বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

গুলিস্টিন

বোকা মানুষ যখন বোঝে যে সে বোকা, সেটা সহনীয়। কিন্তু বোকা মানুষ যখন নিজেকে স্মার্ট ভাবে, ব্যাপারটা অতীব ভয়ঙ্কর।

আমার বর্তমান ড্রাইভারটা এমনিতে বোকাসোকা, ভদ্র আর ঝামেলাহিন বলে তাকে আমি অপছন্দ করি না। কিন্তু মাঝে-মাঝে তার অতি-পাকনামি ব্যাপারটা বড়ই পীড়াদায়ক।

দুইটা ঘটনা বলি।

১। নর্থ-সাউথ ইউনিভারসিটি'তে একটা সেশন নিতে গেছি। রাস্তায় অনেক ট্র্যাফিক দেখে আমি গ্রামীণফোনের অফিসের সামনে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।

এনএসইউ'তে পারকিং পাবো কি পাবো না, সেই চিন্তা থেকে ড্রাইভারকে বললাম যেন অ্যাপোলো হাসপাতালে গাড়ি পার্ক করে রাখে। আমার কাজ শেষ হলে আমি ফোন দিলে, সে যেন চলে আসে।

কাজ শেষে ফোন দিলাম। বললাম যেন নর্থ-সাউথ ইউনিভারসিটি'র মেইন গেটে চলে আসে। কনফার্ম হওয়ার জন্য আবার জিজ্ঞেস করলাম যে সে জায়গাটা ঠিকমত চেনে কিনা।

সে মহা কনফিডেনট। নর্থ-সাউথ ইউনিভারসিটি সে খুব ভালো করেই চেনে।

১০ মিনিট যায়। ২০ মিনিট যায়। গাড়ি তো আর আসে না। আমি ফোন দেই, ব্যাটা ফোন কেটে দেয়। কি যন্ত্রণা।

৪৫ মিনিট পর সে ফোন দিলো আমাকে।

"স্যার, নর্দায় তো আসলাম। কিন্তু  নর্দা ইউনিভারসিটি তো খুইজে পাচ্ছি না।"

২। আব্বা'র একটা ওষুধ শেষ হয়ে গেছে।

আব্বা কাগজে ওষুধের নাম লিখে ড্রাইভারকে পাঠিয়েছে ওষুধের দোকানে। পাড়ার মোড়ের চেনা দোকান, ওষুধ আনতে কোন সমস্যা হবার কথা না।

১০ মিনিট যায়। ২০ মিনিট যায়। ওষুধ তো আর আসে না। আব্বা ফোন দেয়, ব্যাটা ফোন কেটে দেয়। কি যন্ত্রণা। 

আব্বা ফোন দিলো আমাকে। "বাবা, একটু দ্যাখ তো। ওষুধ খাওয়ার টাইম তো যায় যায়।"

আমি দিলাম ফোন। কয়েকবার দেয়ার পর সে ফোন ধরল।

"স্যার। খালুজানের কথায় তো গুলিস্তান আসলাম। কিন্তু সে তো ভুল করে ওষুধের নাম লেখে নাই। আমি ফোন দিতেসি উনারে, ফোন খালি বিজি দেখায়।"

বুঝলাম।

আব্বার ওষুধের নাম "গুলিস্টিন।"

বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

নোনতা জল

গভীর কথায় ডুব-সাঁতারু মন,
কথার ফাঁকে গানও নাহয় শোন।
সুরের দোলায় কি হোল তোর বল?
গাল বেয়ে ক্যান নামলো নোনতা জল?

উলা লা, উলা লা ... !!!"

এক মহিলা পাশের বাসার ছাদ থেকে "মর্মান্তিক চিৎকার" করে "উলা লা, উলা লা, ম্যায় তো জাওয়া হো গ্যায়ি..." গাইছেন।
গানের কোন কোন অংশে এক ধরনের "গোঙানির" আওয়াজ শুনে কিছুটা সন্দিহান হচ্ছি যে আওয়াজটা গলা থেকেই বের হচ্ছে কিনা।
হঠাৎ মনে হল, হায় হায়, আজকে না বিজয় দিবস!!! ইয়াল্লা, এ তো বিশাল বেইজ্জতি ব্যপার!!!
বিজয় উদযাপনে "উলা লা, উলা লা...!!!" হওয়াই ডোন্ট ইউ মাইরালা, মাইরালা?
জানালা খুলে উঁকি দিয়ে দিলাম।
নাহ, ইজ্জত পুরাপারি যায় নাই। পাশের বাড়িতে আসলে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে।
বিজয় দিবসে গায়ে হলুদের প্রোগ্রামে "উলা লা, উলা লা ... !!!" - ঠিক বুঝতে পারছি না, ঠিক কি টাইপ রিঅ্যাকশান দেখানো উচিৎ!
জানালা বন্ধ করে টিভি'তে জি-বাংলা ছেড়ে ব্যাপারটাকে মেনে নেয়ার চেষ্টা করছি

সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

মদ নিষ্পাপ

আবেগিক উৎপাত
হৃদয়িক চাপ  
ঘুমহীন রাত আর
মদ নিষ্পাপ

বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

ল্যাবাই-লাবিউ

১। নিম্নলিখিত ভাব'কে এক কথায় প্রকাশ করো,
"Government Laboratory High School, I love you."



১ নং প্রশ্নের উত্তরঃ
---------------------

যেহেতু Government Laboratory High School কে আমরা ভালবেসে সংক্ষেপে "Lab" বলে ডাকি,
সুতরাং, উল্লিখিত বাক্যকে আরও সংক্ষেপ করে লেখা যেতে পারে,

"Lab, I love you."
 বাংলায় লিখলে যা হয়, "ল্যাব, আই লাভ ইউ"

যেহেতু, এই একবিংশ শতাব্দীর পোলাপান অনেক ত্যান্দর, তারা "আই লাভ ইউ"কে অনেক সময় আদর করে বলে "আই লাব ইউ"।

সুতরাং, "লাভ ইউ" কে "লাব ইউ" দিয়ে প্রতিস্থাপিত করলে বাক্যটি হয়ে যায়, "ল্যাব, আই লাব ইউ"।

অর্থাৎ, তাড়াতাড়ি বলতে চাইতে বাক্যটি হয়ে যায় "ল্যাবাই-লাবিউ"।

সুতরাং "Government Laboratory High School, I love you." কে এক কথায় প্রকাশ করলে তা হয় "ল্যাবাই-লাবিউ"।

উত্তরঃ "ল্যাবাই-লাবিউ"

-------------------

অপেক্ষা আর সহ্য হচ্ছে না রে।
দেখা হবে টিফিন টাইমে।



সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

জীয়ন আবার প্রেমে পড়েছে।

জীয়ন আবার প্রেমে পড়েছে।

জ্বি না, ভুল পড়েননি। "আবার" শব্দটা এখানে প্রকৃত অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে। আমার জানামতে, তার সাড়ে তিন বছরের জীবনে এটা চতুর্থ প্রেম!

তার নতুন প্রেমিকার নাম সঙ্গত কারণেই গোপন করে লেখাটা লিখছি। মাত্র সাড়ে তিন বছরের একটা মেয়ে আমার বখাটে ছেলের কারণে এই বয়সেই স্ক্যাণ্ডালের শিকার হোক, সে তো আমি হতে দিতে পারিনা, তাই না?

ধরে নিন, মেয়েটার নাম মাইশা। আর, এর আগে যে মেয়েটা'কে জীয়নের ভালো লাগত, ধরে নিন তার নাম অহনা।

সেদিন বিকালে ...

আমি - "আজকে স্কুলে কার পাশে বসেছিলি বাবা?"

জীয়ন (মুখে চোরা চোরা হাসি) - "মাইশার পাশে।"

আমি (কিঞ্চিত অবাক) - "কেন? অহনার কি হল? ওর পাশে আর বসিশ না?"

জীয়ন (নির্লিপ্ত মুখে) - "নাহ! আর ভাল্লাগে না।"

আমি - "মানে কি? এখন তাহলে কাকে ভাল্লাগে?"

জীয়ন (লজ্জায় নুয়ে পড়ে) - "মাইশাকে।"

আমি - "মাইশা তোকে পছন্দ করে?"

জীয়ন (লজ্জায় পুরাই গদগদ) - "মনে হয়।"

আমি (কপট বিরক্তির ভান করে) - "আমার কিন্তু অহনাকেই বেশী পছন্দ ছিল। কি সুন্দর একটা নাম। মাইশা নামটা খুব একটা সুন্দর না।"

জীয়ন গভীর মনোযোগের সাথে টম অ্যান্ড জেরি দেখতে লাগল। আমি কথাটা আরেকবার বললাম। কিন্তু সে জবাব দেয়ার কোন প্রয়োজনই উপলব্ধি করলো না।

রাত ১১টা বাজে। আমাদের রুমে আমি আর আমার বউ টিভি দেখছি।

দরজা খুলে জীয়নের প্রবেশ। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বেশ গম্ভীর মুখে বলল -

"রাজীব নামটা আরও পচা। অনেক বেশী পচা।"

কথাটা বলে সে উল্টাদিকে ফিরে গটগট করে নিজের রুমে ঘুমাতে চলে গেলো।

শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

"মেজবানি মসলা"

১।

মাঝে মাঝে স্মার্ট ফোনের পাকনামি দেখলে গা জ্বলে।

আমার বাসার মানুষজন ইদানীং ইন্টারনেট'এ বাজার করে। চাল-ডাল ডট কম থেকে। ডাইনিং টেবিলে বউ ল্যাপটপ নিয়ে বসে। ৫ মিনিট এটা-সেটা ক্লিক করে, ঘণ্টা-খানেক পর ব্যাগভর্তি বাজার বাসায় এসে হাজির। কত্ত মজা :)

আজকে সকালে আমার খালা গল্প করতে করতে বলল তার বাজারে যেতে হবে, "মেজবানি মসলা" কিনতে।

আমার স্মার্ট বউ সাথে সাথে তার "বাজার করার স্মার্ট পদ্ধতি"'র ডেমো দেয়ার চান্স পেয়ে গেলো। অবলা-বেকার আমার উপর ফরমান জারি হল যেন আমি ইন্টারনেট গুঁতিয়ে খালার জন্য "মেজবানি মসলা" খুঁজে দেই।

আমি আমার স্মার্ট ফোনে সার্চ মারলাম "মেজবানি মসলা"...

আমার এই সহজসরল সার্চ স্মার্টফোন-বাবাজির পছন্দ হবে কেন? একটু পাকনামি না করলে ওনার চলে? বলেন?

উনি উল্টা আমাকে প্রশ্ন করলেন ...

"আর ইউ লুকিং ফর মেহজাবিন মসলা?"

লে এইবার। মজা বোঝ ! 

২।

এই গল্পের একটা দ্বিতীয় পর্বও আছে।

বউ'কে গল্পটা বললাম।

বউ কি বলল জানেন?

"আজাইরা ফোনের দোষ দিয়ো না। স্মার্টফোন আসলেই স্মার্ট। যেসব টেক্সট বেশী টাইপ করা হয়, স্মার্টফোন সেগুলাই বারবার সাজেস্ট করে। এইবার আসল কথা বল। তোমার ফোন থেকে ঘনঘন মেহজাবিন সার্চ দেয় কে? হুমমমম???"

লে এইবার। মজা বোঝ !!!