সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০১৪

বাথরুম রুটিন

দাঁত ব্রাশ + শেইভ + গোসল + হাগু (এবং আনুষঙ্গিক ক্রিয়াকর্ম) + ফেইসবুক = সবমিলিয়ে প্রায় ৩৫/৪০ মিনিটের ব্যস্ততা। - - এটা আমার প্রতিদিন সকালের বাথরুম রুটিন। 

আর, আমার প্রানপ্রিয় বউ'এর ভাষায়, বাথরুমে মোবাইল নিয়ে গিয়ে ফেইসবুক গুতাগুতি করা নাকি আমার সবচেয়ে বাজে দোষগুলির মধ্যে অন্যতম। 

এইবার খুব খেয়াল করে সিচুয়েশনটা বোঝেন। 

-----------------

আমি কমোডে, হাতে মোবাইল ফোন। মর্নিং রুটিন মাত্র শুরু করেছি। বউ বাইরে থেকে আওয়াজ দিল, "শোনো, আমি বাচ্চাদের নিয়ে বের হলাম।  আম্মুর বাসায় বাচ্চাদের রেখে তারপর অফিসে যাব।  তুমি সন্ধার মধ্যে আম্মুর বাসায় চলে এস।"

"হমমম, ওকে"

"বেডরুমের আর মেইন দরজার চাবি বিছানার পাশের টেবিলে রেখে গেলাম।" (this is the most important line)

"হমমম, ওকে"

"বেডরুম আর মেইন দরজা লক করে দিয়ে যাবো?" (this is important too ...)

"হমমম, ওকে"

"উফ্ফ, অসহ্য।  জঘন্য লাগে এই বাথরুমে বসে ফেইসবুকিং। থাকো তুমি, আমি গেলাম।"

"হমমম, ওকে"

তারপর পরপর বেডরুম আর মেইন দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ পেলাম। আমি হোম এলোন, শান্তিই শান্তি।  

--------------------

আধা ঘন্টা পর।  রুটিন অনুযায়ী আমার সব কাজ শেষ।  বউ ততক্ষণে নিশ্চয়ই গুলশানের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আমি বাথরুম থেকে বের হব।  কিন্তু ....

--------------------

আবার একটু আধা ঘন্টা আগের সময়টাতে ফিরে যাই।  

আমি যখন আমার বউ'এর সাথে কথোপকথনে ব্যস্ত, আমার super intelligent পুত্র তখন নিঃশব্দে বাথরুমের দরজার ছিটকিনি বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়ার কর্মে লিপ্ত। বলাই বাহুল্য, তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বাথরুমের দরজার ছিটকিনি বাইরে থেকে পুরোপুরি লাগিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।   

--------------------

৩ ঘন্টা পর।  

বউ এসে চাবিওয়ালা ডাকিয়ে বেডরুম আর মেইন দরজার চাবি বানিয়ে, বাথরুমের দরজার ছিটকিনি খুলে আমাকে "উদ্ধার" করে।  

-------------------

সাড়ে ৩ ঘন্টা পর।  

আমি মিনমিন করে বলি, "দেখসো? তুমি তো খালি আমাকে ঝারি মারো বাথরুমে মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকি বলে।  আজকে যদি ফোনটা সাথে না থাকতো, তোমাকে আমি খবর দিতাম কিভাবে?" 

------------------

পোনে ৪ ঘন্টা পর।  

থাক না, সব কথা কি সবখানে বলা উচিত? 

শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০১৪

বিবাহিত পুরুষ, ঘানিটানা গরু আর ডিম দেয়া মুরগি

মকবুল মুনশীর একটা হাড়জিরজিরে গরু আছে।  সেই গরু দিয়ে সে ঘানি টানায়, সেখান থেকে তেল বের হয়, সেই তেল বাজারে বেচে তাদের বাড়ির খরচ যোগার হয়।  

সুলতানা খাতুন মুরগি পালেন। মুরগি ডিম দেয়, সেই ডিম বেচা টাকায় তার সংসার চলে। 

এখন, কোনো বোকা নিশ্চয়ই এ প্রশ্ন করবে না যে, তেল বেচা টাকার মালিক কি গরুটা, নাকি মকবুল মুনশী? কিংবা, ডিম বেচা টাকার মালিক কি মুরগিগুলি, নাকি সুলতানা খাতুন? 

ঠিক তেমনি, আইরিন পারভীনের একটা নাদুসনুদুস জামাই আছে। সেই জামাই সারাদিন মগজ বেচে, সেই মগজ বেচা টাকায় আইরিন পারভীনের সংসার চলে।

কোনো বোকা নিশ্চয়ই এক্ষেত্রেও প্রশ্ন করবে না, মগজ বেচা টাকার মালিক কি নাদুসনুদুস জামাইটা? নাকি আইরিন পারভীন? 

সারাংশ: বিবাহিত পুরুষ, ঘানিটানা গরু আর ডিম দেয়া মুরগি'র স্টেটাস সেইম টু সেইম। 

বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৪

জাতির পিতা, স্বপ্নভঙ্গ এবং জয়িতা চৌধুরী

জাতির পিতা, স্বপ্নভঙ্গ এবং জয়িতা চৌধুরী ------------------------------------------- ৯ বছর আগের কথা। আমরা প্রথমবারের মত বাবা-মা হতে যাচ্ছি। আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ছেলে হবে নাকি মেয়ে, তা দেখিনি আমরা। কিন্তু কোনো এক অদ্ভূত কারণে আমি আর আমার বউ দু'জনই কনফার্ম ছিলাম যে আমাদের মেয়ে হতে যাচ্ছে। যাই হোক, একটা সুস্থ বাচ্চার জন্ম হোক, সেজন্য আমরা সবাই অধীর আগ্রহে দিন গুনছি। ডাক্তার সম্ভাব্য জন্মতারিখ জানালো - ২৬ মার্চ। আর সাথে সাথে আমার মাথায় উঁকি দিল চরম এক প্ল্যান - জাতির পিতা হওয়ার প্ল্যান। আমার মেয়ের জন্ম হবে ২৬শে মার্চ। আমি আমার মেয়ের নাম রাখবো "জাতি" - আর আমি হয়ে যাব "জাতির পিতা"। পূনম হবে জাতির মাতা, আব্বা-আম্মা-শ্বশুর-শাশুড়ি যথাক্রমে জাতির দাদা-দাদী-নানা-নানী। হাসিব জাতির চাচা, আমার ৩ শালা জাতির মামা। ১০০% লিগাল, সকল বিতর্কের উর্ধে। আমার এই প্ল্যানকে সবাই পাগলামি হিসেবে দেখলেও "জাতির কিছু একটা" হওয়ার লোভে প্ল্যানটাকে পুরাপুরি বাতিলও করে দিতে পারছিল না। যাই হোক, ২৫ মার্চ রাত থেকে শুরু হলো আমার দোআ-দরুদ পাঠ। যেমনেই হোক কালকেই ডাউনলোড করতে হবে। বাই হুক অর বাই ক্রুক, বঙ্গবন্ধুর "জাতির পিতা" টাইটেলে আমাকে ভাগ বসাতে হবেই। ভেজাল হলো ডাক্তার প্রথম থেকেই বলে আসছিল যে পূনমের নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, সুতরাং ইচ্ছা মত ডাউনলোড করার অপশনও বন্ধ :( ইন্টারনেট বললো হাঁটাহাঁটি করলে নাকি লেবার পেইন তাড়াতাড়ি উঠতে পারে। মনে আছে, ২৫ মার্চ সন্ধায় আমি পূনম'কে জোর করে দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে ক্রিসেন্ট রোডে কয়েক চক্কর খাইয়েছি। ২৫শে মার্চ সারারাত পার হলো, পেইন উঠলো না। সকাল থেকে আবার হাঁটাহাঁটি, বাধ্য মেয়ের মত পূনম আমার "জাতির পিতা" হওয়ার স্বপ্ন সত্যি করতে প্রানপনে হেঁটে বেরালো। মাঝে মাঝে অবশ্য অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছিল, বাট ঐটা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু পরম আরাধ্য লেবার পেইন আর উঠলো না। আমি স্বপ্নভঙ্গের পেইনে পেইনিত হলাম। ২৬শে মার্চ শেষ হয়ে গেল। ২৭ তারিখ সকালে আমি অফিস গেলাম। যেতে না যেতেই আম্মার ফোন - "পূনমের ব্যথা উঠেছে, তাড়াতাড়ি চলে আসো। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।" ২৭ মার্চ ২০০৫, রাত সাড়ে ১১টায় জন্ম নিল আমাদের প্রথম সন্তান। আমরা তার নাম রাখলাম জয়িতা চৌধুরী। ২৬শে যেহেতু হলোই না, তাই জোর-জবরদস্তি করে আর "জাতির পিতা" হতে ইচ্ছা হলোনা। আমাদের জয়িতার আজ নবম জন্মদিন। এত তাড়াতাড়ি কেমনে আমার হাতের তালুর সমান মেয়েটা এত বড় হয়ে গেল, আমি জানি না। তবে, এত লক্ষী একটা মেয়ের বাবা হতে পেরে আমি যে অনেক বেশি সুখী, সেটা ঠিকই জানি। ভাগ্যিস পাগলামি করে মেয়ের নাম "জাতি" রাখি নাই। মেয়ে যখন বড় হবে, তখন "জয়িতার বাবা" পরিচয়ে পরিচিত হতেই আমি বেশি গর্ব বোধ করবো। শুভ জন্মদিন মা। তুই অনেক বড় হ। আমি, আমরা তোকে অনেক অনেক ভালোবাসি। *** দয়া করে এই লেখার মধ্যে কেউ জাতির পিতাকে অসম্মান করার কোনো গন্ধ খুঁজে নেবার চেষ্টা করবেন না। বঙ্গবন্ধু আমার কাছে শর্তহীন শ্রদ্ধা এবং অন্তহীন ভালবাসার আসনে আসীন বলেই প্রথমবার বাবা হবার সময় আমি এমন পাগলামি চিন্তা করতে পেরেছি।

বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০১৪

কালিয়াকৈরে কেন গাবতলী

রাজশাহী থেকে ফিরছি। সামনের সীটে হেভি স্মার্ট এক যুবক বসা। মাঝে মাঝেই ফোনে বাংলিশে বাতচিত করছে। আমি ঘুমঘুম চোখে তার কথা শুনছি। 

কালিয়াকৈর বাজারে হালকা জ্যাম। হঠাত শুনি স্মার্ট ভাই ফোনে কথা বলতে শুরু করেছেন - "আব্বু, আই থিংক আমরা পৌঁছে গেছি। .... .... ইয়া ইয়া গাবতলী ....ইয়া ইয়া আমি শিওর ..... ওহ নো! কি বলো??? .... এখনো গাড়ি পাঠাও নাই ??!!..... শিট, কতক্ষণ লাগবে আর? প্লিজ তাড়াতাড়ি পাঠাও।"

ফোন রেখেও সে "শিট", "ড্যাম", "টুত", "টুউউত" চালিয়ে যেতে লাগল।

আমার আবার একটু পরোপকারী হওয়ার বাতিক আছে। তাই, স্মার্ট ভাই'এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললাম "এক্সকিউজ মি ভাইয়া, আপনার মনে হয় একটু ভুল হয়েছে। আমরা এখনো কালিয়াকৈর বাজারে। গাবতলী আসতে আরো মিনিমাম ৪৫ মিনিট লাগবে। আশা করি আপনি পৌঁছতে পৌঁছতে আপনার গাড়ি চলে আসবে।"

ভাই একটু কনফিউজড হয়ে গেল, এদিক ওদিক মাথা ঝাঁকিয়ে বললো - "আর ইউ শিওর ম্যান, দিস ইজ নট গাবতলী? আমাদের বাসের পাশে আই জাস্ট স আ বাস, যেটার গা'এ লেখা - গাবতলী !!! কালিয়াকৈরে কেন গাবতলী লেখা বাস থাকবে?"

.........

আমার বলার কিছু ছিল না
না গো
আমার বলার কিছু ছিল না ....

অন্যরকম বাড়ি যাওয়া

প্রথম কবে আব্বা-আম্মার সাথে রাজশাহী গেছি, মনে নাই। 

আব্বার দিকের সব আত্মীয়-স্বজনরা রাজশাহীর দিকে থাকলেও আমার জন্ম ঢাকাতেই। আব্বা-আম্মা দু'জনই জগন্নাথ কলেজের প্রফেসর, তাই তাদের ঠিকানা বরাবরই ঢাকাতে। ছোট বেলায় আব্বা-আম্মার সাথে ঈদ করতে, বিয়ে খেতে রাজশাহী যাওয়াটাই আমার "বাড়ি যাওয়ার" নিয়মিত স্মৃতি। 

দাদু যতদিন বেঁচে ছিলেন, আমি অন্তত একটা ঈদ দাদুর সাথে করতাম। কখনো আমি একা, কখনো আব্বা-আম্মা আর আমরা দুই ভাই। ওখানকার জ্যামবিহীন রাস্তা, অলস-ব্যস্ততাহীন ধীরস্থির জীবন আমার ভয়াবহ পছন্দ। কখনো বাস, কখনো ট্রেন - সুযোগ পেলেই তাই ছুটে যেতাম রুক্ষ শহরের উষ্ণ মনের মানুষগুলির কাছে।

আজকে আবার যাচ্ছি। কিন্তু এই যাওয়াটা একদমই অন্যরকম।

এবার আমি আব্বাকে নিয়ে যাচ্ছি। শুধুই আব্বাকে।

আম্মা চলে যাওয়ার পর একদমই ভেঙ্গে যাওয়া, একা, অসহায় আব্বার জীবনে একটু চেঞ্জ নিয়ে আসার আশায় তাকে নিয়ে রাজশাহী যাচ্ছি।

এয়ারপোর্ট এসে শুনি ফ্লাইট ২ ঘন্টা লেট।

এতক্ষণ সময় আব্বার সাথে চালিয়ে যাওয়ার মত কথা যে আমার নাই। কি কথা বলব? ঘুরে ফিরে আম্মার কথা চলে আসলে দু'জনের গলাই কেঁপে ওঠে। তারপর একটা অস্বস্তিকর নিরবতা - এই আব্বা আমার কাছে অচেনা। আমি জানি, এই আমিও আব্বার কাছে অচেনা। এই সময়টাই যে বড় বেশি অচেনা।

আব্বা এখন সোফায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে। ছাদের দিকে অপলক তাকিয়ে কি খুঁজছেন, জানি না।

হয়ত একটু ভালো থাকার মুহূর্ত খুঁজছেন। আমার মতই, আমাদের সবার মতই।

যাই, আবার একটু কথা চালানোর চেষ্টা করি। আরো দেড় ঘন্টা বাকি। অনেক লম্বা দেড়টা ঘন্টা।

- আভ্যন্তরীন টার্মিনাল, ঢাকা এয়ারপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০১৪

কাপড় খুলেছে ঠিকই, কিন্তু একটুর জন্য ন্যাংটা হই নাই।

ঝড়ো হাওয়ায় লুঙ্গি উড়ে গেল। কিন্তু ক্যামনে জানি একটি পাতা উড়ে এসে ঠিক জায়গামত এসে বসলো। কোনমতে ইজ্জতটা বেঁচে গেল। 

সারমর্ম: কাপড় খুলেছে ঠিকই, কিন্তু একটুর জন্য ন্যাংটা হই নাই। 

উপলব্ধি: কপাল গুনে বাইচা গেসি রে ভাই। বাঘ মামুরা, নেক্সট টাইম, লুঙ্গি টাইট করি বান্ধি লইও। পরের ঝড়ে উড়া পাতা জায়গামত সেট নাও হতি পারে।

শাকিপ খান

১৫ মিনিট ধরে মেকআপম্যান ভাই মুখে ঘষামাজা করলেন। আয়নায় তাকিয়ে মুগ্ধ আমি - উফ্, কি নুরানী চেহারা গো! 

৫ মিনিট পর প্রডিউসার ভাই আসলেন। আমার চেহারা ভালো করে চেক করে কাচুমাচু মুখে বললেন, "ভাই, এখনও মেকআপ নেন নাই, না? টাইম কিন্তু বেশি নাই। জলদি মেকআপটা নিয়ে নেন। দাঁড়ান, আমি মেকআপ ম্যানকে ডাকি।"

ভাইয়ু রে, মেকআপ নেয়ার পরেই আমি এমন ! 

রাজীব চৌধুরী'রে ঘষে কি আর শাকিপ খান বানাতে পারবেন? 

পারবেন না, কখনই পারবেন না। না, না, না।

মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০১৪

হারাধনের ফ্রেন্ডলিস্টে ১০০টা বন্ধু ছিল।


হারাধনের ফ্রেন্ডলিস্টে ১০০টা বন্ধু ছিল। 

নাস্তিক আর আস্তিকের ডামাডোলে দেশ দু'ভাগ হলো।  

হারাধনের ফ্রেন্ডলিস্ট'ও দু'ভাগ হলো।  হারাধনের বন্ধু হলো ৫০টা।  

ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট টিমকে সাপোর্ট করাকে রাজনীতির সাথে মিলানো উচিত, নাকি উচিত না - এ নিয়ে দেশ দু'ভাগ হলো।  

হারাধনের ফ্রেন্ডলিস্ট'ও দু'ভাগ হলো।  হারাধনের বন্ধু হলো ২৫টা।  

ভাষাকে স্রোতের মত ভেসে যেতে দেয়া ঠিক হবে, নাকি বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা ঠিক হবে, এ নিয়ে দেশ দু'ভাগ হলো।  

হারাধনের ফ্রেন্ডলিস্ট'ও দু'ভাগ হলো।  হারাধনের বন্ধু হলো সাড়ে ১২টা।  আচ্ছা যান, আধা পয়েন্ট বাড়িয়ে দিলাম। ১৩টা।  

সাকিব আর হাসান আঙ্গুল দেখিয়ে কবীরা গুনাহ করলেন, নাকি তাকে বাঘের বাচ্চা খেতাব দেয়া উচিত - এ নিয়ে দেশ দু'ভাগ হলো। 

হারাধনের ফ্রেন্ডলিস্ট'ও দু'ভাগ হলো।  হারাধনের বন্ধু হলো সাড়ে ৬টা।  আচ্ছা অবারও আধা পয়েন্ট বাড়িয়ে দিলাম। ৭টা ফাইনাল।  

টি২০'র কনসার্ট বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্বল করলো, নাকি ডুবিয়ে দিল - এ নিয়ে দেশ দু'ভাগ হলো। 

হারাধনের ফ্রেন্ডলিস্ট'ও দু'ভাগ হলো।  হারাধনের বন্ধু হলো সাড়ে ৩টা।  আধা পয়েন্ট আবারও বাড়িয়ে দিলাম। ৪টা, ওকে?  

জায়গায় জায়গায় হোলি উদযাপন মুসলিম রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের আপন করে নেয়ার প্রয়াস, নাকি ভারতীয় সংস্কৃতির বলত্কারের ফল - এ নিয়ে দেশ দু'ভাগ হলো। 

হারাধনের ফ্রেন্ডলিস্ট'ও দু'ভাগ হলো।  হারাধনের বন্ধু হলো সাড়ে ২টা। 

.
.
.
.
.
.
.
.

.

এই যে এত কথা বলা, এত চিন্তা করা,  এসব নেহায়েতই ত্যানা প্যাঁচানো, নাকি সচেতন মানুষের দ্বায়িত্ব - এ নিয়েও দু'ভাগ হয়ে গেল দেশ।  

হারাধনের ফ্রেন্ডলিস্ট'ও দু'ভাগ হলো।

হারাধন আবার একলা হয়ে গেল।

কত্তো মজা হলো!!!

হারাধন সব হারিয়ে বুঝতে পারলো - এই টুউউউউতের দুনিয়াতে আসলে একলা থাকাই ভালো। 

শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০১৪

চিরকুট

আজকে নাহয় শুধু ওদের কথাই বলি। 

চিরকুট নামে বাংলাদেশে একটা ব্যান্ড আছে। বছর দুই-তিনেক আগে যখন ওদের গান প্রথম শুনি, ভালো একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম।  নতুন ধরনের সাউন্ড, নতুন মিউজিক। একটা ব্যান্ডের সবকয়টা ডিপার্টমেন্ট সাধারনত ইকুয়ালি স্ট্রং হয় না, কিন্তু ওরা প্রত্যেকেই অসাধারণ। যেমন গিটার, তেমন ড্রামস; বেহালা, বাঁশি, ভোকাল - আমি মুগ্ধ হই প্রথম গান শুনেই। গানটার নাম "খাজনা"।  

সময়ের সাথে সাথে মুগ্ধতা বাড়তেই থাকে।  "জাদুর শহর", "কানামাছি", "একটা ছেড়া দিন" - একটার পর একটা অসাধারণ গান যুক্ত হতে থাকে ওদের নামের সাথে। প্রতিটা কনসার্ট বা টিভি লাইভে ওদের চেষ্টা থাকে, ছোট কিছু হলেও নতুন কিছু করার।  এবং ওরা সেটা করেও।  ওরা যে মিউজিক্যালি অনেক দক্ষ, সেটার প্রমান তারা অলরেডি দিয়ে দিয়েছে দেশী-বিদেশী তাবড়-তাবড় সব মিউজিশিয়ানদের সথে শো করে। সামান্য হলেও মিউজিকের সাথে জড়িত এমন কারো কাছ থেকে ওদের প্রতিভা সম্পর্কে আমি নেতিবাচক কোনো মন্তব্য শুনিনাই। 

ওদের কথা কেন এত বলছি? বলছি, কারণ, ওরা তো ওদের পার্টটা ঠিকমতই করছে, কিন্তু  আমরা কি আমাদের করণীয়টা ঠিকমত করছি? "আমরা" বলতে আমি অর্গানাইজার, মিডিয়া, ক্লায়েন্ট, সাধারণ দর্শক-শ্রোতা - সবার কথাই বোঝাচ্ছি।   

১. আমরা ওদের বড় বড় কিছু লোকাল শো দিতে পারি।  যেখানে ওদের প্রস্তুতির জন্য বেশি সময় এবং ভালো বাজেট দিতে পারি যেন তারা নতুন নতুন আইডিয়া ইনক্লুড করতে পিছপা না হয়। ওদের ট্যালেন্ট'এর প্রমান তো ওরা দিয়েই দিয়েছে, এখন ওদের এনকারেজ করতে হবে যেন ওরা আরো নতুন নতুন চমক নিয়ে আসতে পারে। 

২. এতে করে কি হবে? আমরা কখনো হয়ত দেখব একঝাঁক নতুন মিউজিশিয়ান তাদের সাথে শো করছে, নতুন নতুন ইনস্ট্রুমেন্ট নিয়ে।  আবার কখনো হয়ত দেখব সিনিয়র গায়ক-গায়িকারা তাদের সাথে নতুন ধরনের মিউজিকে গান গাইছে। একদিন হয়ত ওদেরও দেড়শ-দু'শো জনের দল হবে, যেখানেই যাবে স্টেজ মাতিয়ে আসবে। (যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি না যে স্টেজ মাতাতে বিশাল টিম থাকতেই হবে, তবুও সময়ের ট্রেন্ড দেখছি ভরা স্টেজ না হলে দর্শক মজা পায়না।)

৩. ওদের গান সিডি কিনে শোনা উচিত, ডাউনলোড করে না। ওদের কনসার্ট টিকেট কিনে দেখা উচিত, ফ্রি তে না।  

৪. ইন্টারনেট আর মিডিয়ার এই যুগে প্রতিভা কখনো লুকানো থাকেনা।  এক সাকিব আল হাসান যদি আইপিএল, বিগ ব্যাশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলংকার লিগ মাতিয়ে আসতে পারে, প্রপার সাপোর্ট পেলে চিরকুটও আইফা, গ্র্যামি বা অস্কারের স্টেজ কাঁপিয়ে আসতে পারবে। 

৫. ও হ্যা।  আরেকটা কাজ করতে হবে।  দেশে যখন বড় কোনো ইভেন্ট হবে, খেয়াল রাখতে হবে, বিদেশী শিল্পীদের সম্মান দেখাতে গিয়ে যেন ওদের অসম্মান না করে ফেলি। দেখেন, ইন্ডিয়াতে যদি পিঙ্ক ফ্লয়েড আর সনু নিগম একসাথে শো করে, ওরা কিন্তু সনু নিগমকে সবকিছু থেকে ফেলে দেয় না। যদিও, ওখানেও কিন্তু সবাই ফ্লয়েড দেখতেই মাঠে যাবে।  তবুও, যেহেতু সনু নিগম ওদের স্টার, তাই তাকেও কিন্তু তারা ঠিকই মাথায় তুলে রাখে। 

মোদ্দা কথা হলো, শিল্পীরা অনেক আবেগী হয়, সেই আবেগটাকে মুল্য দেয়া উচিত। কারণ, বিনিময়ে তারা আমাদের যা দেন, তা মূল্যহীন। 

---------

"এতক্ষণ ধরে এত চিরকুট চিরকুট করছেন ক্যান?
বাংলাদেশে আর কোনো ব্যান্ড নাই? কাহিনী কি ভাই? 
পয়সা খাইসেন নাকি?"

না ভাই, পয়সা খাই নাই। অবশ্যই আরো অনেক ভালো ব্যান্ড আছে, অনেক ভালো শিল্পীও আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি আতিফ আসলামের থেকে নেমেসিসের জোহাদ অনেক ভালো ভোকালিস্ট, আর্টসেলের মত ব্যান্ড যে কোনো দেশে গিয়ে সেখানকার অডিয়েন্সের মাথা নষ্ট করে দিয়ে আসতে পারে। এদের যে কাউকে নিয়েই লিখতে পারতাম। তারপরও চিরকুটকে বেছে নিয়েছি, তার অন্যতম কারণ হলো ওদের মিউজিকে অনেক বেশি বাংলাদেশীপনা আছে যেখানে অন্যরা অনেক বেশি ওয়েস্টার্ন স্টাইল ফলো করে। (ইদানিং একটু ভয়ে থাকি।  ওয়েস্টার্ন মিউজিকের প্রশংসা করলেও এখন হিপোক্রেট তকমা জুটে যায়!) আরেকটা কারণ হলো আমি অপেক্ষাকৃত নতুন কাউকে নিয়েই লিখতে চেয়েছি, যাদের উত্থান খুব বেশিদিন আগে নয়,  যাদের সামনে একটা সুন্দর ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে এবং যারা এখনো আশেপাশের নানান তিক্ততায় তাদের পূর্বসুরীদের মত পুরোপুরি হতাশ হয়ে যায়নি। 

সিনিয়রদের কথা বলব? অবশ্যই স্বাধীনতার পর থেকে নানান সময়ে আরো অনেকে আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে তাদের প্রতিভা দেখিয়ে মুগ্ধ করেছেন। নাম বলতে গেলে এই লেখাটার সাইজ উপন্যাসের সমান হয়ে যাবে, তাই নাম নিচ্ছি না। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা তাদের প্রতিভার যথাযোগ্য সম্মান আর মুল্য দেইনি। এবারও আমি "আমরা" বলতে ক্লায়েন্ট, অর্গানাইজার, মিডিয়া, দর্শক, শ্রোতা - সবার কথাই বলছি। এক কথায়, আমরা জাতিগতভাবে ব্যর্থ হয়েছি।  

দশ, পনের, বিশ বা ত্রিশ বছর আগে যেই ব্যান্ড বা সোলো সিঙ্গার আজকের চিরকুটের মত, বা চিরকুটের থেকেও বেশি প্রতিভা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল - আজকে তাদেরই কাউকে বিদেশী শিল্পিদের ভিড়ে স্টেজে উঠতে দেয়া হয় নি, কাউকে দর্শকপূর্ণ (তথাপি আগ্রহশূন্য) মাঠে হাততালির জন্য অভিমানী কথা বলতে হয়েছে, আবার কাউকে সেই সেইম-ওল্ড সিডি চালিয়ে ঠোঁট মেলানোর জন্যে নিজের দর্শকদের কাছেই গালি গুনতে হয়েছে।

এই অবস্থার জন্য পুরাপুরি দায়ী আমরা। কারো মাঝে ছোট্ট একটু প্রতিভার ঝলক দেখলে তাকে চারপাশ থেকে সাপোর্ট দিয়ে তার বেস্টটা বের করে আনতে হয়। আমাকে ভারতের দালাল বলে গালি দিতে পারেন, তবুও বলব, এটা ইন্ডিয়ানদের কাছ থেকেই আমাদের শেখা উচিত। একজন এ আর রহমানের আজকের তারকা হয়ে ওঠার পিছনে তার প্রতিভার পাশাপাশি ইন্ডিয়া অ্যাজ আ নেশন'ও অনেকাংশে দায়ী। 

আমি চিরকুটকে ওই চূড়াটাতে দেখতে চাই।  আমি চিরকুটের মত আরো অনেকগুলি ব্যান্ড, অনেকজন সিঙ্গার-কম্পোজার-মিউজিশিয়ান'কে দুনিয়া কাঁপাতে দেখতে চাই।

শেষ পর্যন্ত কে কতদূর পর্যন্ত যেতে পারবে, সেটা অবশ্যই সময় বলে দিবে। কিন্তু এটা আমি কোনোরকম সন্দেহ ছাড়াই বলে দিতে পারি, আমরা বর্তমানে যেভাবে আমাদের শিল্পীদের ট্রিট করছি, তাতে করে বারবার আমরা এভাবেই লজ্জিত, অপমানিত এবং ব্যথিত হতে থাকবো। কাঁদা ছোড়াছুড়ি আর একে অন্যকে হিপোক্রেট বলে গালাগালি না করে একটু হেল্প করেন না দেশের এই রত্নগুলিকে। 

সাকিব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হতে পারলে, ওয়াসফিয়া-নিশাত'রা এভারেস্টে উঠতে পারলে, ডক্টর ইউনুস নোবেল বা নাফিস-নাশিত'রা অস্কার জিততে পারলে বাংলাদেশের চিরকুট'রা গ্র্যামি বা একাডেমি এওয়ার্ডের মঞ্চ কাঁপাতে পারবেনা কেন? 

আমি তো বিশ্বাস করি পারবে। খুব শিঘ্রিই পারবে। 

বুধবার, ১২ মার্চ, ২০১৪

এ আর রহমান

"আজকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে!
আজকে একই স্টেজে প্রথমবারের মত লাইভ পারফর্ম করবে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সেরা সব তারকা !!!
এ আর রহমান
একন
রুনা লায়লা
সাবিনা ইয়াসমিন
কুমার বিশ্বজিত
মমতাজ
এল আর বি
মাইলস
অর্ণব এন্ড ফ্রেন্ডস
এবং আরো অনেকে ..."
--------------------
ব্যাপারটাকে সবাই এভাবে নিলেই খুশি হতাম। কিন্তু বাস্তবতা একদমই ভিন্ন।
সবার ভাব দেখে মনে হচ্ছে কালকে স্টেডিয়ামে কনসার্ট হবে শুধুই এ আর রহমান এবং একনের। (আমি ১০০% শিওর ৯৯% বাঙালি একনের একটা গান ছাড়া আর কোনো গান শোনেনি) ... ও হ্যা, সাথে আরো থাকছে বঙ্গদেশের কিছু "লোকাল শিল্পী"।
কনসার্টের টিকেট, ওয়েবসাইটের ব্যানার, সবার ফেইসবুক স্টেটাস'এ বাংলাদেশের মিউজিক লেজেন্ড'দের যেভাবে পুরোপুরিভাবে উপেক্ষিত করা হলো বা হচ্ছে, তা দেখে আমি ভীষণভাবে লজ্জিত এবং অপমানিত বোধ করছি।
এই কনসার্টের মূল আকর্ষণ এ আর রহমান সেটা আমিও জানি। কিন্তু এল আর বি, মাইলস, অর্ণব, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, মমতাজ বা কুমার বিশ্বজিতের মত লেজেন্ড'দের এভাবে কোথাও পুরাপুরি অদৃশ্য আবার কোথাও ছোট্ট বুলেট পয়েন্টে স্থান দেয়াটা আমার কাছে নিজেদের নির্লজ্জ লেজুরবৃত্তি, আত্মসম্মানবোধহীনতা, মানসিক দৈন্যতা এবং চরম বেহায়াপনারই বহির্প্রকাশমাত্র।
Damn it guys! They are not just some "লোকাল শিল্পী".
They are our stars, our heroes, our pride.
নিজেদের মানুষগুলিকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে এত কিপ্টামি কেন আমাদের???
আমাকে কনজার্ভেটিভ, পাতি-সেন্টিমেন্টাল বা যা খুশি বলে গালি দিতে পারেন, কিন্তু কিছুতেই মানতে পারছি না আমি ব্যাপারটা। স্যরি।

ডাক্তার

ভারী শরীরটা নিয়ে মোটামুটি দৌড়েই হাসপাতালে এসে ঢুকলেন ডাক্তার সাহেব। যখন দেখলেন লিফ্টটা তখনও ১১ তলা থেকে উপরের দিকে উঠছে, অপেক্ষা না করে সিঁড়িটাকেই বেছে নিলেন। 

হাঁপাতে হাঁপাতে ৩ তলার অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছলেন।  বিরক্ত মুখে সেখানে পায়চারী করছেন মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক। ডাক্তারকে দেখেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন তিনি। 

"কোথায় ছিলেন এতক্ষণ? আপনাদের কোনো সেন্স নাই? ওটি'তে আমার ছেলে মারা যাচ্ছে, আর আপনি এতক্ষণে আসলেন তামাশা দেখতে?" 

ডাক্তার মৃদু হাসি দিয়ে বললেন, "দেখেন, আমি হসপিটালে ছিলাম না।  খবর পাওয়ামাত্রই এক মুহূর্ত দেরী না করে চলে এসেছি। আপনি শান্ত হোন, আমরা আপনার ছেলেকে দেখছি।"

এ কথায় আরো খেপে গেলেন ওই ভদ্রলোক, "ফাইজলামি করেন মিয়া? শান্ত হবো আমি? আমার ছেলের জায়গায় আপনার ছেলে এক্সিডেন্ট করলে আপনি কি করতেন? শান্ত হয়ে বসে থাকতেন? বলেন? "

আবারও হাসিমুখে ডাক্তার জবাব দিলেন, "আপনি অনেক উত্তেজিত অবস্থায় আছেন, এবং কথা বলে আমাকেও দেরী করিয়ে দিচ্ছেন। আপনি ছেলের জন্য দোআ করতে থাকুন আর আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দিন।"

পেশেন্টের বাবা গজগজ করে ডাক্তারের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে থাকে। ডাক্তার সাহেব সেদিকে কান না দিয়ে ওটি'তে ঢুকে যান।  

----------------------

দেড় ঘন্টা পর হাসিমুখে ওটি থেকে বের হলেন ডাক্তার।  

"আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনার ছেলে এখন বিপদমুক্ত।  হি উইল বি ফাইন সুন। আপনার আর কিছু জানার থাকলে প্লিজ নার্সের সাথে কথা বলে নেবেন। আমার এখনি যেতে হবে। আমাকে ক্ষমা করবেন।" 

এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে ডাক্তার সাহেব সেখান থেকে চলে আসেন।  

-----------------------

ওটির দরজা খুলে নার্স বের হতেই তার উপর চড়াও হন ওই ভদ্রলোক - "এই ডাক্তারের প্রবলেম কি? ৫টা মিনিট দাঁড়িয়ে পুরা কথা শেষ করে গেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত তার? এইসব ডাক্তারের ডাক্তারি লাইসেন্স ক্যানসেল করে দেয়া উচিত।"

শান্ত গলায় নার্স জবাব দেন, "ডাক্তার সাহেব তার ১৬ বছরের ছেলেকে কবর দিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আপনার ছেলের এক্সিডেন্ট'এর খবর পেয়ে বাড়ির সবাইকে আটকে রেখে হাসপাতালে চলে এসেছেন। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, আলো থাকতে থাকতেই ছেলেকে মাটি দিতে চাচ্ছে সবাই। তাই আর দেরী করতে পারলেন না। ওনাকে মাফ করে দিয়েন। " 

[ঘটনাটা সত্যি নাকি মিথ্যা জানি না, তবে কোথায় যেন পড়েছিলাম এটা।  আজকে হঠাত মাথার মধ্যে উঁকি দিল]

শনিবার, ৮ মার্চ, ২০১৪

শদ্ধা ও সম্মান - সব নারীর জন্য

যদি আপনি একজন "পুরুষ" হয়ে থাকেন, আর আপনি যদি সত্যি সত্যি "নারী"র মহত্ব বুঝতে চান, তবে সন্তান জন্ম নেবার সময় আপনার স্ত্রীর পাশে থাকবেন।  

ইন ফ্যাক্ট, আমার তো মনে হয়, আমাদের দেশে নিয়ম করে ডেলিভারির সময় লেবার রুমে হাসব্যান্ডের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করে দেয়া উচিত। (যেটা বিভিন্ন দেশে অলরেডি বিদ্যমান) সেই মুহুর্তগুলো দেখার অভিজ্ঞতা হলে একজন সত্যিকারের পুরুষ জীবনে কোনদিন কোনো নারীকে অসম্মান করতে পারবে না। 

আমার দুই সন্তানই নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে জন্মেছে। প্রথমটার ক্ষেত্রে লেবার রুমে ঢোকার সুযোগ হয়নি।  কিন্তু দ্বিতীয়টার সময় সৌভাগ্য (!!!) হয়েছিল বৌএর পাশে থাকার। উপলব্ধি একটাই - আমি আমার বউ'কে এত কষ্ট পেতে আর দেখতে চাই না।  সারাজীবনে আমার বউ আমাকে যত পেইন দিয়েছে, দিচ্ছে এবং দিবে, সেগুলা কোনো পেইনই না; ওই পেইনের তুলনায়।  

আল্লাহর অশেষ রহমত, তিনি সন্তান ধারণ করার জন্যে নারী'কেই বেছে নিয়েছেন। পুরুষকে এই দায়িত্ব দিলে পৃথিবী অনেক আগেই মানবশূন্য হয়ে যেত :)

হৃদয়ের সবচাইতে পবিত্র স্থান থেকে প্রশ্নাতীত শদ্ধা ও সম্মান - সব নারীর জন্য। 

সোমবার, ৩ মার্চ, ২০১৪

ইফ বাংলাদেশ ইজ নট প্লেইং, নাথিং রিয়েলি ম্যাটারস

কলেজে পড়ার সময় এক ব্রিটিশ বন্ধু জুটেছিল আমার। এক বিয়েবাড়িতে পরিচয়, তারপর সে সপ্তাদুয়েক ছিল; আমরা একসাথে বেশ ঘোরাঘুরি করেছিলাম। 

ওকে একদিন জিগ্যেস করলাম, "দোস্ত, তুমি ব্রাজিল, নাকি আর্জেন্টিনা?"

দোস্ত অবাক হয়ে বলে, "আমি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা হতে যাব কেন? আমি ইংল্যান্ড।"

আমি বললাম, "ধুর ব্যাটা, ইংল্যান্ড কোনো জাতের টিম হইলো? বুঝলাম যে তুমি ইংল্যান্ডের সাথে অন্য কারো খেলা হলে ইংল্যান্ড। কিন্তু যখন ইংল্যান্ড'এর খেলা থাকে না, তখন তুমি কোন দল সাপোর্ট করো?"

ব্যাটা আরো অবাক, "আমি অন্য দল কেন সাপোর্ট করতে যাব? ইফ ইংল্যান্ড ইজ নট দেয়ার, নাথিং এল্স ম্যাটারস।"

মানে কি? ব্যাটা আমাকে ভূগোল পড়ায় নাকি !!! আমার কাছে তখন ফুটবল মানে হয় ব্রাজিল নাহলে আর্জেন্টিনা। ক্রিকেটে হয় ইন্ডিয়া নাহয় পাকিস্তান। কিছু ইতালি-জার্মানি-ওয়েস্ট ইন্ডিজ-সাউথ আফ্রিকা থাকতে পারে, কিন্তু ওরা তো বিকল্পধারা 

তাই সেদিন ওই ব্যাটা ব্রিটিশকে আমার চরম ভন্ড মনে হয়েছিল।

আজকে ওই দোস্তর ফিলিংসটা খুব ভাবভাবে বুঝতে পারি। ইন্ডিয়া হারলেই আমার কি, আর পাকিস্তান জিতলেই আমার কি।

ইফ বাংলাদেশ ইজ নট প্লেইং, নাথিং রিয়েলি ম্যাটারস।

শনিবার, ১ মার্চ, ২০১৪

পর্ন-এফএম

আপনাদের সাথে একটা চ্যাট কনভার্সেশন শেয়ার করতে চাই। 

এটা আমার এক ফেইসবুক বন্ধুর সাথে একজন আরজে'র চ্যাট কনভার্সেশন। তার অনুরোধে আমি এটা শেয়ার করতে চাই।  তারপর আপনাদের মতামত জানতে চাই।  আমি জানি, এফএম'গুলির সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই আমার লিস্টে আছেন। আশা করব, এ থেকে যদি নেয়ার মত কিছু থাকে, তাহলে সেটা খোলা মনে গ্রহণ করবেন। আর যদি আমাদের দুশ্চিন্তাটা অমূলক হয়, সেটাও আমরা সবার ফিডব্যাক দেখেই বুঝতে পারব। 

প্রশ্ন: ভাইয়া, তোমাদের প্রোগ্রাম নিয়ে কিছু বলার ছিল।  ভেবেছিলাম পোস্টে লিখব। কিন্তু মনে হলো তার আগে তোমাদেরকেই বুঝিয়ে বলি।  হোপফুলি তোমরা বুঝবা। ......

......তোমাদের প্রোগ্রামের বেশিরভাগ লিসেনারই হলো স্কুলের ছেলে-মেয়েরা। ইভেন ক্লাস ফাইভের বাচ্চারাও তোমাদের প্রোগ্রাম শোনে। তাদের মানসিক পরিপক্কতাটা অন্যরকম। এই বয়স থেকেই তারা মানুষ হওয়া শিখছে।  রেডিও অনেক বড় একটা গণমাধ্যম, আর গণমাধ্যমগুলিকে হতেই হবে নীতি-নির্ধারিত। কারণ, কোটি মানুষ তাদের কাছ থেকে শুনছে, তাদের অনুসরণ করছে। তুমি যখন কথা বলছ, খুব শালীন ভাবে দুষ্টামি করছ, ভালোও লাগছে। কিন্তু শনিবার ***** ভাই যখন আসে তখন উনি কিছু এডাল্ট কৌতুক বলেন, ইভেন ফোন'এ কথা বলার সময় বাচ্চা মেয়েদের উনি স্বামী-স্ত্রী বা সানি লিওনের গল্প শোনান।  এগুলো কি ঠিক? তোমরা যে ফানগুলো করছো, সেগুলো খুবই মজার।  জাস্ট এই কয়টা ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখবা। তোমরা এখন সেলেব্রিটি, তোমাদের রেসপনসিবিলিটি অনেক। হোপফুলি আমার কথায় ভুল বুঝবা না এবং ভেবে দেখবা

আরজে'র জবাব: মেইন থিং ইজ, আমরা যে শো'টা করি, তা ১৮+ দের জন্য। সো, বাচ্চারা শুনলে তার দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে।  সি, ফর অ্যান এক্স্যাম্পল, বিভিন্ন পর্ন সাইটে ফ্রি পর্ন দেখা যায়।  ঐটাও ১৮+'দের জন্য। কিন্তু কোনো পিচ্চিরা যদি তা দেখে তা টোটালি ওর ব্যাপার। অনেস্টলি, আমরা বেবি'দের জন্য শো করি না।  

এরপর তাদের মধ্যে আরো কথাবার্তা চলে, আমার বন্ধু নানা যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু আরজে ভদ্রলোক তার যুক্তিতেই অটল থাকলেন। 

এবার আমার কনসার্নগুলো বলি:

১।  এটা যদি শুধুই আরজে ছেলেটার বক্তব্য হয়ে থাকে, তাহলে অতটা ভয়ের কিছু নাই। ম্যানেজমেন্ট ওকে একটু বুঝিয়ে বললেই আমার ধারণা সে ব্যাপারটা বুঝতে পারবে। আঙ্গুল সোজা করে বুঝাবে নাকি ব্যাঁকা করে, সেটা ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার।  কিন্তু এটা যদি এফএম স্টেশনটার মুরুব্বিদের বক্তব্য হয়ে থাকে, তাহলে চিন্তার অনেক কারণ আছে।  কেউ লাইসেন্স নিয়ে একটা পর্ন-এফএম চালালে, আমার মত একজন সচেতন বাবার কিছুটা ভয় তো পাবারই কথা।  

২।  আরজে সিলেকশনের সময় সে কতটা ক্রিয়েটিভ বা মজার সেটা দেখার পাশাপাশি, তার এথিক্স, মানসিক পরিপক্কতা এবং দেশের কালচারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধটাও যাচাই করা দরকার। যে আরজে বাংলাদেশের একটা এফএম স্টেশন আর একটা ফ্রি পর্ন সাইটের পার্থক্য বোঝে না, ও যত ক্রিয়েটিভই হোক, আমার কাছে ও একটা অ্যাবসোলিউট ছাগল, বা বিগটাইম টুউউউউত।  

৩। ইচ্ছা করেই আমি এবার স্টেশন আর আরজের নাম উল্লেখ করলাম না।  যাদের বোঝার, তারা ঠিকই বুঝেছেন যে আমি কোথায় ইঙ্গিত করছি। আপনারা অডিও-পর্নবাজি বন্ধ করবেন নাকি চালিয়ে যাবেন, সেটা তো আপনাদের পরবর্তী এপিসোডগুলো শুনলেই বুঝতে পারব।  

কথা দিচ্ছি, যদি ভুলটা বুঝতে পেরে প্রোগ্রাম কন্টেন্ট শালীন করে ফেলেন আপনাদের নাম-ধাম গোপনই থাকবে। আর যদি তারপরও বাচ্চা ছেলেমেয়েদের সাথে অশ্লীল কথাবার্তা চালিয়ে যান, তাহলে আর কি? আমাদের তো আর বিশাল ক্ষমতা নাই।  বড়জোর আপনাদের নাম-ধাম প্রকাশ করে আপনাদের আরেকটু পপুলার করে দিতে পারব, এই যা:)  

*** আপনাদের কমেন্ট আর শেয়ার ওনাদের কানে কথাটা পৌঁছে দিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারে।  

ব্যাপার না, নেক্সট টাইম হয়ে যাবে

হুমমমমম, বুঝলাম। একটা নতুন জিনিস শিখতে হচ্ছে এবার। 

এখন শিখতে হচ্ছে আশাহত হওয়ার কষ্ট সহ্য করার বিদ্যা। 

আমরা শুধু আন্ডারডগই থাকতাম আগে।  যেকোনো টুর্নামেন্ট খেলতে গেলে হারাবার কিছু থাকত না আমাদের। রং মেখে, বাঘ সেজে, গলা ফাটিয়ে সাপোর্ট করতাম দলকে।  জিতলে রং-খেলা, মিছিল, পাগলামি।  হারলে - ব্যাপার না, নেক্সট টাইম হয়ে যাবে।  

গত এশিয়া কাপ এবার বেশি স্বপ্ন দেখিয়ে ফেলছিল। তার উপর ছিল আফগানিস্তান। ভেবেছিলাম এবার ফাটিয়ে ফেলবে পাগলাগুলি। 

যাই হোক, হলো না এবার। 

দীর্ঘশ্বাসটা থাকবে কিছুদিন।  চাপ চাপ কষ্ট হবে।  মেজাজ খারাপ হবে।  বিভিন্ন আড্ডায়, মিটিঙে, দাওয়াতে মনের সাধ মিটিয়ে ছেলেগুলিকে গালাগালি করব।  তারপর আবার আশায় বুক বাঁধব। এছাড়া আর কিই বা করার আছে আমাদের! 

লেটস বি পজিটিভ। ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবলে ব্রাজিল প্রতিবারই ফেভারিটের তালিকায় থাকে, প্রতিবার কি আর চ্যাম্পিয়ন হয়? মাইটি ইন্ডিয়াকেও তো ফার্স্ট রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে হয়েছে বাংলাদেশের মত পুঁচকে টিমের কাছে হেরে।  আমাদের কাছে ক্রিকেট যেমন, ব্রাজিলের কাছে কিন্তু ফুটবল তেমনই।  ইন্ডিয়া-পাকিস্তানেও কিন্তু ক্রিকেটে হেরে যাওয়ার পর গণ-মাতম লাগে; আমাদের মতই।  

চলেন, ফাটিয়ে গালি দেই। মন হালকা করি। স্বীকার করি আর না করি, মনে মনে সবাই স্বপ্ন দেখি - কিছু একটা মিরাকল হবে, আমরা শেষ দুই ম্যাচে পাকিস্তান আর শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালে যাব।  তারপর ফাইনাল জিতব।  

না হলেই বা কি? ইন্ডিয়া-পাকিস্তান আছে না! ওদের গালি দিয়েও কি কম সুখ নাকি? 

সবকিছুর মূলে কিন্তু এই ক্রিকেট আর এই টগবগে ছেলেগুলি। এখানেই যে আমাদের সব স্বপ্ন জমা। 

শেষ কথা কিন্তু একটাই, আগের মতই - ব্যাপার না, নেক্সট টাইম হয়ে যাবে।