বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৪

জাতির পিতা, স্বপ্নভঙ্গ এবং জয়িতা চৌধুরী

জাতির পিতা, স্বপ্নভঙ্গ এবং জয়িতা চৌধুরী ------------------------------------------- ৯ বছর আগের কথা। আমরা প্রথমবারের মত বাবা-মা হতে যাচ্ছি। আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ছেলে হবে নাকি মেয়ে, তা দেখিনি আমরা। কিন্তু কোনো এক অদ্ভূত কারণে আমি আর আমার বউ দু'জনই কনফার্ম ছিলাম যে আমাদের মেয়ে হতে যাচ্ছে। যাই হোক, একটা সুস্থ বাচ্চার জন্ম হোক, সেজন্য আমরা সবাই অধীর আগ্রহে দিন গুনছি। ডাক্তার সম্ভাব্য জন্মতারিখ জানালো - ২৬ মার্চ। আর সাথে সাথে আমার মাথায় উঁকি দিল চরম এক প্ল্যান - জাতির পিতা হওয়ার প্ল্যান। আমার মেয়ের জন্ম হবে ২৬শে মার্চ। আমি আমার মেয়ের নাম রাখবো "জাতি" - আর আমি হয়ে যাব "জাতির পিতা"। পূনম হবে জাতির মাতা, আব্বা-আম্মা-শ্বশুর-শাশুড়ি যথাক্রমে জাতির দাদা-দাদী-নানা-নানী। হাসিব জাতির চাচা, আমার ৩ শালা জাতির মামা। ১০০% লিগাল, সকল বিতর্কের উর্ধে। আমার এই প্ল্যানকে সবাই পাগলামি হিসেবে দেখলেও "জাতির কিছু একটা" হওয়ার লোভে প্ল্যানটাকে পুরাপুরি বাতিলও করে দিতে পারছিল না। যাই হোক, ২৫ মার্চ রাত থেকে শুরু হলো আমার দোআ-দরুদ পাঠ। যেমনেই হোক কালকেই ডাউনলোড করতে হবে। বাই হুক অর বাই ক্রুক, বঙ্গবন্ধুর "জাতির পিতা" টাইটেলে আমাকে ভাগ বসাতে হবেই। ভেজাল হলো ডাক্তার প্রথম থেকেই বলে আসছিল যে পূনমের নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, সুতরাং ইচ্ছা মত ডাউনলোড করার অপশনও বন্ধ :( ইন্টারনেট বললো হাঁটাহাঁটি করলে নাকি লেবার পেইন তাড়াতাড়ি উঠতে পারে। মনে আছে, ২৫ মার্চ সন্ধায় আমি পূনম'কে জোর করে দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে ক্রিসেন্ট রোডে কয়েক চক্কর খাইয়েছি। ২৫শে মার্চ সারারাত পার হলো, পেইন উঠলো না। সকাল থেকে আবার হাঁটাহাঁটি, বাধ্য মেয়ের মত পূনম আমার "জাতির পিতা" হওয়ার স্বপ্ন সত্যি করতে প্রানপনে হেঁটে বেরালো। মাঝে মাঝে অবশ্য অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছিল, বাট ঐটা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু পরম আরাধ্য লেবার পেইন আর উঠলো না। আমি স্বপ্নভঙ্গের পেইনে পেইনিত হলাম। ২৬শে মার্চ শেষ হয়ে গেল। ২৭ তারিখ সকালে আমি অফিস গেলাম। যেতে না যেতেই আম্মার ফোন - "পূনমের ব্যথা উঠেছে, তাড়াতাড়ি চলে আসো। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।" ২৭ মার্চ ২০০৫, রাত সাড়ে ১১টায় জন্ম নিল আমাদের প্রথম সন্তান। আমরা তার নাম রাখলাম জয়িতা চৌধুরী। ২৬শে যেহেতু হলোই না, তাই জোর-জবরদস্তি করে আর "জাতির পিতা" হতে ইচ্ছা হলোনা। আমাদের জয়িতার আজ নবম জন্মদিন। এত তাড়াতাড়ি কেমনে আমার হাতের তালুর সমান মেয়েটা এত বড় হয়ে গেল, আমি জানি না। তবে, এত লক্ষী একটা মেয়ের বাবা হতে পেরে আমি যে অনেক বেশি সুখী, সেটা ঠিকই জানি। ভাগ্যিস পাগলামি করে মেয়ের নাম "জাতি" রাখি নাই। মেয়ে যখন বড় হবে, তখন "জয়িতার বাবা" পরিচয়ে পরিচিত হতেই আমি বেশি গর্ব বোধ করবো। শুভ জন্মদিন মা। তুই অনেক বড় হ। আমি, আমরা তোকে অনেক অনেক ভালোবাসি। *** দয়া করে এই লেখার মধ্যে কেউ জাতির পিতাকে অসম্মান করার কোনো গন্ধ খুঁজে নেবার চেষ্টা করবেন না। বঙ্গবন্ধু আমার কাছে শর্তহীন শ্রদ্ধা এবং অন্তহীন ভালবাসার আসনে আসীন বলেই প্রথমবার বাবা হবার সময় আমি এমন পাগলামি চিন্তা করতে পেরেছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন