রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৪

সেদিন একজনের সাথে পরিচিত হলাম। বনানীতে খুব সুন্দর একটা রেস্টুরেন্ট খুলেছেন। কথায় কথায় জানলাম উনি নর্থ-সাউথের এক্স-স্টুডেন্ট। 

আমি: "ওহ রিয়েলি!!! আমি কিন্তু নর্থ-সাউথের অনেককেই চিনি। কারণ হলো, আমার অফিসে নর্থ-সাউথের অনেকগুলি ব্যাচের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছে।"
সে: "জ্বি ভাইয়া, আমি জানি আমি জানি। আমার পরিচিত অনেকেই আপনার কোজিটোতে ছিল।"
আমি: "তাই নাকি? আপনি কোন ব্যাচ? জিকো'কে নিশ্চয়ই চেনেন। আপনি কি ওর সিনিয়র? নাকি জুনিয়র?"
সে: "জিকো'রা আমাদের বেশ জুনিয়র"
আমি: "তাহলে তো রাসেল-তমাল'রাও জুনিয়র আপনার?"
সে: "জ্বি ভাইয়া, ওরাও জুনিয়র।"
আমি: "হমম, তাহলে ইয়াফি'রা ..."
সে (আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে): "আরে না না ভাইয়া, এইটা কি বললেন? ইয়াফি ভাইয়া'রা তো ডাইনোসর'দের ব্যাচ। আমাকে কি এত বুড়া মনে হয় নাকি?"

....

আমি: "ইয়ে, মানে .... আমি আর ইয়াফি ইনফ্যাক্ট সেইম ব্যাচ" ...

......

বুড়া যে প্রায় হয়েই গেলাম, কতভাবেই না খোদা ইশারা দিয়ে বোঝায় রে !!!

বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৪

ত্যান্দর পুত্র

ছেলে আমার বড়ই ত্যান্দর। যা করতে বলি তার উল্টাটা করে।  

কিন্তু ব্যাটা এখনো পুরাপুরি বোঝে নাই, ত্যান্দরের বাপও কম ত্যান্দর না।  

দুইটা ঘটনা বলি।  

১. 

মেয়ে তার স্কুলের হ্যান্ডবল টিমের প্রাইমারি স্কোয়াডে ডাক পেয়েছে। স্কুল থেকে বলেছে একটা এক নম্বর সাইজ বল কিনে বাসায় প্র্যাকটিস করতে। বল কিনতে গিয়েই মাথায় আসলো, পুত্র যখনি জানবে যে এটা তার বোনের জন্য, তখনই ঝড়-তুফান শুরু করে দিবে। 

সমাধান - আরেকটা রঙিন ছোট বল কিনলাম। বাসায় ফিরে দুইটাকে ডাক দিলাম, "জীয়ন, বড় সাদা বলটা তোমার, আর ছোট কালারফুল বলটা আপুনির। তুমি কিন্ত আপুনিরটা ধরবা না।  ওকে?" 

পুত্র কোনো কথা না বলে এক থাবায় রঙিন বলটা নিয়ে দৌড়ে তার রুমে চলে গেল। সাদা বলের দিকে একবার তাকালোও না। 

কন্যা তার পিতৃপ্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে খুশিমনে হ্যান্ডবল প্র্যাকটিস শুরু করলো। 

২.

পুত্রকে ঘুম পাড়ানো রীতিমত যুদ্ধ করার মত কঠিন। পুত্রের মা বলে, "ঘুমাও।", পুত্র বলে - "ধুমাবো নাআআ।" পুত্রের মা বলে "ঘুমা ব্যাটা বান্দর"; পুত্র বলে "ধুমাবো নাআআ।  হি হি।" তারপর কান মোচড়ানো, আঙ্গুলে টোকা ট্রিটমেন্ট, পাছায় থাপ্পড় - অতঃপর কান্নাকাটি; এবং কানতে কানতে ঘুম। 

আমি ভাবলাম, ত্যান্দরের সাথে আবারও ত্যান্দ্রামি করে দেখি। লাইট বন্ধ করে আমি ওকে ঘুমাতে নিয়ে গেলাম। বিছানায় শোওয়ানোর সাথে সাথে স্যারের চিত্কার শুরু, "বাবা, ধুমাবো নাআআ , ধুমাবো নাআআ।"

আমি বেশ ফ্রেন্ডলি টোনে কথা শুরু করি, "না না বাবা, কেউ ঘুমাবে না এখন। ঘুম তো পচা জিনিস। ঘুমালেই কালো ভূত এসে তোমাকে কামড় দিবে।" 

পুত্র এইটা একদমই আশা করে নাই।  চোখ বড়বড় করে সে ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো। 

"তাকিয়ে থাকলেই কিন্তু বাবা ঘুম চলে আসবে। তাই তাকিয়ে থাকা যাবে না। তাকিয়ে থাকলে কি চলে আসবে?"

পুত্র চোখ পিটপিট করতে করতে বলে "ধুম তোলে আতবেএএএ।"

"ঠিক বলেছ বাবা। এখন চোখ বন্ধ করে রাখো। আর খেয়াল রাখো যেন ঘুম চলে আসতে না পারে। ওকে বাবা?"

চোখ বন্ধ করে জীয়ন জবাব দেয়, "ওকে বাবাআআ।" 

দুই মিনিটের মধ্যে পুত্র আমার "ধুম" :)


পাদটিকা: খুব ভালমতই জানি, আমার এই সলিউশন খুবই টেম্পোরারি। ত্যান্দরটা অল্পদিনের মধ্যেই আমার এই চালাকি ধরে ফেলবে, এবং তখন আমাকে নতুন কোনো বুদ্ধি খুঁজে বের করতে হবে। 

সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৪

মিউট হিন্দি সিরিয়াল

পুত্রকে ঘুম পাড়ানোর সময় আমার বউ মিউট করে হিন্দি সিরিয়াল দেখে। 

একদিন একটু বিরক্তি নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম - "কি মজা পাও রে ভাই এইসব আজাইরা জিনিস দেখে?"

বউ সোজাসাপ্টা জবাব দিল - "আর কোন জিনিষটা আছে যেটা সাউন্ড ছাড়া দেখলেও ঘটনা বুঝতে প্রবলেম হয় না!!!" 

হ্যাট্স অফ টু দা সিরিয়াল কিলার্স (থুক্কু সিরিয়াল মেকারস), আপনারা আসলেই সুপার জিনিয়াস।  

এই টক শো সর্বস্ব সবাক মিডিয়াতে নির্বাক অপশনযুক্ত সিরিয়াল তৈরী করে আমার মত "ক্রিয়েটিভ" মানুষকে নিখাদ অবাক করতে পেরেছেন - আপনাদের "ক্রিয়েটিভিটির" গুনগান না করলে ব্যাপারটা বড়ই অন্যায় হয়ে যাবে। 

*** যে নাটকের ঘটনা সাউন্ড না শুনেই আগে থেকে বলে দেয়া যায়, সেখানে "ক্রিয়েটিভিটির" কিছু আছে কিনা, সে নিয়ে অবশ্য আলাদা ডিবেট চলতেই পারে :)  
ছুটি কাটিয়ে বাড়ি ফেরার মধ্যে একটা অদ্ভূত ভালোলাগা ছিল। 

সেই ভালোলাগাটা আজকে হারিয়ে ফেলে জানতে পারলাম, ভালোলাগার কারণটা আসলে কি ছিল। 

একটা মানুষ বিছানায় বা মোড়ায় বসে থাকত, পানের বাটা পাশে নিয়ে। আমরা ঘরে ঢোকার সাথে সাথে তার চোখে-মুখে হাজার ওয়াটের বাতি জ্বলে উঠত। জয়ী আর জীয়ন এক দৌড়ে সেই মানুষটার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ত। তারপর তার সাথে আমার ছেলে-মেয়ের গল্পের গাছ বড় হতে হতে আকাশ ছুঁয়ে যেত। 

আমি বাড়ি ফেরার একটা অর্থ খুঁজে পেতাম।

আজকে ঘরটা খালি। বিছানায় বা মোড়াতে আম্মা বসে নাই। জয়ী আর জীয়ন বাড়ি ফিরে তাদের দাদী'কে জড়িয়ে ধরতে না পেয়ে চুপচাপ টিভি ছেড়ে বসলো।

আজকে সিলেট থেকে ফেরার সময় সারা রাস্তা শুধু একটা কথাই ভেবেছি -

আমি বাসায় ফিরছি কেন?

শুভ নববর্ষ

দু'চোখ দিয়ে আমরা কখনো আগামী দেখতে পাই না।  আমাদের এক চোখ ব্যস্ত থাকে পিছনে দেখার জন্যে।  আমরা যে পিছন থেকে ছুরি মারতে ওস্তাদ। 

চলার পথের কাঁটা সরাতে আমরা কখনো দুই হাত একসাথে ব্যবহার করতে পারি না।  এক হাত ব্যস্ত থাকে নিজের পশ্চাদ্দেশ আড়াল করে রাখতে।  জানেনই তো, আপনজনের *** মেরে আমরা বড্ড বেশি আনন্দ পাই।  

আমাদের দুই পা কিন্তু একটানা সামনের দিকে হাঁটতে পারে না।  আমরা ৩ পা এগুলে ২ পা পিছাই।  অভ্যাসই বলেন বা খাসলত - ইহাই আমাদের গর্বিত করে রেখেছে জাতি হিসেবে।  

আমাদের দুই কান কখনো একসাথে কাজ করে না। এক কান দিয়ে যদি কাজের কথা ঢোকে, অন্য কান হয় ব্যস্ত থেকে কাজের কথাটাকে সসম্মানে বের করে দিতে; অথবা ব্যস্ত থাকে মহা-অকাজের কোনো কথাকে মগজের ভিতরে সাদরে অভ্যর্থনা জানাতে।  

এবার কিছু ভালো কথা বলি।  

এক হাত দিয়ে পাছু ঢাকতে ঢাকতেও আমরা কিন্তু ঠিকই এভারেস্টে পৌঁছে গেছি। এক চোখে দেখেও হয়েছি বিশ্বের সেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার, খুঁজে পেয়েছি পাটের জীন-তত্ব, এসেছে নোবেল প্রাইজ। আমাদের সিনেমা, বিজ্ঞাপন, স্পোর্টস এনেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।  অর্থনৈতিকভাবে হয়েছি আগের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।  তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে ৩ ফুট উঠে আর ২ ফুট করে পিছলে নামা  সত্বেও ঠিকভাবেই কিন্তু আয়োজন করেছি টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপ, প্রশংসা কুড়িয়েছি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। শুধুমাত্র আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর হাড়জিরজিরে দরিদ্র মানুষের ছবিই কিন্তু দেখে না এখন বহির্বিশ্ব - তাদের চোখে পরার মত নানান উপলক্ষ এখন নিয়মিতই জন্ম দিয়ে যাচ্ছি আমরা। 

এবার একটু ভাবুন তো। এক হাতে, এক চোখে বা এক পায়ে - মোটকথা অর্ধেক শক্তি ব্যবহার করেই যদি একটা দেশ এভাবে এগিয়ে যেতে পারে, পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে আমরা কোথায় উঠে যাব! 

শুভ নববর্ষ সবাইকে। চাওয়া একটাই, হাত-পা-চোখ-কান-মাথা-আমি-আপনি-আমরা সবাই ----  ১৪২১'এ যার যা কাজ, তা যেন ঠিকঠিক ভাবে করতে পারি।  

বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৪

দাঁতের এক্সরে

"ভাইয়া, ইইইই করেন।"

আমি দাঁত বের করে ইইইই করলাম। 

"এইবার এই ছোট প্লেটটা কামড় দিয়ে ধরেন।" 

আমি কালো রঙের প্লাস্টিকের চারকোনা একটা প্লেট কামড় দিয়ে ধরলাম। 

"বাহ্, এবার এভাবেই থাকেন কিছুক্ষণ।" 

একথা বলে  ভাইজান পাশে দাঁড়ানো দুই আপু'র দিকে তাকালেন। 

"ভালো মত খেয়াল করেন আপুরা, দাঁতের এক্সরে করার সময় রুগীর দাঁতের পজিশনটা ভেরি ইমপোর্টেন্ট। সবসময় চেষ্টা করবেন রুগী যেন ইইইই করে দাঁত বের করে রাখে। বেস্ট উদাহরণ কোনটা জানেন? গুগলে শিম্পাঞ্জি লাফিং বলে পিক সার্চ দিলে দেখবেন কিছু দাঁত বের করা বান্দরের ছবি আসে।  চেষ্টা করবেন রুগীর দাঁতের পজিশন যেন ঠিক তেমন থাকে। সবারটা হয়ত একদম পারফেক্ট হয় না, বাট চেষ্টা করবেন যেন যত বেশি পারফেক্ট করা যায়।"

আপু দু'জন আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে। তারা মনে হয় জুনিয়র ডেন্টিস্ট, হাতে-কলমে দাঁতের এক্সরে করা দেখতে এসেছেন। একজন সুন্দরী। আরেকজন মারকাটারি লেভেলের সুন্দরী। 

আমি ইইইই-রত অবস্থায় তাদের দিকে তাকিয়ে একটা বেকুব হাসি দেই।  

ডেন্টিস্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইজান আমার দিকে তাকিয়ে আশ্বস্ত করেন, "না না ভাই, আপনি কোনো টেনশন কইরেন না। আপনার দাঁতের পজিশন খুব সুন্দর হয়েছে। আপনার এক্সরে খুব ভালো আসবে। ইনশা'আল্লাহ।"  

আপু দু'জন আবারও খিলখিল করে হেসে ওঠে।  
  

মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৪

লম্বা হাতলওয়ালা চামচ

একটা বড় ঘর।  ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা বিশাল গোল টেবিল। টেবিলের ঠিক মাঝখানে রাখা সুস্বাদু সুপের বাটি। লোভনীয় গন্ধে মৌমৌ করছে বাতাস। কিন্তু, টেবিলের চারদিকের চেয়ারগুলিতে বসা জীর্ণ-শীর্ণ-অসুস্থ কিছু মানুষ। তাদের বেঁধে রাখা হয়েছে চেয়ারের সাথে, যেন তারা চেয়ার থেকে উঠতে না পারে। সবার হাতের তালুর সাথে বাঁধা লম্বা হাতলওয়ালা চামচ। সে চামচ এতটাই বড় যেটা দিয়ে সহজেই টেবিলের মাঝখানে রাখা সুপের বাটি থেকে সুপ তুলে আনা যায়। তবুও লোকগুলো এত জীর্ণ-শীর্ণ-অসুস্থ কেন? কারণ, চামচের হাতলগুলো এতই লম্বা যে হাত বাঁধা অবস্থায় সুপ ভর্তি চামচ ঘুরিয়ে মুখ পর্যন্ত নিয়ে আসা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না।  ক্ষুধার্ত লোকগুলো তাই বারবার ঠিকই সুপ তুলে আনতে পারছে, কিন্তু খেতে পারছে না।  

আরেকটা ঘর।  একই রকম বড়।  এখানেও মাঝখানে বিশাল গোল টেবিল, তার মাঝখানে সুপের বাটি। এখানেও চেয়ারে বসে থাকা লোকগুলো আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা, হাতের তালুর সাথে বাঁধা লম্বা হাতলওয়ালা চামচ। পার্থক্য একটাই।  এখানকার মানুষগুলি সব হাসিখুশি, স্বাস্থ্যবান, কষ্টহীন।  

কিভাবে জানেন? তারা কেবল একটা বিদ্যা শিখে নিয়েছে, খুব ভালো ভাবে। 

তারা নিজের চামচটা দিয়ে কখনো নিজে খাওয়ার চেষ্টা করছেন না, বরং একে অন্যকে খাইয়ে দিচ্ছেন। 

মন খারাপ করেই বলছি, প্রথম ঘরটাকে কেন যেন আজকের বাংলাদেশের মত লাগে। 

পরের ঘরটার মানুষগুলির মত কবে হব আমরা? 

(মূল গল্পটা বইএ পড়েছি। মন খারাপের জায়গাটা আমার নিজের।)