - প্রমানিত। 

[আমাকে যেকোনো এক দলে ফেলে দিয়েন। নাথিং রিয়ালি ম্যাটার্স।]

বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৪

বিয়ে বিয়ে

জয়ী জীয়ন'কে কবিতা শিখিয়েছে। 

জয়ী বলে: "চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে, কদমতলায় ..."
জীয়ন বলে: "তেএএএ"
জয়ী বলে: "হাতি নাচছে ঘোড়া নাচছে, সোনামনির ..."
জীয়ন বলে: "বিয়েএএএ"

এরপর তাকে আরো কিছু  কবিতা শেখানো হলো।  

আমি অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পর, মেয়ে মহা উত্সাহে বলল: "বাবা, জানো, জীয়ন আরো ২টা কবিতা শিখেছে।"
আমি বললাম: "বেশ।  ডাক জীয়নকে। নতুন কবিতা শুনি।"

জয়ী বলে: "তাঁতির বাড়ি ব্যাঙের বাসা, কোলাব্যাঙের... "
জীয়ন বলে: "বিয়েএএএ"
জয়ী বলে: "খায় দায় গান গায়, তাইরে নাইরে ..."
জীয়ন বলে: "বিয়েএএএ"

জয়ী মহা বিরক্ত: "উফ্ফ, এইটা বিয়ে না ভাইয়া, এটা অন্যটা। আচ্ছা, অন্যটা বলি।"

জয়ী বলে: "আতা গাছে তোতা পাখি, ডালিম গাছে ..."
জীয়ন মহা উত্সাহে বলে: "বিয়েএএএ"
জয়ী চোখ পাকিয়ে বলে: "এত ডাকি তবু কথা কয় না কেন  ..."
জীয়ন আরো উত্তেজিত হয়ে চিত্কার দিয়ে বলে: "বিয়েএএএ"

জয়ী কাঁদো কাঁদো চেহারা করে বলে: "বাবাআআ, ও খালি বিয়ে বিয়ে করছে ক্যান?"

আমিও তো বুঝতেসি না রে মা।  ছেলে আমার এই বয়সেই বিয়ে বিয়ে ক্যান করতেসে !!! 

এ কিসের আলামত গো খোদা? এ কিসের আলামত? 

গভট ইনফো

এইচ এইচ পি কে জি রেএএএএএ 
এইচ এইচ পি কে জি...

বাংলাদেশের মোবাইল ফোন সার্ভিস নিয়ে আমি মহামুগ্ধ। ফ্রি একটা সার্ভিস দিচ্ছে ওরা কিছুদিন ধরে - ও-এম-জি সুপার সার্ভিস। গভট ইনফো নামে একটা নম্বর থেকে প্রতিদিন জটিল জটিল জোকস পাঠায়, এবং অবাক ব্যাপার হলো, এর জন্য এক পয়সাও চার্জ করে না !!! 

আজকে সন্ধায় একটা পাঠালো - 

"আপনার ভোট আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার, আপনার ভোট আপনার পছন্দ। দায়িত্বশীল ভাবে পছন্দের প্রার্থীকে, দেখে শুনে বুঝে আপনার ভোট দিন - ইলেকশন কমিশন।"

হা হা হা, লোল লোল লোল ... .. ভোট দিব ক্যামনে রে চাচ্চু? আমার এলাকায় তাপস ভাই তো কবেই ওয়াকওভার পেয়ে গেসে :) 

সন্ধায় পাঠালো আরেকটা। ঐটা আরো ফানি। 

"ভোট বিক্রি তো বিবেক বিক্রি, ভোট বিক্রি করবেন না।  নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোস্সে। নির্বিঘ্নে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন - ইলেকশন কমিশন।" 

হা হা হা, লোল লোল লোল ... ভোটই তো নাই গো চাচ্চু, বেচুম কারে?

পুরাই এইচ এইচ পি কে জি রেএএএএএ 
এইচ এইচ পি কে জি...

বাই দা ওয়ে, আর কে কে ফ্রি'তে গভট ইনফো'র জোকস গিফট পাচ্ছেন? 

বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৪

হাইকোর্ট

আবারও আপনাদের একটুখানি টেন্স শিখাই ...

অতীতকাল:  পাবলিক পিটাইলে হাইকোর্ট যাইতে হয়। 
বর্তমানকাল: পাবলিক পিটাইতে হাইকোর্ট যাইতে হয়।