সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৩

মূর্খের এনালাইসিস

মূর্খের এনালাইসিস কে কে আমার সাথে একমত?

১। আওয়ামিলিগ, বিএনপি, জামাত, জাপা - সবক'টা রাজনৈতিক দলের চাওয়া আসলে একটাই - ক্ষমতায় থাকা। ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি কিছুটা করব, কিন্তু নিজের আখের বেশি গোছাবো।
২। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এরা যে কোনো লেভেল পর্যন্ত নিচে নামতে কুন্ঠা বোধ করে না।
৩। জামাত বা হেফাযত নিজেরাও জানে যে তারা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করছে; যারা তাদের এতদিন "ছাগু, ছাগু" করেছে, মুচকি হাসি হেসে তারা প্রমান করে দিচ্ছে, আসল "ছাগল" আসলে কারা। এই দেশে একটা রাজাকার-বিরোধী আন্দোলনকে ধর্ম-যুদ্ধ বানিয়ে ফেলা আসলেই চাট্টিখানি ব্যাপার।
৪। ধার্মিক, নাস্তিক, নারীবাদী, নারী-বিবাদী, সংখ্যালঘু, শাহবাগ, এন্টি-শাহবাগ - এগুলো আসলে "ভোট-ব্যাঙ্ক' ছাড়া আর কিছুই না। এদের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো নৈতিক মিল-মহব্বত সম্ভব না, শুধু স্বার্থগত সাময়িক বন্ধুত্ব সম্ভব।
৫। ৯৯ ভাগ হেফাযতী "ব্লগ" মানে জানে না। এদের অত্যন্ত সুকৌশলে মগজ-ধোলাই করা হয়েছে। বাকি ১ ভাগের কাউকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না; কিন্তু এতটুকু জানি এরা বিগ-টাইম পাপী।
৬। ৯৯ ভাগ ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল কর্মী অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবার জন্য রাজনীতি করে। বাকি ১ ভাগের কয়েকজনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি এবং এরা আসলেই ভালো মানুষ।
৭। রাজনৈতিক যেসব নেতারা টক-শো'তে আসে, সেসব টক-শো না দেখেই বলে দেয়া যায়,- কে কি বলবে।
৮। সুশীল সমাজের যারা টক-শো'তে আসেন, সেগুলা থেকে অপ্রত্যাশিত কিছু আশা করা যায়; কারণ তারা কে কখন কোন দিকে মোচড় খাবে, সেটা খোদ সৃষ্টিকর্তাও বলতে পারবেন না।
৯। নতুন নেতৃত্ব আসার সম্ভাবনা খুবই কম। নেতৃত্ব আকাশ থেকে নাজিল হবে না, রুট লেভেল থেকে উঠে আসতে হবে; রুট লেভেলের যা অবস্থা, নিকট ভবিষ্যতে ভালো কোনো নেতৃত্ব উঠে আসবে বলে মনে করি না।
১০। দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো রাজাকারদের ফাঁসি চায়। সব রাজাকারদের - এ-দলের, বি-দলের - সব রাজাকারদের। আবার জনগণ এতটাও বোকা না যে তারা স্বপ্ন দেখবে এ-দল তার নিজের এক রাজাকার নেতা'কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিবে। তবুও তারা রাজাকারদের ফাঁসি চায়, কারণ ১০টা রাজাকারের মধ্যে বি-দল আর সি-দলের ৭টাকে ঝুলাতে পারলে, বাকি ৩টাকেও কোনো এক সময় ঝুলানো যাবে। যদি এই ৩টার আশায় বসে থাকতে হয়, তাহলে মোট ১০ জন'ই গা'এ হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবে, একদিন ১৫ কোটি মানুষকে টুউউট করে দিবে।
১০। আমরা জাতিগতভাবে কান্সারে আক্রান্ত। আগে পচনটা ধীরে ধীরে ছড়াচ্ছিল; এখন ছড়ানোর গতি ভয়াবহ।
১১। আমরা যারা ফেইসবুক'এ পক-পক করি, তাদের অবস্থা হলো টক-শো'এর হোস্ট'দের মত; পার্থক্য একটাই - ওরা টাকা পায়, আমরা মাগনা। দেশের অবস্থা যে কতটা খারাপ, তা আমাদের এই বেকারত্ব দেখেই আন্দাজ করা যায়।
.
.
.
১২। হতাশ হই, কষ্ট পাই, গালি দেই, নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে চোখ বুজে থাকার চেষ্টা করি - তবুও তো এখনো ভালো কিছু ঘটার জন্য অপেক্ষা করি। "ভালো কিছু"টা যে কি, সেটাও কি ঠিকমত জানি আমরা?
ভালো থাকুন সবাই। 

বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৩

ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন

ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন


এক সময় অনেক বড় গলা নিয়ে বলতাম, নিজের দেশে ফার্স্ট ক্লাস জীবন ফেলে বিদেশে গিয়ে সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন হয়ে থাকব কেন?

ভাই রে, বিদেশের সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেনের'ও জীবনের দাম আছে, ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে, দুই পয়সা রোজগার করেও সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার উপায় আছে; আমার এই দেশের ফার্স্ট ক্লাস জীবন আমাকে যা উপহার দিচ্ছে দিন দিন - বড়ই হতাশ হয়ে যাচ্ছি।

একসময় বিজ্ঞাপনে ব্যবহার হত "টগবগ টগবগ ঘোড়ায় চড়ে রাজার কুমার এলো ..."; আর এখন ব্যবহার হয় "কে এই দেশপ্রেমিক?"...--- সেইম কনসেপ্ট, দুইটাই ফ্যান্টাসি, আকাশ-কুসুম কল্পনা। ওই যুগেও ঘোড়ায় চড়ে রাজার কুমার আসত না; দেশপ্রেমিক নামক ডাইনোসরদেরও এই যুগে ফেইসবুক ছাড়া অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। (হাতে গোনা ২/১ জনের উদাহরণ টেনে এনে জ্ঞান ঝাড়ার চেষ্টা করবেন না; চেষ্টা করলে ওই যুগেও কিছু রাজার কুমার খুঁজে বের করে ফেলা পসিবল)

সরি, আমি খুব কমই নৈরাশ্ববাদী চিন্তা করি; কিন্তু কয়েকদিন ধরে শালার কিছুই ভালো লাগছেনা।

রবি'র বন্ধুরা মাইন্ড কইরো না, আমি আসলে জাস্ট নিজের উপর পিসড অফ।



এক সময় অনেক বড় গলা নিয়ে বলতাম, নিজের দেশে ফার্স্ট ক্লাস জীবন ফেলে বিদেশে গিয়ে সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন হয়ে থাকব কেন?

ভাই রে, বিদেশের সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেনের'ও জীবনের দাম আছে, ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে, দুই পয়সা রোজগার করেও সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার উপায় আছে; আমার এই দেশের ফার্স্ট ক্লাস জীবন আমাকে যা উপহার দিচ্ছে দিন দিন - বড়ই হতাশ হয়ে যাচ্ছি।

একসময় বিজ্ঞাপনে ব্যবহার হত "টগবগ টগবগ ঘোড়ায় চড়ে রাজার কুমার এলো ..."; আর এখন ব্যবহার হয় "কে এই দেশপ্রেমিক?"...--- সেইম কনসেপ্ট, দুইটাই ফ্যান্টাসি, আকাশ-কুসুম কল্পনা। ওই যুগেও ঘোড়ায় চড়ে রাজার কুমার আসত না; দেশপ্রেমিক নামক ডাইনোসরদেরও এই যুগে ফেইসবুক ছাড়া অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। (হাতে গোনা ২/১ জনের উদাহরণ টেনে এনে জ্ঞান ঝাড়ার চেষ্টা করবেন না; চেষ্টা করলে ওই যুগেও কিছু রাজার কুমার খুঁজে বের করে ফেলা পসিবল)

সরি, আমি খুব কমই নৈরাশ্ববাদী চিন্তা করি; কিন্তু কয়েকদিন ধরে শালার কিছুই ভালো লাগছেনা।

রবি'র বন্ধুরা মাইন্ড কইরো না, আমি আসলে জাস্ট নিজের উপর পিসড অফ।

খেলা


খেলা





আব্বা ছিলেন ওয়ারী ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট - যখন আমি ক্লাস নাইন-টেনে পড়তাম। ফুটবল লীগের সীজন-পাশ পেতাম। ভিআইপি পাশ। আমার বন্ধু ঠাকুরও সীজন পাশ পেতো। আমরা দুইজন ছিলাম মোহামেডানের খাস সাপোর্টার। লিগে মোহামেডানের কোনো খেলা বাদ দিতাম না; যেসব খেলায় আবাহনীর হারার চান্স থাকতো; আশায় বুক বেঁধে আমরা সে খেলাও দেখতে যেতাম। মোহামেডান জিতলে হাসি মুখে বাসায় ফিরতাম; মহা আনন্দে রাতের খবর দেখতাম, সকালে উঠেই পেপার পড়তাম - বারবার খুশি হতে চাইতাম। সেইম ঘটনা ঘটতো আবাহনী হারলে। আবার ঠিক উল্টাটাও কিন্তু ঘটতো; মোহামেডান হারলে কারো সাথে কথা না বলে মেজাজ খারাপ করে রুমে ঢুকে ঘুম দিতাম। দুনিয়া-দারি অসহ্য লাগতো।

অথচ, এই জেতা-হারা কোনকিছুর সাথেই আমার জীবন, ক্যারিয়ার, পরিবার, দেশ, রাষ্ট্র, ধর্ম - কোনকিছু জড়িত ছিল না। সেই উত্তেজনা, ভালো লাগা, খারাপ লাগা - সব ছিল ঠিক সেই মুহুর্তের একটা অনুভূতি। এর বেশি কিছুই না। 

গত কয়েক মাসের সবকিছুকে কেন যেন সেই ফুটবল লীগের মত মনে হচ্ছে। কেউ এখানে কট্টর আওয়ামী, কেউ কট্টর আওয়ামী-বিরোধী; (বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টি - এরা সবাই আসলে আজকে ওই "আওয়ামী-বিরোধী" দলেরই সদস্য). সেই মোহামেডান-আবাহনীর মতই; দল এখানেও দুইটাই। এবং ঘটনাও একই টাইপ; পর পর কয়েক খেলায় হয়তো আওয়ামিলিগ জিতলো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলো, জামাত খেদাতে বুদ্ধিমানের মত গুটি চাললো, সেই সাথে বিএনপি একের পর এক গাধামি করেই গেল - আহ, আওয়ামী ফ্যানরা হেভি খুশি হলো। কিন্তু  হঠাতই  আবার তারা পচা শামুকে পা কেটে ফেলল, চলন্তিকার মত দলের কাছে গো-হারা হারল। ব্যাস, সাথে সাথে আওয়ামী-বিরোধী প্যানেল চান্স পেয়ে গেল, তাদের খুশি তখন দেখে কে? তাফাল্লিং পুরা অন্য লেভেলে, পুরাই লম্ফ-ঝম্প। কিন্তু সেই লম্ফ-ঝম্প'ও দীর্ঘস্থায়ী হয় না; পচা শামুকের সাথে যে তাদেরও অনেক প্রেম; পা কাটাতেই যেন তাদের জীবনের সার্থকতা!

প্রগতিশীল আরেক দলের জন্ম হয়। তারা ভাবে, নাহ, এই দুই দলের কাউকেই সাপোর্ট করব না। ব্রাদার্স ইউনিয়ন আসলে ভালো দল, ঘাউরা আছে, বড় দুই দলের পিছনেই আঙ্গুল দেয়ার সাহস আছে। লেট্স সাপোর্ট ব্রাদার্স। কিন্তু এই চিপা, আরো করুন চিপা। বড় দুই মোড়ল যেই দেখে, ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা অঙ্গুলি চালনায় বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছে, দু'জন তখন গোপনে গলাগলি ধরে দেয় ব্রাদার্সের টুউউউট করে। (ব্লগার আর ব্রাদার্স, দুইটাই তো দেখি ব দিয়ে শুরু; কাকতালীয়, নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার)

লেখার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু এই দুই সিচুএশন'এর মিল খুঁজে বের করে সবাইকে নির্মল আনন্দ দেয়া না। বরং ঠিক তার উল্টা'টা। 

আমরা সবাই বোকার মত খেলাটাকে এনজয় করছি। গ্যালারিতে বসে দূর থেকে খেলা দেখতে যে মজাটা লাগে, আমরা সেই মজা'টা নিচ্ছি। যখন আমার মনমতো কিছু একটা হচ্ছে, আমরা খুশি হচ্ছি, আশাবাদী হচ্ছি। যখন এমন কিছু হচ্ছে যেটা আমার নজরে অন্যায্য, তখন বিরক্ত হচ্ছি, হতাশ হচ্ছি। বিশ্বজিত মরলে বা  মন্ত্রী সাহেবরা গাধামি করে কিছু আবোল-তাবোল বকলে আওয়ামী-বিরোধী'রা মহা খুশি হয়ে উঠছে - যাক, কিছু পয়েন্ট পাওয়া গেল। আবার জামাতের সাথে সুর মিলিয়ে বিএনপি গান গাইলে নৌকা মার্কার পোয়া-বারো। আমরা জনগণ গ্যালারিতে বসে গলা ফাটিয়ে চিল্লাচ্ছি - রক্ত গরম করে ফেলছি। 

একটু আগে যেটা বলছিলাম; লেখার মূল উদ্দেশ্য এই দুই সিচুএশন'এর মধ্যে মিল খুঁজে বের করা না। বরং অমিল'টাকে চোখের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা। 

আমরা কিন্তু গ্যালারিতে বসে নাই, আমরা মাঠের ঠিক মাঝখানে বসে আছি। খেলার তাপ কিন্তু আমাদের গা'এ লাগছে; আমরা খুন হচ্ছি, ধর্ষিত হচ্ছি, অপমানিত হচ্ছি, লুন্ঠিত হচ্ছি। রাজনীতি জিনিষটা রাজনীতিবিদের জন্য একটা খেলা হতে পারে; আমাদের জন্য না। রাজনীতি কিন্তু ফুটবল লিগ না, রাজনীতির সাথে সবকিছু জড়িত - আমি, আপনি, আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, স্বাধীনতা, ধর্ম, ব্যক্তিস্বাধীনতা, আমাদের ভবিষ্যত - সবকিছু। তাই বসে বসে হাততালি বা গালাগালি দিলাম আর আশা করলাম একদিন ঝড় থেমে যাবে ... সরি বস, পৃথিবী এভাবে কখনই শান্ত হবে না। 

ওদের খেলা ওরা খেলতেই থাকবে। বোকা একদল মানুষ যদি ওরা যেভাবে নাচাতে চায় সেভাবে নাচতে থাকে; ওরা তো তা এনজয় করবেই। আপনি-আমি হলেও করতাম; তাই না? 

সিদ্ধান্তটা আসলে আমাদের - ওদের খেলা কি আমরা দেখতেই থাকব?  

গ্যালারী যদি ফাঁকা হয়ে যায়, দল যতোই  শক্তিশালী হোক, লীগ কিন্তু একদিন ঠিকই বন্ধ হয়ে যাবে। (দয়া করে "দল" ও "লিগ" বলতে অন্য কিছু ভেবে নেবেন না)

মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৩

নানু


নানু


এই একটা বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে হাত কাঁপে। চোখ ভিজে ওঠে, শব্দ খুঁজে পাই না, গলার ভিতর বড় একটা দলা'র মত জিনিস জেগে ওঠে। 

নানু নাই অনেক দিন হলো। প্রতিদিন কতবার নানুকে দেখতে ইচ্ছা করে, আমি বলতে পারবো না। দরজা খুলে সামনে নানু'র দরজা দেখলে এখনো চোখ ভেজে, কাজ করতে করতে হঠাত মনে হয় নানু'কে কতদিন ছুয়ে দেখি না, বাসায় ফিরে সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে হঠাত পা'দুটা অসার হয়ে যায় - দেয়াল ধরে একা একা দাঁড়িয়ে থাকি কিছুক্ষণ। নানু'র ছবিটা ফেইসবুক'এর প্রোফাইল পিক থেকে সরাতে পারিনা। নানু'র গ্লাস'টা'তে আমি এখন পানি খাই, প্রতিবার মনে হয় নানু'র পানের গন্ধ পাই। নানু'র শেষ সময়টাতে নানু'র কাছে থাকতে পারি নাই, এই অপরাধবোধটা আমার কোনদিন হালকা হবে না। 

আজকে নানু'কে বেশি মনে পড়ছে। গলা ব্যথা করছে, খুব কান্না পাচ্ছে। আমার খুব নানুর কাছে যেতে ইচ্ছা করছে।  

আমার মা, আমার বউ, আমার মেয়ে; কার চাইতে কাকে আমি বেশি ভালবাসি -  বলতে পারব না। তিনজনকেই ভালবাসি, অনেক বেশি ভালবাসি। কিন্তু এখনো তাদের এতটা ভালোবাসিনি, যতটা নানুকে ভালবাসি।

সরি আম্মা, সরি পূনম , সরি জয়ী - তোমরা তিনজনই জানো যে আমি সত্যি বলছি। 


সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৩

সোশাল মিডিয়া আর একটা আপাদমস্তক গর্বিত রসিক জাতি


সোশাল মিডিয়া আর একটা আপাদমস্তক গর্বিত রসিক জাতি 


এক রকম খবর: 
১: পত্রিকায় ছবিসহ খবর ছাপা হলো ছাত্রলীগের কোনো এক পাতি নেতা অস্ত্র নিয়ে শোডাউন করছে। ছবি ছাপা হওয়া সত্তেও পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না! 
২: ট্রাফিক সিগনালে রুগীসহ এম্বুলেন্স আটকে আছে, প্রধানমন্ত্রী আসতে আরো বাকি মিনিমাম দশ মিনিট। আগে পিএম যাবেন, তারপর রুগী। রুগী'র জীবনের দাম কি পিএম'এর সময়ের দামের চাইতে বেশি নাকি? 
৩: ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনা বিডিয়ার হত্যাকান্ড। এত নাটকের পর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ৭ বছরের কারাদন্ড! 
৪: তারেক মাসুদকে চাপা দিয়ে মেরেই ফেলল একটা বাস, ড্রাইভার'এর কি শাস্তি হয়েছিল, জানি কি? শুধু ড্রাইভারকে শাস্তি দিলেই কি লেঠা চুকে গেল? আরেক তারেক মাসুদ যে মরবে না, সেই বেপারে কি কোনো পদক্ষেপ নেয়া হলো? 
৫: সাগর-রুনি'র লাশ আর কয়বার কবর থেকে তোলা হবে, এ প্রশ্ন বরই হৃদয়বিদারক; কিন্তু একদমই কি অবন্তর? 
৬: বাই দা ওয়ে, ১ নম্বর খবরের ওই ছাত্রলীগের নেতাকে কিন্তু খুঁজে পাওয়া গেছে, রাজশাহীর পুলিসের ডিসি সাহেবের সাথেই, হসপিটালের বিছানার পাশে, আরেক নেতাকে দেখতে গিয়েছিলেন তারা এক সাথে!

এবার আরেক রকম খবর: 
১: নাটকের এক নায়িকার সাথে নাকি তার পুরানো প্রেমিক'এর গরম ভিডিও বের হয়েছে।
২: সিনেমার এক নায়ক নাকি ভুল উচ্চারণে কিছু লোক-হাসানো কথা বলেছে। পিজা হাট'এ নাকি এক গ্রুপের সাথে গরম গরম তর্কাতর্কিও হয়েছে।
৩: শহরের অভিজাত এক বিউটি পার্লারে নাকি গোপন কামেরার সন্ধান পাওয়া গেছে। 
৪: টিভি চ্যানেল মালিকের শরীরে নাকি কোনো ডি এন এ নাই। 
৫: আমাদের সবচাইতে বিখ্যাত কথাসাহিত্তিক বেক্তিটির মৃত্যুর জন্য নাকি বর্তমান স্ত্রী দায়ী; তার সাথে নাকি আবার কোন প্রকাশকের গোপন প্রেমও চলছে।

দ্বিতীয় দলের খবরগুলো কত্ত জনপ্রিয় তাই না? কি অসাধারণ এবং ইম্পর্টান্ট সব ইসু! ফেইসবুক'এ লক্ষ্ লক্ষ লাইন লেখা হয়ে গেছে এই খবরগুলোকে নিয়ে। হবে নাই বা কেন, এগুলা তো পিওর এন্টারটেইনমেন্ট। আমরা বোকা জাতি এটাও বুঝি না যে এই দ্বিতীয়সারির খবরগুলির চাপে প্রথম সারির খবরগুলো হাসফাস করছে। যত লক্ষ শব্দ ওই নায়িকার চরিত্র বিশ্লেষণে ব্যয় হলো, বাজি ধরে বলতে পারি, তার শত ভাগ'এর এক ভাগ তারেক মাসুদের মৃত্যু নিয়ে হলে ট্রাফিক আইনে কিছুটা পরিবর্তন আসতো।  যত সহস্র ছবি ফেইসবুক'এ শেয়ার হল সিনেমার ওই বেচারা নায়ক'কে অপদস্থ (মতান্তরে জনপ্রিয়) করতে, তার সহস্র  ভাগ'এর এক ভাগ ছবি শেয়ার হলে ওই হারিয়ে যাওয়া নেতা এখন চোদ্দ শিকের আড়ালে থাকত।  ফেইসবুক'এ নাকি এখন ৫০ লক্ষ বাংলাদেশী। এত বড় জমায়েত হবার মত কোনো পল্টন ময়দান আছে বলে তো জানা নাই আমার। মুর্খও এখন জানে "সোশাল মিডিয়া" নামক একটা জিনিস আছে, শুধু এই ৫০ লক্ষ মানুষ'এর সিংহভাগ'ই জানে না এই মিডিয়ার জোর কতখানি। পৃথিবী জুড়ে একের পর এক উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে কেমন করে সোশাল মিডিয়াকে ঠিক মত ব্যবহার করে বিপ্লব ঘটানো যায়, আর আমরা শুধু দুষ্টামি'ই করে যাচ্ছি। যা নিয়ে কথা বললে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে সেসব নিয়ে আমরা কিছুদিন নিজেদের মধ্যে তর্কাতর্কি করি, তারপর ফুরুত করে ভুলে যাই। ঘানা নাকি গানা, সেই তর্কের তো কোনো শেষ দেখতে পাই না! নিকট ভবিশ্সতে দেখব বলেও আশা রাখি না। 

বোকার মত বলব না যে চলেন সবাই বিদ্রোহী হয়ে যাই, দিন-রাত ২৪ ঘন্টা খালি অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। এটা সম্ভবও না। কিন্তু সবসময় কি খালি হালকা ইসু নিয়েই থাকব আমরা? বড় বড় ঘটনাগুলি এভাবেই চোখের আড়ালে হারিয়ে যেতে থাকবে? এটা একটা কথা হলো? 

প্রতিনিয়ত নিজেকে জোকার প্রমানের কি অক্লান্ত প্রয়াস আমাদের! কে নাই সেই দলে? দেশের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সবাই আমরা সেই "এসো বোকা সাজি" মিছিলের যাত্রী। ফেইসবুক'এ তর্কের তুবড়ি ছোটাই , আর ওদিকে প্রভার তোষকের নিচে চাপা পরে যায় তারেক মাসুদ'এর লাশ। মাহফুজ সাহেবের ডিএনএ-হীন শরীরের মুখরোচক গল্পে হারিয়ে যায় সাগর-রুনি'র কবর খুরে বের করা ডিএনএ পরীক্ষার রেসাল্ট। ও, ভালো কথা, প্রধানমন্ত্রী কিন্তু আগামীকালও সাইরেন বাজিয়ে গাড়ির বহর নিয়ে ছুটবেন, আর সিগনালে দাড়ানো এম্বুলেন্স'টা হঠাত করেই বদলে যাবে আঞ্জুমান মুফিদুল'এর লাশবাহী গাড়িতে। তখন কিন্তু আফসোস করবেন না। 

অনেকটা সময় নষ্ট হলো এইসব আতেল টাইপ কথা পড়ে। লেটস ফাইন্ড আউট, নতুন ফান কি আছে "সোশাল মিডিয়ায়"?  ওহ হো; এত খোজাখুজির কি দরকার? এই লেখাটাই শেয়ার মেরে দিন না, আমি শিওর, আমরা যে লেভেলের রসিক, এত বড় একটা লেখা থেকে কিছু না কিছু রসের আইটেম ঠিকই বের করে ফেলতে পারব। কি বলেন? 



[Written in 11-11-12]