রবিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৫

ইনফারনো এবং ফরমালিন

ড্যান ব্রাউনের "ইনফারনো" বইটা কে কে পড়েছেন?
আমি ছোট করে সামারি'টা বলি। হঠাৎ কেন এই বই নিয়ে কথা বলছি, শেষে বুঝতে পারবেন।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO)'এর একটা বিশাল মাথাব্যাথার নাম পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা। হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীটা ঠিকভাবে চলার জন্য মানুষের সংখ্যা যত হওয়া উচিত, এখনি নাকি তার প্রায় দেড়গুণ (অথবা দ্বিগুণ, বইটা বেশ আগে পড়েছি। তাই সঠিক হিসাবটা মনে নাই) মানুষ এই পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নানারকম বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মানুষের গড় আয়ু বাড়িয়ে দিয়েছে। সহজ হিসাব হল, মানুষ জন্মাচ্ছে মাশাল্লাহ অনেক, মরছে কম।
বারট্রান্ড যর্বিস্ট নামের এক মালটি-বিলিওনিয়ার পাগলা সাইন্টিস্ট এই সমস্যার সমাধানের জন্য একটা বুদ্ধি বের করে ফেলেন; ভয়ঙ্কর এক বুদ্ধি। তিনি একটা বায়োলজিক্যাল প্লেগ আবিষ্কার করেন, যা দিয়ে পৃথিবীর জনসংখ্যাকে কেটেছেটে মোটামুটি অর্ধেকে নামিয়ে আনা যাবে। এই নিয়েই মহা-উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গল্প এগিয়ে যেতে থাকে। নায়ক রবার্ট ল্যাংডন চেষ্টা করতে থাকে যেন এই প্লেগ না ছড়ায়, আর যর্বিস্ট'এর সাঙ্গপাঙ্গরা গুরুর নির্দেশমত পৃথিবীর রক্ষার কঠিন মিশনে এগিয়ে যেতে থাকে, ব্লা ব্লা ব্লা ...
যাই হোক, মোদ্দা কথা হল, বইটাতে যর্বিস্ট যে ভয়ঙ্কর পৃথিবী সামনে আসবে বলে ধারনা করেছিলেন এবং যে কারণে তিনি এই ভয়ঙ্কর প্লেগ তৈরি করলেন - সেই পৃথিবীটা কেন যেন আমার অচেনা লাগেনি। "যখন একটা জায়গায় রিসোর্সের তুলনায় মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে যায়, তখন মারামারি, খুনাখুনি, লুটপাট শুরু হতে বাধ্য। বেচে থাকা মানুষের প্রথম এবং প্রধান অধিকার। আর বেচে থাকার জন্য সবকিছু করাই জায়েজ - এই তত্ত্ব কেউ খণ্ডাতে পারবে না। দেশ - ধর্ম - ভাষা - আমি - আপনি, কেউ না।"
ড্যান ব্রাউন সাহেব কি ইনফারনো বইটা ঢাকায় বসে লিখেছিলেন? সবকিছু এত চেনা চেনা লাগে ক্যান রে!!!
ও হ্যা। যর্বিস্ট চরিত্র'টাকেও আমার মনে হয় ব্রাউন সাহেব ঢাকাতেই খুঁজে পেয়েছিলেন। যর্বিস্ট হচ্ছেন তিনি, যিনি প্রথম খুঁজে পেয়েছিলেন ফরমালিনের যুগান্তকারী ব্যাবহার - দা সুপার এফিশিয়েন্ট এজেন্ট ফর ম্যাস কিলিং। যা ধীরে ধীরে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে কেটেছেঁটে সাইজ করে দিতে সক্ষম।
হয়ত কিছুদিন পর এসএসসি পরীক্ষায় রচনা আসবে - "খাদ্যে ফরমালিন - বিজ্ঞানের আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?" ...
-----
১। কালকে তিতুমির কলেজের কিছু "ছাত্র" তাদের "হতাশা" প্রদর্শন করতে গিয়ে প্রায় শ'খানেক গাড়ি-বাস-সিএনজি ভাংচুর করল। তার মধ্যে আমার দুই ছোট ভাইয়ের গাড়িও ছিল।
২। ডেইলি স্টার'এ আজকে প্রকাশিত হল ফরমালিনের লং টার্ম এফেক্ট নিয়ে একটা প্রতিবেদন। (প্রথম কমেন্টে ছবি'টা দিয়ে দিলাম)।
দুইটা ঘটনার মধ্যে কোনই সম্পর্ক নাই। তবুও আমি কোথায় যেন একটা মিল খুঁজে পাচ্ছি। খুবই বাজে চিন্তা, তারপরও বলছি।
আগাছা নিধনে কি তাহলে ফরমালিনই একমাত্র ভরসা?
ভাল লাগছে না। একদমই ভাল লাগছে না।

September 9, 2014

আমার জন্মদিনে আমার খালার ফেইসবুক স্ট্যাটাস

"সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ বিকালে আপা লেবার পেইন নিয়ে ভর্তি হলো ধানমন্ডিতে ডাক্তার ফিরোজা বেগমের ক্লিনিকে। চরম উত্কন্ঠা আর চাপা আনন্দ নিয়ে আমরা বাসায় রাত কাটালাম। আম্মা তো আপার সঙ্গে ক্লিনিকে। ৪ তারিখ সকালে সেজপা গেলো ওখানে ,দুপুরে কিছু একটা নিতে এসে আব্বাকে বলে গেলো যে আম্মা বলেছেন আপার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই আব্বা যেন দোআ পড়তে থাকেন বেশি বেশি করে। আব্বা তখনি জায়নামাজে বসলেন। তাঁর সবচেয়ে আদরের বড় মেয়ে রুনু যে আজ মা হতে যাচ্ছে ! এর ঘন্টা খানিক পরেই সেজপা ফোন করলো,আব্বা ধরলেন --এই মাত্র তার রুনুর একটা ছেলে হয়েছে ! কাছেই ক্লিনিক ,ছুটলাম আমরা। গিয়ে দেখি দুলাভাই তার নীল ভেসপা নিয়ে বেরিয়ে গেছেন মিষ্টি কিনতে। আপার বেডের পাশে বেবিকট এ সাড়ে ৭ পাউন্ড ওজনের ফুটফুটে ছোট্ট বাবুটা ! আপার সাথে কী মিল তার মুখটার !
আম্মা তাকে নরম কাপড়ে জড়িয়ে আলতো করে আব্বার কোলে তুলে দিলেন। আব্বা গভীর মমতা আর বিস্ময় নিয়ে তার রুনুর ছেলে -তার প্রথম নাতিকে বুকে চেপে ধরলেন। আপা ক্লান্তি মাখানো হাসিহাসি মুখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
আমাদের আপা মা হলো , আর আমরা একটা ছেলে পেলাম! আমাদের আব্বুটা !
গতকাল এইরকমই কিছু একটা লিখতে গিয়ে বার বার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল। আজকাল আনন্দের স্মৃতি গুলো বেদনা হয়ে বুক ভারী করে দেয় যেন।"
----
আমার জন্মদিনে এটা আমার খালার ফেইসবুক স্ট্যাটাস। এবারের জন্মদিনে পাওয়া সবচেয়ে দামী উপহার।
এই খালারাই ছোটবেলায় আমাদের হাজারও গল্পের বইয়ে ডুবিয়ে রাখতেন। লেখালেখির ভুতটাকে যে তারাই আমার ঘাড়ে আদর করে বসিয়ে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই এখন আর কারো সন্দেহ থাকার কথা না। তাই না?

September 5, 2014

Rice Bucket Challenge 2

একটা ছেলে নাকি কালকে এক প্যাকেট সিগারেট না কিনে সেই টাকার চাল কিনে একজনকে দিয়ে এসেছে।
দুইটা মেয়ে নাকি আজকে কলেজ থেকে ফেরার সময় ফাস্ট ফুডের দোকানে আড্ডা দিতে বসে নাই। যে টাকাটা বেচেছে সেটা দিয়ে চাল কিনেছে আর সেই চাল কয়েকজন অচেনা মানুষকে ধরিয়ে দিয়েছে।
আর, একটা আজব মানুষের হুট করেই শুরু করে দেয়া পাগলামিতে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের একবেলা (বা কয়েকবেলা) খাবার জোটানোর দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে।
ছোট করেই নাহয় হোক, কিছু একটার শুরু তো হল!

আবারও খুব বলতে ইচ্ছা করছে - "দেশটা তো আমাদেরই, তাই না? আমরাই তো বাংলাদেশ।"

September 2, 2014

রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জ 1

যারা যারা ইতিমধ্যেই "বোকার মত" "ভারত থেকে আইডিয়া চুরি করে আনা" রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা নিশ্চয়ই চাল দিতে গিয়ে নিম্নোক্ত ফাপরগুলি শুনেছেন, তাইনা? 

১। "ফাইজলামি করেন মিয়া? এইটা কি কোন ইউনিক আইডিয়া নাকি? এইটা তো ইন্ডিয়াতে অলরেডি হয়ে গ্যাসে। সালমান খানের কুন এক সিনেমাতেও নাকি এই জিনিশ দেখাইসে। সরি ভাই, এই চাল আমি নিতাম না।"
২। "কি মনে করসেন আপনারা? ছবি তুইলা শো অফ করবেন আর ভঙ ধরবেন, দেশের দারিদ্র সমস্যার সমাধান কইরা ফালাইসেন! এই এক বালতি চাল আমি গায়ে পিন্ধুম? নাকি মাথায় ঢালুম? সরি ভাই, এই চাল আমি নিতাম না।"
৩। "দেশ যেখানে মানুষরে স্বাবলম্বী বানানোর চেষ্টা করতেসে, সেইখানে আপনারা আমাগো ভিক্ষা করা শিখাইতেসেন? ছি ছি ছি, আফনেরা এত খারাপ! এই চাল যদি আমরা আজকে নেই, তাইলে কালকে থেকে আমাগো তো আর কাজ-কাম করতেই মন চাইব না? তখন? হুম? সরি ভাই, এই চাল আমি নিতাম না।"
৪। "অয়াস্তাগফিরুল্লা, ঈদের সিজন ছাড়া এইডা আবার কেমুন যাকাত? নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ, এই চাল আমি নিতাম না।"
কিন্তু ... আমার কি কপাল খারাপ? আমি তো এইসবের কোনটাই শুনি নাই।
কি বলছেন? আপনিও শোনেন নাই? হায় হায়, তাইলে শুনল কে?
-------
আমি আর আমার মেয়ে সামান্য এক বালতি করে চাল দেয়ার বিনিময়ে কষ্ট করে খেটে খাওয়া দু'জন মানুষের অবাক খুশিতে তাকিয়ে থাকা চোখ আর বোকা-বোকা হাসি দেখেছি। বিশ্বাস করুন, চাল পেয়ে লোক দু'জন সত্যি সত্যিই খুশি হয়েছিল, আর দিতে পেরে আমাদেরও ভাল লেগেছিল।
ফালতু মানুষের ফালতু কথার কোন জায়গা আমার ওয়ালে নাই। হাজারটা মানুষ যেখানে একটা ভাল কাজকে অ্যাপ্রেশিয়েট করছে, সেখানে কতিপয় মহাজ্ঞানীর ডেসপারেট ত্যানাপ্যাঁচানো শুনতে কেমন যেন অসুস্থ লোমহীন চতুষ্পদের কুইকুই কান্নার মত শোনাচ্ছে।
আপনার যুক্তি দয়া করে আপনার সাথেই রাখুন। নিজের ওয়ালে যত খুশি নর্তন-কুর্দন করুন। কোন প্রবলেম নাই। এইখানে কমেন্ট করে নিজের শ্রম নষ্ট করবেন না। কমেন্ট লিখতে আপনার যতটা সময় নষ্ট হবে, কথা দিচ্ছি সেই কমেন্ট ডিলিট করতে আমার তার অর্ধেক সময়ও লাগবে না।
এগুলি রাগের কথা না। কষ্টের কথা। 

September 1, 2014

হঠাৎ করে মা মারা যাওয়ার সবচেয়ে বড় ইমপ্যাক্ট কি জানেন?

হঠাৎ করে মা মারা যাওয়ার সবচেয়ে বড় ইমপ্যাক্ট কি জানেন?
পৃথিবীর সবকিছুর উপর থেকে সবরকমের মায়া উঠে যায়। যেসব মানুষ বা যেসব জিনিস ছাড়া একটা সময় বেঁচে থাকাই অসম্ভব মনে হত, সেসবকিছুকে একদমই তুচ্ছ মনে হয়।
নিজের এই নিষ্ঠুর চেহারাটা নিজের কাছেই অচেনা লাগে। বদলে যাওয়াটা বুঝতে পারি ঠিকই, কিন্তু এই বদলে যাওয়া থেকে আবার বদলে পুরানো আমি'তে ফেরত আসার কোন তাড়না অনুভব করিনা।

টু গালি অর নট টু গালি, দ্যাট হ্যাজ বিকাম এ বিগ প্রবলেম নাও।

"মনে মনে কই আমি, গাইলের আর হুন্ছোস কি, আমগো গাইল হুনলে পরে, খাইবো মুর্দা ভি ... আমি ফাইসস্যা গেসি মাইনকা চিপায়"
ফেইসবুক'এ অনেকের ভাষার ব্যবহার নিয়ে আমি বেশ কনফিউসড। হায়দার ভাই, একটু হেল্প করবেন আমাকে?
ইদানিং অনেককেই দেখছি ফেইসবুক'এ চরম অশ্লীল সব শব্দ ব্যবহার করে ফেলছে, অবলীলায়। হিসাবটা ঠিক মিলাতে পারছি না। যারা অকপটে এজাতীয় চ-বর্গীয় শব্দ ফেইসবুক'এ ইউজ করছে, তারা কি রিয়াল লাইফে, সবার সামনে এভাবেই কথা বলে? বন্ধু-মহলে আমরা কমবেশি সবাইই মুখ খারাপ করি, কিন্তু সেসব আড্ডায় আমরা যেসব কথা বলি তা নিশ্চয়ই আমরা সবার সাথে বলি না। ফেইসবুক তো এখন শুধু বন্ধু-মহলে সীমাবদ্ধ নাই, আমার ফেইসবুক আমার মুরুব্বিরা যেমন দেখেন, অনেক বছরের জুনিয়ররাও দেখে। যেকোন কিছু লিখতে গেলে তাই একটু হলেও ভাবতে হয় আমাকে। এটাই কি স্বাভাবিক না? নাকি আমি যাদের শব্দ-সিলেকশন নিয়ে চিন্তিত তাদের ফেইসবুক'এ এমন "ঝামেলাজনক" কেউ নাই? নাকি তাদের বন্ধুদের জন্য একটা একাউন্ট, মুরুব্বিদের জন্য আরেকটা? নাকি আমিই বেশি কনসারভেটিভ? আনস্মার্ট? মহা জ্বালা রে ভাই, কথায় কথায় চ-চর্চা করাই স্মার্টনেস হয়, তাহলে তো না পারব গিলতে, না পারব ফেলতে!
এমনও হয়েছে কয়েকবার - মানুষটা হয়ত আমাকে ঠিকমত চেনেও না, আমিও তাকে চিনি না, কিন্তু কমেন্টে বা ইনবক্স'এ এমন একটা অশ্লীল ফান করে বসলো যেটা কিনা চরম কুরুচিপূর্ণ। নোটিফাই করলে খ্যাক খ্যাক করে হাসির একটা স্মাইলি মেরে দিল, "ধুর মিয়া, এগুলা ধরলে হয়, আপনে তো মিয়া একটা বিশাল টুউউউত, খ্যাক খ্যাক খ্যাক।" ভাবখানা এমন যে কুরুচিপূর্ণ শব্দ ছাড়া আবার ফান হয় নাকি? আমার অপারগতা, তাই গিলতে না পেরে তাদেরকে ফেলেই দিতে হলো
কুরুচিপূর্ণ কথা বলবোও না, শুনবোও না - এটা কি অনেক বড় চাওয়া নাকি?
টু গালি অর নট টু গালি, দ্যাট হ্যাজ বিকাম এ বিগ প্রবলেম নাও।
* এটা গত বছরের ১১ আগস্টের পোস্ট। সিচুয়েশন খুব একটা বদলেছে বলে মনে হয় না; বরং কিছুটা তো মনে হয় খারাপের দিকেই গেছে। এক বছর পার হল, এখনো স্মার্ট হতে পারলাম না রে 

Original post: 11 August 2014