সোশাল মিডিয়া আর একটা আপাদমস্তক গর্বিত রসিক জাতি
এক রকম খবর:
১: পত্রিকায় ছবিসহ খবর ছাপা হলো ছাত্রলীগের কোনো এক পাতি নেতা অস্ত্র নিয়ে শোডাউন করছে। ছবি ছাপা হওয়া সত্তেও পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না!
২: ট্রাফিক সিগনালে রুগীসহ এম্বুলেন্স আটকে আছে, প্রধানমন্ত্রী আসতে আরো বাকি মিনিমাম দশ মিনিট। আগে পিএম যাবেন, তারপর রুগী। রুগী'র জীবনের দাম কি পিএম'এর সময়ের দামের চাইতে বেশি নাকি?
৩: ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনা বিডিয়ার হত্যাকান্ড। এত নাটকের পর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ৭ বছরের কারাদন্ড!
৪: তারেক মাসুদকে চাপা দিয়ে মেরেই ফেলল একটা বাস, ড্রাইভার'এর কি শাস্তি হয়েছিল, জানি কি? শুধু ড্রাইভারকে শাস্তি দিলেই কি লেঠা চুকে গেল? আরেক তারেক মাসুদ যে মরবে না, সেই বেপারে কি কোনো পদক্ষেপ নেয়া হলো?
৫: সাগর-রুনি'র লাশ আর কয়বার কবর থেকে তোলা হবে, এ প্রশ্ন বরই হৃদয়বিদারক; কিন্তু একদমই কি অবন্তর?
৬: বাই দা ওয়ে, ১ নম্বর খবরের ওই ছাত্রলীগের নেতাকে কিন্তু খুঁজে পাওয়া গেছে, রাজশাহীর পুলিসের ডিসি সাহেবের সাথেই, হসপিটালের বিছানার পাশে, আরেক নেতাকে দেখতে গিয়েছিলেন তারা এক সাথে!
এবার আরেক রকম খবর:
১: নাটকের এক নায়িকার সাথে নাকি তার পুরানো প্রেমিক'এর গরম ভিডিও বের হয়েছে।
২: সিনেমার এক নায়ক নাকি ভুল উচ্চারণে কিছু লোক-হাসানো কথা বলেছে। পিজা হাট'এ নাকি এক গ্রুপের সাথে গরম গরম তর্কাতর্কিও হয়েছে।
৩: শহরের অভিজাত এক বিউটি পার্লারে নাকি গোপন কামেরার সন্ধান পাওয়া গেছে।
৪: টিভি চ্যানেল মালিকের শরীরে নাকি কোনো ডি এন এ নাই।
৫: আমাদের সবচাইতে বিখ্যাত কথাসাহিত্তিক বেক্তিটির মৃত্যুর জন্য নাকি বর্তমান স্ত্রী দায়ী; তার সাথে নাকি আবার কোন প্রকাশকের গোপন প্রেমও চলছে।
দ্বিতীয় দলের খবরগুলো কত্ত জনপ্রিয় তাই না? কি অসাধারণ এবং ইম্পর্টান্ট সব ইসু! ফেইসবুক'এ লক্ষ্ লক্ষ লাইন লেখা হয়ে গেছে এই খবরগুলোকে নিয়ে। হবে নাই বা কেন, এগুলা তো পিওর এন্টারটেইনমেন্ট। আমরা বোকা জাতি এটাও বুঝি না যে এই দ্বিতীয়সারির খবরগুলির চাপে প্রথম সারির খবরগুলো হাসফাস করছে। যত লক্ষ শব্দ ওই নায়িকার চরিত্র বিশ্লেষণে ব্যয় হলো, বাজি ধরে বলতে পারি, তার শত ভাগ'এর এক ভাগ তারেক মাসুদের মৃত্যু নিয়ে হলে ট্রাফিক আইনে কিছুটা পরিবর্তন আসতো। যত সহস্র ছবি ফেইসবুক'এ শেয়ার হল সিনেমার ওই বেচারা নায়ক'কে অপদস্থ (মতান্তরে জনপ্রিয়) করতে, তার সহস্র ভাগ'এর এক ভাগ ছবি শেয়ার হলে ওই হারিয়ে যাওয়া নেতা এখন চোদ্দ শিকের আড়ালে থাকত। ফেইসবুক'এ নাকি এখন ৫০ লক্ষ বাংলাদেশী। এত বড় জমায়েত হবার মত কোনো পল্টন ময়দান আছে বলে তো জানা নাই আমার। মুর্খও এখন জানে "সোশাল মিডিয়া" নামক একটা জিনিস আছে, শুধু এই ৫০ লক্ষ মানুষ'এর সিংহভাগ'ই জানে না এই মিডিয়ার জোর কতখানি। পৃথিবী জুড়ে একের পর এক উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে কেমন করে সোশাল মিডিয়াকে ঠিক মত ব্যবহার করে বিপ্লব ঘটানো যায়, আর আমরা শুধু দুষ্টামি'ই করে যাচ্ছি। যা নিয়ে কথা বললে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে সেসব নিয়ে আমরা কিছুদিন নিজেদের মধ্যে তর্কাতর্কি করি, তারপর ফুরুত করে ভুলে যাই। ঘানা নাকি গানা, সেই তর্কের তো কোনো শেষ দেখতে পাই না! নিকট ভবিশ্সতে দেখব বলেও আশা রাখি না।
বোকার মত বলব না যে চলেন সবাই বিদ্রোহী হয়ে যাই, দিন-রাত ২৪ ঘন্টা খালি অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। এটা সম্ভবও না। কিন্তু সবসময় কি খালি হালকা ইসু নিয়েই থাকব আমরা? বড় বড় ঘটনাগুলি এভাবেই চোখের আড়ালে হারিয়ে যেতে থাকবে? এটা একটা কথা হলো?
প্রতিনিয়ত নিজেকে জোকার প্রমানের কি অক্লান্ত প্রয়াস আমাদের! কে নাই সেই দলে? দেশের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সবাই আমরা সেই "এসো বোকা সাজি" মিছিলের যাত্রী। ফেইসবুক'এ তর্কের তুবড়ি ছোটাই , আর ওদিকে প্রভার তোষকের নিচে চাপা পরে যায় তারেক মাসুদ'এর লাশ। মাহফুজ সাহেবের ডিএনএ-হীন শরীরের মুখরোচক গল্পে হারিয়ে যায় সাগর-রুনি'র কবর খুরে বের করা ডিএনএ পরীক্ষার রেসাল্ট। ও, ভালো কথা, প্রধানমন্ত্রী কিন্তু আগামীকালও সাইরেন বাজিয়ে গাড়ির বহর নিয়ে ছুটবেন, আর সিগনালে দাড়ানো এম্বুলেন্স'টা হঠাত করেই বদলে যাবে আঞ্জুমান মুফিদুল'এর লাশবাহী গাড়িতে। তখন কিন্তু আফসোস করবেন না।
অনেকটা সময় নষ্ট হলো এইসব আতেল টাইপ কথা পড়ে। লেটস ফাইন্ড আউট, নতুন ফান কি আছে "সোশাল মিডিয়ায়"? ওহ হো; এত খোজাখুজির কি দরকার? এই লেখাটাই শেয়ার মেরে দিন না, আমি শিওর, আমরা যে লেভেলের রসিক, এত বড় একটা লেখা থেকে কিছু না কিছু রসের আইটেম ঠিকই বের করে ফেলতে পারব। কি বলেন?
[Written in 11-11-12]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন