(লেখাটা একটু বড়, চেষ্টা করেও ছোট করতে পারলাম না। সরি।)
স্কুলের ঘটনা। সিক্স বা সেভেনে পড়ি। বছর শুরুতে ক্লাস রুটিন দিল। দেখি নতুন এক স্যার'কে দুই-দুইটা সাবজেক্ট দিয়ে রেখেছে - ইংরেজি আর সমাজ। স্যারের স্বভাব-চরিত্র নিয়ে নানারকম জল্পনা-কল্পনা শুরু হলো। পুরা এক বছর সহ্য করার ব্যাপার, টেনশন না? এক সোর্স ইনফরমেশন দিল স্যার নাকি জল্লাদের ফোটোকপি, আগে যে স্কুলে ছিল সেখানে নাকি বেতিয়ে শ'খানেক ছেলেকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। আরেক সোর্স থেকে খবর আসলো স্যার নাকি পুরাই পানিভাত। এসব গুজুর-গুজুর-ফুসুর-ফুশুরের মধ্যেই স্যার ক্লাস নেয়া শুরু করলেন।
সপ্তাখানেক পার হলো; স্যারের মধ্যে কোনরকম জল্লাদিপনা দেখতে পেলাম না। ভয় কেটে যেতে শুরু করলো, আমরাও ধীরে ধীরে তার ক্লাসে "সোজা হও" থেকে "আরামে দাঁড়াও" মোডে উন্নীত হলাম। বিশ্বাস করতে শুরু করলাম - স্যার আসলেই পানিভাত। সবকিছু ঠিকঠাক মতই চলছিলো ...
একদিন স্যার ক্লাসে থাকা অবস্থাতেই আমাদের ইতরামি-ফাইজলামি চূড়ান্ত লেভেলে পৌঁছালো। স্যার দুই-একবার হাঁক দিলেন, আমরা পাত্তা দিলাম না - পানিভাতের আবার কিসের গরম! কিন্তু হঠাতই স্যার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। সামনে তাকাতেই দেখলেন মাসুদ নির্লজ্জের মত খ্যাক-খ্যাক করে হাসছে। চোখে না আছে অপরাধবোধ, না আছে কোনো ভয়-ডঢ়। স্যার সিংহের মত হুংকার দিলেন "এই বেয়াদব ছেলে, এদিকে আয়।"
স্যারের গলার ভলিউম শুনে আর স্যারের লাল চেহারা দেখে পুরা ক্লাস মোটামুটি হিসুফাইড। মাসুদের কান ততক্ষণে স্যারের হাতে, স্যার থরথর করে কাঁপছেন। কান ছাড়লেন, বাম হাত থেকে ঘড়ি খুলে টেবিলের উপর রাখলেন, তারপর ফুলশার্টের হাতা গুটাতে শুরু করলেন। চশমা খুললেন, সেটাও টেবিলে রাখলেন। পুরা ক্লাসে পিন-ড্রপ-সাইলেন্স। ক্লাসের সবচাইতে বলদ ছেলেটারও বুঝতে বাকি নাই, যে স্যার আসলেই জল্লাদের ফটোকপি। স্যার কাঁপতে কাঁপতে মাসুদের দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বললেন ...
"বে---আ----দ----ব---কো----থা---কার ... নি---র্ল---জ্য---বে----হা----য়া----আ---- আ------"
আমরা মোটামুটি শিওর যে একটা লাশ পড়তে যাচ্ছে।
"যাআআআআ, তি-ই-ই-ই-ই-ন বার কান ধরে উঠ-বোস কর"
(তিনবার কান ধরে উঠ-বোস!!!!! আর ইউ কিডিং???? আমরা সরকারী বয়েজ স্কুলের বান্দর পোলাপান। এমন সব জায়গায় মারত স্যাররা, বাসায় গিয়ে আব্বা-আম্মাকে দেখাতে পারতাম না। তিনবার কান ধরে উঠ-বোস করা ইস লাইক ..... পানিভাতও না)
রেসাল্ট (তাত্ক্ষণিক): তব্দা ভাব কাটতে মাসুদের লাগলো ৩ সেকেন্ড, তারপর ৩ সেকেন্ডে ৩ বার কান ধরে উঠ-বোস। কুইকি:) আবার খ্যাক-খ্যাক হাসি।
রেসাল্ট (লং টার্ম): চরম রাগে লাল হয়ে যাওয়া স্যারের দাড়িওয়ালা মুখটার সাথে ক্লাসের কেউ একজন গরুর পশ্চাদ্দেশের মিল খুঁজে পেল। এরপর থেকে স্যারের নামই হয়ে গেল "গরুর পাছা"।
সোনামনিরা, বলোতো গল্পটা থেকে তোমরা কি শিখলে?
১। যখন বড় শাস্তির ভয় থাকে তখন ছোট শাস্তি পেলে সেটাকে শাস্তি মনে হয় না। আদর মনে হয়।
২। যদি তুমি বাঘ না হও, তবে হুংকার দিও না। বান্দর পোলাপান তোমাকেও "গরুর পাছা" ডাকতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন