শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৩

ক্রিকেটাবেগ

ক্রিকেটাবেগ 


১। আমি সাধারণত বাংলাদেশের খেলা দেখতে স্টেডিয়াম'এ যাই না; যতবার গেছি ততবার হেরেছি। এই তালিকায় শেষ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিস'এর সাথের ভয়ংকর ম্যাচ'টাও আছে। বাংলাদেশ যদি বাজে ভাবে হারে, আমি বাসায় ফেরার সাথে সাথে আমার মেয়ে রাগ রাগ চেহারা নিয়ে জেরা করে "বাবা, সত্যি করে বল তো তুমি মাঠে গেসিলা কিনা?" 
২। আমার বাসায় দুইটা টিভি; একটা বড়, আরেকটা ছোট। আমি বড় টিভি'টাতে কখনো বাংলাদেশের খেলা দেখি না। ছোটটা'তে দেখলে আমরা জিতি। 
৩। অফিস'এ কাজের ফাঁকে ফাঁকে ক্রিক-ইনফো'তে খেলা ফলো করছি, বাংলাদেশ ভালো খেলছে, কনফারেন্স রুম থেকে মহা হইচই'এর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি - সবাই টিভি'তে খেলা দেখছে। আমি সাধারণত ওই হইচই'এ যোগ দেই না। বেশির ভাগ সময় আমি যোগ দেয়ার সাথে সাথেই আমাদের একটা উইকেট পড়ে। 
৪। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে প্ল্যান করে আমি বাংলাদেশের খেলা দেখি না। যতবার দেখেছি, ততবার হেরেছি। একা একা ঘরে বসে খেলা দেখলে জিতি; জেতার পর সবার সাথে সেলেব্রেট করতে যাই। 

আজকে Javed Kaisar-এর স্টেটাস'টা দেখে ভাবনাটা মাথায় আসল। আমাদের সবারই নিশ্চয়ই এমন কোনো না কোনো কু-সংস্কার আছে। কাউকে হয়ত কখনো বলা হয়  না, কিন্তু বাংলাদেশকে জেতানোর জন্য আমরা গোপনে এসব ঠিক'ই মেনে চলি। একটা ছোট বই বের করলে কেমন হয়? পকেট বুক?  ক্রিকেট'এর জন্য আমাদের সবার এই আজব ভালোবাসাগুলোকে এক জায়গায় লিখে রাখতে। ১৫/২০ কপি ছাপিয়ে ফেলবো, তারপর সাকিব-তামিম-মুশফিক'দের গিফট করব। 

শোনাবেন নাকি আপনার পাগলামির কিছু নমুনা? 

শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০১৩

বাচ্চু ভাই

বাচ্চু ভাই




মানুষ এত খারাপ কিভাবে হয়?

বাচ্চু ভাই সংক্রান্ত স্টেটাসটা দেয়ার পর ১০ মিনিট'ও কাটে নাই। ফেইসবুক'এর মেসেজ'এ এক জ্ঞানী নক করলো। সেদিনের ছেলে। কিন্তু বিশাল মার্কেটিং - ব্র্যান্ডিং এক্সপার্ট। বিদ্যার জাহাজ। "বস, বাচ্চু ভাই'কে নিয়ে আগে থেকেই একটা অ্যাড বানিয়ে রাখেন। ধরেন, একটা কালো রং'এর গিটার, সাথে হেডলাইন, রুপালি গিটার আজ কালো হয়ে গেল ... বুঝলেন না? ইনশাল্লাহ উনি ঠিক হয়ে যাবেন, তারপরও বলা তো যায়না, হায়াত-মৌত আল্লাহর হাতে। রেডি হয়ে থাকলেন, এই আর কি।"

আমি না ঠিক বুঝে উঠতে পারি নাই, হারামজাদা বলে কি? তার উদ্দেশ্য কি? মানুষ এভাবে চিন্তা করতে পারে? একবার ভাবলাম শালারে সাথে সাথে ব্লক মেরে দেই আর কালকেই ওর বস'কে মেসেজটা কপি-পেস্ট করে পাঠাই। বস'কে ইমেইল অবশ্শই করব। ব্লক করার চিন্তা'টা একটু ভেবে বাদ দিলাম। কারণ ওরে যে আমি হারামজাদা, কুত্তার বাচ্চা, শুওরের বাচ্চা বলে গালি দিব, ঐটা তো ও ব্লক করলে দেখতে পাবে না।

ভাই আমার, তখন মেসেজ'এর জবাব দেই নাই, এখানে দিলাম, খুশি হইসেন? লজ্জা থাকলে মাথা'টা নিচু করে চুপ করে বসে থাকেন আর ইয়া নফসি ইয়া নফসি করেন। মাথাটা আরেকটু গরম হলেই আপনার সোনার টুকরা নামটা এখানে পেস্ট করে দিব।

হারামজাদা।


[Written on: November 30, 2012]

তখন কোথায় ছিলেন আপনারা?


তখন কোথায় ছিলেন আপনারা? 



মরলো সুনীল. অনেক মানুষ স্টেটাস দিল, ব্যস, শুরু হয়ে গেল অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি. "হুমায়ুন আহমেদ'এর সময় তো মানুষ এতবার চোখ'এর পানি ফেলে নাই", "পশ্চিমবঙ্গ কি আমাদের হুমায়ুন মরা'র পর এত মাতম করসিলো, যে ওদের সুনীল মরলে আমাদের করতে হবে? তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? যত্তসব আদেখ্লামি". 
বৌদ্ধ মন্দির পুড়ল. সুস্থ বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ফেইসবুক'এ এ নিয়ে দুঃক্ষ প্রকাশ করলো. কেউ কেউ প্রোফাইল পিকচার কালো করলো. "কেন? মায়ানমার'এ যখন মুসলিমদের উপর অত্যাচার হলো, তখন কোথায় ছিলেন আপনারা?" "হিন্দুদের মন্দিরও তো কত ধংশ হলো, তখন তো এত কথা শুনি নাই!"

footballer জয় পিস্তল নিয়ে ঢুকে গেল মাঠে, পত্রিকায় ছবি ছাপা হলো. উনি প্রেস কনফারেন্স করে ক্ষমা চাইলেন. এবং তারপরই করে বসলেন মোক্ষম প্রশ্নটি, "অতীতেও তো বাফুফের কত জন খেলার সময় মাঠে ঢুকেছেন, তাদের নিয়ে তো টু শব্দটাও শুনি নাই, তখন কোই ছিলেন আপনারা?"

ছাত্রলীগ'এর "হারিয়ে যাওয়া ধন" আখতারুজ্জামান তাকিম হঠাত উদয় হলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ'এ. কি আজব!!! পত্রিকার ছবিতে দেখা গেল, সাথে স্বয়ং পুলিশ'এর dc মহোদয়, যার সুযোগ্য দলবল নাকি গরু খোজা করেও তাকিমকে খুঁজে পাইনি. ভুলেও কিন্তু প্রশ্ন করতে যাবেন না. উত্তর পেতে পারেন "ছি ছি ছি, এমন প্রশ্ন আপনাদের মত শিক্ষিত মানুষদের কাছ থেকে আশা করি নাই. সামান্য একজন cadre এর সাথে ছবি উঠেছে বলে প্রশ্ন করলেন ভাই? এর আগে কত্ত বড় বড় খুনি, রেপিস্ট, ঋণখেলাপির সাথে ছবি তুললাম, তখন কোথায় ছিলেন আপনারা এই প্রশ্ন নিয়ে? ছিঃ!!"

ইলিয়াস আলী গুম হলেন, সরকার বলল, "সো what? আগের সরকার'এর সময় যে পল্টন'এ বোমা মারলো, নেতা-নেতাকর্মী মারা গেল, সেটার জবাব কি? ছিলেন কোথায় তখন সবাই? হুমমম??"

যেকোনো আকাম করলে ইনশাল্লাহ আমাদের আর কোনো চিন্তা নাই. এই এক সর্বরোগ'এর মহৌষধ প্রশ্ন নিয়ে আমরা খালি অতীতে চলে যাব. ১/১১, ৯১, ৮১, ৭৫, ৭১, ৫২, ৪৭ এই করতে করতে একদম বিগ bang থীয়রিতে ধাক্কা খাব. সামনের দিকে তাকানোর কোনই প্রয়োজন নাই. আমরা এই করতে করতেই একদিন কব্বরে চলে যাব, সবাই বলেন "ইনশাল্লাহ".

হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন করতে পারেন, "ওহে মানবসন্তান, তোমাকে তো কোনো ক্যালকুলেশন'এই জান্নাত গিফট করতে পারছি না, জাহান্নাম'এর অবস্থা যদিও খুবই crowded তারপরও দেখি ওখানেই তোমার কিসু না কিসু একটা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি"....

"মানে কি??? এইটা কি বললেন??? পুরা লাইফ'এ দেখা দিলেন না একবার'ও, প্রথম দেখা'তেই জাহান্নাম'এর অর্ডার? পুরাই তো partiality কেস. নবী-রাসুলদের সময় কত্তবার দেখা দিসেন, সাগর দুই ভাগ করে দেখাইসেন , এক কলসি পানি পুরা গ্রামবাসীরে খাওয়াইসেন, আরো কত্তরকম তেলেসমাতি দেখাইসেন. আমাদের আমলে কই ছিলেন??? এইটা কোনো বিচার হইলো???"

[প্রথমবার ফেইসবুক এ বাংলায় লিখলাম. ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি]



Written on: October 23, 2012


ডিজিটাল হিংসামি

ডিজিটাল হিংসামি





জয়ীকে নিয়ে কিছুটা টেনশনে ছিলাম, জীয়নকে আদর করতে দেখে মেয়ের যদি মন খারাপ হয়! ছোট ভাই-বোন জন্মানোর পর বড়টার এই ধরনের কমপ্লেক্স খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু জীয়নের প্রায় সাত মাস বয়সে আল্লাহর রহমতে জয়ীর মধ্যে আদর-সংক্রান্ত কোনো হিংসা বা ঈর্ষা একদমই দেখি নাই, বরং কোনদিন ছেলেকে ঠিকমত সময় না দিলে মেয়েই আমাকে কথা শোনায় সবচেয়ে বেশি।

কিন্তু ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল ছেলেপেলের সমস্যাও যে ডিজিটাল, এটা আজকে প্রমানিত হলো। ফেসবুকে ছেলে আর মেয়ে, দু'জনের দু'টা ছবি আপলোড করলাম, মেয়ে মহা খুশি। জীয়নের ছবি দেখে জয়ী "awww, কি কিউট, মনে হয় গাল দুইটা খেয়ে ফেলি" টাইপ অনেক কিছু বলে ফেললো, তখনও এনালগ বাপ ডিজিটাল প্রবলেম ধরতে পারে নাই, একটু পর পর মেয়ে খালি বলে "বাবা, দেখো তো কোন ছবিতে কয়টা লাইক পড়ল?" ছেলের ছবি'তে ৭৯ লাইক, মেয়েরটাতে ৫৭ .... শুরু হলো মনে হই ডিজিটাল হিংসামি ... বোঝো ঠেলা এখন!!!

বন্ধুরা, যদি লাইক দিতেই চান , দয়া করে দুই ছবিতেই লাইক দিয়েন। ছেলে এখনো লাইক'এর মামলাটা বোঝে না, তাই ওরটাতে না দিলেও ক্ষতি নাই, কিন্তু ভাই, মেয়ের'টাতে না দিয়ে আমাকে বিপদে ফেলবেন না।

প্রজেক্টর

প্রজেক্টর



দিন কাল বেশ খারাপ। ব্যবসা হলুদ আর কমলা বাত্তির মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করছে, পরবর্তী গন্তব্য লালে। এমন সময়গুলিতে ফোন আসলেই আশায় চোখ চকচক করে ওঠে। সকালে দাত ব্রাশ করছি, দেখি আননোন নম্বর থেকে ফোন, মুখের পেস্ট বেসিনে ফেলে ইংলিশ ইংলিশ ইস্টাইলে বললাম "হেআয়্লো"; "রাজীব হাসান চৌধুরী বলছেন" - বেশ স্মার্ট কন্ঠস্বর। আমি মোটামুটি ৭০% শিওর এটা একটা ক্লায়েন্ট-রুপী ফেরেশতার ফোন। "জ্বি, বলছি, কে বলছেন?" - আমি ততক্ষণে আরো ইংলিশ। "আমি মেজবা (আসল নাম ভুলে গেছি), এক্স-ওয়াই-জেড টেকনোলজিস (এইটাও ভুলে গেছি) থেকে বলছি"... আহা, আমি ৯৫% শিওর একটা বড়সর ইভেন্ট করতে চাইবে এখন। গদগদ হয়ে প্রশ্ন করলাম "জ্বি, কিভাবে হেল্প করতে পারি আপনাকে?" "ভাই, আপনারা প্রজেক্টর ভাড়া দেন?"
.
.
.
.
.
মাইরালা, আমারে পুরাই মাইরালা।


Written on: 20 Februray 2013

সিরিয়াস কিছু কথা


সিরিয়াস কিছু কথা সিরিয়াস ভাবে বলতে চাই; 


গত এক মাসে আমরা প্রমান করতে পেরেছি, যে কোনো বিষয়ের মধ্যে হাস্যরস খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে আমরা অতুলনীয়। রাজাকারের ফাঁসি, জামাত-শিবিরের মত একটা ঘৃণিত, ভয়ংকর "রাজনৈতিক" দলকে নিষিদ্ধকরণ, দেশব্যাপী হামলা, বৃদ্ধ-শিশু-পুলিশ-রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যু, মন্দির পোড়ানো, চরম রাজনৈতিক সংকট ইত্যাদির মত প্রচন্ড সিরিয়াস ইস্যু থাকার পরও আমাদের আলোচনার মুখ্যভাগ জুড়ে কি থাকছে? চাঁদে সাইদীর মুখ নিয়ে ফান, টক শো'তে দুদু, মনিসহ বেশির ভাগ নেতার অপ্রকিতস্থ বক্তব্য নিয়ে ফান, বেলুন উড়িয়ে প্রতিবাদ নিয়ে ফান - না জানি আরো কত কিছু। আমরা প্রধান বিরোধীদল নেত্রীকে এখন "গোলাপী" বা "পিঙ্কি" ছাড়া অন্য নামে ডাকিনা, সাইদীর ফানি নামের লিস্ট লম্বা থেকে লম্বাতর হচ্ছে তো হচ্ছেই। আমরা এত ফানি কেন? মানুষ মরছে, ঘর জ্বলছে, দেশ দুই ভাগ হয়ে যাচ্ছে - এর মধ্যেও এত রস আমরা কেমনে খুঁজে পাচ্ছি?

সবার স্ট্যাটাস'এ রস, সেন্স অফ হিউমারের ছড়াছড়ি, কে কত বেশি কাতুকুতু দেয়া কথা বলতে পারি, তার প্রতিযোগিতা চলছে। ভন্ডামি করছি না, আমার শেষ স্ট্যাটাস'গুলি দেখতে পারেন, আমিও একই কাজ'ই করেছি। কিন্তু লেবু বেশি কচলালে তিতা হবেই; আর ভালো লাগছে না। শাহবাগ'ও এই একই খেলায় যোগ দিয়েছে ইদানিং; তাদের কথা-বার্তার মাঝেও রসের আতিশয্য। টক শো গুলিতে যারা আসছেন তারা তো একেকজন বিশাল ভাঁড় - প্রাসঙ্গিক কোনো প্রশ্নের উত্তর তারা দেবেন না, ময়লা দাঁত বের করে নির্লজ্জের মত হাসি দিয়ে একটা সস্তা, ফালতু কথা বলবেন - গা রিরি করে এখন দেখে; আরে শালা মানুষ মরছে দেশে!!!

শাহবাগ এখনো আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু, বিশাল আশাহীনতার অন্ধকারে একটু আলো শাহবাগ'ই জ্বালিয়েছিল; আগুনটা মনে হয় আর ঠিক ভাবে জ্বলছে না। জামাত আমার সাথে ফাইজলামি করছেনা, আমাদের রগ কাটতে ওদের হাত এতটুকুও কাঁপবে না - যেমন কাঁপে নাই ওই পুলিশ ভাইদের পিটিয়ে বা রাজিবকে কুপিয়ে মারতে। সাইদীর চাঁদের ছবির গুজব ওরা ফাইজলামি করতে ছড়ায় নাই, ওরা খুব ভালো মত জানত এই গুজবের পর সাধারণ ধর্মভীরু জনগোষ্ঠির রিয়াকশন কি হবে, আর প্রগতিশীল যুবসমাজের রিয়াকশন কি হবে। আমাদের মত "বুদ্ধিমান"দের হাতে ললিপপ ধরিয়ে দিয়ে সেটাতে ব্যস্ত রাখতে ওরা সুপার পারদর্শী। আজকে তো আর এটা প্রথম দেখছি না!

কিছু সিরিয়াস দিকনির্দেশনা আশা করছি; রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তি যেন হয় তার একটা একটা প্রাকটিক্যাল সল্যুশন দেখতে চাই, রাজনৈতিক যে সংকট আজকে তৈরী হয়েছে তার সমাধান ফাইজলামি বা সেন্স অফ হিউমার দিয়ে হবে না - এটার জন্য কুটনৈতিক চিন্তাধারার প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ রঙ্গরসে মেতে থাকতেই পারে, কিন্তু যারা নেতৃস্থানীয় জায়গায় আছেন তারা দয়া করে এই খেলায় যোগ দেবেন না। গণজাগরণ মঞ্চ, সরকার, বিরোধীদল, সুশীল সমাজ, কূটনীতিবিদ - সবাই মিলে দয়া করে সিরিয়াস কিছু ভাবুন।

আপনাদের আমরা নায়ক ভাবতে চাই, সস্তা কমেডিয়ান না।

(আমি দুঃখিত যদি এই লেখার মধ্যেও আমি নিজের অজান্তে কোনো সস্তা মজা করে থাকি। গত কয়েকদিনে আমরা বোধহয় সিরিয়াস ভাবে কোনো কথা বলাই ভুলে গেছি)


Written on: March 05, 2013

সাদা-মিথ্যা

সাদা-মিথ্যা



১।
ছুটির দুপুরে শুয়ে শুয়ে মেয়েকে মোরাল শিখাচ্ছি - কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়ের মা ঘরের কাজে ব্যস্ত। কাজের ফাঁকে ঘরে ঢুকে এক কাপ চা মেঝেতে রেখে গেল; পারফেক্ট ছুটির দুপুর। গল্পের ফাঁকে মেয়ে বিছানা থেকে নামতে গেল। পা'এর ধাক্কায় চা-ভর্তি কাপ ভেঙ্গে টুকরা টুকরা। মেয়ের মুখ পুরা পাংশু। মা'এর প্রবেশ; আমার ঝটপট স্বীকারোক্তি "খেয়াল করি নাই রে ভাই, খাট থেকে নামতে গিয়ে আমার পা'এ লেগে ভেঙ্গে গেসে, সরি।" বউ'এর চোখে মুখে বিরক্তি; কিছু না বলে প্রস্থান। মেয়ের চোখে রাজ্যের বিস্ময়, ফিসফিস প্রশ্ন "বাবা, মিথ্যা কথা বললা ক্যান? ভেঙ্গেছি তো আমি!" নরম সুরে মেয়ে'কে বোঝালাম "মামনি, এগুলা'কে বলে সাদা মিথ্যা, একটা সাদা মিথ্যা কথায় যদি কাউকে বাঁচানো যায়, তাহলে তাতে অন্যায় হয় না। বুঝতে পেরেছিস?" মেয়ের চোখে মুগ্ধ দৃষ্টি, নিজের কাছে নিজেকে বেশ বীর বীর মনে হচ্ছিল।

২।
সন্ধ্যা। ডাইনিং টেবিল থেকে কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজ; দৌড়ে গেলাম। কাঁচের একটা বাটির ধ্বংসাবশেষ মেঝেতে পড়ে আছে। অপরাধী ভঙ্গিতে মেয়ে দাঁড়ানো; হাতে পায়েশ মাখা চামচ। ড্রয়িং রুম থেকে মেয়ের মা'এর আগমন। কিন্নর কন্ঠে চিক্কুর "কে ভাঙ্গলো বাটিটা?" কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি মেয়ের তর্জনী আমার দিকে তাক করা। ঠোটে নাদান এক্সপ্রেশন। আমি নির্বাক। তেলাপোকার দিকে মানুষ যেভাবে তাকায়, আমার দিকে তেমনি একটা লুক দিয়ে মেয়ের মা'র প্রস্থান।

৩।
আমি আর মেয়ে; আমাদের ঘরে।
"মামনি, দুপুরে চা'এর কাপ'টা ভেঙ্গে ফেলার পর তোকে যা বলছিলাম, সেটা থেকে তুই কি শিখেছিলি?"
"কাপ, পিরিচ, গ্লাস, প্লেট - মানে কাঁচের যে কোনো জিনিস ভাঙলে সেটা তুমি ভেঙ্গেছো বললে কোনো অন্যায় হবে না। এটাকে বলে সাদা-মিথ্যা" .